Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ঘাস ফুল

১০ বছর আগে

চিঠিঃ তোমায় ভালবেসেছি, তোমার ভালোবাসা পেতে নয়

প্রিয় অহনা,
প্রতি বছরই বিশ্ব ভালবাসা দিবসে তোমাকে একটি চিঠি লিখি। বলতে পারো অনেকটা মনের অজান্তে কিংবা সামরিক বাহিনীর কোন রুটিন বাঁধা ট্রেনিং এর মতো। কিন্তু পোষ্ট করা হয় না। স্মৃতির ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখি। তবে পড়া হয় মাঝে মাঝে। এই ধরো কোন অলস দুপুরে, নতুবা একাকি কোন সন্ধ্যে বেলায় কিংবা গভীর রাতে নির্জন জ্যোৎস্নার আলোয়। পড়া শেষে আবার স্বযতনে তুলে রাখি স্মৃতির ড্রয়ারে। গত ভালোবাসা দিবসে তোমাকে লিখেছিলাম। 

“প্রিয় অহনা,
তোমার মনে আছে অহনা আমাদের কলেজের ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটির কথা? ঐ যে বিশাল খেলার মাঠটির ঠিক দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় একাকী দাঁড়িয়ে ছিল। বসন্ত কালে যখন ফুল ফুটত দূর থেকে মনে হত যেন মাঠের কোনায় আগুন জ্বলছে। বহু বছর পেরিয়ে গেছে। তা বলতে পার প্রায় এক যুগ হবে। গাছটা কিন্তু আজও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কি এক অজানা কারণে গাছটাতে এখন আর ফুল ফুটে না। বসন্ত এলে আর নতুন করে পাতা গজায় না। অসহায়ের মতো কৃষ্ণচূড়া গাছটি শুধু চেয়ে থাকে। বন্ধ্যা নারীর সন্তান লাভের করুণ আকুলতা নিয়ে। ছুটিতে বাড়ি এলে আজও আমি কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে একবার হলেও বসি। আর মুহূর্তের দমকা হাওয়ায় খুলে যায় আমার স্মৃতির দরজা। 

পালে লেগেছে পবনের দোলা
বৈঠা হাতে মাঝি যেন করছে খেলা
কুলে ভিড়াইবার বৃথা চেষ্টায় বহিয়া যায় তার বেলা। 

তোমার খোঁপায় একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দিয়ে কতদিন কতো বেলা আমি অবাক তাকিয়ে ছিলাম। পলক ফেলতে যেন ভুলেই যেতাম। চিমটি কেটে তুমি আমার সম্বিৎ ফেরাতে। 
তোমার মনে পড়ে অহনা? চঞ্চলা হরিণীর মতো বয়ে চলা শীতলক্ষ্যার পশ্চিম ধারে অনেকটা পার ঘেঁসেই আমাদের কলেজটা। সেখানে নদীটা খুব সুন্দর একটা বাঁক নিয়েছে। ঠিক যেন কলসি কাঁখে গাঁয়ের বধুর কটির মতো। ভারী সুন্দর দেখতে। ভরা বর্ষায় নদীটা যেন তার হারান যৌবন ফিরে পায়। তখন এই নদীতে অনেক বড় বড় পাল তোলা নৌকা দেখা যায়। আমরা কলেজ ছুটির পর অনেকটা সময় নিয়ে নদীর ঐ বাঁকটায় বসে মাঝে মাঝে পাল তোলা নৌকা দেখতাম। আর দুজনে মিলে গাইতাম আব্বাস উদ্দীনের সেই বিখ্যাত গানটি, 

নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে
ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া।।

আরে উড়ালি বিড়ালি বাওয়ে নাওয়ের বাদাম নড়ে
আথালি পাতালি পানি ছলাৎ ছলাৎ করে রে
আরে খল খলাইয়া হাইসা ওঠে বৈঠার হাতল চাইয়া।। ........ 

নদীটা এখনো আছে। কিন্তু রোগা পাতলা রোগীর মতো। পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন যদি তুমি কলেজে আসতে, তবে ভয়ে ভয়ে আর গোঁসাই মাঝির খেয়া নৌকায় চড়তে হতো না। অনায়েসে হেঁটেই পার হয়ে আসতে পারতে। তোমার মনে আছে অহনা ঐ দিনটার কথা? ঐ যে নৌকায় চড়ার ভয়ে কান্না জুড়ে দিলে। কারণ নদীটা তখন বর্ষার পানিতে ফুলে ফেঁপে একাকার। তার উপর বিশাল বিশাল ডেউয়ে নৌকার দুল খাওয়ানি। কোন অবস্থাতেই তুমি নৌকায় চড়তে চাচ্ছিলেনা। অগত্যা তোমার সাথে আমাকেও নৌকায় উঠতে হল। আর ঐ দিনটাই হল আমার জীবনের সব চাইতে আনন্দের দিন। নৌকায় তখন মাঝ নদীতে। হঠাৎ বিশাল একটা ডেউয়ে প্রচণ্ডভাবে আমাদের নৌকাটা দুলে উঠলো। আর তুমি চিৎকার করে দু’হাতে আমায় জড়িয়ে ধরলে। আমিও কিছু না বুঝে খুব শক্ত করে তোমাকে বুকে চেপে ধরে রাখলাম। মহাকাল ধরে যেন দুজনে এভাবে একে ওপরকে বুকে জড়িয়ে ছিলাম। 

বুকের ঠিক বাম দিকটাতে আমার হৃৎপিণ্ড
তুমি যেখানটিতে মাথা রেখেছ
এবার কান পেতে শুন 
কিছুই শুনতে পাচ্ছ না?
আহা, দুষ্টুমি রেখে ভালো করে শুনো
ওখানেই আমি তোমার জন্য 
ভালোবাসার মহাসমুদ্র বানিয়ে রেখেছি
ধমনী শিরা উপশিরা, প্রতিনিয়ত 
সেই ভালোবাসা আমার সমস্ত গায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। 

‘ভাইজান নাম্বেন না? বেবাগতে নাইম্মা গেছে।’ গোঁসাই মাঝির ডাকে দুজনেই কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে পরে গেলাম। তোমার মনে পড়ে অহনা এই নিয়ে দুজনে পরে কতো হাসা হাসি করেছি। কিন্তু লজ্জায় তোমার মুখটা ঠিকই লাল হয়ে যেতো। পড়ন্ত বিকেলে ফুলের পাপড়ির মতো তুমি নুইয়ে পড়তে। তাই বলে কিন্তু ফুলের সৌন্দর্য এতটুকু কমতো না। ঘুমটা পড়া লাজুক নতুন বউয়ের মতো ঐ রূপ এখনো আমার চোখে ভেসে উঠে। ঠিক যেন শীতকালে দূর্বা ঘাসের ডগায় ভোরের আলোয় চিক চিক করা শিশির বিন্দুর মতো। 
কতো দিন আমি কতোভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম, তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো বলে। কিন্তু তোমাকে দেখে বার বারই আমি ভুলে গেছি। ঠিক আমাদের নদীটার মতো। মোহনায় মিশে আনন্দে ভুলে যায় তার পিছনের দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি। কিংবা ঠিক এই মাত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ দেয়া জননীর মতো। সন্তানের মুখ চেয়ে মুহূর্তেই ভুলে যায় যে তীব্র প্রসব ব্যথার কথা। আর এভাবেই দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো আমদের কলেজ জীবন। ভালোবাসার কথা তোমাকে আর বলা হল না। দাঁড়াও, তোমাকে ফেবুতে পাওয়া সুন্দর একটা গল্প বলে চিঠিটা শেষ করছি। একটা পাখি একটা সাদা গোলাপকে প্রপোজ করল। গোলাপ বললো, ‘আমি যখন লাল হবো, তখন তোমাকে ভালোবাসবো।‘ পাখিটা নিজের বুক চিঁরে রক্তে রাঙিয়ে দিল গোলাপকে। এখন গোলাপ পাখিকে ভালোবাসে, কিন্তু পাখিটাইতো নাই।”


সবাই সুখ নিয়ে বাঁচতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। সুখ নিয়েই সে বেঁচে আছি। কলেজ জীবনের ঐ দুটা বছরের সুখই আমার সারা জীবনের সুখ হয়ে আছে। কেউ কেউ বলে নারী সঙ্গমেই নাকি সব চাইতে বড় সুখ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। ভালবাসাতেই সব চাইতে বড় সুখ অন্তর্নিহিত। কেউ ভালোবাসা পেয়ে সুখি আর কেউ ভালোবেসে সুখি। তোমাকে ভালোবেসেই আমি সুখি। 
তুমি সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। তাই হয়তো ধর্মের বেড়াজাল ভেদ করে আমাকে ভালোবাসার কথা কোনদিন চিন্তাই করো নাই, যা আমি বোকার মতো করেছিলাম। কিন্তু আমার দুঃখ নাই। তোমাকে ভালবাসতে পেরেছি, এটাই আমার চরম পাওয়া, পরম সুখ। তাই কোনদিন তোমাকে ভালোবাসার কথা আর বলতে যাই নাই। 

তোমায় ভালবেসেছি মেয়ে
তোমার ভালোবাসা পেতে নয়
কাউ কে ভালোবেসে তুমি সুখে আছ জেনেই
তোমাকে ভালোবাসা আমার সার্থক হয়। 

ইতি, 
পথের ধারে ফুটে থাকা অবহেলিত

ঘাস ফুল

(পূর্বে প্রকাশিত)

১ Likes ৪৮ Comments ০ Share ১৭১০ Views

Comments (48)

  • - কামাল উদ্দিন

    মজার খবর, এমনটা কবে ঘটেছিলো 

    • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

      গত বছর। সারা পৃথিবীতে এই ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল। প্রিন্স হ্যারির নামে সার্চ দিলে তার উদোম ছবি গুলো দেখতে পাবেন।

    • Load more relies...
    - ঘাস ফুল

    ১. আধুনিক সভ্যতার স্বাদ তো বহু নেয়া হল, এবার একটু আদিম সভ্যতার স্বাদ নিতে চাইছে। ভবিষ্যৎ রাজা হিসাবে অভিজ্ঞতাটা থাকা জরুরী

    ২. ইংরেজ শাসন আমলে এমন কতজনকে উলঙ্গ করে কুকুর দিয়ে কামড়িয়েছিল। দৃশ্যটা দেখতে কেমন ছিল তার কিছুটা অনুমানের চেষ্টা করার জন্য এই কাজ 

    ৩. জন্মদিনের স্বাদটা একটু পেটে চাইছেন আর কী

    ৪. গণদাবীর কাছে হয়তো একদিন রাজপরিবারের ধাওয়া খাওয়ার সম্ভবনা আছে। তখন কাপড়চোপড় ঠিক রাখার কোন উপায় থাকবে না। তাই আগেই থেকেই বিবস্ত্র হয়ে প্র্যাকটিস করছে 

    ধিক্ এমন রাজরক্তের প্রতি। রাজা বাদশার শাসনের প্রতি অভিসম্পাত। কানিং ফক্স ব্রিটিশরা নিজেদের বিষে নিজেরাই আরও জর্জরিত হোক। 

    ভীষণ মজা পেলাম পড়ে হেনা ভাই। ধন্যবাদ। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেন। 

     

    • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

      প্রিয় ঘাস ফুল, তোমাকে ধন্যবাদ। মূলতঃ এই লেখাটি ব্রিটিশ রাজ পরিবারকে খাটো করার উদ্দেশ্যে নয়, ইংরেজদের মন মানসিকতা সম্পর্কে বিস্মৃত প্রায় বর্তমান প্রজন্মকে কিছুটা হলেও সচেতন করার জন্য। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর ঘটনাটি উল্লেখ করার কারণ হল ইংরেজরা তাদের শাসন আমলে আমাদের দেশের মানুষের সাথে কুকুরের কোন পার্থক্য করতো না। ভাবতে পারো, কী আস্পর্ধা তাদের?

      লেখা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো থেক।

    • Load more relies...
    - নীল সাধু

    ধিক্ এমন রাজরক্তের প্রতি!

    সহ ধিক্ রইলো আবু হেনা ভাই। দারুণ উপস্থাপনা।
    ভালো লাগা রইলো। 

    তবে প্রতিটি মানুষের মাঝে পাগলামী আছে, সে মনে হয় ঐ ধারার কিছুর প্রভাবেই - হে হে হে

    • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

      প্রিয় কবি, পাশ্চাত্য জীবন দর্শনে সভ্যতা ও অসভ্যতার সীমারেখা খুবই সুক্ষ। হ্যারির মতো ব্রিটিশ রাজবংশের উত্তরাধিকারীর তো আত্মপ্রচারের কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু ঐ যে বললাম, তাদের জীবন দর্শন প্রাচ্যের মতো নয়। অথচ মজার ব্যাপার কী জানেন, ওরাই আমাদেরকে সভ্যতার সবক দেয়। রাবিশ! (আমাদের অর্থমন্ত্রীর ভাষায়)

      লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল। 

    Load more comments...