Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চিঠি 'প্রতিযোগিতা'

এলাহি ভরসা
৭৮৬

তারিখঃ ১৭/০৩/১৪ ইং

মিরপর, ঢাকা

প্রিয়তমা "র",

সর্ব প্রথমে আমার অন্তর্রনিহিত শতকোটি ভালবাসা নিও। আশাকরি করুণাময়ের অশেষ কৃপায় কুশলেই আছো । তোমার দোয়ার বরকতে আমি ও ভাল আছি। মনে হয় তোমার চিনতে কষ্ট হচ্ছে। আমি তোমার ছেলে বেলার সেই "মামুন"।
সেই বিকেল থেকেই নদীর তীরে নীল আকাশ দেখার জন্য বসে আছি ,আকাশের মেঘ গুলো যেন থেমে আছে । আমার মনের মত মেঘের ও মন খারাপ। কখন যেন মনের অজান্তেই নয়নের জল ঝরতে শুরু করল।এক ঝাক সাদা বক, পাখির ঝাক উড়ে যায় পাহাড়ের কোল ঘেষে।পাখিদের দল নেতা পাখনা মেলে মনের সুখে গান গেয়ে ভেসে বেড়ায় দেশ থেকে দেশান্তরে,কখনো বা সবুজ বন বনানীতে নদী, সাগরের তীরে।মনে মনে ভাবি হাত দু'টো হয়ে যাক পাখনা ,যাই উড়ে ফেলে মনের সব ভাবনা। আজ বহু বছর পরে তোমাকে দুকলম লিখছি।হ্য়ত তুমি চিঠিখানা পেয়ে অবাক হবে। আমি বেঁচে আছি !! হ্যাঁ আমি তোমার বাল্যকালের পড়ার সাথী বন্ধু মামুন।তোমরা আর আমরা মিরপুরের একই টিন সেটের কলোনিতে থাকতাম।

মেঘলা আকাশ,হিমেল বাতাশ,ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি এক বিকেলের স্মৃতি আজ বেশি আবেগ তাড়িত করছে ।২৪ শে মার্চ'১৯৭১সাল । সকালের সোনালী রোদ উকি দিচ্ছিল পূবের জানালয়। মনের অজান্তেই তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল । তোমার বাবা পাকপন্থি থাকায় তোমার কাছে যাওয়ার সে সাহসটুকু করতে পারছিলাম না, তাই তোমার কাছে লিখে চিলাম একটুকরো কাগজে চিরকুট। পোষ্ট করবো বলে বাইরে বের হলাম হঠাৎ একপশলা বৃষ্টি ভিঁজিয়ে দিয়ে গেল সারা গা,ভিঁজল চিঠি খানাও। একবার ভাবলাম রুমাল দিয়ে মুছে শুকিয়ে পোষ্ট করি আবার ভাবলাম না থাক কালকে আবার নতুন করে লিখব সাথে আজকের বৃষ্টি ভেঁজা স্মৃতিটুকুও শেয়ার করব তোমার সাথে। রাতে পড়তে বসেছিলাম।কে যেন ফিস ফিস করে আমাকে ডাকছে, একটু ভয়ে ভয়ে জানালা খুলে দেখি বন্ধু পাশা। তুমি চিনতে ওকে । মনে হয় এখন মনে করতে পারছনা। পাশা আমাকে বাইরে নিয়ে বললো চল। আমি বললাম- কোথায় ? পাশা বললো সময় নেই চল ।
পড়নে হাফ প্যান্ট, হাফ শার্ট আর পকেটে সেই চিঠি খানা আর টিফিনের বাচান ২টাকা পঞ্চাশ পয়সা।২৫শে মার্চ'১৯৭১।যে দিকে যাই শুধু গোলাগুলি আর ওমাগো,ওবাবাগো বাঁচাও শব্দ।
আমরা এক পড়শির বাড়িতে কোনমতে রাত শেষে চলে গেলাম একবড় ভাইয়ের সাথে ট্রেনিংএ।
সে যে কত স্মৃতি, পাক সেনাদের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে আমার সেই বন্ধু পাশাকে হারাই। আমি কোন দিন ভাবিনি বেঁচে থাকবো, এক পা হারিয়ে আজ বেঁচে আছি মানবেতর জীবনে।
পড়া শুনা শেষ করতে পারিনি। আমাকে না পেয়ে ওরা মাকে সে মিরপুরের বদ্ধ ভূমিতে ফেলে নির্যাতন করে মেরেছিল।বাসায় ফিরে আর নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়েছিল।
অনেককেই হারিয়েছিলাম শুধু মাত্র লাল সবুজ পতাকার জন্য।পেয়েছি কিন্ত মনে আজও অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খায় ।
তোমার বাবার বদলির কারণে তোমরা চলে গেলে অন্য জেলায়,ঠিকানা পাবার কোন উপায় ছিলনা তাই আর লেখাও হলনা,হলনা বলা আমার মনের কথাগুলো। মনে মনে তুমি আমাকে খুঁজেছ নিশ্চয় ।না,আমি তোমাকে ভাল বাসি,তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবনা একথা আমি বলতে চাইনি। ভাল লাগা আর ভাল বাসা এক সূতোয় গাঁথা। ভাল লাগে অনেক কিছুই কিন্তু ভাল বাসা কি যায় সব ? না যায় না।
মনে মনে তোমাকে খুঁজি ষ্টেশনে,চলন্ত বাসে। যদি দেখা মেলে ক্ষনিকের তরে।গতকালই তোমার বান্ধবির রুমার সাথে কাঁচা বাজারে দেখা, ও আমাকে চিনে কথা বললো। সে কি দামি গাড়িতে চড়ে, ভাবিনি সে আমার সাথে কথা বলবে। মনের অনেক কষ্টই হালকা হলো যে, পুরানো বন্ধুরা গরিব হলেও মনে রাখে।তোমার ঠিকানা পেলাম ওর কাছে। তুমি যদি সেই আগের মতই থাকো হয়ত: এক কাপ চা এক সাথে হবে, না করবেনা এমনটাই প্রত্যাশা আজ ও ।
আশা রাখি তোমার জীবন সঙ্গী তোমার মতই হয়েছে । এক জনমে সব পাওয়া যায়না তবে সেরাটা পাবার বাসনা তো থাকে সবারই, আমার সুখ আমি স্বাধীনতা পেয়েছি। তুমি যেখানেই থাক ভাল থাক এই সুপ্ত বাসনা, কামনা আমার অন্তর জুড়ে।
এই কামনায় লেখার ইতি টানছি।

ইতি

তোমার প্রিয়তম "ম",

**************************************************
বিঃদ্রঃ-হাতের লেখা ভালনা, দয়া করে বানানের ভুলত্রুটি নিজ গুণে সংশোধন করে পড়বা।

 

০ Likes ১ Comments ০ Share ৬৪২ Views

Comments (1)

  • - মাসুম বাদল

    সাধুবাদ আপনার সুন্দর ভাবনায়।

     

    অনেক অনেক শুভকামনা...

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ

    - আলমগীর সরকার লিটন

    হ্যা দাদা

    চিরমৃত্যূ তখন নাকে ডগায়

    তখন কি বোধ হবে

    সুন্দর ভাবনা-----------

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ আলমগীর ভাই

    - গোলাম মোস্তফা

    সালাম কবি 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ