Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চিকি মাংকি

-এই চিকিমাংকি...।মামা তোকে তো চেনার ই উপায়নাই (পিঠ চাপকে)

- এত্তদিন পর ! শালি এখনও এই নাম এ ডাকলি...

-এভাবে কাউ ভুলে যায়? যা হোক, এই পিচ্চি কে?

-চুপ ও ক্লাস  9এ পড়ে, আমার gf,  আমাকে দেখিএ মেয়েটাকে বলে, আমার কলেজের দোস্ত  

এদিকে মেয়ে টা রাগ এ ফুসতে  থাকে।তুমি নাবলেছ তুমি মেয়েদের সাথে কথা বল না, তাহলে এ কে? তোমার  গায়ে হাত দিল কেন? বলাই হাটা আরম্ভ।

সিজানও বেবি বেবি বলে পিছু হাটা শুরু করে।পিছন ফিরে বলে, দোস্ত মান্দ করিস না, এলাকায় গেলে তোর বাসায় ঢূ মারব ।  

আমি থ মেরে দাড়িএ থাকি...

কিন্তু দাড়িয়ে থাকলে চলবে না। বাসায় গিয়ে সব গোছগাছ করতে হবে। কাল রওনা দেবো চিটাগাং। মালিহার বিয়ে।

বাসে চড়ে পড়লাম। জানালার পাশের সিটটা পেয়ে গেলাম। চোখের সামনে ভেসে উঠছে কলেজের সেই স্বপ্নের মতো দিনগুলো। আমি, ইলা, মালিহা আর রিয়া ছিলাম ভিন্ন দেহ, এক প্রাণ। সবাই লক্ষ্মী মেয়ে হিসেবে চিনলেও ভেতরে ছিলাম শয়তানের হোল কিউব।
কলেজ শুরুর দিন থেকেই আমরা কাসের ছেলেমেয়েদের অদ্ভুত সব নাম দেয়া শুরু করি। এই যেমন ডেডবডি, ধামড়াভাই, ডাইনি বুড়ি, ডিম্ববতী, দস্যু সরদার, হেডেক, স্যালাইন, কমন ফেইস, চিকি মাংকি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা চারজন ছাড়া বাইরের কেউ এটা জানতো না।
মালিহা সব সময় নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগতো। ওর মুখে অনেক তিলের মতো দাগ ছিল। এ জন্য ইলা ওকে ফুটিফাটা বানু বলে ডাকতো।
আমার কাজ ছিল ওকে সান্তনা দেয়া আর রিয়ার কাজ ওর জন্য লেজার সার্জারির পেপার কাটিং সংগ্রহ করা।
একবার মালিহা একটা বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে ঝগড়া লেগে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তখন ওর একটা নোটের দরকার পড়ে। যেহেতু আমরা কেউ তার সঙ্গে কথা বলছিলাম না সেহেতু সে যায় পাশের বেঞ্চের সিজানের কাছে যার নাম দিয়েছিলাম চিকি মাংকি।
চিকি মাংকি, তোমার ভুগোল খাতাটা দেয়া যাবে?
মানে? তুমি কাকে ডাকছ?
হুম, তোমার চেহারার মধ্যে একটা দুষ্টু দুষ্টু ভাব থাকায় তুমি চিকি মাংকি। আর তোমার বৌ হবে চিকি মাংকিনী। বলেই ওর সামনে থাকা খাতাটা নিয়ে নিজের জায়গায় চলে এলো মালিহা।
এখন আমাদের সঙ্গে কথা না বললেই ওর কি এসে যায়! পাশের বেঞ্চের চিকি মাংকি তো আছে।
বেঞ্চের কোণায় বসে বসে সারা দিন চিকি মাংকি, স্যালাইন আর হেডেকের সঙ্গে গল্প চলে মালিহার। কেউ অন্য ইঙ্গিত দিয়ে কিছু বললে ও বলতো, আমার তো তিনজনকেই ভালো লাগে।
আমরা আবার কথা বলা শুরু করলাম।
একদিন মালিহা বললো, সিজান ওকে প্রপোজ করেছে।
আমরা বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম, তুই রাজি?
ও বললো, আরে, ওর আর আমার কখনো যাবে নাকি? ওর বাবা আমার বাবার চেয়ে কতো নিচের পোস্টে চাকরি করেন। আর তার চেহারাও তো পদের নয়। তাছাড়া ওর যে রেজাল্ট তাতে তো তিন চাকা চালানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। তার মানে, না করেছি? না মানে, আমি ওদের তিনজনের কারো সঙ্গেই সম্পর্ক খারাপ করতে চাই না। তাই ওর কাছে সময় চেয়েছি।
ইলা হুট করে বললো, তার মানে তুই হবি চিকি মাংকিনী!
আমাদের রিয়া টুকটাক লিখতো। সে আহাদি কণ্ঠে জ্ঞানী ভাব নিয়ে মালিহাকে বোঝাতো, এ সম্পর্ক কখনোই পরিণতি পাবে না।
ভবিষ্যতে ওদের বিয়ে হলে আমরা কতো মজা করতে পারবো এ কথা ভেবে আমি বলতাম, সত্যিকারের ভালোবাসলে অবশ্যই হবে।
জীবনের প্রথম অফার পাওয়া বলে কথা! মালিহা কি না করতে পারে?
তারপর থেকে মালিহা কলেজে এলে চিকি আসে, না এলে চিকি আসে না। চিকি নিজের কোচিং বাদ দিয়ে ওর কোচিংয়ের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
মালিহা দিন-রাত করে রূপ চর্চা।
মালিহা আমাদের বলতো, ও নাকি চিকির সঙ্গে শুধু টাইম পাস করছে। মালিহা খুব রাফ ব্যবহার করতো ওর সঙ্গে।
সিজান যখন রাগ করে চলে যেতো তখন ওর খুব মন খারাপ হয়ে যেতো। বলতো, দেখিস ঠিকই একটু পর আসবে।
সত্যিই তাই হতো। কিন্তু আমাদের কাছে প্রকাশ না করলেও ভেতরে ভেতরে দুজনের যে খুব খাতির ছিল তা বোঝা যেতো।
মালিহা আমাদের সামনে যখন সিজানকে ভাবতো তখন সি বলে একটু গ্যাপ দিয়ে জান বলতো।
ব্যাপারটা বুঝে আমরা বলতাম সি আর জান আলাদা করে না বলে, শুধু জান বললেই তো হয়?
ব্যাপারটা স্যার-ম্যাডামদের নজর এড়ায় না। টিচার্স কমন রুমে ডেকে স্যার একদিন খুব বকা দেন মালিহা আর সিজানকে।
মালিহা একবার ভাবলো, ওকে ছেড়ে দেবে। পরক্ষণেই ভাবলো, তার মতো অসুন্দর মেয়েকে কি কেউ এতো ভালোবাসবে?
কাসে চিরকুট দেয়া-নেয়া করতো চিকি মাংকি আর চিকি মাংকিনী। বলদটার হাতের লেখা কিছুই বোঝা যেতো না। তার উপর ছিল অসংখ্য বানান ভুল। এই যেমন হটাং করেই তোমাকে ভালো লেগে গেল!
তরপর মালিহার কড়া নির্দেশ, তাকে পেতে চাইলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।

 সে দিন রাত খেটে ইংরেজিতে তেত্রিশ পেয়ে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিল। কিন্তু পৌরনীতিতে করলো ফেল। ফলে রিপোর্ট কার্ড আনার জন্য তার মাকে আসতে হলো।

সেই সুযোগে স্যারও তার অভিযোগের ডালি খুলে বসলেন, আপনার তো আর ভাত রাধা লাগবে না। ছেলে বৌ ঠিক করেছে।
পেছন থেকে ইলা বলে উঠলো, স্যার ভাত আরো বেশি রাধা লাগবে। যে মেয়ে ঠিক করেছে সে সবার ভাত একাই খাবে।
হঠাৎ রিয়া প্রেম সাগরে ঝাপ দিল। তা দেখে মালিহা আর সিজান পায় বিপুল অনুপ্রেরণা। ওরা তখন কুলমানের ভয় রাখে না। মালিহাও এখন চিকির প্রতি ভালো লাগা লুকালো না।
মালিহার অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা চিকির অন্ধকার ফিউচারের কথা বলে বোঝতে গেলে ও বললো, কেন? রিকশাচালক কি ওর বৌকে ভাত খাওয়ায় না?।
ইলা বললো, খাওয়ায় বাসি-পান্তা। তা খেয়ে যখন পেট খারাপ করবে তখন ডাক্তার না দেখিয়ে ঝাড়-ফুক করাবে।
তাতেও তার টনক নড়লো না। সে চিকির জন্য বাবার টাকা পর্যন্ত চুরি করে।
এসব কারণে ওদের বাসায় ঝামেলা হতে থাকে। কলেজেও স্যারদের বকাঝকা চলতে থাকে। কিন্তু তারা দমবার নয়। তাদের প্রেম নাকি স্বর্গ থেকে এসেছে!
মালিহাকে ফোনে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ওর ছোট বোনকে ঘুষ দেয়া হতো। কিন্তু সে কথা বলতে দিতো এই শর্তে যে, তাকে লাউডস্পিকারে সব শুনতে দিতে হবে।
এমনই একদিন ইমশোনাল হয়ে সিজান বলেছিল, মালিহা, আমাকে তোমার হাতটা একদিন ধরতে দেবে?
পাশ থেকে ওর বোন বললো, আল্লাহ! আপু, সিজান ভাইয়্যার হাত যা কালো! তুমি ধরবে?
ওরা যখন কলেজের পর ঘুরতে বের হতো তখন আমরা সঙ্গে থাকতাম যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
ভর দুপুরে রোদে ঘেমে গিয়ে ধুলায় ত্বক, চুল, লিভার, সব ড্যামেজ হতো আমাদের।
স্যার মালিহাকে বসাতো ফার্স্ট বেঞ্চের কর্নারে আর সিজানকে লাস্ট বেঞ্চের অপর কর্নারে যাতে চিরকুট দেয়া-নেয়া না হয়।
তখন এসব চলতো আমাদের হাত দিয়ে। চিরকুটের ভাষা ছিল এমন :
আমার গুলুগুলু বৌ। তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
এই স্বর্গীয় প্রেম চালাতে গিয়ে টেস্টে দুজনেই করলো ফেল।
মালিহা মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়লো। সবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিল। সিজানকে দায়ী করলো সে। বললো, লজ্জা থাকলে যেন আর কখনো তার সামনে না আসে। তার মতো ফেল্টু ছাত্রের পাল্লায় পড়ে তার এই হাল ইত্যাদি অনেক কথা বলে।
পরে রি-টেস্ট নেয়া হলে তারা এইচএসসি দেয়ার সুযোগ পায়।
এইচএসসি-র পর মালিহারা চিটাগাং চলে যায়।
সিজান আর কখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আর্টস থেকে যে পাচ জন এ+ পায় তার মধ্যে সিজান ছিল। ওকে উইশ করার জন্য ফোন করে দেখি মোবাইল ফোন বন্ধ।
আজ চার বছর পর আবার দেখা হতেই এতো স্বাভাবিক হয়ে যাবো তা ভাবতেই পারিনি!
মালিহার বিয়েতে পুরনো বান্ধবীর মধ্যে আমি আর ইলা এসেছিলাম। কেন যেন আমাদের চিকি মাংকির কথা খুব মনে পড়ছিল।
ওই দিনের কথা এখন মালিহাকে বলা ঠিক হবে না। ওর বরের চেহারার চেয়ে চিকির চেহারা হাজারগুণ ভালো ছিল।
আমরা স্টেজে মালিহার পাশে বসে ছিলাম।
ওর খালাশাশুড়ি ওনার ছেলের সঙ্গে মালিহার পরিচয় করাতে নিয়ে এলেন।
তাকে দেখে আমরা আতকে উঠলাম।

চিকি মাংকি!
আমরা চোখে ভুল দেখছি কি না বুঝতে পারলাম না।

 

১ Likes ৬ Comments ০ Share ৫৪২ Views

Comments (6)

  • - সোহেল আহমেদ পরান

    বাস্তব প্রেক্ষাপটে সুন্দর লেখা