জন্ম চাকমা পরিবারে শিশুর জন্ম হলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মুখে মধু দেয়। এক সপ্তাহ পর ওঝা ডেকে শিশুর মাথা ধুয়ে পরিত্র করে। এসময় পানিতে এক ধরনের ফলের বিচি এবং হলুদ দেয়। চাকমা ভাষায় এই ফলের বিচিকে ঘিলা এবং হলুদকে কজই বলে। একমাস পর নাপিত ডেকে শিশুর চুল কেটে মাথা নেড়া করে। মৃত্যু চাকমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সাদা কাপড়ে মৃতদেহ ঢেকে রাখে। এ সময় ঢোল বাজায়। ঢোলে বিশেষ ধরনের তাল বাজানো হয়। এ তাল শুনে আসে-পাশের পাড়া-প্রতিবেশিরা ছুটে আসে। সাধারণত পুরুষেরা মৃত বাড়িতে ছুটে যায়। বাড়িতে নারীরা তখন ঘরের সদর দরজায় মাটির একটি ভাঙ্গা পাত্রে তুষ দিয়ে আগুন জ্বালায়। চাকমারা মনে করে, এই আগুন জ্বালালে অপদেবতা ঘরের কোনোতে উপদ্রব করতে পারে না। মৃতদেহকে প্রথমে গোসল করায়। এসময় বৌদ্ধ ভিক্ষু এসে মঙ্গলসূত্র পাঠ করেন। মৃতের আত্মীয়-স্বজনেরা মৃতের আত্মার শান্তি কামনা করে তার উদ্দেশ্যে টাকা-পয়সা দান করে। তারপর মৃতদেহকে একটি বাঁশের বাহনে করে শশ্মানে নিয়ে যায়। বাঁশের এই বাহনকে চাকমা ভাষায় আলং বলে। মৃতদেহ শশ্মানে আনার পর বাড়িতে রাখা সকল পানি এবং চুলার ছাই ফেলে দেয়। এর মাধ্যমে মৃতের সঙ্গে ঐ বাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন করে। মৃতদেহের সঙ্গে শশ্মানে একটি পুটলীতে ভাত এবং অন্যান্য খাদ্য নেয়। দাহ করার আগে মৃতদেহের মুখে এসব ছোঁয়ায়। এরপর চিতা সাজিয়ে মৃতদেহ চিতায় তোলে। মৃতের বড় ছেলে প্রথম চিতায় আগুন দেয়। বিয়ে
চাকমা জাতির বিয়ের নিয়ম কানুন খুব সুন্দর। বিয়ের আগে ঘটক বর পক্ষ এবং কন্যা পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। চাকমা ভাষায় ঘটককে সাবালা বলে। চাকমা রীতি অনুসারে বরের পিতা কনের বাড়ীতে কম করে তিনবার যায়। এসময় প্রতিবার যেতে বরের পিতাকে কনের বাড়িতে নানান খাবার এবং কাপড় নিয়ে যেতে হয়। এই তিন বার আসা যাওয়ার সময় স্বর্ণের অলংকার এবং কনে পণের টাকা ঠিক করে। চাকমা ভাষায় পণকে বলে দাভা। চাকমাদের মধ্যে বরপক্ষ কনে পক্ষকে দাভা দেয়। বর যাত্রীরা বিয়েতে কনের বাড়ি যাওয়ার সময় এসব দাভা নিয়ে যায়। দাভা ফুলবারেঙ নামের একটি বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে কনের বাড়ি নিয়ে যায়। নানান আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে চাকমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়।