Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জয়িতা ইসলাম

৮ বছর আগে

চাকমা জাতির কথা- কুমার প্রীতীশ বল

গোত্র বা গোষ্ঠী

চাকমা সমাজে পিতা হলো পরিবারের প্রধান। পিতা চাকমা পরিবারে সবচেয়ে বড়।

তারপরে হলো মা। এরপরে বড় ছেলের অবস্থান।

চাকমা জাতির লোকসকল বংশকে গুথি। গুথি বলতে গোত্র বা গোষ্ঠীকে বুঝায়। চাকমাদের প্রায় ৪৬টি গোত্র বা গোষ্ঠী আছে। এ সকল গোত্র বা গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা নাম আছে। তবে নামগুলো রাখা হয়, সাধারনণত গোত্র বা গোষ্ঠী প্রধানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। আবার কোনো কোনো গোত্র বা গোষ্ঠীর নাম রাখা হয় এলাকার নামের সঙ্গে মিলিয়ে। যেমন লামা অঞ্চলে চাকমারা লারমা গোত্র বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত।

চাকমা সমাজে শিশু জন্মের সময় মাকে ঐ বংশের বা গোত্রের কারো না কারো ঘরে থাকতে হয়। নিজের গোত্র বা গোষ্ঠীর বাইরে থাকলে পরিবারের অমঙ্গল হওয়ার ভয় থাকে। শিশুর উপর অপদেবতার খারাপ নজর পরতে পারে। কখনও কোথাও অনিচ্ছা সত্ত্বে এমন হলে অর্থাৎ মা অন্যের বাড়ি থাকলে পরে ওঝা ডেকে বাড়ি পবিত্র করতে হয়। এজন্য পিতাকে জরিমানা দিতে হয়। জরিমানা হলো বাড়ি পবিত্র করার খরচ।

জন্মের মতো মৃত্যুর নিয়মও একই। মৃত্যুর সময় নিজের বংশের বা গোত্রের কারো না কারো ঘরে থাকতে হয়। নিজের গোত্র বা গোষ্ঠীর বাইরে থাকলে পরিবারের অমঙ্গল হয়। যদি মৃত্যুর সময় কেউ অন্য বংশের বা গোত্রের কারো ঘরে থাকে, তখন মৃত্যু পথযাত্রীকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসা হয়।

রাজা

চাকমা ভাষায় চাকমা জাতির যে ইতিহাস লেখা আছে, তার নাম বিজগ। এখনে যে সব চাকমা রাজার কথা উল্লেখ আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলেন অতীতবাহন। অতীতবাহন ১১৯৭ সালে চাকমা রাজা ছিলেন। এরপরে আরও একজন চাকমা রাজার নাম পাওয়া যায়, তাঁর নাম উপাখান।

এটা ১৫৪৬ সালের কথা। রাজা উদং ১৫৭১ সালের দিকে চাকমা রাজা ছিলেন। সময়ের হিসেব করলে অনুমান করা যায়, এসময়ের মধ্যে আরও অনেক রাজা ছিলেন। এর আগে যেমন ছিলেন, ঠিক তেমনি পরেও ছিলেন। রাজা যায়, রাজা আসে। হয়ত এদের নাম আমরা জানি না।

সাত্থুয়া বড়ুয়া ১৮শতকের শুরুর দিকে চাকমা রাজা ছিলেন। তাঁর দুই ছেলে হলেন চিন্দন খান এবং রত্তন খান। চাকমা রাজা সাত্থুয়া বড়ুয়া স্ত্রীর ষড়যন্ত্রে নিহত হন। চাকমা ইতিহাসে চাকমা রাজা সাত্থুয়া বড়ুয়ার স্ত্রী কাত্তুয়া রাণী হিস্রবে পরিচিতি লাভ করেন।

চাকমা রাজা সাত্থুয়া বড়ুয়ার ছেলে চন্দন খান ১৭১১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের দ্বারা প্রথম রাজা নির্বাচিত হন। রত্তন খান ১৭১২ সালে এবং কাত্তুয়া রাণী ১৭১৩ সালে চাকমা রাজ্য শাসন করেন।

জলিল খান ১৭১৫ সালে চাকমাদের রাজা হন। মোগলদের সঙ্গে তাঁর প্রথম দিকে ভালো সম্পর্ক থাকলেও পরে ঝগড়া লাগে। ফলে রাজা জলিল খান আরাকানে পালিয়ে যান এবং ওখানেই মৃত্যু বরণ করেন।

সেরমুস্ত কান ১৭৩৭ সালে চাকমা রাজা হন। তিনি ১৭৫৮ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। সেরমুস্ত খানের মৃত্যুর পর তাঁর চাচাতো ভাই শের জব্বর খান চাকমা রাজা হন। তিনি ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত রাজা ছিলেন। ঐ বছর শের দৌলত খান চাকমা রাজা হন। শের দৌলত খান ১৭৮২ সালে মৃত্যু বরণ করেন। শের দৌলত খানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে জানবক্স খান রাজা হন। তখন বাংলার শাসনভার ইংরেজদের হাতে চলে যায়। এ সময় অনেকদিন নানা কারণে ইংরেজদের সঙ্গে জানবক্স খানের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধ ১৭৮৫ সালে থামে। যুদ্ধে ইংরেজদের বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়। ফলে ইংরেজরা যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।

 জানবক্স খানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে টব্বর খান রাজা হন। কারো কারো মতে, টব্বর খান ১৭৯৩ সালে চাকমা রাজা হন। টব্বর খানের মৃত্যু হলে তাঁর ছোট ভাই জব্বর খান ১৮০১ সালে চাকমা রাজা হন। ১৮১২ সালে চাকমা রাজা জব্বর খানের মৃত্যু হলে ধরমবক্স খান রাজা হন।

চাকমা রাজা ধরমবক্স খান ১৮৩২ সালে মৃত্যু বরণ করেন। ধরমবক্স খানের মৃত্যু পর তাঁর তিন স্ত্রীর প্রথম স্ত্রী কালিন্দী চাকমা রাজ্যের শাসন ভার গ্রহন করেন। রাণী কালিন্দী ১৮৭৬ সালে পরলোক গমন করেন।

রাণী কালিন্দীর পরে ধরমবক্স খানের তৃতীয় স্ত্রী হারি বিবি’র ছেলে হরিশচন্দ্র রায় বাহাদুর চাকমা রাজা হন। ইংরেজ সরকার তাঁকে ১৮৭৪ সালে রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যভার প্রদান করেন। হরিশচন্দ্র রায় বাহাদুরের ১৮৮৫ সালে মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে ভুবন মোহন রায় রাজা হন। ভুবন মোহন রায় ১৯৩৩ সালে মৃত্যু বরণ করেন। রাজা ভুবন মোহন রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম ছেক্লে নলিনাক্ষ রায় ১৯৩৫ সালে রাজ্যভার গ্রহণ করেন। তিনি ভারতবর্ষের বিখ্যাত বক্তা, ব্রাক্ষ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশব সেনের নাতনী ব্যারিষ্টার সরল সেনের কন্যা বিনীতা সেনকে বিয়ে করেন। বিনীতা সেন বিয়ের পর স্বামীর পদবি গ্রহণ করে বিনীতা রায় নামে পরিচিত হন। বিনীতা রায় ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা ছিলেন।

ভারতবর্ষ ভাগ হলে চাকমা রাজার রাজত্ব পাকিস্তান অংশে পড়ে। নলিনাক্ষ রায়ের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে রাজা ত্রিদিব রায় চাকমা রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চাকমাদের ৫০তম রাজা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্থানে চলে যান। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বর্তমান রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়কে ৫১তম চাকমা রাজা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের তত্ত্বধায়ক সরকারের প্রধানের সহকারি উপদেষ্টা ছিলেন।

চাকমা সমাজে রাজার বড় ছেলে সাধারণত পরের রাজা হন। অনেক জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এটাকে বলা হয়, রাজ্য অভিষেক।

চলবে......

 

৩ Likes ৪ Comments ০ Share ৬৬০ Views

Comments (4)

  • - টি.আই.সরকার (তৌহিদ)

    আমি অপেক্ষায় থাকি আবার কখন ভোর হবে-
    ভালবাসার শিশির বিন্দু হব আমি-
    আবারো রোদ্রপুরুষের ধর্ষণের শিকার হতে।
    এভাবেই চলছে জীবন... ভালোবাসায়-ঘৃণায় মাখামাখি।।

    সত্যিই তাই, জীবন যেন ভালবাসায় আর ঘৃণায় মাখামাখি !

    যদি ভুল না করি তবে এটাই আপনার এই ব্লগে প্রথম পোস্ট ! নক্ষত্র ব্লগে স্বাগতম আপনাকে । এই পথে পথ চলা শুভ হোক !

    • - লায়লা মামতাজ রুপা

      হ্যা, এটাই এই ব্লগে আমার প্রথম পোষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই। ভালো থাকুন।

    - মামুন

    চমৎকার অনুভূতিগুলো পরতে পরতে প্রকাশ পেয়েছে!

    ভালো লাগল।

    • - লায়লা মামতাজ রুপা

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

    - সুমন সাহা

    //ভালোবাসা ঘৃণার কোলে বসে
    কেবলি ভালোবাসতে শিখায়।
    এভাবেই কেটে যায় অনন্ত প্রহরগুলো
    পাতা ঝরার এই বাসন্তী বেলায়।//

    এই জায়গাটি অনবদ্য লাগলো। চমৎকার লাগলো এই চরণসহ পুরো লেখাটিই।

    অনেক ভালো লাগলো লেখাটি।

    শুভেচ্ছা জানবেন।

    • - লায়লা মামতাজ রুপা

      অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য রেখে যাওয়ায়। ভালো থাকুন প্রিয়!

    Load more comments...