সমাজঃ
চাকমা জাতির নানান ধরনের সামাজিক নিয়ম-কানুন আছে। সে সকল নিয়ম-কানুন মেনে চাকমা সমাজ চলে। এই নিয়মের উপর ভিত্তি করে চাকমা সমাজ এখনও টিকে আছে।
চাকমা সমাজের প্রধান হলেন চাকমা রাজা। এখন পর্যন্ত চাকমা রাজাদের যে ইতিহাস পাওয়া গেছে তা থেকে জানা যায়, যাদের পদবি ধামেই বা ধাবেং, চেগে এবং খীসা থাকত, তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন রাজা হতেন। ১৭৩৭ সালে ধামেই বা ধাবেং, চেগে পদবি দুটি বাদ দিয়ে দেওয়ান পদবি সৃষ্টি করা হয়। তারপর থেকে দেওয়ান এবং খীসা পদবি’র লোকেরা রাজা হতেন। রাণী কালিন্দী রাজত্ব করতে এসে দেওয়ান পদবি বাদ দিয়ে তালুকদার পদবি চালু করেন।
এভাবে চলতে চলতে একদিন ইংরেজ্রা এদেশে শাসন করতে আসে। তারা এসে আবার রাণী কালিন্দী’র তালুকদার প্রথা বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে কয়েকটি মৌজায় ভাগ করে। প্রত্যেক মৌজায় একজন করে হেডম্যান নিয়োগ দেয়। সেই হেডম্যান ঐ মৌজার শাসন ভার লাভ করে। গ্রামবাসীরা গ্রামে গ্রামে একজন করে কার্বারী নির্বাচন করে। মূলত গ্রামপ্রধাঙ্কে কার্বারী বলা হয়। কার্বারী হেডম্যানের কাছে নিজের জবাবদিহি করে। হেডম্যান নিজের কাজের জবাবদিহি রাজারকাছে করে।
চাকমা সমাজে প্রথমে রাজা, তাঁর পরে হেডম্যান, হেডম্যানের পরে কার্বারীর অবস্থান। এভাবেই চাকমা সমাজ চলে আসছে। ধীরে ধীরে পদবির গুরুত্ব কমে যায়। শুধু তাই নয়, আগের মতো পদবির মাধ্যমে রাজা হওয়ার নিয়ম বাতিল হয়ে যায়।
হেডম্যান মৌজার অধিবাসীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে। অবশ্য হেডম্যান নিজে কাজনা আদায় করে না। কার্বারীর মাধ্যমে খাজনা আদায় করে। হেডম্যান মৌজার শান্তি রক্ষার দায়িত্বে থাকে। বিচার আচারও করে থাকে। তাকে এসকল কাজে কার্বারী সহযোগিতা করে। কার্বারী গ্রামের শান্তি রক্ষার দায়িত্বে থাকে। গ্রামে কোন সমস্যা হলে কার্বারী প্রথমে নিজে সমাধান করার চেষ্টা করে। কার্বারী না পারলে হেডম্যানকে বলে। হেডম্যান এসব সমস্যার সমাধান করে।
চাকমা সমাজে এই তিনজনের পরে খীসা, বৌদ্ধ ভিক্ষু, ওঝা, শিক্ষক, ডাক্তারদের অবস্থান। এ অনুসারে তাঁরা সকলের কাছে সম্মানিত।
চলবে...