Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চলতি পথের গল্প

 

রাত নেমেছে মাত্র, সন্ধ্যেটাকে জোর করে সরিয়ে দিয়েসময়।  একটা মায়াবী সন্ধ্যার শেষে দারুন একটা রাতের শুরু হতে যাচ্ছে। আমার মত মজুরেরা বাড়ি ফেরার জন্য উসখুস করছে। মাঝ আকশে ঘোলাটে চাঁদ নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে মেঘের ফাক থেকে। হালকা বাতাসে ধুলোর সাথে উড়ছে কতগুলো কাগজ। আমার মতই হাজারো শহুরে হেটে চলছে ফুটপাত ধরে, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, পাশে কে বা কারা আছে দেখার সময় নাই। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। শরীরের ক্লান্তিটাকে দুর করার জন্য এককাপ চা হলে মন্দ হয় না। কয়কেজন মাঝ বয়সী লোক বসে আছে মোড়ের টং দোকানটায়, চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই সিগারেটে টান দিচ্ছে কেউ, পরম তৃপ্তির ছাপ চোখেমুখে অতুপ্ত আত্মাটাকে সাময়িক তৃপ্তির স্বাদ দিতে আমিও দাড়িয়ে গেলাম ওখানে। কড়া লিকারের চা, কিছুটা তিতকুটে, প্রতিটা চুমুকেই মুখটা ভিন্ন রকম স্বাদে ভরে গেল। এই মুহুর্তে প্রেয়সির হাসি নজর এরিয়ে যাবে নিমিশেই, তার চোখের অব্যত্ত ভাষা বুঝতে চাইবেনা মন, চা-সিগারেটেই ডুবে থাকবে সারাক্ষন। প্রেমিকার স্পর্শ পাওয়ার আকুলতাও ভুলিয়ে দেয় এই টং দোকানের চা। ঠোটের কোণে কর্পোরেট স্টাইলের মাপাহাসি নিয়ে বিল দিয়ে বিদেয় হই। কানে হেডফোন গুজে ডুবে যাই আমার নিজস্ব জগতে........... আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।

 

মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা ট্রাফিকের পাশে কেউ এসে দাড়ায়, হাসি মুখে শুভেচ্ছা বিনিময়, হাতে হাতে টাকা। লেনদেন চুকিয়ে চলে যায় যে যার মত। আমিও চলে যাই আমার মতই, জঞ্জালে ভরা, ধুলোভরা আমার প্রিয়তমার বুকে হেটেচলি আমি আমাকে নিয়েই। টুংটাং শব্দে বেলবাজিয়ে চলে রিক্সাওয়ালা। দুইজন বৃদ্ধ উচ্চস্বরে জিকির করতে থাকে, অনেকেই চোখ ঘুড়িয়ে দেখছে তাদের, কেউ কেউ কানাঘুসা করছে। কেউ হাসছে, ওদিকে তাদের খেয়াল নেই, তারা জিকিরে ব্যস্ত!! পাশ থেকে কেউ বলে ওঠে "মুখে দাড়ি নাই, মাথায় টুপি নাই, আবার চিল্লায়া চিল্লায় জিকির করে!! হালা বাংলাখোর!!!" হো হো করে হেসে ওঠে তার সাথীরা!! আমার হাসিটা সেই নির্দিষ্ট প্রস্থেই আছে। ধর্মেরও তাহলে ব্র্যান্ডিং হচ্ছে!! রেজিস্টার্ড ট্রেড মার্ক!! আজব!! ভাবনার পাশ গলে ফিরে আসি নিজের কাছে। ফুটপাতের দেয়াল ঘেষে মুখ ঘুড়িয়ে দাড়িয়ে আছে জনাদুয়েক লোক, কারো ভাষায় তারা হালকা হচ্ছে!! রং খসে পরা সেই দেয়ালে লেখা "সৎ লোকের শাসন চাই"। কে কার দ্বারা শাসিত হবে এটা নিয়ে দ্বিধাভক্ত আমরা এটা নিয়েই গবেষনা করি, সবাইকেই সুযোগ দেই সবাই নিজ উদ্যেগে নিজেদের শোষণকর্ম চালিয়ে যায়, শোষিতরা পরে থাকে ওই দেয়ালের পাশেই, পরিত্রানে পথ কোথায়?? 

 

সামনের ল্যাম্প পোষ্টের বাতিটা নষ্ট, অনেকটা জায়গা জুড়ে বৃত্তাকার অন্ধকারটুকু যেন আমাকে উপহাস করছে!! এত এত আলো মাঝে এই আধারটুকু আমার প্রতিনিধিত্ব করছে!! কখনো আমিও হয়তোবা এভাবেই আলো ছড়িয়েছিলাম কারো জীবনে। এখন আমিই আধার হয়ে বসে আছি!! আমার অবস্থানে......পাল্টে গেছে শুধু সময়।

 

 

মসজিদে আযান পরে, রাস্তার পাশের দোকন গুলোতে শিলা-মুন্নীদের কান ফাটানো গান, হোটেলের সামনে এসেই বুঝলাম এইমুহুর্তে পেটে কিছু দেয়া উচিত। পকেট হাতরে কয়েকটা দশ টাকার নোট খুজে পেলাম। গরম গরম আলূপুরি আর সাথে মাংসের ঝোল, সন্ধ্যের খাবারটা মন্দ হল না। হোটেলের বিল চুকোতেই বেয়ারাটা হাসিমুখে সামনে হাজির, অবশিষ্ট পাচঁ টাকার নোটা তার হাতে গুজে আবারও রাস্তায় নেমে যাই। সামনে একটা রিক্সার গ্যারেজ, রোজকার মত আজও সেখানে সান্ধ্যকালীন গানের আসর বসেছে। ঢোল আর বাশি তালে তালে উচ্চস্বরে গান গাইছে একজন। বাকীরা মাথা দুলিয়ে হাতে তালি দিচ্ছে। জারি গান, পালা গানের আসর। খুব কৌতুহল জাগে, তাদের দিনালিপি জানতে। কংক্রিটের শহরে এখনও তারা ধরে রেখেছে নিজেদের বিনোদন, পাশ থেকে কেউ বলে ওঠে, কল্কিখোরের দল!!! খায় আর পিনিক লয়!! প্রত্যুতরে বলি "কেন করে?" আবারও ভেসে আসে কানে ------ এইটাই একটা পিনিক!!

 

 

ধোয়াটে চাঁদ এখন অনেক উজ্জল, হালকা একটা আলোয় আলোকিত পথ, রোজকার মত আজও দাড়িয়ে গেলাম সেই নারকেল গাছটার নীচে। খস খস করে শব্দ হচ্ছে, বাতাসে পাতা নড়ার এই শব্দটা বেশ ভালই লাগে, পাতার আড়ালে চাঁদ মামাও বেশ খুশি খুশি ভাবে দাড়িয়ে আছে!! কেউ একজন বারান্দায় আসে, অন্ধকারের মাঝে, চাঁদের তরল আলো তার বারান্দায় পৌছায় না, মোবাইলের হালকা আলোয় তার উপস্থিতি টের পাই। খানিক বাদে খুদে বার্তার সংকেত!! অভিমানী মেঘ মুখ গোমড়া করে বসে আছে বারান্দায়...... কারনটা সে বলে না। মোবাইল স্ক্রীন জুড়ে তার অভিমানী অভিযোগ!! এসবে বিকার নেই আমার, হাজারো অভিযোগ উপেক্ষা করে আমি খামখেয়ালি হয়েছি অনেক আগেই, বেহিসেবী সময় আবার টাট্টু ঘোড়ায় ছোটে। অভিমানীর অশ্রু উপেক্ষা করে হেটে চলি ধুলো মাখা পথ মাড়িয়ে, অন্ধকারে হারিয়ে যাই আমি আমার মতই, সবার অলক্ষে চশমাটা খুলে হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নেই। কাধে কারো স্পর্শের অভাব বোধ করছি খুব। পেছনে তাকাই, কেউ নেই, অশরীরী কন্ঠ কেউ বলে ওঠে এইটাই একটা........... থামিয়ে দেই তাকে, নিজেই বলে উঠি এইটাই ভালবাসা।

০ Likes ১৪ Comments ০ Share ৭৬৯ Views

Comments (14)

  • - মাসুম বাদল

    ভালো লাগলো কবিতার কথা ... 

    • - ইখতামিন

      অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই

    - নীল সাধু

    বেদনার আবহ কবিতা জুড়েই 

    • - ইখতামিন

      অনেক অনেক ধন্যবাদ নীল সাধু ভাই

    - সনাতন পাঠক

     

    শুভেচ্ছা রইলো।

    • - ইখতামিন

      অনেক অনেক ধন্যবাদ

    Load more comments...