Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চলছে সময়!!!!! জমছে ভালোবাসা!!!!!

[সংযুক্ত ছবিটি গল্পকার ও কবি মামুন ম আজিজ ভাইয়ের ফটোগ্রাফী থেকে সংগৃহীত] 

 

-      আপু, আপনার সাথে আজকে দেখা হইছিলো। নীল’দার বই কিনলাম। আপনি দেখি ফেবু’তে আমার সাথে আগে থেকেই আছেন! (বলেই একটা হাসির ইমো)

-      আরে, ছদ্মনামে থাকলে কি করে চিনবো বলো?? কিন্তু চেহারাটা বড্ডো চেনা চেনা লাগছিলো। কোথায় যেন দেখেছি এই টোল পড়া হাসি হাসি সুন্দর মুখশ্রী!

-      হাহাহা! আমি কিন্তু তখন বলেছিলাম, আমি ফেসবুকে ফিনিক্স নামে আছি। আপনি বোধহয় খেয়াল করেন নাই। (আবারো হাসির ইমো)

-      ও! (বেজার মুখের ইমো) আসলে বাসায় ফেরার টেনশন চেপে বসেছিলো তখন। রাত হয়ে যাচ্ছিলো তো!  

-      বাসায় তো ফিরছেন, তাই না আপু?

-      আমি এখন লেপের ভেতরে আছি। (একটা দেতো হাসির ইমো!)...

 

আজকে বইমেলার ২য় দিন। আমারো। নীল দা’কে আগেই বলে রেখেছিলাম যদিও যে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় যাবো। কিন্তু শেষমেশ ঢাকার বিখ্যাত জ্যাম দেরী করিয়ে দিলোই। তবুও বলবো কিছুটা আগেই পৌঁছেছি। এর পেছনে অবদান নাজনীন পলিকে দিতেই হয়। ও দুপুরে আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলো বিকেল চারটায় এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারবেনা আর আমার সাথে দেখা করতে চায়, আমি যেন তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করি। ফোনে পলির খিলখিল রিনিঝিনি কণ্ঠই আমাকে বইমেলায় যেন তাড়িয়ে নিয়ে চললো। আজকে দুপুরে রেস্টও নিতে পারিনি। তারুণ্যের উচ্ছলতা ভরা পলি’র হাসি আমাকে হাতছানি দিয়ে এমন করে ডাকছিলো যে আমি উঠে পড়িমড়ি করে ছুটলাম বইমেলার দিকে। এমনকি বাসার চাবিটাও ব্যাগে করেই ছুটলাম। সেটা যে কাউকে দিয়ে যেতে হবে নইলে বাবা-মা বাসায় ফিরতে গেলে সমস্যা হতে পারে, সেটাও খেয়াল নেই। সেই চাবির কথা মনে পরলো একেবারে বাসায় ফেরার সময়। কারণ তখন রাত বাজছে ন’টা। এমনিতে নটা-দশটা কোন সমস্যা না! কিন্তু- বইমেলার ফাঁকা মাঠে ঠান্ডা বাতাসে বসে থেকে আমার শরীর খারাপ করবে ভেবে মা যে হাড়িমুখ করে একটা রাম ধমক দিবে সেটা মনে করেই আমার পিলে চমকে যাচ্ছিলো। কেননা তার অভিমানী মেয়ে আর সব সহ্য করতে পারে কিন্তু মায়ের একটা ছোট্ট বকা খেলেও যে চোখ ভরে জল আসে। তখন মনটা অনেকক্ষণ ঝুম ধরে থাকে; কোন কিছুতে মন বসে না!!

বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় মাত্র উঠেছি আর পলি’র ফোন। আমি রিসিভ করেই বলে উঠলাম-“এইতো শাহবাগ আছি। আপনি কি বাসায় চলে যাচ্ছেন?” (হাহা! মোবাইলে কত্ত সুবিধা! এখনো হাতিরপুল বাজারের কাছেই আসলাম না! ফট করে একটা মিথ্যে কথা বলে ফেললাম! অথচ, আমি যে বলি-খুব একটা মিথ্যে বলিনা আমি! ভুয়া হয়ে যাচ্ছি!! কথায় কাজে মিল নাই!)

পলি যেই জানালো- ‘না না ! আমি তো এক রঙা এক ঘুড়ি স্টলের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি’, ওমনি আমি বলে দিলাম-‘এইতো আর দশ মিনিট!’ অবশ্য এই কথাটায় ভুল হয়নি তেমন। রিকশা থেকে নেমে টিএসসি গোল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমী পর্যন্ত হেঁটে যেতে না হলে ঠিকই পাক্কা দশ মিনিটেই পলির কাছে পৌঁছে যেতে পারতাম। আমি রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ঝড়ের বেগে হাঁটা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতেই মামুন ম আজিজ ভাইয়াকে কল দিতেই শুনি উনিও পলির সাথেই আছেন। আরে বাহ! সব লেখক-লেখিকা'দের আজকে একসাথে পেয়ে গেলাম। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে! সমস্ত গায়ে একটা পুলকিত শিহরণ! এ আনন্দ আসলে বুঝানোর উপায় নেই! ছোট্ট আট দশ হাত পথ! মনে হচ্ছে উড়ে চলে যাচ্ছি লিটল ম্যাগ চত্বরে!

স্টলে পৌঁছেই নীল’দা কে সরি বলা ছাড়া আর কি বলতে পারি! হাসিমুখে ভাইয়া বসে যেতে বললেন স্টলে। এদিকে পলি ছবি তুলতে চায়। তাই ছবি তুলবো আগে না বসবো নাকি বাঙ্গালিয়ানা শাড়িতে পলি’র রুপের খোলতাই দেখবো কিছুই বুঝছিনা। আমি যে খুশীতে ফুলে ফুলে একেবারে এত্ত বড় হয়ে যাচ্ছিলাম, কখন না আবার খুশীর বেলুন দুম করে ফুটে যায়! এর মধ্যেই পলি’র ভাইয়া আমাদের গ্রুপ ছবি তুলে দিলো নীল’দার ক্যামেরায়। ক্লিক! ক্লিক! ক্লিক!

 [নীল'দা]

[পাঠক ও লেখক, কিংবা লেখক ও পাঠক; উভয়েই ক্রেতা ও বিক্রেতার ভূমিকায়]

[ঠান্ডায় জবুথবু এক পাশে আমি, পাশে নাজনীন পলি, পলি'র ভাই, মামুন ম আজিজ ভাই, ও পেছনে কনক'দা]

পলির ভাই একদম পলি’র কার্বন কপি! আর কি যে সুন্দর দুই ভাই-বোন। এরপরে পলি আর আমি গিয়ে স্টলে বসতেই কনক ভাইয়া, পলির ভাইয়াটা কোথায় যে উধাও হয়ে গেলেন কে জানে! ওদিকে নীল’দা ও আমাদেরকে রেখে এক ঘন্টার কাজের উদ্দেশ্যে কি এক কাজে ছুটলেন। খুশী খুশী মনে তখন নাজনীন পলি আর মামুন ম আজিজ ভাইয়ার সাথে আমি পুরাই বকবকে পাখি হয়ে গেছি। কথা আর থামে না! পলি বইমেলায় আসবে শুনে আমি ওকে আগেই বলেছিলাম-আমাদের কথার তোড়ে আশেপাশের সবার কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। সেটাই বোধহয় সত্য হয়েছিলো নইলে স্টলে আগে থেকেই বসা কণক ভাইয়া আর মামুন ম আজিজ ভাই কেন কিছুটা সময় থেকে চলে গিয়েছিলেন?  

অনেকক্ষণ নানান বিষয়ে কথা বলার পরে এক সময় এলো পলি’র ননদ। এর মধ্যে আমার আর নাজনীন পলি'র আপনি থেকে তুমিতেও নেমে আসা সাড়া। ননদ, ভাই, পলি ও আমি কিছুক্ষণ থেকে যখন ওরা তিনজন আমাকে একা রেখে চলে গেলো তখন আঁধার আর ঠান্ডা বেশ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। আমার আশেপাশের স্টলে বন্ধু বা পরিচিতের ভিড় দেখা গেলো। আমাদের সাদাকাগজ (এক রঙা এক ঘুড়ি) স্টলের সামনে পাঠক বা প্রদর্শক আসা মাত্রই আমি চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়াই। সামান্য কথা বলে মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টায় নামি। বই হাতে নিয়ে দেখতে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকি-‘কিনে ফেল বাপু! একটা বই কিনে ফেল!’

কিন্তু নাহ! পাঠক শুধু দেখেই। কিনে না! ‘হালারা পুরা ফাউল! ঠান্ডার মধ্যে বসে আছি। একটা বই কিনলে কি হয়?’ মন খারাপ হতে থাকে একা একা বসে থাকা আমার। (মানুষকে বকা দিচ্ছি? আমি নিজেই তো এরকম। আগে কয়েকদিন বই নাড়াচাড়া করবো। তারপরে কিনবো।)

একা একা বসে থেকে থেকে আমি বোরিং। কে বা কারা নাকি স্টলে প্রতিদিনই আসবে! তাতির দাঁত, কাকের দাঁড়ি কাউকেই দেখলাম না! পুরো লিটল ম্যাগ চত্বরের এই মাথা থেকে ঐ মাথা আমার চোখের দর্শন চলতেই লাগলো নিরবে। স্টলের সামনে এসে দাঁড়ানো কারূ কারূ ভাব দেখলে মনে হয় ব্লগার। তখন তাদের ব্লগ-নিক আছে কিনা, লেখে কিনা জিজ্ঞেস করি। কেউ কেউ খুশী করে। কেউ কেউ হতাশ করে। এভাবেই কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে উঠলো। মামুন ভাই থাকতেই গল্পকবিতাডটকম এর সোহেল মাহরুফ এর সাথে পরিচিতি হলো। এইবারের বইমেলায় তার নিজস্ব পাচটি বই বেরুবে। প্রত্যেকবারই এরকম সংখ্যায় বই বেরোয় শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম।

এক সময় আমার বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে যেতে থাকে কিন্তু নীল’দার ফেরার খবর নাই। আমি বার্তা পাঠাই-‘একা হয়ে গেছি, নীল’দা!’ সাথে সাথেই জবাব আসে- ‘এইতো আর পাঁচ মিনিট!’ ভাইরে অপেক্ষার পাঁচ মিনিট কখন যে পাঁচ-পাঁচা পঁচিশ মিনিট হয়ে যায় তার হিসেব থাকেনা। আমি এদিকে ক্ষুধায় ঠান্ডায় অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আমি যেমন উদ্যমী তেমনি আবার নেতিয়ে পড়ি খুব তাড়াতাড়ি। এই কারণেই আমার নাম ফুল রাখা সার্থক মনে হয়!

নীল’দার খুব ভক্ত একজন এসে বই কিনলো একটা। আবার সাথে কাকে নিয়ে এসেছে তাকে নিয়ে লিটল ম্যাগ চত্বরে সময়ও কাটল কিছুক্ষণ। নীল দা এসে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার সাথে তাকে, বা তার সাথে আমাকে। আরেক মিষ্টি মুখশ্রী!

ভাবছিলাম-কোথায় যেন দেখেছি কন্যা তোমাকে?

সেই আপুটাই আবার ফেসবুক এ এসে ইনবক্সে কথা বলতে শুরু করে। আজকের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ কি ছিলো ভাবতে বসলে অনেক গুলো পয়েন্ট চলে আসে। ব্লগার ফিনিক্স, ব্লগার নীল দর্পণ, পিঙ্কি স্বপ্ন, সোহেল মাহরুফ, কণক (এই ভাইয়াটাকে এখন আর মনে করতে পারছিনা। স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে নাকি এখন আমার বিশ্রাম দরকার বুঝছিনা! হিহি!) , কালপুরুষ পোয়েট্রি কে মুখ চেনা হলো। দেখা হলো। বাস্তবে কথা হলো।

বইয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে নিজের লেখা সম্বলিত বই নিজের হাতে পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার আনন্দটাই একেবারেই আলাদা। আমি জানি না, অন্যদের কিরকম অনুভূতি হয়। আমি খুব তরল আনন্দে দ্রবীভূত হই আমার আশেপাশের সমস্ত অনুভূতির সাথে মিলেমিশে আমি সময়টাকে ভীষণ উপভোগ করি। আর এ কারণেই আমার একটা মাইন্ড টাইপিং যন্ত্রের খুব বেশি প্রয়োজন। এত আনন্দে ডুবে থাকা এই মানুষটার চারপাশের ঘটে যাওয়া প্রতিটি মুহুর্তই যে একটি করে গল্পের জন্ম দিতে থাকে!

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ।। এরকম একই বিষয়ে আরও অনেক গল্প-কাহিনী বইমেলার শেষ দিন পর্যন্ত কয়টি লিখিত হবে তার হিসেবটা এই মুহুর্তে জানা নেই।।   

 

[ছবিগুলো সংগৃহীত]

১ Likes ৪৭ Comments ০ Share ৬৮২ Views

Comments (47)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    অসাধারন চারু দা

    মাতৃভাষার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল

    • - চারু মান্নান

      একুশের শুভেচ্ছা,,,,,,,

    - কামাল উদ্দিন

    • - চারু মান্নান

      একুশের শুভেচ্ছা,,,,,,,

    - মোঃসরোয়ার জাহান

    তাহলে, সেই একই আবর্তে!
    রাত দিনের ঘূর্ণিপাকে;
    বিমহিত বিষ্ময় জোড়া তালির মিছে আশ্ ফলন।

    ..............দারুন লাগলো।

    • - চারু মান্নান

      একুশের শুভেচ্ছা,,,,,,,

    Load more comments...