অনেক আগের কথা আমি তখন বি.এ.এফ শাহীন কলেজ (কুর্মিটোলা) শাখাতে পড়তাম। তা আমি ছিলাম স্কুল শাখায় শ্রেণী ছিল চতুর্থ। স্কুলে যাতায়তের মাধ্যম ছিল বাস। প্রতিদিন আমাদের বাস ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে যেত, আমরা ঐখান থেকে স্কুলের উদ্দেশে বাসে উঠে পরতাম। মাজেমধ্যে বাস না আসলে এক বন্ধুর সাথে তার বাবার মোটরসাইকেল অথবা লোকাল বাসে করে স্কুলে চলে যেতাম।
বেশীরভাগ সময় আমাদের বাস আসতে দেরী করতো অথবা অনেক সময় আসতোনা তাই সকালের প্রথম ক্লাসে সবসময় আমরা লেট করেই পৌছাতাম। ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে অনেক সময় দেখা যেত ক্লাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। ম্যাডাম খুব রাগারাগি করতো অনেক সময় প্রেজেন্ট নিতে চাইতোনা। ক্লাস ফোরের ছেলে ম্যাডামকে বুজানোর এতটুকু সামর্থ্য ছিলোনা যে আমিতো ইচ্ছা করে দেরী করিনি। আর আমাদের সময়টাতে ম্যাডাম বা স্যার এর মুখে মুখে কথা বলা মানে বেয়াদবির সামিল যার শাস্তি ছিল আরো ভয়ানক।
মড়ার উপর আবার খাড়ার ঘা ছিলো, যেদিন স্কুলে আগে আগে ঢুকতাম ভয়ে থাকতাম এক জন স্যার এর কারনে। স্যার কে আমরা সবাই যতসম্ভব দাদু স্যার বলে ডাকতাম। তার বাবা একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন অনেকদিন আগের কথা তাই নামটা ভুলে গেছি। আমরা যখন সবাই বাস দিয়ে নামতাম তখন তিনি বাহিরে দাড়িয়ে থাকতেন। আরে বাব্বা তারে দেখলেই কলজের পানি শুকিয়ে যেত।
তা ঐসময় আমার স্কুল হাতখরচা ছিল দুই টাকা কি পাঁচ টাকা কোনদিন আবার শুন্য হাতে স্কুলে আসতে হতো। সকালে তাড়াতাড়ি বাস ধরার জন্য বাসায় বসে আর নাস্তা করা হতোনা। টিফিন বক্সে করে নিয়ে যেতাম, বেশীরভাগ সময় রুটির সাথে আলুভাজি মাজে মধ্যে ডিম সেদ্ধ বা ভাজি থাকতো। আমি আবার একটু ছোঁচা টাইপের আর শারীরিকভাবে কিছুটা স্থুল ছিলাম। সবসময় পেটের মধ্যে ক্ষুধায় ছুঁচো দৌড়াদৌড়ি করতো।
প্রথম ক্লাস কিংবা দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হওয়ার ফাকে আমার নাস্তা শেষ। পিছনের বেঞ্চে বসতাম স্যার বা ম্যাডামরা ঐভাবে লক্ষ্য করতোনা। আমাদের সময় স্কুলে ক্যান্টিন ছিল দুইটা একটা ছিলো স্কুলের ভিতরে আর একটা বাহিরে। স্কুল শুরু হলে গেট বন্ধ করে দেওয়া হতো। বাসার নাস্তা শেষ হয়ে গেলেও আমার ক্ষুধা কমতোনা। নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে টিচারদের আসতে যা সময় এই ফাকে আমি ক্যান্টিন থেকে চানাচুর নাহলে প্যাটিস কিনে খেতাম।
যাহোক এবার আসল কথায় আসি, আমি একটু মুখচোরা বা লাজুক টাইপের ছেলে ছিলাম। স্যার যখন ক্লাসে ডাকতেন পড়া জিজ্ঞাসার জন্য অথবা সামনে এসে সবার সামনে দাড়িয়ে মুখস্থ বলতে বলতেন আমি ঐসময় থ মেরে যেতাম। স্যার সামনে ডাক দিলেই মনে হতো আমার দুনিয়া শেষ। আমার নিজের আত্মস্থ হতে অনেক সময় লাগতো অনেক সময় পড়া পারা সত্ত্বেও মুখ থেকে বের হতো না মোট কথা আমি অচল হয়ে যেতাম ঐ মুহূর্তে।
তা একবার এক ক্লাসে স্যার আমাকে ডাকলেন। স্যারের ডাক শুনে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আমাকে কি জানি লিখতে বললেন ব্ল্যাকবোর্ডে আমি যথারীতি থ মেরে আছি পুরা হ্যাংওভার। স্যারের অনেক ধমকানির পর অনেক কষ্টে লিখলাম। লেখা শেষে স্যার বললো ফুলস্টপ দে, আমি আবারো থ মেরে গেলাম এরপরে স্যারের ধমকানিতেও কাজ হচ্ছেনা ফুলস্টপ নামে যে একটা কিছু আছে আমার মাথায় ঢুকছিলোনা। আমাদের ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমিতো চরম লজ্জায় বেকুবের মতন স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি। অবশেষে এই যন্ত্রণা থেকে স্যার আমাকে মুক্তি দিলেন।
ফুলস্টপ কি এটাও জানস না গাধা , চক দিয়া ব্ল্যাকবোর্ডে একটা গুঁতা মার।
তারপরেও আমি অনেকক্ষণ থ মেরে ছিলাম।
Comments (6)
শুভ কামনা। ভাল থাকুন।
বেশ ভাল লাগল।
বহুত কষ্ট করতাছেন আপনি জাতি বুঝে কম ৷