শ্রদ্ধেয় শ্বশুড় আব্বা,
এক বুক যন্ত্রনা,আধা পাতিল দুঃখ, এক মুঠো জ্বালা,দুই কাপ ক্ষোভ, তিন চামচ লজ্জা আর এক চিমটি রাগ নিয়েই বলতে হচ্ছে আমাকে-
গাধার মত খাটি
সারাদিন তবুও জোটেনা কামাই,
বউয়ের কথায় উঠি-বসি
আমি এক ঘরজামাই!
জ্বি আব্বা, আমিই সেই হতভাগা ঘরজামাই।ডিগ্রী পাসের পর যখন আমি চাকরি খোঁজার নামে জুতার তলা ক্ষয়ে ব্যস্ত ঠিক তখনই আপনার মেয়ের সাথে আমার উথাল-পাথাল পিরিতির খবর দু’বাসায় জানাজানি হয়ে যায়। ফলাফল, আমার বাবার হোটেল থেকে অর্ধচন্দ্র লাভ এবং লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ঘরজামাইরুপে আপনার হোটেলে পদার্পন। সেদিন থেকেই গলায় অদৃশ্য এক দড়ির উপস্থিতি অনুভব করতে থাকি যে দড়ির অপর প্রান্তে কখনো স্ত্রী,কখনো আপনারা, এমনকি মাঝে মাঝে কাজের বুয়াও থাকে!ঘরজামাই হলেও তো আমি জামাই,না কি? লোকে বলে-“শ্বশুড়বাড়ী মধুর হাঁড়ি” আর আমি বলি -“শ্বশুড়বাড়ী বউয়ের ঝাড়ি।” সকালে ঘুম ভাঙ্গে বউয়ের ঝাড়ি শুনে। তারপর বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে বাজার করা, কাপড় কাচা এমনকি শ্বাশুড়ী আম্মার মাথা আঁচড়ে উঁকুন মারার কাজটাও করতে হয় আমাকে ।কিন্তু বিনিময়ে জোটে গালমন্দ।
সেদিন পাশের বাসার ভাবির অনুরোধে তাদের বাজার করে দিয়েছি বলে আপনার মেয়ের একটা কিল,ঘুষিও মাটিতে পড়েনি। আহা! বিয়ের আগে এই কিল,ঘুষি কতইনা মিষ্টি লাগত!
ঘরজামাইরা যে একটা পরিবারের কতটা উপকারে আসতে পারে দেখুনঃ
- ঘরজামাই এনেছেন বলেই এক পয়সাও যৌতুক দিতে হয়নি আপনাকে। পরবর্তীতে যৌতুক ছাড়া বিয়ে দেবার কথা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন। যৌতুকবিরোধীদের আইকন হয়ে যেতে পারবেন রাতারাতি।
- এদেশে আবাসন সমস্যা প্রকট।ঘরজামাইরা শ্বশুড়বাড়ীতে থেকে এই সংকট লাঘবে গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখে।তাছাড়া বেশি ভাগ শ্বশুড়বাড়ীই তো মেয়ের বিয়ের পর মানুষের অভাবে খা খা করে।
- ঘরজামাইয়ের উছিলায় চোখের সামনে আদরের মেয়ে, নাতি-নাতনিদের বড় হওয়া দেখছেন।কয়জনের এই সৌভাগ্য হয় বলুন !
- কাজের লোকের এই আকালের দিনে নিজ কাঁধে সব দ্বায়িত্ব তুলে নিয়ে আপনাদের নাক ডেকে ঘুমানোর সুযোগ করে দেয় এই ঘরজামাইরাই।
- বাজার করতে দিলে প্রত্যেক কাজের লোকই দু-চার টাকা মেরে দেয়।ঘরজামাইরা তা করলেও সমস্যা নেই। কারন টাকাটা তো শেষ পর্যন্ত আপনার মেয়ের জামাইয়ের পকেটেই যাচ্ছে। চোর- বাটপারদেরকে না দিয়ে নিজের আপনজনকে না হয় দু-চার টাকা মারার সুযোগ দিলেনই!
- এলাকায় একমাত্র ঘরজামাইয়ের শ্বশুড় হিসেবে আপনাকে এক নামে চিনে সবাই। এটাও কি কম পাওয়া?
- মেয়ের জামাইকে এভাবে ঘরে বসিয়ে খাতির-যত্ন করার এমন সুযোগ কজনই বা পায় বলুন!
কিন্তু এ বাড়িতে জামাই আদরের কোন নাম-গন্ধ তো নেইই, বরং রীতিমত জামাই নির্যাতন হচ্ছে।এই সমাজে ঘরজামাইদের ভাল চোখে দেখা হয় না।ঘরজামাই নির্যাতনের কথা মিডিয়ায় তেমন আসেও না।তাই আমাকেই বাধ্য হয়ে আমার অধিকার সংরক্ষনে কিছু দাবি পেশ করতে হচ্ছে।এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনরুপ ‘চুদুর-বুদুর’ করা হলে দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘরজামাই নির্যাতনের মামলাটি হবে আপনারই বিরুদ্ধে! দাবিগুলো নিম্নরুপঃ
- ঘরজামাইদের শ্বশুড়বাড়ীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়।কিন্তু আপনাকে জমি-জমা আপনার মেয়ের নামে না দিয়ে আমার নামে লিখে দিতে হবে। (মু…হা…হা…হা…)
- সারাদিন কাজ করে কুল পাইনা তাই আমার বলে কি চিত্ত-বিনোদনের চাহিদা নেই?দিনে অন্তত ৩ ঘন্টা করে দু’বার সপরিবারে বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ দিতে হবে।
- আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার মাঝে আপনার বাম হাত ঢোকানো বা নাক গলানোর চেষ্টা করা যাবে না।
- ঘরজামাই হবার পর থেকেই চর্চার অভাবে নিজ়ের সুপ্ত প্রতিভা লুপ্ত হতে বসেছে।কিন্তু এই প্রতিভা তো আর চেপে রাখা যায় না!বিভিন্ন চ্যানেলে যেভাবে নানা পেশাজীবিদের প্রতিভা অন্বেষনের অনুষ্ঠান হচ্ছে তাতে যে কোন দিন ঘরজামাইদের প্রতিভা অন্বেষনের অনুষ্ঠান শুরু হতে পারে।তারই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনতিবিলম্বে আমাকে পাশের গলির চিপায় নতুন চালু হওয়া নাচ-গান প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তি করাতে হবে।
- পাশের বাড়ীর ভাবির সাথে খোশমেজাজে গল্প চলাকালে তাতে বাধা দেয়া যাবে না।
আশা করি এ দাবিগুলো পূরন হলে আমার মত আরো অনেকেই ঘরজামাই হতে চাইবে।সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলার প্রতিটি ঘর ঘরজামাইদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে আর চারিদিকে রব উঠবে-
“রাজার হালে থাকি সারাদিন খেয়ে যাই রসমালাই,
আরাম-আয়েশ করতে থাকি আমি এক ঘরজামাই”!
ইতি,
আপনার একমাত্র মেয়ের একমাত্র ঘরজামাই
Comments (2)
পোস্টের ফন্ট সাইজ খুবই ছোট বলিয়া মনে হইতেছে। ওয়ার্ড ফাইলে বড় করিয়া আবার পোষ্ট দিলে কৃতার্থ হইব। সাথে বোল্ডও উঠিয়ে দিবেন প্লীজ।
কষ্ট হইলেও পড়িয়া নিয়াছি। যেহেতু ইহা একখানা ধারাবাহিক তাই এখনই ঘটনার আদ্যোপান্ত বুঝিবার চেষ্টা করিলে লাভ হইবে না। তবে ইহা যে একখানা দুঃখের কাহিনী তাহা বুঝিতে কোন সমস্যা হয় নাই। রাজুকে টোকাই বলিয়াই ধারণা হইল। তাহার পিতা পঙ্গু। জন্মের সময় মামা বিগত হইয়াছে বিধায় পিতা তাহাকে দোষ দিয়া থাকে, যদিও ইহা তাহার কারণে হয় নাই। বোধ করি অভাবের কারণেই এমনটি ধারণা করিতেছে। বাকী পর্ব পড়িয়া বিস্তারি মন্তব্য করিব। গল্পের প্রথম পর্ব আমার কাছে বেশ ভালো লাগিল। আমার ধন্যবাদ গ্রহণ করিবেন সেলিনা ইসলাম।
পড়তে কষ্ট হওয়ায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি । লেখাটা ঘন্ড করে দেবার কোন ইচ্ছে ছিল না সম্পূর্ণ লেখাটা আসেনা বিধায় বাধ্য হয়েছি । ধন্যবাদ গল্প পড়ে মন্তব্য ও পরামর্শ দেবার জন্য। শুভ্কামনা
ভালো লাগলো। কিন্তু ফন্ট কিছুটা ছোট হলে ভালো হতো।
শুভেচ্ছা রইলো মেলায় বেড়াতে আসার। সাদাকাগজে আছি।
ভাল লাগাই কৃতজ্ঞতা জানাই ..। একজ্ন বলল ফন্ট বড় করে দিতে তাই বড় করেছিলাম আবার আপনার মন্তব্য পড়এ পরিবর্তন করেছি ..আল্লাহ জানে কী হচ্ছে ! ভাল থাকুন
ভাল লাগল গল্প। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ