গুল্লু একটা আংটি পেয়েছে । এই আংটির অনেক ক্ষমতা- আংটিটা আঙুলে দিলেই সে অদৃশ্য হয়ে যায় । সে সবাইকে দেখতে পায়- কিন্তু তাকে কেউ দেখতে পায় না । আংটি পেয়ে গুল্লুর দিনকাল এখন খুব আনন্দে কাটছে । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- এই আংটি অন্য কেউ পড়লে অদৃশ্য হয় না । গুল্লু তার মাকে এই আংটি পরিয়েছিল, কিন্তু মা অদৃশ্য হননি । আংটি টা দেখতে খুব সুন্দর । ছোট একটা হীরা বসানো। হীরা টা সব সময় ঝকঝক করে । এই আংটি টা সে পেয়েছে- সুন্দরবনে ।কতদিন দিন যেন সাগরে বেসেছে !একটা দলের সাথে গুল্লু ফটোওয়াকে সুন্দরবন যায়- তখন দু্বলার চর নামক জায়গা থেকে অদ্ভুত সুন্দর এই আংটি টা পায় । গুল্লু কি তার পাওয়া আংটির যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে ?
গুল্লু বসে আছে একটা পত্রিকা অফিসে । কেউ তাকে দেখছে না- কিন্তু সবাইকে সে দেখছে । গুল্লু একটা কেবিনে ঢুকল- এই কেবিনে বড় কর্মকর্তা একটা মেয়েকে বলছে- হুম, তোমার লেখা আমি অবশ্যই ছাপাবো এবং আমাদের পত্রিকাতে তুমি চাকরীও করতে পারবে । সব ব্যবস্থা আমি করে দিবো । শুধু মাঝে মাঝে আমি তোমাকে আদর করতে চাই। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে জামা খুলছে- আর বড় কর্মকর্তা টি চোখ বড় করে কুকুরের মতন তাকিয়ে আছে । ঠিক এই সময় গুল্লু অদৃশ্যভাবে, বড় কর্মকর্তার গালে একটা ঘুসি দিল । এক ঘুসিতেই বড় কর্মকর্তা ছিটকে পড়লো অনেক দূরে । গুল্লু বলল- ভালো হয়ে জান, নইলে কপালে বহুত খারাবি আছে । আর মেয়েটিকে বলল- ছোট আপা, যাও বাসায় যাও- সব সময় খারাপ মানূষ থেকে দূরে থাকবে ।
পত্রিকা অফিস থেকে বের হয়ে গুল্লু রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে বসল । আংটি টা তার পকেটে এখন। চায়ে চুমুক দিতে দিতে গুল্লু ভাবছে, বউ বাচ্চা আছে- তারপরও অল্প বয়সী একটা মেয়ের সাথে....ছিঃ ।আর মেয়েটাও কেমন গাধী লেখা ছাপানোর লোভে- চাকরীর লোভে....ছিঃ ।মেয়েটাকে একটা থাপ্পড় মারা উচিত ছিল ।হঠাৎ খুব হই চৈ শুনে গুল্লু রাস্তার দিকে তাকালো । দুইটা রিকশাওয়ালা খুব মারামারি করছে- আর পেছনের জ্যামে আটকে থাকা গাড়ি গুলো ব্যাপক হর্ন দিচ্ছে । অনেক দর্শক জমে গেছে- তারা সবাই দাঁড়িয়ে রিকশাওয়ালাদের মারামারি দেখছে । কেউ সামনে এগিয়ে আসছে না । বরং একদল বলছে- গেঞ্জি পরাটার দোষ আর এক দল বলছে শার্ট পড়াটার দোষ । আর দূরে ট্রাফিক দাঁড়িয়ে সেই সব দৃশ্য দেখছে ।গুল্লুর খুব রাগ লাগল- সে হাতে আংটি পরে দড়াম করে ট্রাফিকের মুখে একটা...।ট্রাফিক দূরে ছিটকে পড়ল ।
দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গুল্লু অদৃশ্য হয়ে রেল লাইনে বসে থাকল । বস্তির ছেলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা দেখল । হিমি অসুস্থ ।অনেকদিন হয়ে গেল গুল্লু হিমির কাছে যায় না ।গতকাল সন্ধ্যায় হিমির একটি চিঠি পেয়েছে গুল্লু। চার পৃষ্ঠার চিঠি । চিঠিতে হিমির একটি স্বপ্নের কথা লেখা আছে । গুল্লু ইচ্ছা করলে হিমির সেই স্বপ্নটি সত্য করতে পারে । বিকেলে গেল হিমির বাসায়। হিমি বিছায় শুয়ে রবীন্দ্রনাথের "ঘরে বাইরে" উপন্যাসটি পড়ছিল খুব মন দিয়ে । গুল্লু হিমির পাশে বসে হিমিকে দেখছিল । হিমি বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ল। গুল্লু হিমির কপালে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে একটা চুমু দিলো । তারপর এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে হাতে হাত রেখে বলল- "There’s nothing that I really want:/ The stars tonight are rich and cold/ Above my house that vaguely broods/ Upon a path soon lost in dark." প্রিয় মানুষ গুলো অসুস্থ থাকলে বুকের ভেতর যেন কেমন কেমন করে !
রাত বারোটা। গুল্লু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে । তাকে খুব চিন্তিত লাগছে । আংটি টা তার শা্র্টের পকেটে আছে । হিমির জন্য তার খুব অস্থির লাগছে । হিমি অসুস্থ কিন্তু সে কিছু করতে পারছে না ! সে মনে মনে ভাবল- এই আংটি টা সে নদীতে ফেলে দিবে- বিনিময়ে ঈশ্বরের কাছে হিমির সুস্থতা চাইবে । হিমির চেয়ে আপন আর কে আছে ! গুল্লু একটা ব্যাপার আবিস্কার করেছে- তার যখন খুব অস্থির লাগে- তখন সে রাস্তার এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করে, এতে তার অস্থিরতা কমে যায় । পাশের বাসায় কে যেন গান বাজাচ্ছে- "যদি আমার কোনও পালাবার জায়গা/ না থাকে – দিন, রাত্রি, অন্ধকারে।/ তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।/ ওগো বন্ধু, তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে।"
মধ্যরাত্রে গুল্লু অদৃশ্য হয়ে পথে নামলো । আজ সে অনেকক্ষন হাঁটবে । গুল্লু হাইকোর্ট মাজারের সামনে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে আংটি টি খুলে পকেটে রাখল । সে পর পর দু'কাপ চা এবং তিনটা সিগারেট শেষ করল । গুল্লু হাঁটতে হাঁটতে শহীদ মিনারের সামনে গেল । সেখানে তিনটা ছেলে- রিকশা থামিয়ে একটা দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে । সাথে সাথে গুল্লু পকেট থেকে আংটিটা হাতে পড়ে নিয়ে - তিন ছিনতাইকারীর কাছ থেকে দরিদ্র পরিবার টিকে রক্ষা করল । আংটি টি পাওয়ার পর থেকে- গুল্লু নিজেকে সুস্পার ম্যান ভাবতে শুরু করেছে । তার ইচ্ছা সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবে- দেশের কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে । চুপ করে থাকলে হবে না ।
পরের দিন গুল্লু নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদীর মাঝখানে গিয়ে আংটি ছুড়ে ফেলে দেয় ।তারপর নৌকার পাটাতনে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে গুন গুন করে গান গাইল-"কাছের মানুষ দুরে থুইয়া,/ মরি গো আমি ধড়-ফড়াইয়া,রে।/ দারুন জ্বালা দিবানিশি/ অন্তরে অন্তরে।" ।হঠাৎ বৃষ্টি খুব শুরু হলো- গুল্লুর চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল । বৃষ্টির পানির সাথে গুল্লু চোখের জল মিশে গেল ।
Comments (6)
কবিতার শুরুটা বেশ চমৎকার কিন্তু শেষে এসে চিঠি লিখতে নিষেধ করলে কেন আপু।
ভালোবাসার মানুষ একটু বিরক্ত করতেই পারে তাই না?
এটা ধারাবাহিক চিঠি ।
আগের চিঠিটা পড়লে হয়তো কথার মর্ম ধরতে পারবেন ।
চোখ বন্ধ করে দেখ
এই আমি তোমার পাশে…
হাত বাড়িয়ে দেখ
তোমার হাত আমার হাতে,
আর একটু সম্মুখ এসে দেখ
আমার শ্বাস তোমার শরীরে।
লাল পরী দূর থেকে তোমাকে এতটুকু ছাড়া যে আমার দেবার আর কিছুই নেই।
যাক বাবা অবশেষে প্রমাণিত হল প্রেমের অপর নাম বিরক্ত। বেজায় খুশী হয়েছি আপু আপনার কবিতা খানা পইড়া ।