Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কাছের মানুষ

১০ বছর আগে

গুরু সেই নার্সারী থেকে শুরু (নক্ষত্র ব্লগে আমার প্রথম পোষ্ট )

 যারা উপরের টাইটেলটা দেখে বিখ্যাত সেই প্রেমের কবিতাটার কথা ভেবে দরেই নিয়েছেন এখানে ব্যার্থ প্রেমের পুথি গাথা হবে হবে তাদের কিছুটা হতাশ হতে হবে। আজকে আমার জীবনের কিছু দুংখ্যের কথা শেয়ার করব বলে ঠিক করেছি। তাই পড়ার আগে কেউ চাইলে রুমাল নিয়েও বসতে পারেন কারন যখন পড়বেন তখন হয়ত দেখবেন দুংখ্যের ঠেলায় ভিতর থেকে মোচড় দিয়ে কান্না চলে আসছে।

 

 গুরু বা শিক্ষক সম্পদায়ের কাছে পেদানি খায় নাই এমন বান্ধা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুজে বের করা যাবে না। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই তবে গুরু সম্প্রদায়ের আমার উপর মনে হয় একটু বেশীই ক্ষ্যাপা ছিল। উপর ওয়ালা মনে হয় তাদের পাঠিয়েছেই আমাকে পিটিয়ে তকতা বানানোর জন্য। 

 

সেই নুহু নবীর আমলের কথা আমি তখন তাগরা বালক নার্সারীতে ক্লাস টু বা থ্রি তে পড়ি। আহা সেই সময়টাতে, টারজানের মত এলাকার এই ছাদ থেকে ঐ ছাদ ঘুরে বেড়াতাম ঘুরি আর নাটাই নিয়ে। ঘুরি ধরতে গিয়ে গাছ ভেঙ্গে পড়ার ইতিহাস আছে আমার। সেই কাহিনী অন্যদিন বলা যাবে। 

 

আমার প্রথম পেদানি খাওয়ার শুভ সূচয়া হয় প্রাইমেরি স্কুলে পড়াকালিন সময়ের সেই লজিন মাষ্টারের কাছে। আমার এক বন্ধুর বাসায় পড়তে যেতাম সেই স্যারের কাছে। আমরা বেশ কয়েক জন মিলে পড়তাম তার কাছে। স্যারের মাইর ছিল দুনিয়ার বাইর। যে হোর্ম ওয়ার্ক করে না নিয়ে যেত তার রোজ কেয়ামত ঘটিয়ে ছাড়ত স্যার। আমি সাধারনত পড়া না পারলে সেই দিন আর ভয়ে পড়তে যেতাম না। তবে স্যার ও নাছোর বান্ধা, কয়েক জন সীপাহি মানে বন্ধুকে পাঠিয়ে দিত আমাকে দরে আনার জন্য। আর বন্ধুরাও ঝি স্যার বলে আমাকে ধরে আনার মত মহৎ কাজ করার জন্য বের হয়ে পরত। অবশ্য আমার বাসা থেকে ও বলা ছিল স্যারের কাছে ‘হাড় আমাদের আর মাংস আপনার’ মানে পাইকারি হারে গন ধোলাই দিলেও কোন সম্যাসা নাই।

 

 আমি পানিতে ডুব দিয়ে থাকি, ছাদে বা যেখানেই লুকাই না কেন কোন ফায়দা হত না। বন্ধুরা অত্যান্ত নিষ্ঠা এবং বিচক্ষনতার সাথে আমাকে খুজে বের করে চিৎপটাং করে চার পাচজনে মিলে ধরে নিয়ে আসত। মাঝে মাঝে ভাবি সেই বন্ধুরা যদি র‍্যাব বা গোয়ান্দা সংস্থায় যোগ দিত তাহলে নিশ্চিত একটা অপরাধীও পালিয়ে বাচতে পারতে না! আমাকে যখন পেদানি দিত তখন বন্ধুরা চেয়ে চেয়ে তামশা দেখত এবং মুখ টিপে টিপে হাসত । মাইর খাওয়া দেখার মধ্যে যে একটা আলাদা মজা আছে তা ওদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না!  

 

আমাদের প্রাইমেরি স্কুলের এক মাষ্টারের নাম ছিল আক্তার স্যার। স্যারের ছিল চাপ দারি, দেখতে নুরানী চেহারা। স্যারের নেক নজর যার উপর পরে তার আর রক্ষা নাই। ইয়া ক্ষোদা, হায়রে পেদানি কইছে কারে। স্যারের পেদানি খেয়ে দম বের হয়ে গেছিল একবার। স্যারের একটা স্বভাব ছিল পড়া পারলেও মারত আবার না পারলে ও মারত। পাড়লে মারত খুশির ঠেলায়। আর না পারলে স্যার, পেদানি কয় প্রকার ও কি কি উদাহারনসহ বুঝিয়ে দিতেন। 

 

প্রাইমেরি শেষ করে ভর্তি হলাম হাইস্কুলে। ক্লাস সিক্সে হামিদ স্যার নামের এক কামেল মাষ্টার ক্লাস নিত। মেরে তকতা বানানোর জন্য কাউকে যদি নোবেল দেওয়া হত তবে আমি নিশ্চিত হামিদ স্যার অনেক আগেই জাতীর জন্য সেই পুরস্কার ছিনিয়ে আনত। স্যারের ছিল গেরিলা ষ্টাইলের মাইর মানে অতর্কিত হামলা করত ছাত্রদের উপর। ক্লাসের মাঝখানে কাউকে অমনোযোগী দেখলেই হঠাত ডাষ্টার ছুরে মারতে। একেবারে যাকে মারত ঠিক তার শরীরে গিয়েই পরত ডাষ্টার। বাংলাদেশ শুটার দলে নিলে মনে হয় অলিম্পিকে সোনা আর মিস হত না আমাদের! একবার মনে আছে পড়া পারি নাই বলে স্যার কাউঠার চেংড়ি দেওয়াইছিল। কাউঠার চেংড়ি হল নামাজের রুকুর মত হয়ে দু হাত পায়ের ভিতর দিয়ে নিয়ে কান ধরা। যে একবার কাউঠার চেংড়ি খাইছে সে জীবনেও ভুলবেনা এর কথা।   

 

হাইস্কুল শেষ করে ভর্তি হলাম কলেজে। আমি তখন টগবগে কিশোর, কলেজে ঢুকে নিজেকে বড় বড় মনে হতে লাগল। আমার অবস্থা হল- 'হামসে বড়া কন হে!' সামনের কয়েকটা বেঞ্চ বরাদ্ধ ছিল মেয়েদের জন্য। তাই আমাদের ছেলেদের আগে এসেও পিছনে বসতে হত। কয়েকজন বন্ধু আমাকে উস্কে দিল এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য। আমিও কোনোকিছু না ভেবেই ফিজিক্স স্যারের কাছে ঝাঝালো কন্ঠে বললাম আমাদের দাবির কথা। কথায় আছে না- ‘খেয়ে যায় দারি ওয়ালা আর নাম পরে মোছ ওয়ালার’, দাবির পক্ষে ছিল সবাই কিন্তু স্যারের বকা জুটলো এই পোড়া কপালে।  

 

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম। মনের দুংখ্যে ভাবলাম আর দেশেই থাকব না! কোরিয়ান সরকারি স্কলারশীপ নিয়ে চলে আসলাম কোরিয়াতে পড়াশুনার জন্য। ভাবলাম এবার মনে হয় কুফা ছাড়ল ,তবে স্বয়ং গুরু সম্প্রদায় যার পিছু নেয় তার আর সুখ কিসের! এক অধ্যাপকের ল্যাবে ঢুকলাম পড়াশুনার পাশাপাশি রিসার্স করার জন্য। বেশ ভালই কাটছিল সময়, আন্ডার গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিপত্তি ঘটল মাষ্টার্সের সময়। পৃথিবীর আর কোথাও ধরা না খেয়ে , ধরা খেলাম শেষে বাংলাদেশের ঢাবিতে। আমার এক পেপার ডুবলি কেশন বা আইডিয়া চুরির দায়ে রিজেক্ট হবার উপক্রম । এমনকি আমাকে আই,ই,ই,ই এর সব কনফারেন্সে নিষিদ্ধের হুমকি ও দেওয়া হল যদি সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারি। আই,ই,ই,ই হল ইলেক্টিকাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ড এর অনেক বড় পাবলিকেশন সংস্থা। আমার শরীর দিয়ে ঘাম বেরিয়ে গেল ভয়ে কারন এই মেইলটা আমার অধ্যাপককে ও পাঠাইছে। আমি ল্যাবে চেয়ারে বসে ঠ্যাংগের উপর ঠ্যাং রেখে আরামে কফি খাচ্ছি আর দুরচিন্তা করছি। জানি কিছুক্ষন পরেই অধ্যাপক ল্যাবে ঢুকে আমাকে তামা তামা করে ছরবে তাই মানুষিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। ঠিক একটু পরেই অধ্যাপক রুমে ঢুকে হুংকার দিয়ে বলে উঠল “তুমি মেইলটা দেখছ?” আমি মাথা নিচু করে রাখলাম। যা হবার তাই হল পাইকারি হারে লম্ভা সময় ধরে আমাকে ঝারি খেতে হল। যাইহোক পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি আমারই একটা পেপার জাপানে পাবলিশ হইছিল। সেই পেপারের কাজ ও ঢাবিতে যেটা পাঠাইছি তার সাথে অনেক মিল। পরবর্তিতে নতুন কাজটা কোন জায়গায় পার্থক্য সেটা ভালভাবে লিখে পাঠাইছিলাম এবং ঢাবি থেকে শেষে এক্সেপ্ট হইছিল। অধ্যাপকের সেই জারির কথা কখনও ভুলবনা । 

 

আমার মত গুরু সম্প্রদায়ের কাছে এত পেদানি খাইছে এমন আদমি আছে কিনা জানিনা! নাকি আমার চেহারাটাই এমন, গুরু সম্প্রদায়ের দেখলেই মনে হয় মাগনা একটা ঝারি দেই, ঝারি দিতেতো আর পয়সা লাগে না!

 

বিঃ দ্রঃ নক্ষত্র ব্লগে এটা আমার প্রথম পোষ্ট। এই ব্লগে নিবন্দন করেছি বেশ কিছুদিন আগে, লগইন করার সময় প্রবলেম দেখা দিত প্রথম কয়েকদিন যাই হোক এখন সমাধান হয়েছে! অল্প কিছুদিনেই নক্ষত্র ব্লগ তার কার্যক্রমের মাধম্যে ব্লগারদের মধ্যে আলোরন সৃষ্টি করতে পেরেছে , তাই এই ব্লগে আসা। আমি এই ব্লগ ছাড়াও আলো ব্লগে ব্লগিং করি অনেকেই হয়তবা আমাকে চেনেন! এর আগে আলো ব্লগে এই পোষ্টটা দিয়েছিলাম, এই পোষ্ট দিয়ে নক্ষত্র ব্লগে আমি আমার যাত্রা শুরু করলাম। এতদিন শুধু আলো ব্লগেই ব্লগিং করতাম , এখন থেকে নক্ষত্র ব্লগের সাথেও শরিক হলাম।  সকলের সহযোগিতা চাই। সবাই ভাল থাকুন, ভাল রাখুন।

 

 

১ Likes ১৮ Comments ০ Share ৭৫২ Views

Comments (18)

  • - কামরুন নাহার ইসলাম

    আশা করছি ভাল মানের উপন্যাস পড়ার সুযোগ হবে আমাদের। শুভকামনা ---- 

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    আপনাদের সুন্দর উদ্দোগকে স্বাগত জানাই। আশাকরছি যারা ইতিমধ্যে মিস করেছেন তারা সেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারবেন।

    - জিয়াউল হক

    সময় বাড়ানোর জন্য ধন্যবাদ ভাই। আমি একটি সফট কপি ইমেল করে পাঠিয়েছি কিন্তু হার্ড কপি পাঠাতে গিয়ে অবরোধের বিড়ম্বনায় পড়েছি। লাগাতার অবরোধে অবরুদ্ধ শহরে যদিও ঢোকা যায় কিন্তু কুরিয়ার অফিসগুলো খুলতে পারছে না। বাড়ানো এই সময়ের মধ্যে আশা করি হার্ড কপি পৌছে যাবে।

    Load more comments...