(পর্দা উঠলো। গুরুর আখড়া। গুরু শিষ্য বসে। সামনে ধূমায়মান কোলকে রাখা।)
চেলা--আচ্ছা গুরুদেব,রাবণ কোন বই লিখেছিল ?
গুরু--রাবণ মূক ছিল--ঠিকঠাক প্রতিবাদ কিছুই করে যেতে পারে নি--
চেলা--এত হম্বিতম্বি দেখিয়ে গেল ! ওই সীতাকে নিয়ে কি কেলেঙ্কারি না হল !
গুরু--ওসব তার শত্রুদের কলমে লেখা। শত্রুরা যা ইচ্ছে নিজেদের মতই তার গাণ্ডি-মুন্ডি কেটেছে--এক মাইকেল দা তার পক্ষ নিয়েছিল।
চেলা--মাইকেল দা ?
গুরু--আরে গবেট মূর্খ—আমাদের মধুসূদন রে--
চেলা--আচ্ছা—শুনেছি, রাবণ নাকি পণ্ডিত ছিল ?
গুরু--হ্যাঁ,পণ্ডিতের স্থান কোথায় ? বিপক্ষের কাছে শত্রুর তো শত্রুই হয়--
(গুরুদেব আর তার চেলা কোলকেতে দু চারবার দম নিয়ে নিলো)
গুরু--বুঝলি--রাবণ আর মরল কোই বল--এখন তো কত রাবণ মনুষ্য সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে--তাদের খালি চোখে চিনতেই পারবি না--
চেলা--সে কি গুরু ! সে জন্যে রং-চশমা লাগবে নাকি গো ?
গুরু--এই যে মেয়েদের পথে ঘাটে স্পর্শন, ধর্ষণ হচ্ছে না! এ সব রাবণদেরই কাজ।
চেলা--হ্যাঁ গুরু, শুনেছি ওই মাখন বাবু--ওই যে গো নেতা--সে ও একটা মেয়েকে--
গুরু--শুনা কথায় কান দিস না--নেতা নূতা, এমন অনেক হারামজাদাই ধর্ষকাম--যারা ভুঁড়ি ভুঁড়ি উপদেশ দেয়—হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা লেকচার দেয়, তারাই এসব লুকচুরি খেলে বেড়ায়।
চেলা--নেতাদের বেলায় এমনি শুনেছি বটে--
গুরু--শোনা কথায় কান দিস না--
চেলা—কেন গুরু ?
গুরু--সাক্ষী ছাড়া তুই মিথ্যাবাদী রে--
চেলা--সে তো আদালতের কথা কইছ গুরু !
গুরু--হ্যাঁ--হ্যাঁ--আদালত ছাড়াও ওই একই কথা চলে--আখির সাক্ষী চাই--গুটি ফাঁসলেই সাক্ষী চাই--
চেলা--সে তো পয়সা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী যোগার করা যায়--
গুরু--তাও চলবে--এমনটাই তো চলে আসছে--
চেলা--তা হলে উচিত অনুচিত বলে কি কোন কথা নাই ?
গুরু--ও মা, অমন কথা বলেছে কে? যাহা সত্য, তাহা সত্য। সত্যকে মিথ্যা করিবার জন্যই তো এই রঙ্গশালা--এই পৃথিবী !
(কোরকেতে আবার দুই টান গুরু তারপর চেলা কয়েক টান দেবার পর খানিক নীরবতা পালন হল)
চেলা--আচ্ছা গুরু, ভগবান সত্য ?
গুরু—(ভাবাবেগে আচ্ছন্ন হয়ে)একশ ভাগ সত্য--তবে ধন-দৌলত এসবও ভগবান জানবি। প্রার্থনা কর, প্রচেষ্টা চালা—যেন তেন প্রকারেণ টাকা পয়সা তোর চাই--প্রথমত এই কর্মে পটুতা চাই—
চেলা—অসৎ উপায়ে পয়সা ?
গুরু--খাঁটি কথা, কিন্তু পয়সা তো অসৎ নয়, হাতে আসার পর তাই সব সৎ হইয়া যায়।এ কথা জানিবে বৎস ! অসৎ বলিয়া তখনই গণ্য হইবে যখন ধরা পরিবে--
চেলা--চুরি চামারি অসৎ পথ--আমি তো তা করতে পারি না--
গুরু—তুই পারিস কোনটা ? চোর কে? না, ধরা পরে যাহারা—না, দেখছি তোর দ্বারা কিছুই হইবে না--এমন কি সত্যিকারের ভালোবাসাও না--
চেলা--কি করব--এক তরফা ভালবাসা হয় ?--তা না হলে কমলা আমায় ছেড়ে পালায় ?
গুরু--এক তরফা কেন? দুই তরফা না কেন?--
যদি তুই ভালবাসিস, তাকে খুব পেতে ইচ্ছে হয়, তবে ছিপ ফেলিয়া টোপ ফেল--
চেলা--এ কেমন উপদেশ গুরুদেব !
গুরু--আরে শিষ্যের হিতার্থে গুরুর পঙ্ক ভাবনা যেমনটা--
চেলা--সে আবার কেমনটা --?
গুরু--ধুস তোর দ্বারা কিছুই হবে না দেখছি—ওরে, না পটলে ভালবাসায় ভিজিয়ে দে-- ওরে আমি জানি, বিরহ জালায় মরছিস তুই—চিন্তায় চিন্তায় দিনকে দিন তুই প্যাকাটি হয়ে যাচ্ছিস। তাই শর্টকাট কিছু টোটকা তো তোকে দিতেই হয়, নাকি ?
চেলা--এটা আবার কি ধরনের টোটকা ?
গুরু--তুই দেখছি কিছুই বুঝিস না--নুন আর পান্তা ভাত খাওয়াই তোর কাজ--
চেলা--হ্যাঁ গুরুদেব ,সাদা পথ--
গুরু--সাদা পথে বড় কাদা হয় রে বিটা !
চেলা--আচ্ছা তাই বুঝি আপনি কাদা মাখেন ?
গুরুদেব--সাধুরা সাদাও বটে আবার কাদাও বটে ! তবে কাদা না, আসল গঙ্গা মাটি ধারণ করেছি আমি। এই তিলক, এই রাধেশ্যাম আঁচড়ের তিলক বড় পবিত্র রে !
চেলা--আপনার উপদেশগুলি বড় ভজকট--
গুরুদেব—চোপ ! গুরু বাক্যের নিন্দা করতে নেই--করলেও তা জনান্তিকে—
(আবার গুরু চেলর ছিলুমে টান দেয়—আবার দু মিনিট নীরবরা পালন)++
চেলা--গুরুদেব, নলকা বাবু আমায় সে দিন খুব অপমান করেছে--কথাটা মন থেকে একেবারেই মুঝে ফেলতে পারছি না--বারবার বিষ পিঁপড়ের মত কুটকুট কামড়াচ্ছে--
গুরু--ওর সঙ্গে তুই পারবি কেন? ও হল গিয়ে নেতার ডান হাত—
চেলা--আমি ভালো ভাবে ওর সাথে কথা বলতে গেছিলাম, ও কিনা আমায় বলে,,কেলাই ষষ্টি !
গুরু--তুই অনেকটা তাই--
চেলা—আপনিও--?
গুরু--তোর গুরু হতেও লজ্জা হচ্ছে !
চেলা--কেন !
গুরু--বিন্দু বিসর্গ বুদ্ধিটুকু যদি তোর মধ্যে থাকে--ওরে সারা পৃথিবীটা কুট বুদ্ধির জোরে চলছে—কূটনীতি কথাটা শুনেছিস কখনও--সব জাগায় ওই একই খেল রে--
চেলা--তাই বলে ওই নলকা গুণ্ডার সঙ্গে আমি--
গুরু—আলবত পারবি--ওই নলকা যে পথে হাঁটে সেখানে পিন পুঁতে রেখে আসবি। দরকার হয় কয়েকটা--তারপর দেখ কি হয়--
চেলা--জানতে পারলে আমার তো বাপের বিয়ে--
গুরু--কাজ করবি এমন ভাবে ওই রামেশ্বর বেটাও টের পাবে না--
চেলা--রামেশ্বর ?
গুরু--রামের ঈশ্বর মানে হল গিয়ে ওই ভগবান বেটা ! আর মোদ্দা কথা হল গিয়ে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যেন কাক পক্ষীতেও টের না পায়--
চেলা--তুমি গুরু ? না কি --
গুরু--গরু? তাই তুই বলতে চাস তো? আরে আমি গুরু হয়েছি অনেক ঠেকে, অনেক শিখে, অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গরু থেকে গুরু হয়ে উঠে এসেছি রে ! অভিজ্ঞতার বীজফলে আমার মগজ ঠাসা ! এ সব জ্ঞান বুদ্ধির বোঝা নিয়েই তো আজ আমি গুরুতে উত্তলিত হয়েছি। আজ অনেক শান্ত হয়েছি, তবু তোর মত গরু দেখলে ঠেঙ্গিয়ে পথে আনতে চেষ্টা করি। না হলে তুই তো দেখতে পাচ্ছিস আমি কত শান্ত শিষ্ট বিশিষ্ট লেজ সম্পন্ন—হে হে হে—
(পর্দা নেমে আসে)
সমাপ্ত