আজকের পর্বঃ বেইজ ক্যাম্প-আফ্রিকান আক্সপেরিয়ান্স (আংশিক)
কথা ছিল আমি আগেই স্টেশনে মুস্তাফিজ ভাই আর রুমেল ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করব। কিন্তু দেখা গেল আমিই লেট। অবশ্য আমার ঘুম ভাঙতে দেরি হবার কারনেই এমনটি হল। কি আর করা কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দিলাম ভোঁ দৌড়। সকালে এক গ্লাস পানিও খাই নি। তাই মুস্তাফিজ ভাই আর রুমেল ভাইকে নিয়ে ম্যাগডনাল্ডে গিয়ে সকালের নাস্তা সারতে হল।
অতঃপর ট্যাক্সি করে চললাম পোর্ট লিম্প সাফারি পার্কে। স্টেশন থেকে তেমন দূরে না হলেও গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লেগে গেল।
টিকেট অফিসের ঝামেলা সেরে আমরা প্রবেশ করলাম পার্কে। ম্যাপ বুঝে নিলাম ভাল করে। এখানকার এই একটা ব্যাপার আমার খুব পছন্দের। যে কোন দর্শনীয় স্থানে প্রবেশের সময় একটা সাইট ম্যাপ আর গাইড হাতে দরিয়ে দেয়। ফলে কোন কিছুই মিস হয়না পর্যটকের। সেই সাথে জানা যায় ইতিহাস ঐতিহ্য আরও ভাল করে।
আমরা যারা সাফারি ভ্রমনে যাব তারা সকলেই নির্দিষ্ট জায়গায় কিউ করে দাঁড়ালাম। নির্ধারিত সময়ে আমাদেরকে পিক আপ করার জন্যে বিশেষ সাফারি ট্র্যাক, একজন রেঞ্জার আর একজন গাইড চলে এলেন। এখানকার বেশির ভাগ গাইড এবং রেঞ্জারের আফ্রিকার জঙ্গলে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের দলে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জন। তার মধ্যে পিচ্চি কয়েকজনও ছিল।
সাফারি ট্রাকে রোমেল ভাইয়ের বিখ্যাত পোজ, পেছনে মুস্তাফিজ ভাই
গাইড সবাইকে সিট বেল্ট বাধার কথা বললেও আমরা কয়েকজন ছবি তুলার অজুহাতে সিট বেল্ট না পরার অনুমতি নিলাম। তবে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই সিট বেল্ট বাধতে হবে বলে হুশিয়ারি দিল গাইড।ধিরে ধিরে চলতে শুরু করল ট্রাক আর আমরাও ধিরে ধিরে প্রবেশ করছিলাম গহীন অরন্যে। পাহাড়ি রাস্তার ঝাঁকুনিতে নড়ে উঠছিল সব কিছু। তবে এধরনের ট্রেইলে আমি এর আগেও অনেকবার এরকম গাড়িতে ছড়েছি। তাই আমার তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। প্রবেশ পথে একটি আফ্রিকান হাতির ছোট দল চোখে পড়ল। দূর থেকে এরা আমাদের উপর সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিল।
এর পর কিছু দূর গিয়ে চোখে পড়ল কয়েকটি গণ্ডার। সাথে থাকা বাচ্চা গুলো চীৎকার শুরু করল রাইনো! রাইনো!!! এরা হয়ত আগে থেকেই এদের সাথে পরিচিত। তবে মজার ব্যপার হল, কিছুক্ষণ পরে আমার সামনে থাকা একটা পিচ্চি আমাকে দেখিয়ে ওর মাকে বলল, look mum! It’'s a men rhino!! হয়ত ছবি তুলার সময় আমার ক্যামেরা ফেইসে নেয়ায় ক্যামেরার ল্যেন্স দেখে আবিষ্কার করেছে। ওমা, এরও দেখি নাকে শিং! বেচারার শিং কেটে নিয়েছে চোর (হাতির দাতের মত এদের শিং চুরি হয় অহরহ)!! সম্ভবত বেচারা জঙ্গলে থাকা কালীন সময়েই চোরের কবলে পড়েছিলেন
আরও একজনের ছবি এক সাথে দুইজন
এর পর অনেক গুলো চিত্রা হরিন, জেব্রা, banteng-এর পাল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। এর মধ্যে বন মোরুগ এর দু একটা শেয়ালও চুখে পড়ল। এটা বাংলাদেশ না তাই হয়ত দিনের বেলায়ও শেয়াল দেখা যায় এখানে।মনে পড়ল কবি মতিউর রাহমান মল্লিক ভাইয়ের লেখা গান, “তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর, না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর, কত সুন্দর”। স্রষ্টার স্বরনে মাথা নুয়ে এল।
স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি
সাফারি ট্রাকে হৈচৈ করা নিষেধ। যাতে বন্য প্রানির কোন সমস্যা না হয়। খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সকলেই নিরব ছিল সবসময়। অথচ আমাদের দেশে এমনও হয় ইকু প্রাকে ভ্রমণের জন্যে পুলাপাইন গাড়িতে মাইক লাগাইয়ে চেঁচামেচি করে। হয়রে আহাম্মকের দল, বন্য প্রাণী দেখতে গিয়ে এরকম চেঁচামেচি করলে বন্য প্রাণী দেখবে কিভাবে? কষ্টের ব্যাপার হল সেই ইকু ভ্রমনে কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়য়ের কিছু গাধা প্রফেসারদেরও থাকতে দেখেছি। আরেকটা ব্যাপার আমি খুব ফিল করি, আমাদের দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে অনেকেই ময়লা আবর্জনা ফেলে এমনকি গাছ কেটেও পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেন। যা খুবই দুঃখজনক। অনেকে আবার বন্দুক নিয়ে পাখি শিকারে বেরিয়ে পড়েন। আমাদের দেশের হাট বাজারে অতিতি পাখি বিক্রিও দেখেছি অনেক! সিলেটে এক সময় প্রচুর খরগুশ আর বন মোরুগ পওয়া গেলেও এখন আর এদের দেখা তেমন মিলেনা। অথচ আমরা একটু সচেতন হলেই সব সমাধান হয়ে যেত।
অদ্ভুত সুন্দর এই পাখিটির নাম pheasant, সাফারি পার্কের ঝুপ জাড়ে চোখ রাখলেই দেখা পাবেন প্রচুর।
চিত্রা হরিন
চিত্রা হরিনের সাথে কয়েকটি রেইন ডিয়ার
চিত্রা হরিনের সাথে কয়েকটি রেইন ডিয়ার
পড়ন্ত বিকেলের বিশ্রাম
ঘাস খেতে খেতে চলে যাওয়া
বাবু হরিন
অনেক অনেক দূর থেকে তুলা আরেকজন
(চলবে)
Comments (4)
আপু
বেশ তো কবিতা
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনের
প্রাণঢালা শুভেচ্ছা
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া । আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা বসন্তের
সারা গগনতলে বর্ণ, গন্ধ, গানের তুমুলে কোলাহলে
লেগেছে আজ আশ্চর্য্য মাতামাতি...
শীতের ছোঁয়া মিলায় ধীরে ধীরে; ফাগুন আসল বুঝি দুয়ারে
হ্যাঁ ফাগুন দুয়ারে এসে গেছে। দারুণ কবিতায় তাকে বরন করে নিয়েছেন।
ফাল্গুনের শুভেচ্ছা রইলো
অনেক ধন্যবাদ সুখদা । আপনাকেও বসন্তের শুভেচ্ছা । অনেক শুভকামনা দিনটি সুন্দর কাটুক এই কামনাই করি
রঙিন সুখে আত্মহারায় মন হারায় সেই কৈশোরের দুরন্তপনায়...
শিমুলের পাঁপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে আকাশে উড়ায়ে দিয়েছিলাম সেই কবে;
সুন্দর।
অনেক ধন্যবাদ