Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তানিম হক

৮ বছর আগে

গল্পের ভিতরে থাকা গল্প

গল্পের ভেতরে কিছু গল্প থাকে, থাকে অজানা অচেনা অসহ্য রকম ঘটনা, যে সকল ঘটনা হয়তো রোজই ঘটে আমাদের এ শহরে, আজ এমনই একটি গল্প লিখতে যাচ্ছি।

ফারাবী অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে রাতুলের পড়ার ঘরে, সারা দিন রোজার পড়, রাতুলের মার ইচ্ছে অনুযায়ী রাত ৮ থেকে ১০ পর্যন্ত পড়াতে হবে, এরপর বাসায় ফিরে বাচ্চা গুলো খাবার খাওয়াতে হবে, ময়লা বাসন কোসন পরিস্কার করতে হবে, তারপর যদি ছুটি মিলে, এখন ঘড়িতে ৯ টার কাছাকাছি, রাতুল তার বাবা মায়ের সাথে ঈদ শপিং গেছে, রাতুলের মা ফারাবীর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট, চকচকে সুন্দর শারীরে গঠন, এ বয়সে তার কপাল অনেক ভালো, আলীসান বাড়ি গাড়ি আর গহনা, গহনা গুলো দেখলে ফারাবির মন খারাপ হয়, কিছু দিন পরপরই নিত্যনতুন গহনা কেনেন উনি, নিয়মিত ব্যয়াম আর রূপ চর্চা তো আছেই, এ মাসে এ দেশে সামনের মাসে ওদেশে বেড়াতে যান। কি ভাগ্য উনার খুব আফসোস হয় ফারাবীর।

কোন এক বই মেলায় তানিমের সাথে পরিচয় ফারাবির সাথে, তানিমের গল্পের নায়িকা ভাবতে ভাবতেই ওর সাথে জড়িয়ে পড়া, সম্পর্কে গভীরতা এত দুর চলে গিয়েছিলো যে বিয়ের আগেই, ওর শয্যা সঙ্গী হয়ে স্বর্গ সুখ নিতে ভুল করেনি ফারাবী, তানিম অবশ্য ওকে নদী বলে ডাকতো, প্রায়ই বলতো নদী তোমার বুকে যদি প্রগৈতিহাসিক সাঁতার নাই দিলাম তবে আমি গল্প কোথায় পাবো? তানিম কথা রেখেছে এক বৃষ্টি মুখর সন্ধ্যায় হুট করে ফোন করে বললো "ফারাবী আজ ১৬ই শ্রাবণ, একটা বিশেষ দিন, তুমি চলে এসো, তোমাকে আজ বিয়ে করবো, ফারাবী আর সাত পাঁচ ভাবেনি, ১৬ই শ্রাবণ বিয়ে হলো মগবাজার কাজী অফিসে, কাজী অফিস থেকে বের হয়ে তানিম তাকে নিয়ে গাবতলী রওনা হলো, উদ্দেশ্য লং ড্রাইভ, নিজেদের গাড়ি নেই তাতে কি, ইচ্ছে তো আর থেমে থাকে না, গাবতলী এসে খুলনার টিকিট কেটে নাইট কোচের ঢাকা ত্যাগ, এটাই ফারাবির জীবনে অদ্ভুত বাসার বলা যেতে পারে, মাঝে ঐ রাতের ঘটনা মনে করলে হাসি পায়, ঘর থেকে বেড়িয়ে আরিচা ফেরিতে ভাসমান রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়া। এখন এসব অতীত, শুধুই অতীত মাত্র। তানিম এখন ঘরে শয্যাশয়ী, সে বক্ষব্যাধি বললেও আসলে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছে সে, অসুখটা অনেক আগেই টের পেয়েছে সে, কিন্তু দারিদ্রতা কারণে চেপে গেছে সে, একটা মাসিক পত্রিকা অফিসে লেখালেখি করে আর নোট লিখেই এই ৮ টি বছর পার করে এসেছে সে, সুরিটোলার ফারাবীদের এই টিনসেড ঘরটি এক প্রকার দয়ার আশ্রয়, এক চিরকুমার কর্নেল সাহেবের বাড়ি, প্রথম দিকে আটশত ভাড়া ছিলো সর্বশেষ চারহাজার টাকা, গত চার বছর ধরে কোন ভাড়া নেই, কর্নেল সাহেব বিদেশে আছেন, যাওয়ার সব ওনার সম্পদটি শুধু দেখে রাখতে বলেছেন, বিদেশ থেকে ফিরে সব ভাড়া এক সাথে নিবেন, পানি গ্যাস বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত নিজ দায়িত্বে জমা দিতে বলে গিয়েছেন, ফারাবী তাই করছে, প্রথম প্রথম ফোন করতেন, খোঁজ খবর নিতেন আজ প্রায় তিন বছর হয়, ওনার কোন ফোন নেই, বেচারা জন্যও কষ্ট হয়, বেচারা ভালো মানুষটা কোথায় হারিয়ে গেলো, শুধু পাড়া প্রতিবেশীদের প্রশ্নের মুখে মিথ্যা করে বলতে হয় কর্নেল সাহেব প্রায়ই ওদের খবর নেন।

এখন প্রায় ৯টার উপরে, রাতুলের আসার খবর নেই, ওদের আজ ঈদ শপিং চলছে, ওদের ঈদ শপিং খুব লম্বা সময় হওয়ার কথা, ফারাবী চলে যাবে কিনা ভাবছে, একটু আগে নিয়ম মাফিক বুয়া চা নাস্তা দিয়ে গেছেন, ফারাবী ভাবছে নাস্তার বিস্কুট গুলো ব্যাগে করে নিয়ে যাবেন কিনা, বড়লোকদের দামী বিস্কুট গুলো নিজের বাচ্চাকে খাওয়ানো কথা ভাবছেন, পরক্ষণেই মনে হলো আমি একি ভাবছি, এটা তো চুরি হয়ে যাবে, আবার অন্য মন বলছে চুরি হবে কেন? এটাতো খাওয়ার জন্য দেওয়া, ফারাবী গুনে গুনে চারটা বিস্কুট ব্যাগে পুড়ে নিলো, মনে ভাবলো ছেলেটা এই বিস্কুট গুলো পেলে হয়তো খুশি হবে, আচ্ছা তানিম যদি জিজ্ঞেস করে? তাকে মিথ্যা বলতে হবে, আজকাল মিথ্যা বলাটাও কেমন জানি সহজ হয়ে গেছে, এর জন্য কি পরকালে শাস্তি আছে? কি জানি, আসলে এগুলো কি মিথ্যা নাকি এই কঠোর জীবনে বেঁচে থাকার অভিনয়ের অলিখিত কোন সংলাপ, তানিম হয়তো বলতে পারবে, ছোট্ট ছেলেটাকে রোজই মিথ্যা বলতে হয়, তার সমবয়সী কিরণের একটা লাল রংয়ের বাইসাইকেল আছে, ছেলেটা রোজ সুযোগ পেলেই ওর পিছু পিছু ঘুরঘুর করে, ওর সাইকেল পিছন দিক থেকে ঠেলে দ্যায় একটু সাইকেল চড়ার আশায় আর বাসায় এসে বায়না ধরে সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য, ফারাবী রোজই টিউশনি করতে আশার সময় ওকে সাইকেল কিনে দেওয়ার মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আসে। ফারাবী খুব কষ্ট লাগে পৃথিবীর এসব সাতপাচ খুব কষ্ট দ্যায়।

রাতুলরা এখনো বাসায় ফেরেনি, এখন দশটা বাজে, ফারাবী চলে যাবে ভাবছে, আসলে আগেই চলে যেতে পারতো, রাতুলের পড়ানো খরচটা দিয়ে সারা মাসের খাই খরচা চলে, পাছে কোন কারণে এ টিউশনিটা চলে গেলে বিপদের সীমা থাকবে না, ওরা ধনী মানুষ, রাতুলের মায়ের রূপের মতই খুব চকচকে ওনার মেজাজ দুচার মিনিট দেরি হলে ছাত্রের সামনে অপমান করতে দ্বিধাবোধ করেন না, একবার তো যেসব কথা বললেন তা শুনে এখানে আসা কোন মতেই শোভা পায় না, কিন্তু করার কি আছে, ঘরে মৃত্যু পথযাত্রী আর ক্ষুধার্ত শিশুর দিকে তাকালে এ যৌবন বিকাতেও বোধহয় কার্পণ্য হবে না।

ফারাবী এখন রাস্তায়, ওদের বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে যাচ্ছে, প্রধান সড়কের পাশের বিপনী বিতান গুলোতে ঈদের কেনাকাটায় ধুম লেগেছে, কত রং ঢং এর মানুষ এখানে, ফারাবী আরো দ্রুত পা চালায়, বাচ্চাটা আবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অসুস্থ স্বামী হয়তো দুশ্চিন্তা করবে না ফেরা পর্যন্ত, ওকে ওষুধ খাওয়াতে হবে, যদিও ফারাবী জানে ওর মৃত্যু সন্নিকটে।

এ হলো গল্পের ভিতরে গল্প, আর গল্প হয়ে যায় এ ফারাবীদের জীবনে, ভালবাসার সেই আপ্লুত ডাক "নদী " এখনও তাকে অবিরত মিথ্যে বলায়। আমি জানি এ গল্পের মিথ্যা বলায় কোন অপরাধ নেই, এই গল্পে চুরি করায় কোন পাপ নেই, স্বয়ং ঈশ্বর যেখানে এ নাটকের পরিচালক, নিশ্চয়ই উনি ভালো জানেন।

   
১ Likes ১ Comments ০ Share ৪৭৬ Views