Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্পঃ ডিমের শ্রাদ্ধ!

 

 

জুন মাসের চরম গরম!

এই বাসাটা খুব ছোট। বাইরের দরজা থেকে ভেতরে ঢুকেই বামে চলে গেছে ছোট্ট একটা বসার ঘর। আর সামনে ডায়নিং রুম। তার সাথে লাগোয়া রান্না ঘর।

বিকেল বেলা বাসায় ডাইনিং টেবিলে বসে পাঁচটা বাচ্চাকে ছবি আঁকা শিখাচ্ছি। এর মধ্যে আবার কারেন্ট চলে গেছে। আইপিএসের ব্যাটারীটা কিছুদিন ধরে নষ্ট। ক্রমাগত লোডশেডিঙের কারণে চার্জ লাইটেও যথেষ্ট চার্জ হয়ে ওঠে না সারাদিনে। মোমবাতির আলোয় ছবি আঁকা শেখানো খুব কষ্ট তবু বাধ্য হয়েই পড়াতে হচ্ছে!

বাইরের দরজায় শব্দ হলো। লকটা খোলাই ছিলো। বাবা ঢুকলেন। এক হাতে বড় সাদা কাগজের প্যাকেটে ডিম মনে হয়। আরেক হাতে এক লিটার আড়ং দুধ। হুড়মুড়িয়ে আমার পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন। আমি তো অবাক! রান্না ঘরে কি করবেন? আম্মা বাসায় নাই। বাবা কি চা খেতে চাইছেন? আমি চেয়ার ছেড়ে বাবার জন্য চা করতে উঠলাম। রান্নাঘরের দরজায় পৌঁছে দেখি একটা ইঞ্চি ছয়েক চওড়া স্টিলের বাটিতে প্যাকেটের মুখ কেটে দুধ সব ঢেলে দিয়েছেন। তার মধ্যে ডিম ফেটে দিয়েছেন। এখনো দিচ্ছেন।

সাদা প্যাকেটে তাহলে ডিমই ছিলো! একটা একটা করে ডিম বের করে ফাঁটিয়ে দুধের বাটির মধ্যে ছাড়ছেন আর চামচ দিয়ে দ্রুত নাড়ছেন। যেন মিনিটে কয়টা ডিম ছেড়ে দ্রুত নাড়া যায় সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন! এর মধ্যেই বোধহয় আট দশটা ডিম ভেঙেছেন। দুধের ভেতরে ডিমে ডিমারন্ন একেবারে! এর পর চিনির বয়াম থেকে প্রায় এক কাপ চিনিও ঢেলে মেশালেন ডিম-দুধের মিশ্রণে। বাবা কি পুডিং বানাতে চাইছেন?

জিজ্ঞেস করলাম সে কথা!

চুপ করে আছে! কিছু বলেনা! রান্নাঘরের পাতিল যেদিকে থাকে সেদিকে গিয়ে ডাল রান্না করার পাতিলে হাত দিলেন।

আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে হাত থেকে নিয়ে বললাম, “আরে, এটায় তো ডাল রাঁধে! মিষ্টি জিনিস বানানোর পাতিল আলাদা!”

এবার বাবা বললেন, “কোন পাতিলে মিষ্টি জিনিস বানায় দেও তো!”

মিষ্টি খাবার বানানোর সিলভারের বড় কড়াইটা নামিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলাম, “কি বানাতে চান?”

জবাব এলো, “হালুয়া”।

এতক্ষণে আমার খুব রাগ হলো! “ডিমের হালুয়া! আগে বলবেন না আমাকে? দুইটা ডিম দিয়া এত্তগুলা হালুয়া হয়! ধ্যেত! কিচ্ছু বুঝেন না! এত্তগুলা ডিম শুধু শুধু নষ্ট করলেন!”

পুরুষ মানুষকে নিয়ে হয়েছে এই এক জ্বালা! কোন কিছু কিনে আনতে বললে তখন খুব হিসেব করে। আর নিজে যখন জিনিস নষ্ট করে তখন কিচ্ছু মনে হয় না!

কণ্ঠের ঝাঁঝ আমার চোখেমুখেও ছড়িয়ে পরে। নিজের হাতে হালুয়া বানানোর এতক্ষণের উদ্যমে যেন ভাটা পরলো বাবার। তবু সরে গেলেন না। চুলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। গ্যাসের চুলার উপরে কড়াইটা নিয়ে ওর মধ্যে ডিম দুধের মিশ্রণটা ঢেলে জ্বাল বাড়িয়ে দিলেন। মুহুর্তেই ডিম দলা দলা পাকিয়ে যেতে ধরেছে। খুন্তি দিয়ে ধীরে নেড়েচেড়েও দলা আলাদা করতে পারছেন না। যতই বলি আমারে দেন, ঠিক মত নেড়ে দেই! দ্যায় না আমার হাতে! নিজেই করবে।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডিম পোড়া লেগে যেতে ধরেছে। এবার জোর করে বাবার হাত থেকে খুন্তি নিয়ে এক পাশে সরিয়ে দিয়ে মৃদু বকা লাগালাম, “এখন আমার স্টুডেন্টরা আছে! আমাকে বললেই তো হতো! আমি ওদেরকে ছুটি দেয়ার পরে ভালোভাবে করে দিতে পারতাম! তার উপরে কারেন্ট নাই! এত্ত গরম! এই অন্ধকারেই এইসব নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কি দরকার ছিলো?” আমার কন্ঠের ঝাঁজ আরো বেড়ে যায়। ছবি আঁকার স্কুল এক ঘন্টার। সপ্তাহে মাত্র একদিন। এর মধ্যেই মিনিট বিশেক সময় পেরিয়ে গেছে। আরেকটু পরেই ছুটি দিয়ে দিতে হবে। সময় বাড়িয়ে দিলেও এরা থাকতে পারবে না। অন্য কোচিঙে ছুটবে। আজকাল পড়াশুনার যা অবস্থা! ঘড়ির কাঁটায় জীবনের রুটিন বাঁধা।

রান্নাঘরের গরমে বাবা নিজেও এখন ঘামছেন! সেই সাথে দেখলেন কাজটা নিজে ভালোভাবে করতেও পারছেন না! আবার মেয়েও রেগে গেছে! খুন্তি আমার হাতে চলে আসতেই তিনি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন! চলে গেলেন নিজের ঘরে। আর এদিকে আমি না পারছি হালুয়া বানানো বাদ দিতে! না পারছি ছাত্রদের দিকে নজর দিতে! আমি রান্নাঘর থেকে সরে গেলেই বাবা হয়তো আবার ছুটে আসবেন গিন্নিপনা করতে।

আজ আমার ছাত্রগুলোও বেশ মজা পেয়েছে। মিস-এর বাবা রান্নাও করে? ওয়াও!

গরমে সেদ্ধ হয়ে ডিমের স্রাদ্ধ শেষ করে তবেই আমার ছুটি মিললো। ততক্ষণে ছাত্ররাও বাড়ি চলে যাচ্ছে। বাড়ি গিয়ে হয়তো ওরা বলবে আজ তাদের যূথী মিস ছবি আঁকার বদলে রান্না শিখিয়েছে!!

 

...আমার গল্পটি ফুরলো, নটে গাছটি মুরলো...

 

০ Likes ৩৬ Comments ০ Share ৫৬৩ Views

Comments (36)

  • - সুখেন্দু বিশ্বাস

    রুপকের অন্তরালে আসন্ন বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

    পৃথিবীটা যেন দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গুটিপোকারা দখল করে নিচ্ছে শ্যামল ধরণীর শান্তির নীড়।  

     

     

    শুভকামনা সতত। 

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

      দাদা 

    - কামাল উদ্দিন

    গুটি পোকারা আমাদের সর্বনাশ করার আগেই আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কামাল ভাই। 

    - সুলতানা সাদিয়া

    ভাল লাগল।

    • - শিবাশীষ বিশ্বাস

    Load more comments...