Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্প : পৃথিবীতে শেষ শব্দসমূহ

মূল: নিকোল ক্রাস অনুবাদপ্রচেস্টায়:  মোঃ মুজিব উল্লাহ

১.

আগামীকাল অথবা পরবর্তি দিনে তারা যখন আমার শোকবার্তা লিখবে তখন সেখানে বলা হবে``ফালতু জিনিসে পূর্ণ একটি কামরা লিও গোরস্কিকে বাঁচিয়ে রাখে।`` আমাকে জীবন্ত সমাধিস্থ করা হয়নি বলে আমি বিস্মিত। বিছানা ও শৌচাগার, শৌচাগার ও রান্নার টেবিল এবং টেবিল ও সামনের দরজার মাঝের পথটুকু মুক্ত রাখতে আমাকে সংগ্রাম করতে হয়। আমি যদি শৌচাগার থেকে সামনের দরজায় যেতে চাই আমাকে রান্নার টেবিলের পথে যেতে হয়। আমি বিছানাকে একটি ঘরোয়া থালারূপে কল্পনা করতে পছন্দ করি, প্রথমত শৌচাগার, দ্বিতীয়ত রান্নার টেবিল, তৃতীয়ত সম্মুখ দরজা হিসেবে। যখন আমি শায়িত থাকি তখন কি দরজাঘণ্টি বাজা উচিত? অথচ দরজায় পৌঁছতে আমাকে শৌচাগার ও রান্নার টেবিল পাড়ি দিতে হয়। যদি ব্রুনো ঘণ্টিটি বাজায় তবে তাকে নিঃশব্দে আমি যেতে দিই। তারপর ধীরগতিতে বিছানায় ফিরে আসি। তখনো অদৃশ্য ভীড়ের গর্জন আমার কানে বাজে।

জীবদ্দশায় কে আমাকে শেষ দেখবে তা নিয়ে আমি প্রায়ই ভাবি। এ নিয়ে যদি আমাকে বাজি ধরতে হতো তবে আমি চাইনিজ টেকআউট এর বিতরণকারী বালকটির উপর ধরতাম। আমি তাকে সাত রাতের চার রাতে ফরমায়েশ দিই। যখনই সে আসে তখনই আমি আমার মানিব্যাগ খুঁজে বের করাতে গিয়ে একটি বড়ধরনের নাটক করি। যখন আমি ভাবি এটি যদি বিছানায় আরোহণ করা আমার জীবনের শেষ রজনী হয় এবং আমার ঘুমের মাঝে প্রাণহরণ ঘটায় তখনও সে তেলচিটে ব্যাগটি ধরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।    

আমি দেখার একটি বিন্দু তৈরি করতে চেস্টা করি। প্রায়ই যখন আমি বাইরে যাবো আমি একটি জুস কিনবো যদিও আমি তৃষ্ণার্ত নই। যদি দোকানে ভীড় থাকে আমি মাঝে মাঝে ততদূর যাবো যাতে আমার বদলানো সামগ্রী সমগ্র মেঝেতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকার মত পতিত হয়। আমি এ্যাথলেটদের জুতোর কাছে যাবো এবং জানতে চাইবো ``কেডসের মধ্যে কী আছে?`` দরিদ্র কর্মচারি আমার দিকে নিঃস্ব বোকার মত এমনভাবে তাকাবে যে, তারা আমি ও আমার দিকে কিছুটা চমতকার সাদা এক জোড়া রকপটস নিয়ে আসবে। ``না।`` আমি বলবো ``আমার ইতিমধ্যে ঐগুলো আছে।`` এবং এরপরে রিবকের দিকে পা বাড়াবো, জুতোর মত নয় এমন কিছু বাছাই করবো, হয়তোবা জলরোধক বুটি এবং এর ৯ সাইজ চাইবো। ছেলেটি অধিক সতর্কভাবে আবার দেখবে। যখন পদাঙ্গুলিতে জুতো আঁকড়ে থাকবে আমি তাকে লক্ষ্য করে পুনরায় বলবো ``নয় সাইজ``। সে তার মাথা নাড়াবে, সেগুলো আনতে যাবে এবং যখন ফিরবে আমি আমার মোজাগুলো খুলতে থাকবো। আমি পায়ে প্যান্ট গুটাতে থাকবো ও আমার পায়ের জরাগ্রস্থ বস্তুসমূহের দিকে দৃষ্টিপাত করবো এবং যতক্ষণ না স্পষ্ট হবে যে আমি সেগুলো বুটিতে পিছলানোয় তার জন্য অপেক্ষা করছি ততক্ষণ অস্বস্তির এক মিনিট অতিবাহিত হবে। আমি আসলে কখনো কিনি না। যখন আমার দেখার বাকি থাকবে এমনদিনে আমি মরতে চাই না।                         

কয়েক মাস পূর্বে আমি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপণ দেখেছিলাম। এটিতে বলা হয় ``প্রয়োজন: অংকনের ক্লাসের জন্য বিবসিত মডেল। এক ঘণ্টায় ১৫ ডলার।`` এটি সত্য ভাবার মত যথেষ্ট ভাল মনে হল। অনেক বার তাকিয়ে। অনেকের দ্বারা। আমি নম্বরটিতে কল করলাম। একজন নারী আমাকে পরবর্তি মঙ্গলবারে আসতে বললেন। আমি নিজেকে বর্ণনা করার চেস্টা করি, কিন্তু তিনি আগ্রহ দেখান নি। ``যেকোন কিছুতেই চলবে।`` তিনি জানালেন।

দিনগুলো ধীরগতিতে যেতে লাগলো। আমি ব্রুনোকে এ সম্পর্কে বললাম, কিন্তু সে ভুল বুঝল। সে ভেবেছিলো, বিবসিতা বালিকাদের দেখার জন্য আমি অংকন ক্লাসে যোগদান করতে যাচ্ছি। সে সংশোধিত হতে চাইলো না। ``তাদের স্তনগুচ্ছ?`` সে জানতে চাইলো। ``তারা তাদের বক্ষদেশ দেখাবে?`` আমি অসহায়ভাবে বললাম। ``এবং নীচে আছে?``

চতুর্থ তলায় মিসেস ফ্রেইড মারা যান এবং তাকে খুঁজতে যে কারও তিনদিন লাগার পরে, আমি এবং ব্রুনোর মাঝে একে অপরকে চেক করার অভ্যেস গড়ে উঠেছিল। আমরা সামান্য অজুহাত দেখাতাম - ``আমার টয়লেট পেপারের অভাব ছিল।`` যখন ব্রুনো তার দরজা খুলতো তখন আমি বলতাম। একদিন চলে যেত। আমার দরজায় একটা করাঘাত ``আমি আমার টিভি গাইডটি হারিয়ে ফেলেছি।``সে ব্যাখ্যা করতো এবং আমারটা খুঁজে তাকে দিতাম যদিও আমি জানতাম, তারটা সব সময় যেখানে থাকে সেখানে ছিল, তার খাটের উপর। একদিন রবিবারের বিকেলে সে আসলো। ``আমার এক কাপ ময়দা দরকার।`` সে বললো। এটি বেখাপ্পা হলেও আমি নিজেকে নিবৃত রাখতে পারিনি। ``কিভাবে রাঁধতে হয় তুমি জানো না।`` আমি বললাম। ক্ষণিকের নিরবতা। ব্রুনো আমার চোখের দিকে তাকালো। ``তুমি কি জানো?`` সে বলল। ``আমি একটা কেক বানাচ্ছি।``   

যখন আমি আমেরিকায় এলাম আমি তেমন কাউকে চিনতাম না, শুধুমাত্র একজন, কাজিনের ছেলে, ছাড়া যে ছিল তালার মিস্ত্রি, আমি তার জন্য কাজ করতাম। সে যদি মুচি হতো আমি মুচি হতাম, এমনকি সে যদি বিষ্ঠা সরাতো আমিও বিষ্ঠা সরাতাম। কিন্তু সে একজন তালার মিস্ত্রি, সে আমাকে ব্যবসাটি শিখিয়েছিল, এবং আমি তাই হয়েছিলাম। আমাদের একত্রে একটা ছোট্ট ব্যবসা ছিল এবং তারপরে এক বছরে তার যক্ষ্মা হয়েছিল। তার যকৃত কাটতে হয়েছিল ও তার ১০৬ ডিগ্রি জ্বর আসে এবং সে মারা যায়, আমি এর (ব্যবসার) দায়িত্ব নিই। আমি তার স্ত্রীকে লভ্যাংশের অর্ধেক পাঠাতে থাকলাম, এমনকি সে একজন ডাক্তারকে বিয়ে করার ও বেসাইডে যাওয়ার পরেও। আমি ব্যবসায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ছিলাম। তা আমার নিজের কল্পনায়ও ছিল না। এবং তারপরেও সত্য এই যে, আমি এটি পছন্দ করে এসেছিলাম।  যারা তালাবদ্ধ থাকতো আমি তাদের সাহায্য করতাম, অন্যদিকে কেউ যাতে ঢুকতে না পারে তাতে সাহায্য করতাম যাতে করে তারা দুশ্চিন্তাহীন ঘুমাতে পারে।

তারপর একদিন জানালার বাইরে তাকাচ্ছিলাম। সম্ভবত আকাশ নিয়ে ভাবছিলাম। জানালার সামনে যদি একজন বোকাকে রাখ এবং তুমি একজন স্পাইনোজা পাবে এবং সবশেষে জীবন আমাদের সবাইকে জানালা-দর্শকে পরিণত করে। বিকেল গড়িয়ে যায়, কিছুটা আঁধারের আভা নেমে আসে। আমি বাল্বের চেইনে পৌঁছলাম এবং হঠাত এমন হলো যেন একটা হাতি আমার হৃদয়ে পদপিষ্ঠ করে গেল। আমি হাটু গেঁড়ে পড়ে গেলাম। আমি ভাবলাম, আমি বেশিদিন বাঁচবো না। এক মিনিট যায়। আরেক মিনিট। এভাবে আরেক। আমি মেঝেতে দাঁড়াতে চেস্টা করলাম এবং ফোনের দিকে ছুটে গেলাম।   

আমার হৃদপেশির শতকরা পঁচিশ ভাগ মারা গেল। আরোগ্যলাভ করতে সময় লাগলো এবং আমি আর কখনো কাজে ফেরত যাইনি। আমি স্থির দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি দেখতে থাকলাম শরত পেরিয়ে শীত, শীতের শেষে বসন্ত। আমি ব্রুনোর সাথে বসতে উপরের তলায় নিজেকে টেনে নিয়েছিলাম।          

২.
বাল্যকাল থেকেই আমি ও ব্রুনো বন্ধু। যখন আমি আমেরিকাতে আসলাম আমি ভেবেছিলাম সে মারা গেছে এবং তারপরে একদিন আমি ইস্ট ব্রডওয়েতে হাঁটার সময় তার কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। সে মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু ফলের দাম জিজ্ঞেস করছিল। আমি ভাবলাম, তুমি শুনতে পাচ্ছো, তুমি এমনি স্বাপ্নিক, সম্ভাবনা কী - তোমার বাল্যকালের বন্ধু? আমি পার্শ্বপথে নিশ্চলভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে ভূতলে, আমি নিজেকে বললাম। পঞ্চাশ বছর পরে, এখানে তুমি যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে ম্যাকডোনাল্ড, খপ্পড়ে পড়। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম। আমি তার চেহারা ঠাহর করতে পারতাম না। কিন্তু সে যেভাবে হাঁটলো তা সন্দেহাতীত - একটা পাখির মত তড়িত ডিঙ্গানো। সে আমাকে প্রায় অতিক্রম করছিল। আমি আমার বাহু প্রসারিত করে তার জামা আঁকড়ে ধরলাম। ``ব্রুনো`` আমি বললাম। সে থামল ও ঘুরে দাঁড়ালো। প্রথমে সে ভীত ও দ্বিধান্বিত হল।  ``ব্রুনো`` আমি বললাম। সে আমার দিকে তাকাল, তার নয়নযুগল অশ্রুসিক্তে পূর্ণ হল। সে এক হাতে আমার গাল স্পর্শ করলো ও অন্য হাতে বরই এর থলে ধরে রাখলো। ``ব্রুনো``      
   
কয়েক বছর পরে তার স্ত্রী মারা গেল। তাকে ছাড়া তাদের এ্যাপার্টমেন্টে থাকা তার জন্য কঠিন ছিল, তাই যখন আমার উপর তলায় এ্যাপার্টমেন্ট করা হল সে চলে আসল। আমরা প্রায়ই আমাদের রান্নার টেবিলে বসতাম। আমাদের একটা শব্দ বলা ছাড়াও একটি সমগ্র বিকেল পার হতে পারত। আমরা যদি কথা বলতাম, আমরা কখনো ইয়েডিশে কথা বলতাম না। আমাদের শৈশবের শব্দাবলি অনেক আগেই আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে উঠে - আমরা একইভাবে সেগুলো প্রয়োগ করতে পারতাম না এবং তাই আমরা সেগুলো সব সময়ে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিই। জীবন নতুন একটি ভাষা দাবি করল।

(চলবে)

[সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি : ১৮ আগষ্ট ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে জন্মগ্রহণকারী নিকোল ক্রাস একজন জনপ্রিয় লেখক। তিনি ম্যান ওয়াকস ইনটু আ রুম (২০০২), দি হিষ্ট্রি অব লাভ (২০০৫) এবং গ্রেট হাউস (২০১০), এ তিনটি উপন্যাসের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। তাঁর উপন্যাসসমূহ ৩৫ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। গল্পকার হিসেবেও তিনি কম যান না। তার লেখা গল্পসমূহ আমেরিকার সেরা ছোটগল্প ২০০৩, আমেরিকার সেরা ছোটগল্প ২০০৮ এ স্থান পেয়েছে। তার লেখা দি নিউ ইয়র্কার, হার্পারস, এস্কোয়ার ইত্যাদিতে প্রকাশিত হওয়া ছাড়াও বিখ্যাত গ্রান্টা'র সেরা আমেরিকান ওপন্যাসিক অনূর্দ্ধ ৪০ এ স্থান পেয়েছে। উপন্যাস, গল্পের পাশাপাশি তিনি প্রবন্ধ ও সংবাদপত্রে নিবন্ধও লিখে চলেছেন। স্ট্যানফোর্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এ লেখক ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি ২০১০ সালে দি নিউ ইয়র্কার কর্তৃক নির্বাচিত "চল্লিশের নিচে বিশ" লেখকদের একজন যার দিকে আগামীতে নজর থাকবে অনেকের/সবার।]

১ Likes ২১ Comments ০ Share ৬৭২ Views