শিবলী সুহান লিপু'র গল্প
রাগ
বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম এবার ভালোবাসা দিবসটি কিভাবে কাটাব। দাম্পত্য জীবনের আট বছর হতে চলেছে দিবসটি কাজের ফাঁকে পাতার আড়ালে সূর্যকে দেখার মতো করে চলে গেছে বুঝতে পারিনি। এরই মধ্যে দু’জনার কত পরিবর্তন এসেছে তাও ভালোবাসা আগের জায়গাতে রয়ে গেছে। যে ভালোবাসা আগে প্রকাশ পেতো চিঠিতে, ক্যাম্পাসের কোনো এক নিরিবিলি জায়গাতে, কখনো নদীর পাড়ে শিশু গাছের তলে কখনোবা রিকশাতে করে দূরে কোনো অজানা জায়গাতে। আজ কর্ম জীবনে, সংসার জীবনে সেরকম সময় না পেলেও ডানার প্রতি ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। যদিও আর দশজন নারীর মতো তুমিও আমাকে বলেছ, বিয়ের পর আমি নাকি বদলে গেছি। তোমার কথা মানছি, স্বীকার করছি। কিন্তু আগে একটি ক্যাসেট উপহার দিতে পারলে, ভালোলাগাটা ছিল পাহাড় সমান আর তোমার হাসিটি যেন আমার অন্তর ছুঁয়ে যেত। ভালোবাসার অপর পিঠে নাকি ঘৃণা থাকে কিন্তু আমি বলি ভালোবাসার অপর পিঠে ভালোবাসাই থাকে। তার প্রকাশটাও ভিন্ন। শুধু দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটা বদলে যায়। শুধু ভালোবাসাই ভালোবাসার জন্ম দেয় না, ভালোবাসার অনুষঙ্গ রাগ এবং অনুরাগ। রাগই তো অনুরাগের জন্ম দেয়। তবে আজ কেন তোমার রাগটা অনুরাগের জলে সিক্ত হচ্ছে না! সেই সোনালী দিনগুলির কথা ভাব। যখন পরস্পরকে একবার দেখতে পারলে দিনটি হয়ে থাকত ভালোবাসাময়। আর পরস্পরের একটু কথা বলা যেন ভালোলাগার বৃষ্টি হয়ে ঝরত। তবে কি সেই দিনগুলির কথা ভুলে গেছ!
প্রেম নাকি চালাককে করে বোকা আর বোকাকে করে চালাক। তোমার বাসার আশেপাশে তিনদিন ধরে ঘুরেছি একটি মোবাইল কার্ড দিব বলে। (তখন আজকের মতো রিচার্জের সুবিধা ছিল না) অথচ দেখ তখন দু’জনই কি বোকা ছিলাম, নাম্বারটি ম্যাসেজ করে পাঠালেই তুমি রিচার্জ করে নিতে পারতে। সে কথাটি আমারও মনে ছিল না তুমিও বলনি। এটাই তো গভীর প্রেম। সপ্তাহে তোমার একটি চিঠি না পেলে মন মেঘলা আকাশ হয়ে যেত। কিন্তু সেই চিঠি পাওয়ার পরও মন তৃপ্ত হতো না ছোট বলে। কতবার যে সে চিঠি পড়তাম তা মনে হলে আজও ভালো লাগে এবং অবাকও হই। তারপরও বারবার বলতাম আরো বড় চিঠি চাই, আরো গহীন মনের কথা জানতে চাই, জানতে চাই তোমার স্বপ্ন। তুমিও আমাকে একই কথা বলতে বারবার।
একবার আমাদের জেলায় রিকশা ধর্মঘট চলছিল। অথচ রাজশাহী থেকে এসেছি তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। পরীক্ষা আছে চলে যেতে হবে। দেখা করার কোনো সুযোগ নাই। অথচ দেখা না হলে কেউ শান্তি পাব না। তুমি মাকে ঘুমে রেখে রওনা দিলে আমাকে না জানিয়ে, আমিও রওনা দিলাম তোমাকে না জানিয়ে, পথে দু’জনার দেখা। দু’জনার মনের গভীর টান ছিল বলেই এমন হয়েছে। আর একেই তো বলে গভীর ভালোবাসা, গভীর প্রেম। সেই প্রেম শেষ হয়ে গেছে আমি বিশ্বাস করি না।
তোমার চোখ তা বলে না, তোমার মন তা বলে না। গভীর রাতে তুমি জেগে জেগে কাঁদো, সে কার জন্য? তুমি ঠিক ভাবে খাওয়াদাওয়া করো না, সে কার জন্য ? সবই তো ভালোবাসার জন্য। আর একবার ফিরে এস, ফিরে এস নদীর কিনারে, দেখবে কতটা ভালো লাগে। দেখবে তোমার রাগ অনুরাগ হয়ে গেছে। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব ভালোবাসা দিবসে নদীর সেই কিনারে।
Comments (2)
সুন্দর ছড়া লিখেছেন
কবিতা বরলে ভালো হত । কবিতা লিখেছি । ধণ্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
আপনার কবিতা পড়ে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেছে।
শুভ কামনা সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য।
সবার মা-ই খুব কাছের মানুষ । মনে পড়েতো যাবেই । ধণ্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।