Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্প

ফারজানাকে নারীবাদি লেখিকা হিসাবেই জানতাম। সম্প্রতি এ নারীবাদি লেখিকা হইতে নারী বাদি কর্মীতে পরিনত হইয়াছে। ফলে তার লেখালেখি এখন লাটে উঠিয়াছে। তার ধারনা লেখালেখি করিয়া কেউ পেটের ভাতও জুটাইতে পারেনা। আবার এই সব কইরা মানুষের পরিবর্তন করাও সম্ভব না। তাই সব বাদ। এখন স্বশরীরে মাঠি নাইমা কাজ করতে হবে। তবে কাজের প্রয়োজনে যে টুকু লিখতে হবে সেইটা নিয়া কোন কথা নাই। সম্প্রতি সে একটা নারী বাদি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা ঘোষনা করিয়াছে। সংগঠনটি তার একাগ্রতা আর নিষ্ঠা আর অর্থ ব্যয়ের সামর্থকে বিবেচনায় আনিয়া আন্তর্জাতিক যোগাযোগ পদটা তাকে দিয়াছে।

বাকপটুতায় ফারজানার জুড়ি নাই। নিজ পরিবার হইতে শুরু করিয়া তার সংস্পর্শে যারাই আসিয়াছে তারাই মুগ্ধ হইয়াছে। তার ভাই কানাডা থাকে তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগাইয়া দেশের নারীদের কিছু একটা করিবার প্রয়াস লইয়াছে। তবে শুরুতে সকলেই অণ্যের জণ্য করিতে চায়। যখন দেখে সেখানে জীবিকা নির্বাহের পর্যাপ্ত রসদ রহিয়াছে তখন সেই সেচ্ছাসেবী মনোভাব উধাও হইয়া যায়। তাহারা এই কর্ম গুলিকেও জীবন ধারনের উপায় হিসেবে বাছিয়া লয়। সোজা কথা বলিতে গেলে মানুষ উপকার করিয়া জীবন ধারন করা। আরো সোজা বলিতে গেলে মানুষে দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগাইয়া ভাল কিছু করিবার জন্য নাম ভাঙ্গাইয়া পয়সা উপার্জনের ধান্দা করা করা। ফারজানা তাদের ব্যতিক্রম নয়। লোকজন এইরকমই বলে যদিও ফারজানা কেবল নিজেকে সেচ্ছাসেবী হিসেবেই জাহির করিতে দ্বীধাবোধ করেনা। সময় ও সুযোগ পাইলে নিজে কি পরিমান অর্থ ব্যয় করিয়াছে অথবা পরিজনদের কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা নিতেছে তার ফিরিস্তি দিতেও ভুল করেনা। যদিও অনেকে এটাকে তার ব্যবসা পুঁজি বলিয়াই মনে করে।

তার ভাইয়ের মাধ্যমে কানাডা ভিত্তিক একটা সংগঠনের সাথে তাহার পরিচয় ঘটিয়াছে। তারা এই দেশের পতিতাদের নিয়া কাজ করিতে চায়। এই লইয়া সে নিজ সংগঠনের সাথে কথা বলিয়াছে। তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাইতে চায়। সেই খান থেকে বেশ কয়েক হাজার ডলারের ডোনেশন আসবে। যা দিয়ে সংগঠনটি বেশ কয়েক বছর অনায়াসে চলতে পারবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাইতে ফারজানা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করিতেছে। যদি সুন্দর ভাবে কার্যক্রম শেষ করিতে পারে তবে এইটা তাকে অনেক দুর আগাইয়া নিয়া যাইবে বলে সে মনে করে। বছর ব্যাপি ক্রাযর্ক্রমের প্রথমেই তারা ভাসমান বেশ্যাদের নিয়া একটা সেমিনার করিতে চায়। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা সহ যাবতীয় সচেতনতার ধারনা দেয়া হইবে। সেই সেমিনারে উপস্থিত থাকবে কানাডা ভিত্তিক সংগঠনটির প্রতিনিধি এবং দেশের কয়েকজন সমাজ কর্মী।

এবার ভাসমান বেশ্যাদের জোগাড় করার পালা। একজনকে দায়িত্ব দেয়া হইল। সে প্রতিদিন বিভিন্ন জনের সহিত কথা বলে। সেমিনার সম্পর্কে বোঝায়, সেদিন হাজির থাকার কথা বলে। পাশাপাশি ফারজানা এও জানাইয়া দিয়াছে যারা সেইদিন সেমিনারে উপস্থিত থাকবে তাদের নগদ টাকা সহ একখানা করিয়া শাড়ি দেওয়া হইবে। বাংলাদেশে বেশ্যাবৃত্তি সরকারী ভাবে বৈধ হলেও সরকারী কোন সহযোগীতা নাই এমনকি সমাজও ভাল চোখে দেখেনা। বরং সময় সুযোগে পাড়ার মাস্তান হইতে শুরু করিয়া পুলিশও ঝামেলা করিয়া থাকে। ফলে তারাও সহজে লোক সমাজে প্রকাশ্যে নিজেদের বেশ্যা বলিয়া পরিচয় দিতে পারেনা।

ভাসমান বেশ্যাদের মধ্যে মৌসুমীকে কোন ভাবেই বুঝানো যাইতেছে না। সে কিছুতেই সেইখানে যাইতে রাজী হইতেছে না। শেষ অব্দি নগদ অর্থ আর কাপড়ের লোভ দেখাইয়া তবেই তাহাকে রাজী করানো হইয়াছে। মৌসুমী তাহার প্রকৃত নাম নহে। এইখানে যারা কাজ করে অনেকেই তাদের প্রকৃত নাম ব্যবহার করেনা। গরীব ঘরের মেয়ে মোসুমীর বিয়ে হয় এক ভ্যান চালকের সাথে। স্বামীর হাত ধইরা ঘর বাধে বস্তিতে। স্বামীর সাথে ভালই দিন যাচ্ছিল তার। তারপর একদিন পাড়ার বখাটে ছেলেরা মিলে তাকে গনধর্ষন করে। ফলে দিন বদলাইয়া যায় মৌসুমীর। কিছুই আর করার থাকেনা। ছেলেদের আক্রমনে পঙ্গু হয়ে যায় মৌসুমীর স্বামী। এরপর এ ঘাট ওপথ ঘুইরা পাড়ার এক মাসীর হাত ধইরাই পথে নাইমা আসে মৌসুমী। এই খানে ধর্ষন করেনা। তবে কয়েক মুহুর্ত সানিধ্যের বিনিময়ে কিছু কাঁচা পয়সা আসে। যদিও এই কাজের প্রতি তার কোন আগ্রহ নাই। কিন্তু কোন উপায়ন্তর না থাকাতে অন্য কিছু করতেও পারতেছেনা। একদিকে পঙ্গু স্বামী আর শিশু সন্তানের কথা চিন্তা কইরা কাজ কইরা যাইতে হইতেছে।

সারা হল রুম আলোয় আলোকিত। মঞ্চ আলোকিত করে বইসা আছেন ফারজানা। সাথে আরো কয়েকজন সমাজকর্মী। সেই সাথে দুজন বিদেশীও আছেন। একজন উপস্থাপিকা উপস্থিত সকলের পরিচয় করাইয়া দিলো। এছাড়া শ্রোতার চেয়ারে অসংখ্যা বেশ্যা বসে আছে। তাদের অনেকেই বেশ সাজ গোজ কইরা আসছে। কেউ কেউ বেশ হাসিখুশি আর কেউ কেউ কেমন একরকম ইতস্থত বোধ করতেছে। এখনো বেশ কিছু চেয়ার ফাঁকা আছে। মুল অনুষ্ঠান শুরু হইতে আরো কিছু সময় লাগবে। আশাকরা যায় আরো কিছু দর্শক শ্রোতা আসবে।

এক সময় হলটা পরিপুর্ন হয়ে গেলো। একপাশে গোটা বিশেক সাংবাদিকদের ক্যামেরা, অন্য পাশে প্রায় শ খানেক বেশ্যা আর মঞ্চে উপবিষ্ট বেশ্যাদের শোভাকাঙ্খিদের নিয়া যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হইয়া গেলো। প্রথম প্রথম অনেকের মনোযোগ বক্তাদের দিকে থাকলেও ক্রমশ মনোযোগের ঘাটতি হইতে লাগলো। বিদেশি বক্তা ইংরেজীতে বক্তব্য দিলো আর একজন তার তর্জমা কইরা সবাইরে বোঝাইয়া দিতেছিল। শ্রোতাদের মনোযোগ ঘাটতির যথেষ্ট কারন ছিল। প্রথম তাদের অতিশুদ্ধ বাংলা আর আংশিক ইংরেজী ভাষন তাদের বিশেষ ভাল লাগছিলনা। যদিও অনেকেই ভাষন তোষন কিছুই শুনিতে আসে নাই তারা কেবল মাত্র নগদ টাকা আর শাড়ির লোভেই আসিয়াছে।

মুল অনুষ্টান শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হইলো। বক্তাদের বক্তব্যের রেশ ধরিয়া অনেকে অনেক ধরনের প্রশ্ন করিল। তবে সকলের মধ্যে মৌসুমী সকল কথা বেশ মনোযোগ দিয়াই শুনিয়াছে। অন্তত সে যখন প্রশ্ন করিতে দাড়াইলো তখনও পযন্ত এইটাই সকলের ধারনা।

-      ম্যডাম আপনে কইছেন বেশ্যা নাকি সন্মান জনক পেশা তাইলে এইখানে কেউ আসতে চায়না কেন?

ফারজান বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে দাড়াইয়া উত্তর করিতে লাগলো। “আসলে আমাদের সামাজিক অবস্থানই মেয়েদের এই পেশাকে ছোট করে দেখে। তোমরা অনেক কষ্টে এই কাজ গুলো করো। নিজের জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান জিনিস এবং সময় গুলো দান করো। সুতরাং তোমাদের ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। একদিন আমাদের সমাজ পরিবর্তন হবে। সেই দিন তোমরা অবশ্যই সামাজিক মর্যাদা পাবে।“

ফারজানা লক্ষ্য করলো সে আরো কিছু বলতে চায়। তাই ফারজানা তারে কাছে জানতে চাইল। তুমি কি আর কিছু বলবে।

-      জ্বি আপা

-      বলো।

-      বেডারা অনেক খাচ্চর। খালি সুন্দর সুন্দর মাইয়া মানুষ খোঁজে। আমরাও তাগো লগে তাল মিলাইয়া সাজগোজ কইরা থাকন লাগে।

-      তা তো করতেই হবে। এখানে খাচ্চর বলে কিছুই। পুরুষরা সুন্দর এবং নতুন কিছু পাওয়ার জন্যই তোমাদের কাছে আসে।

-      আমি কইছিলাম কি ম্যাডাম? আপনে তো অনেক সুন্দর। আপনে যদি আমাগো লগে কয়েকদিন কামে যাইতেন।

এমন একটা কথা মৌসুমী বইলা বসবে কেউ কল্পনাও করতে পারে নাই। ফারজানা নিজেও না। পুরো হলরুম স্তব্দ হইয়া গেলো। সবাই সবার মুখের দিকে তাকাইতে লাগলো।

এক প্রকার চিৎকার কইরা উঠলো ফারজানা,” এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না। কি সব বাজে কথা বলছো তুমি?”

-      কেন ম্যাডাম বাজে কথা কি কইলাম?

-      তুমি কি সবাইকে তোমাদের মত মনে করো।

একজন আইসা মৌসুমীরে বসাইয়া দিলো। ধীরে ধীরে গুন্জন শুরু হইয়া গেছে। লোকজন সিট থাইকা উঠতে শুরু করছে। একজন পুরুষ আইসা মোসুমীরে ধমকাইলো। তুমি একটা বেয়াদপ! মেডামরে এই কথা বললা কেন?

মৌসুমী দইমা গেলোনা। আর জোরে কঠিন ভাষায় উত্তর করলো,” মেডাম এইখানে বইসা আমাগোরে বুঝায়, বেডাগোরে কেমনে খুশি করতে হইবো, অচেনা অজানা বেডাগোর লাইগা সাজ গোজ করন লাগবো। রোগের ভয়ে তাগো ধনের মাথায় কনডম পরাইতে হইবো আবার কয় আমরা নাকি সন্মানী মানুষ। তাইলে আমাগোর লগে কামে যাইতে অসুবিধা কি? রাইতে বেলায় পার্কে, ঝোপ ঝাড়ে, গাছের তলায় খোলা আসমানের নীচে কুত্তার লাহান অচেনা বেডাগো লগে শুইয়া দেখুক কেমুন লাগে।?

পুরো হল রুম স্তব্দ হইয়া গেছে। কারো কোন কথাই আর শোনা যাইতেছেনা।  মৌসুমীর কথা গুলো দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হইতেছে। ফারজানা মঞ্চ ছাইড়া নিচে নাইমা গেলো। ক্রমে ক্রমে হলের আলো কমতে শুরু করেছে।

 

০ Likes ১৭ Comments ০ Share ৫৬৪ Views

Comments (17)

  • - তাহমিদুর রহমান

    ছবিগুলো সুন্দর।

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ

    - সনাতন পাঠক

    সুন্দর সব ছবি, খুব ভাল লেগেছে পোষ্ট

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      আন্তরিক ধন্যবাদ পাঠক দা

    - নীল সাধু

    বাহ
    বেশ কিছু ছবি
    সুন্দর পোষ্ট


    শুভেচ্ছা রইল -

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

          

    Load more comments...