রমেজার তেরটি বছর
কৃষ্ণকলি কেবলই ফুটিতে শুরু করিয়াছে। এরই মধ্যেবিদায়ের তোর জোড় শুরু হইয়াছে। আষাঢ়ের গর্জনের মত পরম পিতৃদেব জানান দিয়াগেল যে তাহার কথার অবাধ্য হইলে তিরিশ টুকরা করিয়া গাঙ্গের জলে ভাসাইয়াদেওয়া হইবে তবুও এই পাপ ঘরে রাখিবে না। আসলে সময়ের সাথে বয়সের ব্যবধানচিরকাল রহিয়াই গিয়াছে।
মক্তবের পড়া শেষ করিয়া রমেজা এখন গৃহস্থালিতে মনোযোগ দিয়াছে। কেননা নারীজীবনকে স্বার্থক করিতে হইলে ইহার বিকল্প নাই। যুদ্ধের অস্ত্র চালনারপ্রশিক্ষন আগেই নিতে হয়। তাই তেমনি করিয়া তিলে তিলে রমেজাকে গড়িয়া তোলাহইতেছে। নারী হইবার পুর্বেই তাহাকে নারী বিদ্যা শিখিতে হইবে।
উঠোনের কোনে পেয়ারা গাছটায় উঠা হয় না বহুদিন। একটা সময় আহার, তেল চিটচিটেবিছানা কিংবা একখন্ড ভাঙ্গা আরশির মত এইটাও প্রিয় ছিল। পেয়ারা গাছে চড়িয়াসুর্যের দিকে তাকাইয়া থাকা পেয়ারাটি অতি কস্টে পাড়িয়া পা ঝুলাইয়া তাহারস্বাদ আস্বাদন করিত। গাছটা যত না বাড়িয়াছে তাহার চাইতে রমেজা বাড়িয়াছেবহুগুন। একসময় যেই গাছে রমেজা চড়িতে পারিত এখন সেই গাছ তাহার ভার লইতেপারেনা। তবে কস্টের সময় এতটুকু ছায়া দিতে কার্পন্য করেনা ।
তিন বেলা আহার,বস্ত্রঠিকমত না পাইলে কি হইবে শাসনের খড়গের কমতি হয় নাই।আজ ত্রয়োদশ বৎসরে আসিয়া নিজেকে গুটাইয়া মোড়কে ভরিয়া অপেক্ষায়রত। কখন ক্রেতাআসিয়া এই বাসী পন্যটিকে লইয়া যাইবে। শুধু তাহাই নয় বাবাকে নিঃস্ব করিয়াসারাজীবনের খরচাপাতি সহ লইয়া যাইবে। বাবা কিছুতেই বুঝেনা। আর তাহাকেবুঝাইবে এমন সাধ্য কাহারো নাই।
ছাগ্রশাবকটি কে টানিয়া লইয়া বাড়ির ঘাটায় যাইতেই মজিদের সহিত সাক্ষাৎ।
- রমেজা, তোর বিবাহের খবর শুনিলাম। তোর কি এ বিবাহে মত আছে?
রমেজা ইষৎ মাথা নাড়িলো।
তবে তোর বাবাকে বলছিস না কেন?
রমেজার নিশ্চুপ নত মস্তক তাহার অক্ষমতা বুঝাইয়া দিল।
সে আদেশ পালনের জন্যইপৃথিবীতে আসিয়াছে। একটা অষ্পষ্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া সে প্রস্থান করিল। তাহারভিতর মুচড়াইয়া উঠিতে লাগিল। মজিদ যেন তাহাকে একটা আলো দেখাইতেছে। তাহারজন্য রমেজার মনে একটু একটু টান লাগে যাহার কোন কারন বা ব্যখ্যা সে জানে না।
বাড়িতে লাল নীল কাগজ কাটিয়া নিশান লাগানো হইতেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ছুটোছুটি হৈ হুল্লোড় করিতেছে। রমেজার বাবার আজ ব্যস্ততার কমতি নাই। যেন কোনরকমে এই আপদ বিদায় করিতে পারিলেই রক্ষা। কন্যা সন্তান পিতার আদরের ধন হয়বটে কিন্তু উহাদের লইয়া পিতা-মাতার চিন্তার অবধি থাকে না। ইহাই যদি সত্যতবে তাহার বর্হিপ্রকাশ এমন হইবে কেন? রমেজার মনে পড়িতে লাগিল প্রতি বছর বাবা তাহাকে মেলা হইতে লাল ফিতা আর রেশমি চুড়ি আনিয়া দিত; যেমনটি আজ আনিয়াছেন। তবে আজ তাহার কারনটি সম্পূর্ন ভিন্ন।
শ্রাবনের সমস্ত জল বালিতে শুকাইয়া গেল। রমেজা তাহার ঘরকে চিরকালের জন্য পরকরিয়া অন্যের ঘরকে আপন করিতে চলিয়াছে। বাবার চোখের কোনে কিঞ্চিৎ অশ্রুজলদেখিয়া চমকাইয়া উঠে রমেজা। মা তো কিছু বলিবার নাই। পালকি চলিয়া যাইতেছে।রমেজা পরান ভরিয়া শেষ বারের মত দেখিয়া লইতেছেতাহার চির পরিচিত একফালিউঠোন। দক্ষিন কোনে তাহার প্রিয় সঙ্গী পেয়ারা গাছ। একটি শাখা বাতাসে মৃদুদুলিয়া দুলিয়া তাহাকে বিদায় জানাইতেছে। এখানে রাখিয়া যাইতেছে জানা অজানারতেরটি বছর। আরও একটি টান তাহার ভেতরটা মুচড়াইয়া উঠিতেছে। কিন্তু কেন তাহাবুঝিবার সাধ্য তাহার নাই।
Comments (17)
শুভেচ্ছা মিশু!
আমি প্রথমে লেখাটির বিভাগ খেয়াল করিনি। ভেবেছিলাম গল্প। পড়ার পর বুঝলাম এ যে যাপিত জীবনের কথা। আমিও গ্রামেই ছিলাম। তবে শুধু খুব ছোট বেলার সময়টা। তারপর থেকেই এই শহরবাস। নাগরিক জীবন। তবে এখন বর্তমানে যে নাগরিক জীবন যাপন করছি তার চেয়ে বহু আরাম আর শান্তির ছিল আরো ২০/৩০ বছর পুর্বের নাগরিক জীবন। তাই আমি টানা অনেকদিন শহরে থাকতে পারিনা। কদিন পর সুযোগ পেলেই ঘুরে আসি মা খালা নান নানু আর নিজ গ্রামের বাড়িতে। ঘুরি এ জেলায় সে জেলায়। গ্রামে গেলে পুরো বাংলাদেশটাকেই আমার ঘর মনে হয়। গ্রামীন জীবন যাপন, নদী নালা খাল বিল আর গাছ লতা পাতার ছায়া থাকলে শান্তি পাই। আপনার দেখি পুরাই এই স্বভাব।
আমি সিগারেট খেয়ে আসি। তারপর বাকী মন্তব্য করছি; মাত্র রাতের খাবার খেলাম আমি।
পোষ্টে রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে যা বলেছেন তানিয়ে মন্তব্য করলাম না। আপনি নিজেই তার স্বাক্ষী।
আমার গ্রামের কিছু ছবি দেই। পোষ্টে গ্রামের ছবি নেই
অসংখ্য ধন্যবাদ নীলদা।
পোস্টটার শ্রী বাড়িয়ে দিয়েছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। অসম্ভব সুন্দর ছবিগুলো!
শুভকামনা নিরন্তর...........