Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্প

।।১।।

সকাল থেকেই রুমেনার ঘরের সামনে প্রচন্ড ভীড়। টিনে শেড ঘরে হোগলার মাদুরপাতা। তাতে শুয়ে আছে রুমেনা ও তার দুই বছরের শিশু। শুয়ে আছে বললে ভুল হবে,বলতে হবে ঘুমিয়ে আছে। কেননা তাদের চোখ বন্ধ। নড়াচড়াও করছেনা। মানুষের উপস্থিতিতে তাদের কোন বিকার নেই। তারা সম্ভবত ঘুমিয়ে নেই। তবে কি মরে গেছে.? তাহলে কেউ কান্না করছেনা কেন? কি আশ্চর্য? মানুষ দুটো মরে পরে আছে অথচ তাদের জন্যকেই কাঁদবেনা। কিছুক্ষন পুলিশের বাঁশির হুইসেলের শব্দে লোকজন বেশ ফাঁকা হয়েগেছে। বেশ বয়স্ক একজন মহিলা জানালো এখানে তাদের কেউ নেই। ওরা দুজনই দুজনের ছিল। যাদের কেউ নেই তাদের জন্য কান্নাটা আদৌ জরুরী নয়।

।।২।।

প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে রুমেনা মুখে রং মেখে বেড়িয়ে পরে। বস্তি থেকে বের হতে হতে বহুজনের সাথে কথা হয়। টিপ্পনি হয়, একটু দুষ্টু দুষ্টু হাতাহাতিও হয়।গলি মুখ থেকে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা চন্দ্রিমার মোড়ে। এরপর বকুল তলা, কৃষ্ণচুড়া তলা ঘুরে রাত নয়টা চলে আসে বট তলার নিচে। প্রথম প্রথম ভালই ছিল। ছেলে পেলে পাওয়া যেত। রাতে আবছা আধারে চেহারা ঠিক চেনা যেতনা। তবে টাকার নোট চিনতে অসুবিধা হয়না। পঞ্চাশ, একশ যার সাথে যা ঠিক হয়। এরপর একটু পিছিয়ে গিয়ে বড় কোন গাছের গোড়ায় অথবা ফুল গাছের ঝোপের আড়ালে টাকার বিনিময় পরিশোধ। এখন এখানে শান্তি নেই। পুলিশ খুবই জ্বালাতন করে।

।।৩।।

রাতে আধারের মত জাগতিক চোখ এখন অন্ধকার। কিছু বুঝার উপায় নেই। কি হচ্ছে এইনিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই রুমেনাদের এক সময় অনেক হাক ডাক ছিল। আগে কেন ছিল আর এখন কেন নেই তাও রুমেনা জানেনা। জানার চেস্টাও করেনা। একটা চেষ্টাই করে প্রতিদিন সংখ্যা গুনা আর টাকার নোট গোনা। সেমিনারে শুনেছে এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। এখানে বাদ সেধেঁছে যারা তাদের কোন সংবিধান আছে কোন সংবিধান আছে কিনা জানেনা রুমেনা। কিন্ত কয়েকদিন বাধ সেদে বসে আছে প্রকৃতি। বৃষ্টিতে সারা দেশ অচল। সচল পেটে তাড়নার থাকলেও তার টাকা গোনা অচল হয়ে গেছে। সারা সন্ধ্যা থেকে রাত অব্ধি বট তলায় কেউ আসেনা। বৃষ্টিতে কে আসবে? পর পর কয়েক দিন নোট না নিয়েই তার ফিরতে হচ্ছে।

।।৪।।

মাসে দেড়শ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। পেটে খাবার থাক আর না থাক মাস শেষে ভাড়া দিতে হবে। গত কাল রাতে বাড়িওয়ালা রুমেনার কাছ থেকে দুই দুই বার বাড়ি ভাড়া তুলে নিয়ে গেছে। হাতে নোট নেই তাই নোটের বদলে যা আছে তাই দিয়েই পরিশোধ করেছে। ছোট্ট শিশুর ছো্ট্ট পেটের জন্য কোন নোট আসেনি। এর মধ্যে ঘরে ঢোকা বৃষ্টিতে পানিতে ভিজেছিল শিশুটি। স্যাতে স্যাতে ঘরে শুয়ে থেকে জ্বর এসেগেছে। ঔষুধ কেনা হয়নি। কাল রাতেও নোট আনতে যাবার আগে খালাকে বলে গিয়েছিল খালা আমি নোট আনতে যাচ্ছি তুমি পলাশকে দেখো। অনেক রাতে কাক ভেজা হয়ে রুমেনা ফিরে এসেছে খালি হাতে। পলাশ তার জন্য অপেক্ষা করেনি। মাকে মুক্তি দিয়ে চলে গেছে। কাক ভেজা শরীরে স্থীর হয়ে যায় রুমেনা। হাতে নোট নেই তো কি হয়েছে? ঘরের আড়া তো আছে। একটা ওড়নাও আছে। এরপর সন্তানের সাথে রুমেনারও অন্তিম পথযাত্রা।

।।৫।।

তাদের এই যাত্রা দেখতেই সকাল থেকে বস্তির সকল লোক রুমেনার ঘরের সামনে ভীড় জমিয়েছে।

১ Likes ৯ Comments ০ Share ৫০৪ Views

Comments (9)

  • - ঘাস ফুল

    ভাবুক আর উদাসীন মনের বহিঃপ্রকাশ দিনপঞ্জিতে তুলে ধরেছেন। হেরে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়ার মধ্যে কী আদৌ কোন সুখ আছে? বরং বিজয়ীর বেশে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করাতেই সুখ থাকলেও থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। তারপরও বলবো মৃত্যু কামনা করে কাপুরুষেরা। আর যারা বীর তারা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য। ধন্যবাদ ইশতিয়াক। 

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

      ব্যাপারটা বোঝাতে পারিনি হয়তো! বোঝাবো কি! পড়ার পর নিজের লেখাই নিজে বুঝতে পারছি না!

      ধন্যবাদ ঘাসফুল ...

    - আলভিনা চৌধুরী

    আপনার লেখা অন্য ভাবের ! মুগ্ধকর ! তারপর আমি ফুরিয়ে যাওয়া এক কাক হয়ে যাবো। একাধারে আমাকে দেখে মায়া এবং ঘেন্না লাগবে! 

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

      অনেক বেশি ধন্যবাদ কিন্ত!

    - আল ইমরান

    মৃত্যু এত সস্তা না ভাই।

    • - আহমেদ ইশতিয়াক

    Load more comments...