Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্প

সুখ কোথায় থাকে জানি না? তবে দুঃখের সাথে তার সন্ধি চির দিনের। ভাগ করে খেতে আসে আমাকে। একবার তৃষ্ণায় আরেক বার জলে ডুবিয়ে মারতে চায়। কখনো পুর্নিমা আর কখনো অমাবস্যা। মনের বনে লেগেছে গ্রহন। টুনটুনি বলল কোথাও ঘুরে আস। পাহাড় কিংবা নদীর কাছে। পাহাড় তো নেই। তাহলে নদী। কোথায় পাব তারে। মটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে আমার এক বিশেষ দিনে নন্দিনি বলেছিল তোমাকে নিয়ে আশুলিয়া যাবো। এর পর থেকে তার ব্যস্ততা ছুটি দেয়না। আমাকে নিয়ে আর আশুলিয়া যাওয়া হয় না। হয়তো তার সাথে আর কোন দিন যাওয়া হবেও না। থাক আমি একাই যাই। যেই ভাবা সেই কাজ। আমার যেদিন মন খুব ভাল থাকে অথবা খুব খারাপ থাকে আমি সাদা শার্ট পড়ি । এবারও তাই করেছি।

মোটর সাইকেল নিয়ে আবদুল্লাহপুর হয়ে কামাড় পাড়ার রাস্তা ধরে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছি। পড়ন্ত বিকেল। উজ্ঝল আকাশ। চারিদিকে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ পুরো রাস্তা জুড়ে ছায়া দিয়ে রেখেছে। হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তায় পাশে দাড়িয়ে একজন এলোকেশী আমাকে থামার জন্য হাতের ইশারা করছে। পড়নে সাদা কাপড়ের উপর হাতের নকশী করা জামা। বাতাসে তার দুপাট্টা উড়ছে। এলো মেলো চুল উড়ছে দুরন্ত বাতাসে। ভুত দেখার চমকে উঠলাম।

- আরে নন্দিনি তুমি

- হ্যা আমি, আমি জানতাম তুমি আসবে তাই তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আমি আগেই চলে এসেছি।

অতি সাবধানে উঠে বসল বাইকে। তার অনেক ভয়। খামচি মেরে ধরে রাখল আমাকে। কামার পাড়া পার হয়ে নতুন ব্রীজ হচ্ছে। আর একটু সামনে যেতে নন্দিনি চিৎকার করে উঠল দাড়াও দাড়াও।

রাস্তার ডান পাশে সাদা কাশবনের সমারোহ। তার পর একটা নদী। নদীর ওপারে দুরে একটা তাল গাছ। তার চেয়েও একটু দুরে একটা গ্রাম। মনে হয় এই বুঝি আমার গ্রাম। যারা শহরে থাকেন তারা কাশবন দেখা থেকে বঞ্চিত। শরতের মেঘ মুক্ত আকাশে গ্রামের সেই আমেজ সহ কাশবন দেখতে চাইলে এখানে একবার আসতে হবে। কিন্তু এই শরতেও বৃষ্টির একটা আবহ রয়ে গেছে। কথা নাই বার্তা নাই যখন তখন বৃষ্টি নেমে আসে।

নন্দিনি সোজা চলে গেল কাশবনের ভেতরে। এই রকম কাশবন দেখিনা অনেক দিন ।আমি দাড়িয়ে আছি। নন্দিনি ঘুরে ঘুরে ফড়িং ধরতে লাগল। উড়ছে ঘাস ফড়িং সেই সাথে সেও। একটা একটা করে ফড়িং ধরে আর আমার হাতে এনে জমা করে। মাঝে মাঝে কাশবনের মাঝে হাড়িয়ে যায়। হঠাৎ একটা প্রজাপতি আমার কাধে এসে বসে। নন্দিনি এসে তাড়িয়ে দিল।

- কি ব্যাপার ওটাকে তাড়িয়ে দিলে কেন?

- না, তোমার গায়ে প্রজাপতি বসতে পারবে না। আমি সহস্র প্রজাপতি হয়ে তোমার ষড়সত্বাকে ষড় রঙ্গে সাজাবো কিন্তু অন্য কোন প্রজাপতি তোমার গায়ে বসতে দিবনা।

আরেকটু এগিয়ে গেলেই নদীর তীর। বহমান স্বচ্ছ স্রোত ধারা। স্রোতস্বিনীর স্বচ্ছ জলে একপার পা না ডুবালে অনেক কাজই বাকী থেকে যায়।

এই সেই বট বৃক্ষ। এমনই বৃক্ষ তলে অনেক কবি কবিতা রচনা করে গেছেন। এরকম ছবিতে অনেক দেখা যায় বাস্তবে খুবই কম।পাশে দুখানা খালি নৌকা পাশাপাশি বাধা। নন্দিনি একটা নৌকায় উঠে পানিতে পা ভিজিয়ে বসল। নদীর জলে ভেজা নন্দিনির পায়ের নুপুর চিকচিক করে উঠছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে নৌকার পাটাতনে শুয়ে আছি আমি। একসময় হাত দিয়ে পানি ছিটকে দিলদিল আমার গায়ে।

- কি ব্যপার।

- শিল্পী তোমার ক্যানভাস খালি কেন?

সামনে সাদা কাশবন,

একফালি প্রমত্তা বহমান।

তুলি আছে, আছে রঙ্গের বাহার

তবে কেন এত অভিমান?

- সবই আছে তবে ........হৃদয়ে রঙ নেই।

তোমাকে বলেছিলাম একটা ছবি একে দাও

তুমি আঁকোনি, তাই ক্যানভাস খালি,

থাকুক না। তোমার যদি ভাল লাগে,

এভাবেই থাকুক। সাদা ক্যানভাস..

কালো কিংবা ধুসর তো আর নয়?

এরপর আনমনা কিছুক্ষন। সোজা চলে গেলাম আশুলিয়ার দিকে। আশুলিয়া রোডের দুইপাশে গাছ নেই। তাই রোদের তিব্রতা একটু বেশি লাগে। তবে রাস্তার দুপাশে চটপটি আর ফুচকার দোকান।

রাস্তার দুপাশে সারি সারি নৌকা বাধা। চাইলে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া করে ঘুরে আসা যায়। বর্ষাকালে বন্যার পানি থাকে বেশী। তবে এখনো কম নয়। যারা বেশি পানিকে ভয় পান তাদের জন্য নৌভ্রমন বা পিকনিকের উপযুক্ত সময়। নাগরিক ব্যস্ততার দারুন ছোয়া লেগেছে আশুলিয়ার রাস্তায়। সেখানে এখন বড় বড় বাস ট্রাকের আনোগোনা প্রচুর।

যেখান থেকে আশুলিয়ার রাস্তা শুরু ঠিক সেখান থেকেই একটা বাইপাস রোড হয়েছে মিরপুর এক নাম্বার পর্যন্ত। দুরত্ব ১৩ কিমি। রাস্তার দুপাশে ছোট বড় গাছ। এক পাশে নদী। আরেক পাশ বালি ভরাট হচ্ছে ড্রেজিং করে। ভরাট করা নতুন বালিতেজন্মেছে কাশবন। যতদুর দৃস্টি যায় সাদা আর সাদা। খুব বেশী দিন নেই ডেভলপারদের কল্যানে এই অবারিত মাঠ এক যন্ত্রনা দায়ক মানুষ্য পুরিতে পরিনত হবে।

রাস্তা থেকে বা পাশের জমি অনেক নিচু। এ খানে গাছের শুশীতল ছায়ায় চটপটিওয়ালাদের কল্যানে প্রেমিক জুটি মনের আনন্দে দুচার পিস কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যাচ্চি সামনের দিকে।

একটা মজার জিনিস দেখে দাড়িয়ে গেলাম। বাশের তৈরী মাচার উপর খুপড়ি খুপড়ি ঘর। নীচে পানি। যেন প্রম নিকুঞ্জ। কফি হাউস। বাহ দারুন তো। দুজনে মিলে একটু ঢুনা মারলে কি হয়? জলমগ্ন জলাধারের উপর বসে প্রিয়জনের সাথে কফির কাপে চুমুক দেয়ার স্বাধ আলাদা। এবার ফেরার পালা। লিংক রোড হয়ে ফিরছি দুজন। মটরসাইকেলের আয়না বার বার দেখছি আমার পেছনে বসা দুরন্ত বাতাসে উড়ছে নন্দিনির এলো চুল।

বিকেল হয়ে এলো। সুর্য লাল রং ধারন করছে। সন্ধ্যার পর আশুলিয়া রোডটা মোটেই নিরাপদ নয়। রাতের আধারে চুরি ছিনতাই সবই হয়।

এটা বিরুলিয়া ঘাট। এখানে এসে নন্দিনি আবার চিৎকার করে উঠল। দাড়াও দাড়াও সুজন বাধিয়ার ঘাট দেখে যাও।

গাছের ছায়া আর ফুরফুরে বাতাস। আমাকে জসিম উদ্দিন এর কথা মনে করিয়ে দিল। নদীর ওপারে লঞ্চ ঘাট। একজনের কাছে শুনলাম এখনো লঞ্চ আসে এখানে। নৌকা করে নদী পার হয়ে সহজেই সাভার যাওয়া যায়। ঘাটে জেলেরা মাছ নিয়ে বসে থাকে। যারা সদরঘাট থেকে মাছ কিনেন তারা জীবিত মাছ পাবেন। আর পাবেন এখানে। নদীর মাছের স্বাদই আলাদা। দামও খুব বেশী বলে মনে হল না। কড়কড়ে ভাজা মাছ আমার খুবই পছন্দ। তার উপর যদি ছোট মাছ হয় তা হলেতো কথাই নেই।

আকাশ মেঘলা হয়ে আসছে। মনে হয় বৃস্টি হতে পারে। মনে মনে খুশিই হলাম। দুজন মিলে ভিজতে ভিজতে চলে আসব। ইচ্ছা দেবীর দয়ায় কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝুম ঝুম করে বৃস্টি নামলো। এ এক অন্যরকম অনুভুতি। মটর সাইকেলের আয়না দেখি আমার পেছনে কেউ নেই।

- নন্দিনি আছো

- হুম আছিতো

- কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা যে

- পিছনে তাকাবে না। পিছনে তাকালে আর দেখতে পাবে না। আমি আছি তোমার সত্বায় মিশে। মিশে আছি অস্তিত্বের সাথে। প্রতি দিন প্রতিক্ষন, সবসময় সারাক্ষন। ঝুম ঝুম পড়া বৃস্টি এলো আমার সাথে সাথে আর ........।

১ Likes ১১ Comments ০ Share ৫৫৭ Views

Comments (11)

  • - লুব্ধক রয়

    ভালোমন্দ জ্ঞান নিয়ে কেউ আসে না। তাকে ভালোমন্দ জ্ঞান দিতে হয়। আপনি নিজে ভালোমন্দ ঠিকভাবে চেনা শিখুন, আপনার ছেলেমেয়েরাও তাই শিখবে। আলাদাভাবে বলতে হবে না যে এটা ভাল, এটা মন্দ।  

    সুন্দর  লিখেছেন দাদা  

    - তাহমিদুর রহমান

    আপনার বাড়ি রাজশাহীর কোথায়? 

    • - তৌফিক পিয়াস

      শাহ্‌ মখদুম থানার ঠিক সামনে। এয়ারপোর্ট রোড।

    - ইসমাইল হোসেন

    ছেলেমেয়েকে জোরা জোরি করবেন না। আর শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই যে, ভালোমন্দ জ্ঞান নিয়ে কেউ আসে না। তাকে ভালোমন্দ জ্ঞান দিতে হয়। আপনি নিজে ভালোমন্দ ঠিকভাবে চেনা শিখুন, আপনার ছেলেমেয়েরাও তাই শিখবে। আলাদাভাবে বলতে হবে না যে এটা ভাল, এটা মন্দ। 

    যথার্থই বলেছেন। সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ

    • - সকাল রয়

      ভালো বাবা হবার ভয়ে জীবনে কোনদিন বিয়েই করলাম। ৪৩ বছর পার হবার পর এখনও ভাবি ভালো কিছু হতে পারলাম কি।