Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

গল্প

দিন গড়িয়ে সুর্য তার নিজ অবস্থানের সন্ধান করতেছে আর আমি ততক্ষনে বানিয়াচং ছেড়ে আসতেছি। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ ঘিরে ধরে আছে আমার সমস্ত শরীর জুড়ে। বাসষ্ট্যান্ড পৌছে তেমন একটা দেরি করতে হলোনা। তার আগেই বাস যথাস্থানে রাখা ছিল। নির্ধারিত সিটে অবস্থান করে বাসের জানালা খুলে দিলাম। অপেক্ষায় আছি কতক্ষনে যাত্রা শুরু করবে। কাগজে কলমে যাই থাকুক না কেন প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্ব একটা নিয়ম আছে যা সাধারনত কোন কাগজে লেখা থাকেনা তবোও তা সকলেই মেনে নিয়েই অভ্যস্ত। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার তেমন তাড়াও নেই। সকালে পৌছালেই চলবে। সবেতো সন্ধ্যা গড়িয়েছে মাত্র।

 দ্রুত গতিতে বাস চলতেছে। জানালার ফাকা গলিয়ে শোশো শব্দে প্রবেশিত বাতাস আমার মুখ মন্ডলে আঘাত করতেছে। এমন একটা বাতাসের মুর্চ্ছনা আমার বেশ প্রয়োজন ছিল। প্রবাহিত বাতাসের সুকোমল তীব্র আঘাতে ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন হতে লাগলাম। ক্রমে ক্রমে পার্থিবও সব কিছু মনের মধ্যে জমে থাকা সকল অবসাদ বিদুরিত হতে লাগল। আমার চারিপাশ ফাকা হয়ে গিয়েছে। যেন আমি আর বাসের মধ্যে নাই। আমার আশে পাশে কেউ নাই। আধার হতে ক্রমশ আলোর রেখা ধরে সামনে অগ্রসর হইতেছি। প্রথমত কিছুটা আধার অনুভুত হলেও চলমান পথে আবার প্রচুর আলো প্রবেশ করে আমার চারিপাশ উজ্জল থেকে উজ্জলতর করে দিয়ে গেলো। আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম দীঘির দক্ষিন পাড়ে অবস্থানরত জোড়া বটবৃক্ষের পাদদেশে।

 মহাদেবকে সন্মুখে রেখে পুজোর উপকরন সাজিয়েছি। মহাদেবের ইচ্ছেনুযায়ী সমগ্র বানিয়াচং আমার করতল গত। এখানকার মর্ত্য থেকে বৃক্ষরাজী, বৃক্ষশাখে অবস্থানরত সকল পাখপাখালিকে আমি সন্হেহে আশ্রয় দিয়া আসতেছি। তার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ মহাদেব আমার পুজোর অপেক্ষা করেন। আমার উপরকনের তিনি তুষ্টী লাভ করেন। আমার আধিপত্যে আর বিস্তারের এলাকার মানব কুল নিজেকে কেবলই সুখী নয় মহাসুখী মানবে পরিনত করেছিল। ফলে মহাদেব আমার প্রতি অতিশয় সন্তুস্ট হলেন। আমার এমন এক সুখের দিন আসলে আমি আমি কোনদনি বর চেয়ে নিরাশ হয়েছি এমনটা কোনদিন আমার কখনো হয়নি।

 মাঠের পাশে বটবৃক্ষ আমি নিজ হাতে রোপন করেছি। সাতদিনে তাতে পুর্নতা দান করেছি এবং তারই পাদদেশে আমি পুজোমন্ডপ স্থাপন করেছি। অবশেষে স্মরনে আসল আমি একা কেন? মর্তের সকল মানব কুল যদি এই মন্ডপে মহাদেবের প্রতি অর্চনা করতে আগ্রহী হয় তবে আমি কেন তাদেরকে বাধা দিবো। মহাদেব তাতে বরং খুশিই হবেন। শুনেছি মহাদেবের কাছে যা চাওয়া যায় সবই তিনি দেন। তবে তিনিও কম যান না। তিনি পুজো চান, জীবন চান সীমাহীন ক্ষমতা থাকার পরেও সামান্য মানবের পুজোর অপেক্ষায় বসে থাকেন। আবার তার সৃস্টি মানবকুল তার অর্চনায় অলসতা করলে শাস্তি প্রদান করতে ভুল করেননা। তবে সেদিক থেকে মানবকুলও মানবিকতা ধারন করে। শত ঝড় ঝঞ্চাতেও তারা কখনোই নিরাশ হয়ে বিধাতার বিরুদ্ধে ক্রসেড ঘোষনা করেনা।

 সান্ধ্যা পুজো দিয়ে শেষ তপ জপ করতেছিলাম। বার বার তপে ভুল হতে লাগল। মনে হচ্ছে কেহ মনের মধ্যে আগমন করবার চেস্টা করতেছে। একবার দুবার তিনবার কিন্তু বিধিবাম। আমি মনসংযোগের স্থান চ্যুত হলাম। মহাদেব বেশ রুস্ট হলেন। সন্মুখে এসে আমাকে তীব্রভাবে ভৎর্সনা করে গেলেন। কিন্তু আমি আমার প্রতি মহাদেবের রুস্টের কারন আবিস্কার করতে ব্যর্থ হলাম। অবশেষে কারন জানা হল। মন্ডপের বহিরাংশে সদ্য যৌবনাপ্রাপ্ত বালিকা পুজোয় মত্ত ছিল। বালিকা অতিশয় পুত পবিত্র। আমার মনে এই ধারনাই বদ্ধমুল হলো যে পুত পবিত্রার সুগন্ধী আমাকে আমার অব্যয় থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে।

 বোধ করি বালিকার বয়স চৌদ্দ অতিক্রম করে পনেরতো প্রবেশ করতেছে। রক্তাভ চন্দনাগ গাত্রবর্ন উজ্জল তার মহিমা। বাতাবিনেবু সদৃশ একনিষ্ট সুবেশী সুখদর্শন মুখশ্রী। ক্রমশ সরু চোয়ালের শেষ ভাগের অগ্রে একখানা রুপসী তিলক তার সৌন্দর্যকে মহিমান্বিত করেছে। সুচাগ্র উন্নত নাসিকা, উজ্জল রক্তাভ কপোলের দুপাশে খরগোশ সদৃশ সুদর্শনীয় কর্ন যুগোল তার সৌর্ন্দযকে বাড়িয়েছে বহুগুনে। গোবাক তরু ন্যায় নিতম্বের শেষে সুবিন্যস্ত পা দুখানি ধরে রেখেছে তার অসাধারন দেহ বল্লরী। কেশ বিন্যাস যেন মেঘের আড়ালে মেঘের হাতছানি। আর বক্ষ বন্দনা করি নিবিষ্ট চিত্তে এভাষার প্রকাশের নয়। এতে লজ্জা নেই তবে আছে একচ্ছত্র উপভোগের এক নিবিস্ট লোভ। সেখানে কারো ভাগ নেই। চারিপাশের যত উজ্জলতা তার সবটুকুই এই বালিকার করতল গত।

সে নিবিষ্টি চিত্তে চক্ষু নির্মিলন পুর্বক জপমালা পাঠে ব্যস্ত। আমি স্পস্ট দেখলাম মহাদেব তার প্রতি সন্তুস্ট হয়েছেন। বালিকা তার জপ মালা পাঠ করেই চলেছে। নিরবে নিশব্দে। আমিতার মনের মধ্যে প্রবেশের চেস্টায় নিবদ্ধ হলাম। প্রভু তার জপে এতটা ব্যস্ত ছিলেন আমাকে তিনি গুরুত্ব দিলেননা।

“হে প্রভু। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমি বিখারী তোমার দ্বারে। কোলে তুলে নাও, পথ দেখাও। যে পথে যেতে চাই বারে বারে। আমার ইচ্ছাকে পুরন করো। তুমি আমার হও আমি তোমাতে বিলীন হই। আমি স্বত্ত্বা হই তুমি আমার অস্তিত্ব হও। আমি তোমাতে সমর্পিতা হতে চাই। তুমি আমার হও।“

আমি মুগ্ধ, শান্ত বিহ্বল হয়ে গেলাম। এমনই এক পুত পবিত্র বালিকা মনে কি এমন কস্ট? কি এমন দায়বোধ। শত ভেবেও তার কোন কুল কিনারা আমার মুনপুত হলোনা। ইতিমধ্যে তার পুজো সাঙ্গ হয়েছে। তাই কেবলই তার পরদিন আগমনে অপেক্ষায় রাত্তিবাসের জন্য শূন্যে তিরোহিত হলাম।

মহাদেব আমার মনের ভাব বুঝিলেন। আমাকে স্মরন করিয়ে দিলেন তুমি দেবতা । তুমি আমার আশির্বাদ পুস্ট। কিন্তু ওই বালিকা সে আমার সৃষ্টি। এক মানবী। সে আর তোমার মধ্যে দাসী আর প্রভুর ব্যবধান। সে পুজারী আর তুমি পুজা গ্রহন কারী। তাই তাতে আর তোমাতে ভিন্ন ভাবনা আনা অন্যায়। তাকে তার মত থাকতে দাও।

আমি আরো জানবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম। মহাদেব পুনরায় সর্তক করতে দ্বীধা করলেননা। বালিকার নাম কমলা। তার পিতা জমিদার মহিসুর। জাতে ব্রাক্ষন। জন্মসুত্রে বংশানুক্রমিক তারা কুলীন বংশের ধারক। তার জমিদার প্রপিতামহ হতে অদ্যাবধি সকলেই ধর্মের প্রতি প্রবল অনুরক্ত। পিতা সদা সর্বদা মহাদেবের অর্চনা করে থাকেন। তার বালিকা কমলাও হয়েছে তদ্রুপ। সুতরাং জন্মগত ভাবেই কমলা বড়ই বিদুষী বালিকা। তার প্রতি মহাদেব অনুরাগ ভাজন হবেন এটাইতো বড় সত্য।

প্রতিদিন আমি মহাদেবের পুজোর পাশাপাশি কমলার অর্চনাও গ্রহন করি। ক্রমশ অনুভব করতে লাগলাম আমি যেন তার আগমনের অপেক্ষায় থাকি। এমন করে একদিন তার অনুপস্থিতি মহাদেবের অর্চনা করতে ভুলে গেলাম। সেদিন রুস্ট চিত্তে মহাদেব হাজির হয়ে কারন জানতে চাইলেন। আমি নিশ্চুপ রইলেও মহাদেবের কিছুই জানার বাহিরে গেলনা। কমলা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই পরপর তিন দিন কমলা মন্ডপে আসবেনা। আমি লজ্জিত নতি স্বীকার করে স্বীয় প্রভুর অর্চনার নিশ্চয়তা দিয়ে মহাদেবকে প্রত্যাবর্তন করাইলাম।

একদা আমার মনে এই ধারনাই বদ্ধমুল হয়ে উঠল যে আমি কমলার প্রতি অনুরক্ত হয়েছি। আমি এইটুকু জ্ঞাত যে দাস আর প্রভুতে এই কর্ম সম্ভব নহে তথাপি আমি নিয়মের ব্যতয় করেই নিজেকে মানব রুপে আভিভুর্ত হওয়ার অভিপ্রায় প্রভুর নিকট ব্যক্ত করলাম। প্রভু এই বলে আমাকে শাসন করলেন যে আমি দেবতার আসনচ্যুত হয়েছি আমি আর মানবের পুজোর উপযুক্ত নই কেননা মনে মনে আমি আমি মানব সঙ্গ লাভ করত অপবিত্র হয়েগেছি। অবশেষে এই সিন্ধান্তেই উপনীত হলাম যে অভিশপ্ত যেহেতু হয়েছি আমি মানব রুপে আভির্ভুত হয়ে কমলার পানি গ্রহন করতে নিবিষ্ট হবো।

কিন্তু বিধিবাম। আমি এবার হতাশ হলাম। জানলাম কমলা নিজেই কাহারো প্রতি অনুরক্ত হয়ে আছে। মুকুন্দরাম অতিশয় ছোট জাত। তার পুর্ব পুরুষ নমশুদ। সকল উচ্চ জাতের সম্ভ্রম রক্ষা করত জীবন বাজী রাখাই যাদের কর্ম তারা কোন ক্রমেই তাদের সম্ভ্রমের অনুরাগী হতে পারেনা। তাতে কিছুই যায় আসেনা। কমরা নিবিস্ট চিত্তে বলে গেল আমি মুকুন্দুরামকেই চাই।

পুজোর মন্ডপে পুজো এমনই আব্দার করে গেল মহাদেবের চরনে। সে তার সকল কিছুর বিনিময়ে মুকুন্দরামকেই চায়। মহাদেব তার অতীতের সকল অর্চনা ভুলে গেলেন। মহাদেব অতিশয় রুস্ট হলেন। ছোট জাতের সহিত অনুরাগের ফলে বিরাগ ভাজন হয়ে কমলা অভিশাপ দিলেন। আমি প্রভুর নিকট কমলাকে প্রাপ্তির আবেদন করতেই প্রভু পুনরায় রাগান্বিত হলেন। উভয় মুখী চাপে প্রভু বেশ রুস্ট হয়ে উভয়কেই অভিশাপ দান করলেন। আমি মানবরুপে ধরনীতে আগমন করলাম। কিন্তু যেহেতু কমলা আগে থেকেই মুকুন্দরামের প্রতি অনুরক্ত তাই আমি তার কাছে আমার অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে ব্যর্থ হলাম।

আমি আমার ভূল বুঝলাম। তার চেয়ে বেশী ব্যর্থ হলাম। পুনরায় প্রভুর কৃপা লাভের আশায় অর্চনায় নিমগ্ন হলাম। প্রভু আমাকে গ্রহন করলেন বটে কিন্তু আমার মনের মধ্যে কমলার প্রতি চরম বিদ্বেষ জন্ম নিল। আমি তার প্রতি চরম রুস্টই রয়ে গেলাম। অন্যদিকে কমলা মহাদবকে জানিয়ে দিলো সে কিছুতেই মুকুন্দরামকে অন্তর শূন্য করতে পারবেনা। ফলে মহাদেবও তাকে অভিশাপ দিয়াই রাখলেন।

 

একদা কমলার বাবা মহিসুরের মস্কিস্কে রক্ত ক্ষরন হলো। একান্ড স্বয়ং মহাদেব ঘটিয়েছেন। আমি জানতে চাইলাম প্রভু এর হেতু কি? আপনার একজন প্রিয়া দাসকে এতবড় পরীক্ষায় ফেলিলেন। প্রভু কহিলেন সে আমার প্রিয় দাস। আমি তার কোনই ক্ষতি করবোনা। দৃশ্যত সে অসুস্থ হলেও অন্তরে তার কোন কষ্ট নেই। তার সকল কষ্ট আমি নিজে ভাগ করে নিয়েছি। তবুও কেন তাকে এরুপ অবস্থায় ফেলেছি তা কেবল আমি জানি।

 

দেশের তাবৎ বৈদ্য কবিরাজ গন তার সুস্থতা আনয়ন করতে ব্যর্থ হলো। অবশেষে জ্যতিষির ধারস্থ হলো। তিনি বলে দিলেন কোন পবিত্র আত্নায় কালিমা লিপ্ত হয়েছে। তাই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই কমলাকে অবশ্যই মহাদেবের অর্চনা করতে হবে। তাকে রাজি খুশি করাতে হবে। এবং পরিশেষে মহাদেবের নির্দেশনা মানতে হবে। তবেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

 

কমলা অতিশয় পিতৃপরায়ন ছিল। তাই মহাদেবের অবাধ্য হলেও পিতার অমঙ্গল বার্তা সহ্য করতে পারলোনা। পিতার সুখ আর সুস্থতার কথা বিবেচনা করে পুনরায় মহাদেবের দারস্থ হল। এবার মহাদেব তাহাকে পাইল। এবং স্পস্ট বলে দিলো তুমি যদি তুমার পিতা সুস্থ্যতা কামনা করো তবে তোমাকে অবশ্যই আমার আদেশ পালন করতে হবে। কমলা রানি সম্মতি প্রদান করাতে মহাদেব কহিলেন তোমার জন্য রাজকুমার পদ্মনাথ শত অশ্ব নিয়া তোমাকে বরন করতে আসবে। সে তোমাকে সুখে রাখবে। তার সাথে আমিও তোমাকে একটা বর দিলাম। তুমি ভুবন বিখ্যাত হবে। বিনিময়ে আমি তোমার হৃদয় হতে মুকুন্দ রামকে কেড়ে নিলাম। তুমি সুখি হও বৎস।

এবার কঠিন রুস্ট চিত্তে মুখ খুলল কমলা রানী। আমি আমার সুখের জন্য এখানে আসিনি মহাদেব। তুমার ক্ষমতার কাছে আমার পিতা পরাজিত হয়েছে। তার জন্যই আমি তোমাকে পুনরায় পুজো দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমি প্রথমবার পুজো দিয়েছি তোমার কৃপা লাভের জণ্য অতপর আমার মনের মানুষকে কাছে পাবার জন্য। এই পুজো গুলো ছিলো আমার মনের গভীর থেকে। এর সাথে মিশে ছিল আমার আত্নসমর্পন। কিন্তু আজ যে পুজো তুমি নিলে তার আমার সেচ্চায় দেয়া নয়। বরং তোমার কেড়ে নেয়া। আমার পিতাকে অসুস্থ্য বানিয়ে তুমি আমাকে বাধ্য করেছো। সুতরাং তোমার কোন বর আমি চাইনে। তুমি আমার পিতাকে আরোগ্য করো। এই বেশী কিছুই চাইনে আমার। আর আমার সুখ আমি বিসর্জন দিয়েছি। মুকুন্দরাম আমার বক্ষেই থাকবে। তাকে বক্ষে ধারন করেই আমি পদ্মনাথের পানি গ্রহন করবো।

অবুঝ হয়োনা কমলা রাণী। তুমি নিছক দুর্বলতার প্রতীক। তোমার পিতাকে আমি যে কোন মুহুর্তে ধরনীর অতিত করে দিতে পারি। পারি তোমাকেও। তবুও তুমি আমার অবাধ্য হচ্ছো। একি তোমার আস্পর্ধা নয়।

স্বীকার করি এ আমার আস্পর্ধা। তুমি সৃস্টির স্রস্টা। তুমি তোমার সৃ্স্টিকে স্বাধীন চিন্তার অধিকারী দিয়েছ। আবার সে স্বাধীনতা কেড়ে নিতেও চাইছো তবে কি তুমি নিজের কাছে নত স্বীকার করেছো? তুমি কেন বুঝতে চাওনা স্বাধীন চিন্তার চেতনাকে। তবোও তুমি আমার প্রভু। আমি তোমাতেই নত শির রইলুম। আমি তোমাতেই সর্মপিত হলুম। তুমি আমার পিতার সুস্থ্যতা দান করো। আমি তোমার কথায় স্বীয় মস্তক অবনত করলুম।

পিতা মহিসুর ক্রমশ সুস্থ্য হয়ে উঠলেন। আমি মনে মনে কমলারানী সর্বনাশ দেখতে চেয়েছিলুম। কিন্তু বিধাতা তার প্রতি প্রকাশ্যে রুস্ট হলেও তাকে কোন অভিশাপ দিলেননা। কমলা রাণী পদ্মনাথের পানি গ্রহন করলো। তারা বেশ সুখেই দিন কাটাতো লাগলো। একদিকে মনেকষ্টে রাগে ক্ষোভে অপমানে মুকুন্দরাম এলাকা থেকে প্রস্থান করে নিরুদ্দেশ হল আর অন্যদিকে আমার মনের মেঘ ক্রমশ কালো হতে হতে বজ্রপাত ন্যায় সংগর্ষের আকার ধারন করলো। আমি কিছুতেই কমলা রাণীর সুখ মানিয়ে লইতে পারতেছিনা।

এবার আমি আবার পথে নামলাম। কমলাকে প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে উঠলাম। আমার মনের অভিপ্রায় মহাদেব বুঝিলেন। তার শাসনে দমে গেলেও আমি আবার মহাদেবে অবাধ্য হওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহন করলাম। অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় আমার মনোজগতে নিবিস্ট হলো যে কমলাকে পৃথিবী থেকে স্বর্গে আনয়ন করতে পারলেই আমি তাকে গ্রহন করতে পারবো। কিন্তু মহাদেব কহিলেন এ অসম্ভব। তাকে আর বহুদিবস পৃথিবীতে অবস্তান করতে হবে। আমি অন্যনোপায় হয়ে নানা বিক্ষিপ্ত ভাবনায় মনোনিবেশ করে অতপর ভিন্ন পথে কামনা হাসিলের উপায় গ্রহন করলাম।

মহাদেব ততক্ষনে অন্যত্র ব্যস্ত হয়ে পরলে আমি সেই সুযোগ গ্রহন করতে দেরি করলামনা। মুনি রুপে হাজির হলুম মহিসুরের গৃহে। দেখলুম মহিসুর আপন গৃহে একা একা দিন গুজরান করতেছিলেন। তার স্ত্রী গত হওয়ায় সে নিজেও বেশ অসহায় দিন যাপন করতেছিল। আমি তাকে এই বলে আশ্বস্ত করলুম আপনি আপনার কন্যাকে তার স্বামী সহযোগে এখানে নিয়ে আসুন। আপনার একাকীত্ব কাটবে আর অন্য দিকে আপনার প্রস্থানের পর আপনার এই জমিদারী দেখভাল করবার নিমিত্তে তার স্বামীকে নির্বাচিত করতে পারবেন। মহিসুর আমার পরামর্শে ভাবনায় পড়ে গেলেন।

তিনি তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে প্রিয় কন্যাকে চর পাঠালেন। কন্যা সোৎসাহে রাজী হয়ে গেলেন। সে তার স্বামীকে লইয়া পিত্রালয়ে অবস্থান করতে সম্মত হলো। কিন্তু রাজা পদ্মনাথ কিরুপে নিজ রাজত্ব ত্যগ করবে তাহা ভেবে পাচ্ছিলনা। আমি অবশেষে তার নিকট হাজির হয়ে উপায় বলে দিলুম। এই রাজত্ব তোমার অনুজকে দায়িত্ব দিয়ে যাও। এই রাজ্যও তোমার থাকিলো আবার নতুন একখানা রাজ্য পাইলে। ইহাই তোমার মঙ্গল হবে।

পদ্মনাথের দুশ্চিতা ঘুচল। আর আমারও কার্য সিদ্ধির পথে অনেক পথ এগিয়ে এসেছি। এবার এক শিব রাত্তিরে আমি স্বপ্ন হয়ে ধরা দিলাম পদ্মনাথের ঘুমে। সঙ্গে আমার শঙ্খনাগ, শতপদ্মের পাপড়িতে চরে পৌছে গেলাম পদ্মনাথের চোখে। পদ্মনাথ শঙ্খনাগের বেশ অনুরাগী ছিল। সে আদেশ করলো, পদ্মনাথ। এই তল্লাটে কোন জলাধার নেই। এলাকাে লোকজন নদীর অশুদ্ধ জল পান করে। তুমি এখানে এসেছ জেনে আমি অতিশয় খুশি হয়েছি। তুমি এবার আমার আদেশ মোতাবেক এখানে একখানা দীঘি খনন করো। এতে আমাদের বিচরন সুখকর হবে এবং এই তল্লাটের জনগনের জলকস্ট দুর হবে।

পরদিন প্রত্যুষে, নিদ্রা শেষে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন পদ্মনাথ। শ্বশুর তার কারন জানতে চাইলে স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য তিনি তার শ্বশুরকে অবগত করাইলেন। শ্বশুর মহাশয় অতিশয় খুশি হলেন। এবং দীঘি খনন করবার যাবতীয় সহযোগীতা করতে লাগলেন।

সহস্র কোদালী নিয়োজিত হলো দীঘি খননে। দিন রাত নিরলস চেস্টা করে দীর্ঘ একমাস সময় ব্যয় করে প্রায় দুই মাইল লম্বা এবং এক মাইল প্রস্থে একখানা সুদীর্ঘ দীঘি খনন হলো। যথা সম্ভব গভীর করা হলো। কিন্তু জলের অস্তিত্ব মিললনা। পদ্মনাথ অতিশয় চিন্তিত হলো। তার ধারনা কোথাও কোন ত্রুটি হয়েছে ফলে তার দীঘিতে জলের সংকট ঘুচলনা। কিন্তু এযে আমারই কুটকৌশলের অংশ তা অবুঝ মানব কুল কিছুতেই বুঝতে পারলোনা।

অবশেষে আমি আবার পদ্মনাথের স্বপ্নে হাজির হলাম। তাকে জানিয়ে দিলাম তোমার নিকটেই আছে একজন পুত পবিত্র রমনী। যদি সেই নারীকে দীঘিতে বিসর্জন দিতে পারো তবেই তোমার দীঘিতে জল আসবে। পরদিন তিনি সেই কথা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু কে সেই পবিত্র রমনী তাহা অনুসন্ধান করবার নিমিত্তে জ্যতিষির স্মরনাপন্ন হলো। জ্যতিষি অনেকে ভেবে চিন্তে গননা করে এই সিন্ধান্তেই উপনীত হলেন যে আপনার গৃহে থাকা কমলারানীতে দীঘিতে বিসর্জন দিলে তবেই দীঘি জলে পরিপুর্ন হয়ে উঠবে। কিন্তু পদ্মনাথ তাতে কিছুতেই রাজী হলেননা।

এই কথা গোপন থাকলোনা। ক্রমে ক্রমে সারা বানিয়াচং মহাল হয়ে গেল যে কমলা রানীকে দিলেই বিনিময়ে দীঘিতে জলের সমাগম ঘটবে। একসময় তার কমলার কর্ন পযর্ন্ত পৌছালো। সব শুনে কমলা নিজেকে বিসর্জন দিতে রাজী হলো। কিন্তু বাধ সাধলো পদ্মনাথ। সে কিছুতেই তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বিসর্জন দিবেনা। কিন্তু কমলার জেদের কাছ সে পরাজয় বরন করল।

সন্ধ্যায় মহাসমারোহে পুজোর আয়োজন হল। আমি নিবিস্ট চিত্তে সে পুজো গ্রহন করে মহাদেবের নিকট পৌছিয়ে দিলাম। জনসাধারনের জন্য কমলার আত্নত্যাগ মহাদেব গ্রহন করলেন। আমি অপেক্ষায় রইলুম আজ রাতের পরই কমলা স্বর্গে আরোহন করবে। এর পর তাকে আমার করতে আর কোন বাধাই থাকবেনা। কিন্তু এখানেও অজান্তে কাটা হয়ে উঠল মহাদেব। কেননা কমলা রানীর একমাত্র শিশু পুত্রের বয়েস সবে তিন মাস। এই অবস্তায় তার জন্য ব্যবস্তা চাইল কমলা রাণী। মহাদেব তার সন্তানের কথা বিবেচনা করে অনুমতি দিয়ে দিলেন যে সে যখনই চাইবে তার সন্তানকে দুগ্ধ পানের উদ্দ্যেশ্যে মর্তে গমন করবে। যত দিন সন্তান দুগ্ধ পোষ্য থাকবে ততদিন কমলা স্বর্গে প্রবেশিত হবেনা। তার মধ্যে সকল মানব স্বত্বা বিদ্যমান থাকবে। মহাদেবের এমনই সিন্ধান্তে আমি মর্মাহত হলাম।

তবুএ সিন্ধান্ত মেনে নিতেই হলো। কমলা সান্ধ্য পুজো শেষে দীঘিতে নামলো। আমি জলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। পাতাল ভেদ করে সকল জলে দীঘিকে পরিপুর্ন করে দিলাম। সকাল হতেই এলাকার সকলের ঢল নামলো জলের পুর্ন দীঘি দর্শনে। তাদের মাঝখান থেকে হারিয়ে গেল কমলা রানী। মনো কষ্টে রইলেন পদ্মনাথ আর অন্য দিকে পাওয়া না পাওয়ার মাঝ খানে দুদুল্যমান আমি নিজে। এরপর এভাবেই চলেছিল সব। কিন্তু আমার যন্ত্রনা যে লাগব না হয়ে ক্রমশ বাড়তেই লাগলো।

এবার সর্বশেষ আঘাত হানার প্রস্তুতি নিলাম। স্বপ্ন যোগে আবার হাজির হলাম পদ্মানাথের কাছে। তাকে জানিয়ে দিলাম প্রতিদিন গোপনে কমলা গৃহে আগমন করে। তার সন্তানকে দুগ্ধপান করিয়ে তবেই ফিরে যায়। এ জানে মহাদেব নিজে আর জানে তোমার সে দাসী যে কিনা সন্তানের দায়িত্ব লইয়াছে। যদি তুমি কোন সন্ধানে তাকে আটকাতে পারো তবে কমলা রানী তোমার থেকে যাবে। তাকে আর জলে যেতে হবেনা।

 পদ্মনাথ অতিআশায় বুক বাধলেন, খুশিও হলেন প্রবল। এর পর থেকে তিনি অপেক্ষায় থাকেন। রাজ কার্যের পাশাপাশি নজর রাখতে লাগলেন কখন আসেন কমলা রানি। লোক চক্ষুকে উপেক্ষা করে কমলা গৃহে প্রবেশ করলো। কিন্তু পদ্মনাথ দেখতে পেলোনা। হঠাৎই দেখলেন তার শিশু সন্তান শূন্য থেকে দুগ্ধ পান করতেছে। তিনি বুঝিলেন অদৃশ্য আর কেহ নয়। এ তার প্রিয়তমা স্ত্রী কমলা রাণী। সে নিরবে এগিয়ে গিয়ে আন্দাজ করত জড়াইয়া ধরল। স্বীয় স্বামীর স্পর্শে কাতর হয়ে গেল কমলা। সে তার নিজ রুপ ধারন করলো। কত মুহুর্ত গেল তা কমলা নিজেই ঠাহর করতে পারলোনা। এদিকে তার ফেরার সময় অতিক্রান্ত হয়ওয়ার এবং মহাদেবের কথার অবাধ্য হওয়ার তাকে আর জল থেকে শিশুর কাছে আসতে দেয়া হলোনা। তাকে নিমগ্ন রাখা হলো মহাদেবের কক্ষে। শাস্তি স্বরুপ পুজোর নিমিত্তে।

এদিকে আমার যন্ত্রনা আরো বেড়েই উঠেছে। কমলা রাণী স্বর্গে গেল বটে কিন্তু সে আর মুক্ত রইলনা। যে কিনা ঠাই পেল মহাদেবের কাছে। এরপর আর এগোয়নি গল্প। কমলা রাণী একদা মহাদেব কে তুষ্ট করেছিল। তাকে মহাদেব পদ্মাসন দিয়ে দিলেন। ফলে সে সন্মানে আমারও উর্ধে চলে গেলো। সে আরাধ্য হয়ে গেল ঠিক আমারই মতো। তবে আমি মর্তে আর সে স্বর্গে। আমি সবশেষ চেষ্টা করেও বিফল হলাম।

তবে এই মনো কস্টে আমি একা নই। একদিকে আমি আর অন্য দিকে পদ্মনাথ। সবশেষে যোগ হলো মুকুন্দরাম। নিরুদ্দেশ মুকুন্দরাম তল্লাটে ফিরেছিল বটে কিন্তু যখনই জানলো কমলা রানী দীঘির জলে মিশে আছে সে আমার মন্ডপে এসে পুজো দিয়েছিল। অনেকেই তাকে সেবার দেখেছে। কিন্তু পরদিন তার শীতল দেহ ভাসতে দেখা গেল দীঘির স্বচ্চ জলে।

অবশেষে আমি এই বুঝেছিলুম জয় কমলার হলো। জয় হলো মুকুন্দরামের। যে জলে কমলারানী আছে সেই জলে মুকুন্দরাম আছে। আর আমি অচ্ছুৎ রয়ে গেলাম। না জলে না জঙ্গলে। আমি এখনো বসে থাকি সেই বট বৃক্ষতলে। জানি কমলারানী আসার নয় তবুএ নিস্ফল অপেক্ষা। আমি দেখি জলে কমলারাণীর ছবি। পাড়া ছেলেরা দল বেধে সাতার কাটে। ঢেউয়ের তালে নেচে উঠে কমলার ছবি।

দুরন্ত ছেলেদের জলকেলীতে হঠাৎ জলের ঝাপটা লাগে আমার চোখে মুখে। শত সহস্র বছরের তন্দ্রা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  বাসের খোলা জানালায় সজোরে বৃষ্টির জল মুখে এসে ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে। আমার বাম পাশে বসা কমলারানি। আমি কেন কমলাদীঘির জলে গাহনে গেলাম এমন প্রশ্ন করে গেল কমলা। কিন্তু আমি কোন উত্তর করতে পারিনি।

০ Likes ৪ Comments ০ Share ৭১৮ Views

Comments (4)

  • - নীল সাধু

    কতো আগুন আর রক্ত-নদী পেরোলে 
    সত্যিই ঠিকঠাক পেয়ে যাবো তার দেখা-
    হাতের নাগালে; আমরা তা’ জানিনা

    কবিতায় বাস্তবতা তুলে এনেছেন। শুভেছা মাসুম বাদল।

    ভালো থাকবেন।

    • - মাসুম বাদল

      শুভেচ্ছা, নীল'দা' !

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    একদিন শান্তি আসবেই। আমরা যেন প্রতদিন এই আশাতেই অশান্তি গুলি মেনে নিচ্চি।

    • - মাসুম বাদল

      যথার্থ বলেছেন। শুভকামনা রইল ... 

    - সনাতন পাঠক

    শুভেচ্ছা সুন্দর কবিতা।

    ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

    • - মাসুম বাদল

      dhonyobad o shuvokamona...

    Load more comments...