Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

৮ বছর আগে

গরীব অসহায়দের বৃষ্টির দিন

বৃষ্টি বর্ষাকালের অলঙ্কার শিল্পী-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিতে বৃষ্টির নানা রূপ ফুটে উঠেছে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে যখন ভূমি ধুলায় ধূসরিত হয়ে মাটি চৌচির হয়ে যায় তখন কয়েক ফোঁটা সস্ত্বির বৃষ্টি তপ্ত পরিবেশকে পূনরায় শান্ত করে দেয় মাটিকে দেয় নতুন জীবন মৃত্যু মাটি আবারও যৌবনের দীপ্ত শপথ নিয়ে উৎপাদনের শক্তি সঞ্চয় করে আবার কখনো কখনো বৃষ্টি মানুষের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায় তরু-তরুণী, যুবক-যুবতীরা শত বাধা উপেক্ষা করে এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেবৃষ্টি-বাদলার দিনে মানুষের নিয়মিত খাদ্য তালিকায়ও পরিবর্তন আসে শর্ষে-ইলিশ, গরুর গোস্ত দিয়ে ভূণা-খিচুরী আরও কতসব নতুন রেসিপি তৈরিতে গৃহীনিরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেকখনো কখনো বৃষ্টিকে বর করতে মানুষ বিভিন্ন সংস্কার পালন করে সময়মত বৃষ্টি না হলে ইসলাম ধর্ম মতে মুসলমানরা ইসতিসকারনামায আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেব্যাঙের বিবাহ দিয়েও অনেকে বৃষ্টি প্রার্থনায় মগ্ন হয় বৃষ্টির প্রতি সকলের যেন আলাদা অনুভূতি-উচ্ছ্বাসযে ব্যক্তি জীবনে কখনো গান, কবিতার প্রতি মায়া অনুভব করেনি সে ব্যক্তিও বৃষ্টির দিনে গান কিংবা কবিতা আবৃতিতে মত্ত হয়ে পড়ে পূর্বের মত প্রাকৃতিতে এখন আর ভারসম্য পরিলক্ষিত হয় না গ্রীষ্মের মওসুমে পরিমিত গরম কিংবা বৃষ্টির মওসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নাই আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ছয় ঋতুর বাংলাদেশেও গ্রীষ্মে অসহ্য গরম এবং বর্ষায় নির্ঝর বৃষ্টি জন-জীবনকে দুঃসহ করে তোলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, র্নিঝড়, টর্নোডের আঘাতে প্রায়ই দেশবাসীকে ধ্বংসের বেলাভূমিতে দাঁড় করিয়ে দেয়পর্যাপ্ত বনভূমির অভাব, অপরিকল্পিত শহরায়ন, পরিবেশ দূষণসহ বহুবিধ নেতিবাচক কর্মকান্ডের ফলে মানুষ নিজেদের ধ্বংসের রাস্তা নিজেরাই তৈরি করছে 

 

অঝড় বৃষ্টি-বাদল অনেকের জন্য সূখের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করলেও অনাহারে-অর্ধাহারে রাখে দেশের দিন মজুর শ্রেণীকে যারা দিনের আয় দিনে করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জীবনে একদিনের বৃষ্টি মৃত্যুসম যন্ত্রনা দেয় বয়স্করা একবেলা কিংবা একদিন অনাহারে কাটাতে পারার ক্ষমতা রাখলেও এদের উপর নির্ভরশীল ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা খাদ্য না পেয়ে অনর্গল কান্না-কাটি করে । যার ফলে তাদের ক্ষুধাক্লিষ্টখের দিকে তাকানো যায়না যখন সপ্তাহব্যাহী টানা বৃষ্টি বর্ষণের পরেও বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখা যায় না তখন গরীব অসহায়রা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা ভেবে মৃত্যুর রাস্তা খোঁজে নিজেদের দায়িত্ব পালনে এরা যখন ব্যর্থ হয় তখন এদের আত্মগ্লানি এবং নিজেদের উপর ঘৃণা প্রকাশের মাত্রা দেখলে সত্যিই কষ্ট হয় বর্তমান বাংলাদেশে অপরিকল্পিত শহরায়ণের ফলে একদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং দৈনিক মজুর শ্রেনীর আয়ের সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়  শহরের রাস্তায়জলাবদ্ধতার মাত্রা দেখলে খাল-নদীর সাথে রাস্তা-ঘাটের পার্থক্য করার উপায় থাকে না অতিবর্ষণের দিনে দেশের কিছু কিছু বড় শহরের রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরার মত ঘটনাও দেখতে পাওয়া যায় বর্ষা মওসুমের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা মাসব্যাপী কিংবা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন সমাজের মজুর শ্রেণীর মানুষ যেমন খাদ্যাভাবে ভোগে তেমনি দুষিত পানি পান করার কারণে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় প্রতিবছর বর্ষা মওসূমে শুনতে পাওয়া যায়,জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার হাজার কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প গ্রহন করেছে এ সকল প্রকল্পের মাধ্যমেও জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন করার সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান এ সন্দেহের পেছনে কতগুলো যৌক্তিক কারনও আছে আর্থিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে পূর্বে গৃহীত অনেকগুলো প্রকল্পই মূখ থুবড়ে আছে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়ন

 

বাংলাদেশকে সাংবিধানিকভাবে কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হলেও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণের সার্বিক দায়িত্ব রাষ্ট্র এখনো গ্রহন করতে পারেনি পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় একজন অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছে অন্যজন ভূখা থাকছে বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষকে চরম সমস্যার সম্মূখীন হতে হয় ধনীদের কাছে একটি বৃষ্টির দিন আনন্দের উৎসবে পরিণত হলেও গরীবের কাছে এ দিনটি অভিশাপ হিসেবে কাটাতে হয় বর্ষাসৃষ্ট চরম জলাবদ্ধতা গরীব দিন মজুররা বেকার হয়ে যায় জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে তাদের ভোগান্তির সীমা থাকেনা । কাজেই সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং দুর্যোগকালীন সময়ে দিন মজুরদের বিকল্প কোন কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দেয় তবে তা একটি মহৎ কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে একটি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা যেন শুধু মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ বিত্তের কল্যাণে নিয়োজিত না থেকে দেশের সর্বশ্রেণীর দিকে সমান দৃষ্টি দেয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রে অসহায়দের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে এরূপ কর্মকান্ডই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত বৃষ্টির দিনে দেশের শ্রমিক শ্রেণীর একটি পরিবারও যেন অনাহারে না কাটায় তার নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হয় সমাজের ধনীক শ্রেণী এ ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে । বৃষ্টি যেন সকলের জন্য আশীর্বাদ হয় এবং আনন্দের উপলক্ষ হয় বৃষ্টি যেন কারো সর্বনাশ আবার কারো পৌষমাস না হয়

 

 

রাজু আহমেদকলামিষ্ট ।

facebook.com/raju69mathbaria/

০ Likes ১ Comments ০ Share ৩০৪ Views