ট্রেন স্টেশন। রাত ২টা বেজে ৪৩ মিনিট। লাস্ট ট্রেন চলে গেছে সেই কবে। পুরা স্টেশন সুনশান ফাকাঁ। এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যতদুর রাতের আধারে চোখ যায় শুধুই জোসনার আলো। মেইন গেইট অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। লাস্ট ট্রেন যাবার দশ মিনিটের মধ্যে সব বন্ধ। শুধু ডান পাশের একটা ফায়ার এক্সিট দরজা খোলা থাকে। না ছেলেটা সেখান দিয়ে ঢোকেনি। সে এসেছিলো লাস্ট ট্রেনে চড়ে। তারপর এখানেই বসে আছে চুপচাপ ঘন্টা দুয়েক ধরে। কে জানে কোন কারণ আছে কিনা এতো রাতে ট্রেন স্টেশনে একা বসে থাকার। অবশ্য জোসনার প্রতি ছেলেটার নাকি আজন্ম দুর্বলতা। মাঝে মাঝে সে বসে থাকে বাস স্টপেও। বাস আসে বাস যায় তবু উঠে না। কোন কারণ নেই। তবু বাসের আসা আর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মানে খুজেঁ তার। মানে খোজেঁ জীবনের। ইচ্ছে করলেই উঠে যেতে পারে কোন একটায়। পালটে যেতে পারে গন্তব্য। তবু সে উঠেনা। মুখোশ পরা মানুষগুলোর গন্তব্য দেখে। মনে মনে হাসে আবার...... তার গন্তব্য কোথায়?? সে জানেনা......?? কে জানে...... ?? মাঝে মাঝে রাগে ক্ষোভে কিংবা অভিলাষে বৃষ্টিতে ভিজে। মাইলের পর মাইল হাটে রোদ জলা পথে। কাউকে কিছু বলার থাকেনা। থাকলেও হয়তো শব্দ থাকেনা। শব্দ থাকলেও হয়তো একসাথে জড়ো করার সামর্থ্য থাকেনা।
অবশ্য আজ রাতের কথা একটো ভিন্ন। আজ তার পকেটে দু টোকরা টিস্যু আছে। বাম দিকের পকেটে আছে একটা কুড়িয়ে পাওয়া কলম। আকাশ থেকে নেমে আসা জোসনা কারিগরেরাযেভাবে চুনকাম করেছেধরাতে সফেদ মায়ায় তাতে যে কারো মন গলে যাবারই কথা। ছেলেটা টিস্যুটা বের করে পকেট থেকে , বা হাতে কলম......
ট্রেন চলেছে গন্তব্যের খোজেঁ
আমি জিজ্ঞেস করেছি তাকে, হে বাতাস
সে কি তোমার স্পর্শ বোঝে?
ছেলেটা আর কিছু লিখতে পারেনা। চেষ্টা চালায় না আর। আকাশে তাকায়। অনুভুতিগুলো শব্দে ধরে রাখতে নেই। না হয় হয়ে যাবে আরেকটা ধুলো পরা চিঠি। তাই......
দোষ দিবে?? আক্ষেপ থাকবে?? থাকুক না একটো
একটো খানি আক্ষেপ নিয়ে যাবে আরেকটা নতুন পৃথিবীর কাছে।
অতৃপ্তি থাকবে ?? থাকুক না একটো......
এই অতৃপ্তিটুকুই টেনে নিয়ে যাবে তোমায় যেখানে
একটা বিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় হাজারো স্বপ্ন।
ছেলেটা কিছু ভাবে। উঠে দারায়। এবার যেতে হবে। যেতে হয়। আকাশ পানে তাকায়। জোসনারা বেশ সুন্দর করেছে আকাশটাকে। তারপর গন্তব্যের পথে হাটে শব্দগুলো উড়িয়ে দিয়ে হাওয়ায়।
Comments (8)
যে শিশুটি শুরুতে অবহেলিতো হলো সে কিভাবে অন্যকে সন্মান দিতে শিখবে। আমরা অন্যের জীবন নষ্ট করে দিয়ে ভাল কিছু চাইতে পারিনা।
তার পক্ষে মাতৃ বন্দনা তো নয়ই নিজেকে নিয়ে বন্দনা করছে এটাও আশা করতে পারিনা।
এটুকু তো আশা করতে পারি আমাদের শিক্ষিত মানুষেরা ওদের মানসিকতা ধারণ করবে না, পারলে ওদের পরিচর্যা করবে! জ্ঞানচর্চায় এই মানসিকতার প্রসার ঘটলে তো বিপদ! দুঃখজনক হলো এই সংখ্যাটা বাড়ছে ভয়াবহভাবে।
ধন্যবাদ। পাশা।
বাহ!
এত অল্প কথায় কি তীক্ষ্ণতা!! আমি মুগ্ধ!
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
ধন্যবাদ নীলদা।
আপনার অনুপ্রেরণা সব সময়ই আমার কাছে বিশেষ কিছু।
ভাল থাকুন।