Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

খ্যাতিমান সাহিত্যশিল্পী মুনীর চৌধুরীর ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা


বাংলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতার স্থপতি, খ্যাতিমান সাহিত্যশিল্পী শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী। আমাদের নাট্যসাহিত্যে যাঁরা বিষয় ও প্রকরণ দুই দিকেই আধুনিকতার প্রবর্তন করেছিলেন, মুনীর চৌধুরী তাঁদের অগ্রগণ্য। তিনি ছিলেন একাধারে একজন সফল শিক্ষক, ব্যতিক্রমী নাট্যকার, তীক্ষ্মধী সমালোচক, অসাধারণ বাগ্মী পণ্ডিত, দক্ষ অনুবাদক ও ভাষাবিজ্ঞানী। কৈশোর থেকেই মুনীর ছিলেন প্রখর বুদ্ধি আর জ্ঞানের অধিকারী। যুক্তিতর্কে তাঁকে হারাতে পারে এমন লোকের জুড়ি মেলা ছিল ভার। মুনীর চৌধুরী ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী মানুষ। সবধরনের ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি প্রতিশ্রুতিশীল ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি রেখে গেছেন দুটি নাটক এবং তিনটি সংকলনে বারোটি একাঙ্কিকা। নাটকের অনুবাদেও তিনি পারদর্শিতার পরিচয় রেখে গেছেন। তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি তিনটি অনুবাদ-নাটক, পাঁচটি একাঙ্কিকার অনুবাদ-সংগ্রহ একটি এবং একাধিক নাটকের অসম্পূর্ণ অনুবাদ।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহঃ
নাটকঃ ১। রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২), ২। চিঠি (১৯৬৬), ৩। কবর (১৯৬৫), ৪। দন্ডকারণ্য (১৯৬৫), ৫। পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য (১৯৬৯)।
অনুবাদ নাটকঃ ১। কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৭), ২। রূপার কৌটা (১৯৬৯), ৩। মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০)।
প্রবন্ধগ্রন্থঃ ১। ডাইড্রেন ও ডি. এল. রায় (১৯৬৩), ২। মীরমানস (১৯৬৫), ৩। তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯), ৪। বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০)।
আজ এই খ্যাতিমান সাহিত্যশিল্পীর ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৫ সালের আজকের দিনে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন মুনীর চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা জেলার মানিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন প্রতিশ্রুতিশীল ছোটগল্পকার মুনির চৌধুরী। প্রকৃত নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন গোপাইরবাগ গ্রামে। তার পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। মুনীর চৌধুরীসহ তাঁর চৌদ্দজন ভাইবোনদের শিক্ষাদীক্ষার পেছনে বাবার বিশাল ভূমিকা থাকলেও মা এবং মা আফিয়া বেগম তাঁর সব ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা লাভের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের প্রেরণা জুগিয়েছেন। নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন করলেও মুনীর চৌধুরীর বাল্য ও কৈশোর কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শহরে। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চার শুরু বগুড়া থেকে। তারপর পিরোজপুরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৩৫ সালে আব্দুল হালীম চৌধুরী পিরোজপুর থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। মুনীরকে ভর্তি করানো হলোঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯৪১ সালে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর সে বছরেই তাঁকে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আই.এস.সি.-তে ভর্তি করানো হয়। আই.এস.সি. চূড়ান্ত পরীক্ষায় দুই বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়েও মেধার জোরে অপ্রত্যাশিতভাবেই মুনীর ১৯৪৩ সালে আই.এস.সি.-তে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে পাশ করেন। আই,এস,সি পাস করার পরে সে বছরেই মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অনার্স-এ ভর্তি হন। এখানে পড়ুয়া হিসেবে মুনীর চৌধুরীর বেশ নাম ছিল। ১৯৪৩ সালে তিনি ঢাকার বামপন্থী সংগঠন 'প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ'-এ যোগ দেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে খুব বেশি সক্রিয় থাকার কারণে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার ফল তেমন ভালো হয়নি। ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৪৮ সালে মুনীর চৌধুরী প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং এই বছরেই তিনি কলকাতায় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে মুনীর চৌধুরী খুলনার দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক হয়ে খুলনায় চলে গেলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি সংসার জীবনও শুরু করলেন এ বছরেই। সংস্কারমুক্ত পরিবারের আধুনিক, শিক্ষিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শিল্পী লিলি চৌধুরীকে বিয়ে করলেন। এ সময় মুনীর চৌধুরী রাজনৈতিক তত্‍পরতার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাবরণ করলেন। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার ১৯৫০ সালে পর মুনীর চৌধুরী ঢাকা জগন্নাথ কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। জুলাই পর্যন্ত তিনি এ কলেজে ছিলেন। এরপর মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগের ইংরেজী ও বাংলার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এই বিভাগেই ছিলেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ইংরেজী বিভাগের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী জননিরাপত্তা আইনে মুনীর চৌধুরীকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই মুনীর চৌধুরী ১৯৫৩ এবং ১৯৫৪ সালে বাংলায় এম.এ. প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করলেন। তিন বছর কারাগারে থাকার পর ১৯৫৫ সালে মুনীর চৌধুরী কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্ত হয়ে মুনীর চৌধুরী এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং এক বছরের ব্যবধানে স্থায়ী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করলেন। স্থায়ী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর মুনীর চৌধুরী সাহিত্য ও নাট্যচর্চায় অনেক বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠেন এবং দুই বছর প্রচুর পড়াশুনা করে ১৯৫৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এম.এ. করেন। ১৯৬২ সালে মুনীর চৌধুরী প্রভাষক থেকে রিডার পদে উন্নীত হন এবং এই বছরেই নাটকের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি জাপানের টোকিওতে নাট্যসম্মেলনে যোগ দিতে গেলেন এবং ফিরে এসে ঢাকা আর্টস কাউন্সিলের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। ১৯৬৫ সালে মুনীর চৌধুরী গবেষণা সাহিত্যের জন্যে দাউদ পুরস্কার এবং ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার লাভ করলেন।

১৯৬৮ সালে মুনীর চৌধুরী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান তখন বাংলার রাজনীতির উত্তাল সময়, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করলেন। এ বছরই বাবা আব্দুল হালিম চৌধুরী মারা যান। ১৯৭১ সালে তিনি কলা অনুষদের ডিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক সেমিনারে যোগ দিয়ে দেশে ফিরলেন। বাংলাদেশ তখন এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। অসহযোগ আন্দোলন চলছে। মুনীর চৌধুরী পাকিস্তান সরকারের দেয়া সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করলেন। ঢাকার বুকে নেমে এল ২৫ মার্চের কালো রাত, হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হলো। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় বাঙ্গালীর স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা যখন বাঙালীর দোড়গোড়ায়, যখন স্বাধীনতা অর্জনের আর মাত্র ২ দিন বাকি, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। তখন আরো অনেকের মতো মুনীর চৌধুরীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।আর ফিরে আসেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষাজীবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় শিক্ষক মুনীর চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনির চৌধুরীর ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। সাহিত্যশিল্পী মুনীর চৌধুরীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৭৩৯ Views

Comments (0)

  • - টোকাই

    মানুষ যেন তাকে শুইয়ে রাখে ঘৃণার যাদুঘরের নিকৃষ্ট থুথুখানায়!

    • - আহসান কবির

      ঠিক তাই, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে নাই; করবেও না।