Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় গুহায় একদিন অামরা ক‘জন


নতুন জায়গা দেখার প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ সেই ছোট বেলা থেকে। বাংলাদেশ মনোমুগ্ধকর অনেক জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে , তবে খাগড়াছড়ির আলুটিলার সেই সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে পার হওয়ার স্মৃতি অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা  ও অনুভূতি।গা শিহরে উঠা সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আমার জীবনে জীবনে বিরল।চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এস,এস,সি ও এইচ,এস,সি পরীক্ষার ভিজিলেন্স টিমের দায়িত্ব পালন সুবাধে অনেক জায়গায় যাওয়া হয়েছে ।উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্র্রামের অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের(রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবনসহ)অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি এবং সেই সুবাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থান সর্ম্পকে জানা ও দেখার সুযোগ হয়েছে।


আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের মূল ফটক


২০১২ সনের এস,এস,সি পরীক্ষার সময় ভিজিলেন্স টিমের দায়িত্ব পালনকালে খাগড়াছড়ির   দীঘিনালা পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে আসার সময় খাগড়াছড়ির সেই বিখ্যাত রহস্যময় আলুটিলা পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে।



আমরা ক‘জন


অবশ্য এর আগেও খাগড়াছড়ি গিয়েছি ,কিস্তু সেই রহস্যময় আলুটিলার মুখ থেকে ভয়ে ফিরে
এসেছি।এইবার মনে মনে স্থির করেছি টিমের সব সদস্য সবাই সুরঙ্গ পথে হেঁটে বের হব।সঙ্গে বিভিন্ন কলেজের আরো ছয়জন শিক্ষক এবং চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সহকারী কলেজ পরিদর্শক জনাব নিজামউদ্দিন।দীঘিনালা থেকে দায়িত ¡পালন শেষে খাগড়াছড়ি ’সিষ্টেম হোটেলে’ খাওয়া দাওয়া শেষে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দুরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।গাড়ি খাগড়াছড়ি থেকে মিনিট দশেক চলার পর সেই আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে এসে থামলো।সবাই নেমে পড়লাম।আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের সুউচ্চ পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি পুরো শহর অবলোকন করা যায়। দেখে মন জুড়িয়ে গেলো।




এআলুটিলা থেকে দৃশ্যমান খাগড়াছড়ি শহর




এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের সুউচ্চ পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে প্রস্তুতি নিলাম সেই সুরঙ্গ পথে প্রবেশ করার। সুরঙ্গের অন্ধকার পথ পাড়ি দেয়ার জন্য কিছু ব্যক্তি মশাল বিক্রি করে।আমরা কয়েকটি মশাল ক্রয় করে নিলাম।পাহাড় থেকে অনেকগুলো সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে নীচের দিকে নেমে সুরঙ্গ মুখে যেতে হয়।ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে সুরঙ্গ মুখে নেমে পড়লাম।
সুরঙ্গ মুখে দাঁড়িয়ে ভেতরের দৃশ্য দেখার চেষ্ঠা করলাম।সামান্য কিছুদুর দৃষ্টি গেলো,এরপর ঘোর অন্ধকার।তার নীচে পাথরের মতো কিছু টুকরো এবং সামান্য পানি দেখলাম।অনেকই জুতো খুলে ফেললো ।মশাল গুলোতে আগুন দেয়া হলো।ধীরে ধীরে সুরঙ্গ পথে প্রবেশ করতে লাগলাম।অনেক বড় সুরঙ্গ পথ। একটু বাঁকা হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।কতদুর অগ্রসর হয়ে দেখি সামনে পিছনে শুধুই অন্ধকার।আমাদের মশালের আলোতে সামনে পিছনে কিছু পথ দেখা যাচ্ছে। মনে ভয় ভয় লাগছে।কেউ কেউ বলেই ফেললো ’আর যাবো না’, চলেন ফিরে যাই’।মনে হলো সময়টা যেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ।একজন সাহসের সঙ্গে বললো’ না চলেন এগিয়ে যাই’।তিনি সাহস যোগালেন। এগুতে লাগলাম সামনের দিকে।সুরঙ্গের এপাশ ওপাশ ধরে অগ্রসর হচ্ছি।হাতে ধরা মাটি গুলো যেন মাটিতো নয় যেন পাথর। বুঝলাম আর পিছন ফিরে তাকাবার সুযোগ নেই। যা হবার তাই হবে।মশাল নিয়ে কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিতে লাগলাম।অগ্রসর হতে হতে কিছুক্ষণ পর দেখলাম দুরে একটু আলোর ছটা ও মোমবাতির মত কিছু একটা জ্বলছে। শরীরটা যেন হাল্কা হয়ে গেলো।আসলে আমরা সুরঙ্গের মুখে এসে গেছি,আমাদের আগে কেউ সুরঙ্গ পার হয়ে মশাল টা মুখে রেখে গেছে। ঐ টাই ওখানে জ্বলছিল।যেন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে বেঁচে গেলাম।খুব দ্রুত সবাই সুরঙ্গ থেকে বের হলাম। দশ পনের মিনিটের পথ যেন কত বন্ধুর,বিপদাসংকুল।সুরঙ্গ থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে খানিক বিশ্রাম নিলাম। রোমন্থন করতে চেষ্ঠা করলাম সেই দু:সাহসিক অভিযান।তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়ালাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। জীবনের কত স্মৃতি , কতো দেখা হলো দেশ বিদেশ , কিন্তু এ দেখা যেন চির বিস্ময়ের এক অনুভূতি।
২ Likes ১ Comments ০ Share ৪১৪ Views

Comments (1)

  • - বিন আরফান.

    emoticons