Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শতবর্ষী বটবৃক্ষ

 

আজ  এটা খাগড়াছড়ি ভ্রমণ সম্পর্কিত পঞ্চম পোষ্ট।
প্রথম পর্বে ছিল ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত যাওয়ার কথা – “খাগড়াছড়ির পথে”।
দ্বিতীয় পর্বে লিখে ছিলাম খাগড়াছড়িতে বেরাতে বেরবার প্রথম অংশ – “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব”।
তৃতীয় পর্বটা ছিল আলুটিলা গুহার উপরে লেখা, শিরনাম – “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – আলুটিলা গুহা”।
চতুর্থ পর্বে বলেছি বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি মালিকানাধীন ঝর্ণার কথা – “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – রিছাং ঝর্ণা”।

আজ এই পর্বে লিখবো শতবর্ষী এক বটবৃক্ষের  কথা, আর আজকের শিরনাম – “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শতবর্ষী বটবৃক্ষ”।

রিছাং ঝর্ণা দেখা শেষে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হয় মাটিরাঙ্গা  উপজেলার দিকে। শুনেছি মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় একটি প্রাচীন বটবৃক্ষ রয়েছে,  নাম তার “শতায়ূবর্ষী বটগাছ”, সেটা নাকি এক বিশাল বড় বট গাছ।  রিছাং ঝর্ণা  থেকে বেরিয়ে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম রোড ধরে অনেকটা পথ যেতে হয়।


এই রাস্তাটুকুও পাহাড়ি অন্যান্য রাস্তার মতোই দৃষ্টিনন্দন। ছড়িয়ে আছে পাহাড়ি বাঁক আর ছোট ছোট কালভার্ট।

বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পরে মাটিরাঙ্গায় মেইন রোড থেকে ডান দিকে বাক নিয়েছে একটি শাখা রাস্তা। এই শাখা রাস্তা ধরে যেতে হবে অনেকটা পথ। যেতে যেতে এক সময় মনে হচ্ছিলো পথ যেন আর শেষ হতে চাইছে না। শীতের সময় বলে রাস্তার মিহি ধুলয় ছেয়ে যায় সব কিছু। পাহাড়ি সরল জীবনের চিত্র ছড়িয়ে আছে চার ধারের রাস্তার পাশে।

পাহাড়ি শিশুরা খেলছে ধুল মেখে রাস্তায়, ছোট একটা গরুর বাছুর হঠাৎ করে উঠে আসে রাস্তায় তারপর ভয় পেয়ে লেজ উঁচিয়ে দেয় ভো... ছুট। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম স্কুল থেকে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে ফিরছে ছাত্র-ছাত্রীরা যাদের বেশিরভাগই পাহাড়ি কিশোর-কিশোরী। অথচ সারা রাস্তাতে প্রচুর বাঙ্গালী (সমতলের মানুষ) বাড়ি দেখেছি, শিশুও খেলছে রাস্তা।


এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা এক সময় শেষ হয়, সামনেই দেখা পাই বটবৃক্ষের। এটা যে বিশাল একটা বটগাছ তা স্বীকার করতেই হবে। আমরা অবাক হয়ে দেখি বটের মহিমা। আসলেই এই গাছের বয়স নির্ণয় করার বা অনুমান করার মতো পড়াশুনা বা জ্ঞান আমার নেই, আমার দলের অন্য কারোও নেই।তাই নির্ধিধায় মেনে নিলাম এটার বয়স ১০০ বছরের বেশি বই কম হবে না।

বেশ বড় দুটি গাছ, নাকি একটি, কানি তিনটি!! যত দূর মনে হয়েছে বা বুঝতে পারলাম প্রথমে হয়তো গাছ ছিল একটাই। মূল গাছটির একটি ডাল হয়ত রাস্তার উল্টোদিকে গিয়ে সেখানে ঝুড়িমূল নামিয়ে ছিল, কালের প্রবাহে সাই ঝুড়িই হয়ে গেছে গাছ।

আর মূল যে ডালটি গিয়েছিল রাস্তা পার হয়ে সেই ডালটি হয়ত কালক্রমে কোন কারণে ভেঙ্গে যায়, ফলে যে ছিল ঝুড়ি সে আজ স্বতন্ত্র একটি বটবৃক্ষের রূপ নিয়েছে। এরকম একই কাণ্ড হয়েছে আর একটি অংশে। এই রকম অনুমান করার পেছনে কারণ অবশ্যই আছে। দেখতে পেয়েছি বেশ বড় মোটাসোটা দুটি ডালের মৃত অংশ সেই দুই দিকেই মুখ করে আছে।

অনেকগুলি ঝুড়িমূল গাছের বড় ডালগুলি থেকে নেমে এসেছে, তার কিছু কিছু ঝুড়িমূল বিশাল থামের মত হয়ে আছে যেন খুঁটি গেড়ে উপরের বড় ডালকে ঠেকনা দিয়ে রেখেছে।

মোটা মোটা থামের আকৃতির ঝুড়িমূল যেমন রয়েছে তেমনি কিছু আছে মাঝারি আকৃতির আবার কিছু কিছু আছে একেবারেই চিকন-নবীন। এই নবীনেরাই হয়তো বিশ-পঁচিশ বা পঞ্চাশ বছর পরে মোটা থামের আকৃতি পাবে। আর পঁচিশ-ত্রিশ বছর পরে আবার গিয়ে এদের দেখে আসতে হবে।

আমার ধারনা এখানে ভ্রমণার্থী একটু কম আসেন। যদি তারা যেত তাহলে আমাদের স্বভাব অনুযায় যায়গাটাকে তাহলে নোংরা দেখতাম, আর গাছের গাঁয়ে খোঁদাই শিল্পীর কিছু নমুনা অবশ্যই দেখতাম। আবার যখন ঐখানে যাব তখনকার জন্য বা আমার পরে যারা একে দেখতে আসবে তাদের জন্য কিছু খোদাই কাজ অবশ্যই রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করেন অনেকে। আমার মাঝে এই সব গুণ গুলির অভাব আছে তাই ত্রিশ বছর পরে গিয়ে নিজের কোন চিহ্ন দেখতে পাবনা। এগুলি দেখিনি বলেই বলছি হয়তো টুরিস্ট একটু কম যায় ওখানে। ওখানে গাছের নিচে ছিলো বটের ঝড়া পাতার স্তুপ।


{স্বপন পরিবহন}

ভাল কথা, এই বটগাছটি রয়েছে “আলুটিলা বটতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়” এর সামনে। স্কুল ভবনটির সামনে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, পাশেই সুবিশাল বটের ছায়ায় দাড়িয়ে আছে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি “শহীদ মিনার” আর একটি স্থায়ী মঞ্চ।

পাক্কা ৩০ মিনিট লাগে রিছাং ঝর্ণা থেকে বট বৃক্ষতলে যেতে। জিপ বা মাইক্রবাস হলে সময় আর অনেক কম লাগবে অবশ্যই।

খুব বেশি সময় এখানে থাকি নি আমরা। কিছু ছবি তুলে আর অবাক হয়ে বটবৃক্ষ দেখে ফিরে এসেছি।

{নতুন সাধু ধেনে বসার পায়তার করিতেছেন, কিন্তু....}


{কিন্তু.... কণ্যা পিতাকে ছড়িতে রজি হইলো না}


{নতুন সাধুর অভূর্থান}

তখন বিকেল গড়াচ্ছে, সূর্য পশ্চিম আকাশে গড়াগড়ি দিচ্ছে। আবার ফেরা ধূলি-ধূসর এবড়ো-খেবড়ো পথে। মিনিট পনের এই বৃক্ষতলে সময় কাটিয়ে আবার রওনা হই, এবারের গন্তব্য শহরের কাছে “ঝুলন্ত সেতু”।


চলুন তাহলে......



প্রথম প্রকাশ : ঝিঁঝি পোকা

এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।
০ Likes ৩ Comments ০ Share ৭২৯ Views