Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কেউ একটা-কিছু বললেই অমনি আত্মহত্যা করতে হবে?





কেউ একটা-কিছু বললেই অমনি আত্মহত্যা করতে হবে?
সাইয়িদ রফিকুল হক

একটি ঘটনা দেখেশুনে আমি বড়ই লজ্জিত হয়েছি। আর আমার হৃদয় আর্দ্র হয়েছে। দেশে এখন এসব কী শুরু হয়েছে? একশ্রেণীর মানুষ নিজের জীবনকে এখন এতোই তুচ্ছ ভাবতে শুরু করেছে যে, এদের বোকামি দেখে আমাদের বারবার লজ্জিত হতে হচ্ছে। আর একজনের একটা ভুলসিদ্ধান্তকে এখন অনেকেই আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করছে। আসলে, মানুষের মনে এখন ভয়ানক ব্যাধি। আর এই ব্যাধির নাম সীমাহীন মূর্খতা। তাই, নিজের মহামূল্যবান জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে এদের বুকটি একবারও কাঁপে না। এরা আবেগের বশবর্তী হয়ে আজ সমাজ-রাষ্ট্রকে অহেতুক বৃদ্ধাঙ্গুলিপ্রদর্শন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছে না। আর এরা সবার উপরে স্থান দিচ্ছে নিজের মিথ্যাঅভিমানকে। আর তাই, এরা এদের জীবনের সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘আত্মহত্যা’র মতো নেতিবাচক ও ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছে না কিংবা পিছপা হচ্ছে না।

একটি আত্মহত্যার ঘটনা আমার বিবেককে ক্ষুব্ধ করেছে:
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১/০১/২০১৭ তারিখ বুধবার ভোরে। রাজধানীর পূর্বনাখালপাড়ার একটি বাসায় সেখানে মোহসিনা হক মেধা নাম্নী এক বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। জানা গেছে, সে ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক-বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। আর তার বয়স আনুমানিক ২০ বছর।
ঘটনা আর-কিছু নয়। সামান্য একটি ঘটনা। সে ছিল ফেসবুক-পাগল মেয়ে। প্রায় সারাক্ষণ নিজের মোবাইলে ফেসবুক চালাতো। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক দুইটা-তিনটা পর্যন্ত সে ফেসবুক চালাচ্ছিলো। আর এটি দেখতে পেয়ে তার মা তাকে বকাঝকা করে। আর এতেই নাকি সে রাত আনুমানিক চারটার দিকে সিলিং-এর সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক।
আত্মহত্যাকারী মেধা নাকি তার আত্মহত্যার আগে তারই ফেসবুকে আত্মহত্যাবিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। তারপর সে এটি ডিঅ্যাকটিভও নাকি করে দিয়েছিলো। তার এক বন্ধু হাসান জানায়: “সে বুধবার রাতে আত্মহত্যা করবে বলে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। আর সকালে শুনলাম সে আত্মহত্যা করেছে। পরে তার ফেসবুক-অ্যাকাউন্টটি বন্ধ দেখা যায়।” এই হলো এখনকার বন্ধু। একটি মেয়ে মনের দুঃখে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, আর তা জেনেশুনে অন্য বন্ধুটি রাতে ভরপেট খেয়েদেয়ে চুপচাপ ঘুমাতে যাচ্ছে! এগুলো বন্ধু নাকি আবর্জনা? আশা করি: পাঠক ভেবেচিন্তে বলবেন। আর এই আগাছাগুলোই এখন আমাদের সমাজে বড় বেশি বাড়ছে। কিন্তু এদের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে তো আমাদের সমাজ বিকলাঙ্গ হতে বাধ্য। আজ-এক্ষুনি এদের চিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি ঘটাতে হবে।
মেধার এই বন্ধুটি কতবড় আহাম্মক আর গাধা! তার একজন বন্ধু আত্মহত্যা করবে আর সে নিশ্চিন্তমনে রাতে ঘুমায়! বলেছিতো, পাগলছাগলে দেশটা ভরে যাচ্ছে। আর কবে যেন পাগলের রাজত্ব শুরু হয় এই দেশে!
আর একটি ঘটনা: তার পিতা আদালতের অনুমতি নিয়ে মেয়ের লাশ কোনোরকম ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করেছে।

ঘটনাটি সাধারণ। আর বাংলাদেশে এখন এরকম কত ঘটনাই তো ঘটেছে। কিন্তু আমার কাছে এটি হৃদয়বিদারক মনে হয়েছে। আর এতে আমার মনে কিছুটা ক্রোধও জন্ম নিয়েছে। কারণ, মা-বাবা একটি মেয়ের উজ্জ্বল-ভবিষ্যতের জন্য তাকে একটুখানি শাসন করেছে—আর তাতেই মেয়েটি একলাফে মা-বাবার উপর অভিমান করে একেবারে আত্মহত্যাই করে বসবে? না-না, এটি মানতে পারছি না। আর এটি কোনো সঠিক সিদ্ধান্তও নয়। এটি একধরনের আহাম্মকী। আর সম্পূর্ণ ভুলসিদ্ধান্ত।

আজকাল দেখা যাচ্ছে, কোনো মেয়েকে রাস্তাঘাটে বা অন্য কোথাও কোনো বখাটে কিংবা সাধারণ প্রেমিক কিছু-একটা বললেই সে আত্মহত্যা করে বসছে! কিন্তু এটি তো কোনো প্রতিবাদের ভাষা নয়—বরং এটি হলো একপ্রকার বোকামি। কারণ, এতে যে আত্মহত্যা করবে সে পরাজিত হচ্ছে। আরে, তোমাকে কেউ-একটা-কিছু বলেছে তাই কী হয়েছে? আর তুমি কেন আত্মহত্যা করবে? তুমি বেঁচে থাকবে—আর এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আর এইজাতীয় ভণ্ডদের মুখোশ উন্মোচন করবে—তবেই না তুমি আধুনিকযুগের সাহসিকা কন্যা, জায়া, জননী হতে পারবে।

মা-বাবা ছেলেমেয়েদের শাসন করবেই—আর তাদের শাসন করতেই হবে। শাসন ছাড়া দুনিয়া অচল। আর এই শাসনকে ভালোবেসেই আমাদের সত্য, সুন্দর ও মনোরম জীবন গড়তে হবে। তাই বলে সমাজজীবনে স্বেচ্ছাচারিতাকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। আর শাসন তুলে দেওয়াও যাবে না।
আর আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে: আত্মহত্যা কোনো পথ নয়—এটি সম্পূর্ণ বিপথ। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয় বরং এটি একটি সমস্যা। আর এটি সবসময় কাপুরুষতা।
দেশের আবেগপ্রবণ-তরুণীসমাজ বা স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিগামী মেয়েদের অত্যন্ত সহজ ভাষায় বলতে চাই: তোমাদের আবেগ সংযত করতে হবে। আর তোমাদের আরও বেশি সাহসিকা আর ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী হতে হবে। আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আজ থেকে সামান্য বকুনী খেয়ে, কিংবা রাস্তার কোনো-এক বখাটে, লম্পট, রংবাজের মুখের সামান্য একটা কথা শুনে ‘হুজুগে পড়ে’ আত্মহত্যা করার প্রবণতা বা অসুস্থ-মানসিকতা একেবারে-চিরতরে বাদ দিতে হবে। আর সর্বশেষ কথা: তোমাদের এই যুগেও—মহীয়সীনারী ও আমাদের মাতা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো সংগ্রামী ও সাহসিকা হতে হবে।

পাগলামি পাগলের জন্য প্রযোজ্য। আর পাগলছাগল পাগলামি করলে তা মানায়ও। কিন্তু সুস্থ-মানুষ যদি পাগলের আচরণপ্রকাশ করে তবে তাকে কী বলা যায়? নিশ্চয়ই পাগল? আসলে, তা নয়। আমাদের সমাজে এখন অসুস্থ-মানসিকতা ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। আর মানুষ দেখাদেখি মূর্খতাকে এতোটাই সাদরে গ্রহণ করছে যে, মানুষের মধ্যে অস্থিরতাবৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়ানকভাবে।

দেশে এখন শিক্ষার আলো নিবু-নিবু প্রায়। অথচ, দেশে বই-পুস্তকের কোনো কমতি নাই। আর আমাদের দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাও বেড়েছে কয়েক গুন। কিন্তু কোথাও শিক্ষার আলো সেইরকম প্রতিভাত হয় না। সাধারণ সার্টিফিকেটধারী মানুষের সংখ্যা এই দেশে খুব বেড়ে গেছে। কিন্তু এর তুলনায় প্রকৃত-শিক্ষিত তথা স্বশিক্ষিত মানুষের এখন বড়ই অভাব।

মেধার জন্য আমাদের মনে দুঃখ, কষ্ট সবই আছে। কিন্তু তার এভাবে আত্মহত্যা করাটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আর এভাবে বোকামি করে আর যেন কেউ আত্মহত্যা না করে বসে। আর সবসময় আমাদের ভাবতে হবে: জীবনটা অনেক আনন্দের। আর বেঁচে থাকার আনন্দই আলাদা।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/০১/২০১৭

১ Likes ০ Comments ০ Share ৩১৫ Views