Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সাইয়িদ রফিকুল হক

৬ বছর আগে লিখেছেন

রমণীর মন

রমণীর মন
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
আজ রাস্তায় খুব ভিড় ছিল। এমন ভিড় এই শহরে তিনি অনেকদিন পরে দেখেছেন।
অফিস-ছুটির পর অনেক কষ্টে মোতালেবসাহেব বাসায় ফিরেছেন। গায়ের জামাকাপড় এখনও খোলেননি।
তবে ধীরেসুস্থে জামাকাপড় খুলে তিনি একটু বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতিগ্রহণ করছিলেন।
শীতকাল বলে তিনি আজ একটুও ঘামেননি। নইলে, বাসের ভিতরে মানুষের ভিড়ের চাপে তিনি ঘেমে-নেয়ে একেবারে একাকার হয়ে যেতেন। এজন্য তিনি অনেক কষ্টে বাসায় ফিরেও মনে মনে বিরাট স্বস্তি অনুভব করলেন।
আজ রাস্তায় খুব ভিড় ছিল। এই ভিড় দেখলে মোতালেবসাহেবের ভালো লাগে না। তিনি গ্রামের ছেলে। শুধু চাকরির সুবাদে এই ঢাকা-শহরে এসেছেন। মানুষের এতো ভিড় তার কখনওই ভালো   লাগে না। তিনি সবসময় খুব নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন। তার দুটি ছেলেমেয়ে না থাকলে এতোদিনে তিনি কবে গ্রামে ফিরে যেতেন। অবশ্য তার স্ত্রী গ্রামের মেয়ে হলেও এখন আর গ্রামে ফিরতে মোটেও রাজী নয়। সে এই শহরে চিরদিন থাকার পক্ষপাতী। এই নিয়ে তাদের মধ্যে অবশ্য কখনও ঝগড়া-ফাসাদ হয় না।
মোতালেবসাহেব বরাবর শান্তশিষ্ট মানুষ। তিনি কখনও স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেন না। তার স্ত্রী মুখরারমণী হওয়া সত্ত্বেও সবকিছু মেনে নিয়েছেন মোতালেবসাহেব। ফলে তার স্ত্রী ঝগড়া করার তেমন একটা সুযোগ পায় না। কিন্তু সে মোতালেবসাহেবকে সবসময় কড়া-কড়া-কথা শুনিয়ে বেশ আনন্দ পায়।
আজ মোতালেবসাহেব বাসায় ফিরতেই তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার মুখভার করে তাকে শুনিয়ে-শুনিয়ে বলতে লাগলো, “ঘরে কোনো বাজার নাই! আজ কয়েকদিন তো কোনো বাজারই করো না! এভাবে সংসার চলে!”
মোতালেবসাহেব সবেমাত্র গায়ের জামাটা খুলে একটু ধীরস্থির হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হলো না। সংসারের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে মোতালেবসাহেব গায়ের জামাটা আবার গায়ে চাপিয়ে একটা ব্যাগ হাতে বাজারে ছুটলেন।
 
 
এখন সন্ধ্যা... continue reading
Likes Comments
০ Shares

সাইয়িদ রফিকুল হক

৬ বছর আগে লিখেছেন

জীবনের প্রশ্নোত্তর মেলে না

ছোটগল্প:
জীবনের প্রশ্নোত্তর মেলে না
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
সমির কয়েকদিন যাবৎ খুবই বিমর্ষ। আজ সকাল থেকে তার মনটা আরও বেশি খারাপ।
তামান্নার সঙ্গে তার সম্পর্কটা ইদানীং খুব-একটা ভালো যাচ্ছিলো না। তবুও সে এতোদিনের সম্পর্কটা ভাঙতে চায়নি। সে তাদের এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য গত কয়েকদিন যাবৎ যারপরনাই চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য আরেক পক্ষ থেকে কোনোরকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।
 
গত পরশু পর্যন্ত তামান্না তার সঙ্গে দিনে দুই-চারবার কথা বলতো। কিন্তু গতকাল থেকে সে ফোনে এবং সবরকমের যোগাযোগ হঠাৎ করেই একদম বন্ধ করে দিয়েছে। এসবের কোনো মানে বুঝতে পারছে না সমির। এই জীবনে সে শুধু এই একজনকেই ভালোবেসেছিলো। আর তাকে সারাজীবনের জন্যই ভালোবেসেছিলো।
সে অনেক চেষ্টা করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তামান্নার সঙ্গে তার এখন কথা বলার কোনো সুযোগ নাই।
কিছুক্ষণ আগে সে বড় আশা নিয়ে ফেসবুক খুলেছিলো। কিন্তু সেখানেও দুর্যোগের ঘনঘটা। তামান্না ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে হঠাৎ আনফ্রেন্ড করে রেখেছে। সমির এর কারণ বুঝতে পারছে না। তার ঠিক মনে আছে, গত কয়েকদিনে সে তো তামান্নার সঙ্গে কোনোপ্রকার অশোভন আচরণ কিংবা বেআদবি করেনি! তবুও সে তাকে কেন এইরকম শাস্তি দিচ্ছে!
সমির আপনমনে ভাবতে থাকে: তাদের পাঁচবছরের সম্পর্ক হঠাৎ ভেঙে যায় কীভাবে? সে নিজের মনকে অনেকরকম প্রশ্ন করে—কিন্তু সবখানেই তার সরল উত্তর—এমনটি তো হওয়ার কথা নয়! কিন্তু আজকাল এমনটিই তো হচ্ছে। সে তার কয়েক বন্ধুকে প্রেমে ব্যর্থ হতে দেখেছে। আর সে এতোদিন ভেবেছিলো, তাদের হয়তো কোনো ভুল আছে বা ছিল! কিন্তু নিজের জীবনের এই ঘটনাটা তাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে। সে তো কোনো ভুলই করেনি! তবে কেন তার সঙ্গে নিয়তির এই নিষ্ঠুর খেলা! কেন মানুষ এমন করে?
 
সামনে সমিরের ফাইনাল... continue reading
Likes Comments
০ Shares

সাইয়িদ রফিকুল হক

৬ বছর আগে লিখেছেন

ছোটগল্প: সৌরভের হাতে ফুল ছিল

ছোটগল্প:
সৌরভের হাতে ফুল ছিল
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
সৌরভ সেই কখন থেকে তরতাজা একুশটি গোলাপ হাতে চন্দ্রিমা-উদ্যানের লেকের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার আসার কথা ছিল বিকাল চারটায়। কিন্তু সে এসেছে তিনটায়। একঘণ্টা আগে এসেও তার খুব-একটা খারাপ লাগছে না। আজ মিথিলার আসবার কথা আছে। তাই, সে আগেভাগে এখানে চলে এসেছে। সে প্রায়শঃ এরকম করে থাকে। মিথিলার সঙ্গে দেখা করার জন্য সবসময় সে কেবলই ছটফট করে।
আজও সে বাসায় বসে থাকতে পারেনি। একঘণ্টা আগে ছুটে এসেছে। তাদের জন্য আজকের এই জায়গাটা মিথিলাই পছন্দ করেছে। কারণ, আজ ওর জন্মদিন। আর মিথিলাই গতকাল ফোন করে সৌরভকে ঠিক চারটায় এখানে আসতে বলেছিলো। সৌরভ মিথিলার কথা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করার জন্য দুপুরের খাবারটা কোনোরকমে শেষ করে মিরপুর চৌদ্দো-নাম্বার থেকে এখানে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছে।
 
একঘণ্টা পার করতে সৌরভের খুব-একটা কষ্ট হয়নি। এখন মাত্র চারটা বাজে। আর এখনইতো মিথিলার আসবার কথা। আর এখনই সে আসবে, আসবে, বলে মনে-মনে সে একটা সত্যআবিষ্কারের চেষ্টা করতে থাকে। মাঝে-মাঝে এইরকম করতে তার খুব ভালো লাগে।
সে পকেট থেকে মোবাইল-ফোনটা বের করে গান শুনতে থাকে। তবুও একটুখানি টেনশনমুক্ত হওয়া যাবে। ওর প্রায়ই এরকম হয়ে থাকে। মিথিলার কখনওসখনও আসতে দেরি হলে সে কেবলই ছটফট করতে থাকে। এই জটিল অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় সে তার প্রিয়গানগুলো একবার করে শোনার চেষ্টা করতে থাকে। আর মাঝে-মাঝে চারদিকটা তাকিয়ে দেখতে থাকে। মিথিলা কোনোদিক দিয়ে আসছে কিনা।
 
সে কখন থেকে দাঁড়িয়েই আছে। দুই ঘণ্টা পার হওয়ার পর সে এবার বসার জন্য একটা জায়গা খুঁজতে লাগলো। আর সে লেকের পাকা-বাঁধানো রেলিংয়ের উপর বসলো। আসলে, সে বসতো না। কিন্তু এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় তার পা-দুটো এবার একটু বিশ্রাম চাচ্ছে।
দুইঘণ্টা... continue reading
Likes Comments
০ Shares

সাইয়িদ রফিকুল হক

৬ বছর আগে লিখেছেন

একজন মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলীর গর্জন

ছোটগল্প:
একজন মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলীর গর্জন
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
সোনাপদ্মা-গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী গত সাতদিন যাবৎ ঘর থেকে বাইরে বের হন না। তিনি খুব মনখারাপ করে বাড়িতে শুয়ে-বসে রয়েছেন। বাইরে বের হতে তাঁর ভালো লাগছে না। মনটা তাঁর ভীষণ খারাপ।
সাতদিন আগে তিনি বাড়ির কাছে বড়বাজারে গিয়েছিলেন। বাজারের পাশে কয়েকটি চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে। মাঝে-মাঝে তিনি এদিকটায় আসেন। পছন্দের লোকজনের সঙ্গে মনখুলে কথাবার্তা বলেন। তবে এখানে বসে তিনি যে আড্ডা দেন—তা ঠিক নয়—তবে সবার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়।     সেজন্য তিনি এখানে এসে বসেন।
 
সেদিনও তিনি এখানে কিছুসময়ের জন্য এসে বসে ছিলেন। আর এককাপ চা-ও পান করেছিলেন।
এখানে, নানাজাতের নানান লোকজন আড্ডাবাজি করতে আসে। এদের মধ্যে বয়স্ক থেকে শুরু করে একেবারে ছোকরা পর্যন্ত রয়েছে। এদেরই একজনের সঙ্গে সেদিন তার বাজারের মধ্যে সামান্য কথাকাটাকাটি হয়েছে। অবশ্য তিনিই কথা বলেছেন বেশি। তবুও তাঁর ক্রোধ কিছুতেই কমছে না। কারণ, তিনি ওই ছেলেটির বেআদবি দেখে স্তম্ভিত। তিনি দেশের এইজাতীয় শত্রুদের একদম সহ্য করতে পারেন না।
তাঁর কথা বলার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ছেলেটি সবার সামনে ভারিক্কিচালে এমন সব কথা বলছিলো যে, তিনি এর সমুচিত-জবাব না দিয়ে আর থাকতে পারলেন না।
 
যার সঙ্গে সেদিন শমসের আলীর কথাকাটাকাটি হয়েছিলো তার নাম বেল্লাল। সে থাকে সোনাপদ্মা-গ্রামের পুবপাড়ার শেষমাথায়। তার বাপের নাম এনায়েত। লোকজন তার বাপকে এনায়েত মোল্লাও বলে। তার বাপ স্থানীয় সোনাপদ্মা-হাইস্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক ছিল। বর্তমানে সে অবসরগ্রহণ করেছে। কিন্তু এখনও সে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করে থাকে।
 
সেদিন, সকালে চা-পান শেষ করে মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী বাড়ির পথ ধরতে উঠে পড়লেন। এমন সময় এনায়েত মৌলবীর ছেলে বেল্লাল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একজনের একটা কথার সূত্র ধরে বলতে লাগলো, “ওই একাত্তর-সালে কে-কী করছে, তা... continue reading
Likes Comments
০ Shares

সাইয়িদ রফিকুল হক

৬ বছর আগে লিখেছেন

ছোটগল্প: বিকৃত-ব্যবচ্ছেদ

ছোটগল্প:
বিকৃত-ব্যবচ্ছেদ
সাইয়িদ রফিকুল হক
 
তনুশ্রী আপনমনে হাঁটছিলো। এসময় তার অন্য কোনোদিকে খেয়াল ছিল না। তার সমস্ত মনোযোগ এখন হাঁটায়। তাই, সে খুব মনোযোগ দিয়ে হাঁটছে।
আজ তার মনটাও খারাপ। আর সে বাসা থেকে বেরও হয়েছে এই মনখারাপ নিয়ে।
সে বড় রাস্তার মোড়ে এসে দেখলো রাস্তার একপাশে একটা বিরাট জটলা। আর সেখানে লোকজনের সে-কী চিৎকার ও চেঁচামেচি! তার মনে হলো—আজকাল একশ্রেণীর মানুষ হাতের কাছে একটাকিছু পেলে তা-ই নিয়ে অহেতুক হাঁকডাক করতে খুব ভালোবাসে আর এতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। কিন্তু  মানুষের হৈচৈ তার একদম ভালো লাগে না। তবুও তাকে এই ভিড়টার পাশ কেটেই যেতে হবে। সে প্রায় চোখ বন্ধ করে লোকের ভিড় অতিক্রম করলো। আর এইসময় সে লক্ষ্য করলো—একটি অল্পবয়সী ছেলে এই ভিড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি তার পিছু নিয়েছে। সে এখন তনুশ্রীর পিছে-পিছে হাঁটছে। আর তার হাঁটা যে উদ্দেশ্যমূলক—তা সহজেই অনুমেয়।
 
তনুশ্রী ঠিক ভয় পেলো না। তবে সে এতে ভীষণ বিরক্ত হলো। এই ছেলেটি তার একরকম মুখচেনা। ছেলেটি হয়তো তাদের বাসার আশেপাশেই থাকে। এর আগেও সে তাকে তার পিছু নিতে দেখেছে। এই ছেলেটি এরকম আরও কয়েকদিন তনুশ্রীর পিছে-পিছে হেঁটেছে। আর তনুশ্রী দেখেছে,  তার চোখের দৃষ্টি একেবারে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো। ছেলেটির চোখ দুটো সবসময় লোভে আর ভীষণ ক্ষুধায় চক-চক করে। তবুও তনুশ্রী তাকে ভয় পায় না। তবে সে মাঝে-মাঝে লজ্জা পায়। কারণ, ছেলেটির চোখের দৃষ্টি একটা লোভী-শিয়ালের মতো।
 
ছেলেটি তনুশ্রীর পিছনে হাঁটার সময় একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে ঠিকই। তবে সে খুব একটা দূরেও থাকে না। তনুশ্রী বুঝতে পারে, ছেলেটি তার পিছনে হাঁটছে—আর তাকে লেহন করছে। আর তার সর্বাঙ্গ একটা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে।
 
তনুশ্রী আরও বুঝতে পারে, ছেলেটি তাকে ভালোবাসে... continue reading
Likes Comments
০ Shares
Load more writings...