Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কুরবানী সম্পর্কে বিভ্রান্তির জবাব ও কুরবানীর প্রয়োজনীয়তা

বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি কুরবানী ঈদ আসলেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বেশ কয়েকজন চিন্তাশীল মানুষ কুরবানীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা বুঝানোর চেস্টা করেন কুরবানী এবং হজের মাধ্যমে অনেক টাকার অপচয় হয়। যা দিয়ে দেশের অনেক ভালো করা যেত। দেশী বিদেশী অনেক বুদ্ধিজীবি সহ এন বি আর এর সাবেক চ্যায়ারম্যনও বাদ যান নি। আমি ধরে নিচ্ছি ধর্মকে হেয় করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা হয়ত বিষয়টি জানেন না। অথবা নিছকই মতামত তুল ধরছেন। একটু আলোচনা করলেই কুরবানী প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব পাওয়া যাবে আশাকরছি। আসলে কুরবানীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝার জন্য ধর্মের খুব গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা কুরবানীর মাধ্যমে পশুর জবাই করাটাই মুল উদ্দ্যেশ্য নয়। এর সাথে সামাজিক ও রাস্ট্রীয় অনেক বিষয় জড়িত আছে যা হয়ত অনেকেরই জানা নাই। এবার একটু আলোচনায় আসি।

কুরবানি কারা করবেন? কুরবানী শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য। যারা ইসলামের অনুসারী কেবল মাত্র কুরবানী করা বাধ্যতামুলক। আবার সকল মুসলমানদের জন্যও নয়। মুসলমানদের মধ্যে যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য। অর্থাৎ অভাবী  এবং ঋনগ্রস্থদের কোরবানী করার কোন প্রয়োজন নেই। এ থেকেই বুঝা যায় কুরবানী করা মুসলমানদের ব্যক্তিগত ইবাদতের একটি। সুতরাং এখানে রাস্ট্রের খরচ করার বিষয় অন্তভুক্ত নেই। আরো একটি বিষয় বুঝা যায় যে এখানে একটি অর্থনীতির বিষয় নিহিত আছে। কেননা কুরবানী অর্থবানরাই দিবেন। মুসলমানের জন্য যে পাচটি ইবাদত করা বাধ্যতামুলক তার মধ্যে কলেমা নামাজ এবং রোজা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এবং হজ্ব এবং যাকাত সরাসরি সামাজিক রাস্ট্রীয় অর্থনীতির বিষয়টি জড়িত। এই হজ্বের পরই সকল মুসলমানদের জন্য কুরবানী করতে হয়। যার মধ্যে রাস্ট্রের অর্থনীতির একটা গুরুত্বপুর্ন অংশ জড়িত আছে।

এবার আসি কুরবানীর গুরুত্ব কি? কুরবানী করা কেন জরুরী। দেখা যায় তিনটি বিশেষ কারনে কুরবানী দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১। ব্যক্তিগত ২। সামাজিক ৩। রাস্ট্রীয়

প্রথমত কুরবানীর মাধ্যমে অর্থবানরা তাদের কস্টাজিত টাকা খরচ করেন। মানুষ যেখানে টাকার লোভ সামলাতে পারেননা কিন্তু দেখা যায় কুবরবাণী আসলে কুরবানী দেয়া চেষ্টা করেন। ফলে কাউকে কিছু দেয়ার প্রবনতা তৈরী হয়। এতে কুরবানী দানকারী ব্যক্তি আত্নশুদ্ধি হয়।

দ্বিতীয়ত সামাজিক কারন। হাদিসে বলা হয়েছে। রাসুল(সা:) বলেছেন যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্থ অবস্থায় রাত্রি যাপন করে সে আমার উম্মত নয়। এবং অন্য একটি হাদিসে রাসুল বলেন,আন্থীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কারী জান্নাতে যাবেনা কুরবানীর নিয়মে বলা হয়েছে কুরবানীর মাধ্যমে জবাই কৃত মাংসের তিন ভাগের একভাগ অভাবী মানুষদের জন্য। আরেক ভাগ আত্নীয় স্বজনের মধ্যে যারা কুরবানী করেনাই তাদের এবং এক ভাগ নিজের জন্য। এখানে একটি গুরুত্ব পুর্ন বিষয় লক্ষ্যনীয়। আমরা যারা ব্যস্ততার কারনে প্রতিবেশী এবং আত্নীয়স্বজনের খোজ নিতে পারেনা তাদের জন্য খোজ নেয়া একটা সুযোগ। আত্নীয়দের সাথে দেখা এবং তাদের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপনের এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর কোথায়? দ্বিতীয়ত যারা সারা বছর ভাল খাবার থেকে বঞ্চিত তাদের জন্য অন্তত একবার ভাল খাবারের ব্যবস্থা করা। অনেকে হয়ত বলতে সারা বছর যারা উপোস থাকে তাদের জন্য বছরের একবার করে কি লাভ? লাভতো এটাই। অন্তত একবারতো হলো। শুধুতাই নয়। বছরের একবার অন্তত খোজ নেয়া হয়। তাদেরর সম্পর্কে জানা হবে। ফলে বছরের অন্য সময়েও তার খোজ নেয়ার মানসিকতা তৈরী হবে। মানুষের প্রতি মমত্ব বোধ বাড়বে। যেমন ধরুন সরকার মানুষের মাঝে অভ্যাস তৈরীর করা উদ্দেশ্য আয়কর মেলা করছেন। বৃক্ষ মেলা করছেন। যদিও এই কাজ গুলো সব সময়ই করা উচিত বা সবাই করেও থাকেন।

তৃতীয় কারনটি রাস্ট্রীয়, আমরা সবাই জানি অলস অর্থ রাস্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। অর্থের সার্কুলেশন যত বেশী হবে দেশের উন্নতি হয় ততবেশী। অর্থের সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে হলে অর্থকে গতিশীল করার কোন বিকল্প নেই। দেশের অভাব দুরীকরনের অন্যতম উপায় হলো অর্থের গতিশীলতা বাড়ানো ফলে এর সাথে সম্পৃক্ত হবে অনেক লোকজন এবং কমবে বেকারত্ব। টাকা যদি কেবল মাত্র এক শ্রেণীর লোকের হাতে স্থীর হয়ে যায় তাহলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে আরেকটা শ্রেনী অভাব গ্রস্থ হয়ে যাবে। এইভাবে চলতে থাকলে দেশে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। ধর্মীয় এবং রাস্ট্রীয় উতসবে দেশের অনেক বড় ধরনের অর্থের সার্কুলেশন হয়ে থাকে। যাকাত এবং কুরবানীও তার ব্যতিক্রম নয়। এনবিআর চেয়ারম্যানের তথ্য অনুয়ায়ী প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। অর্থাত টাকা গুলো হাত বদল হয়। আর এই টাকা গুলি সরাসরি ধনীক শ্রেণী থেকে গরীব শ্রেনীর হাতে যায়। যেমন দেশের বড় একটা শ্রেণী কুরবানী পশু মোটাতাজাকরন পেশায় নিয়োজিত। এছাড়া পশু খাদ্যের জড়িত আরেকটা শ্রেনী। এছাড়া পশুর চামড়া থেকে শুরু করে হাড় পর্যন্ত বেচাকেনার সাথে নিয়োজিত আছেন অনেক লোকজন। ফলে অর্থের সুষম বন্টনের এর চেয়ে ভালো উপায় আর আছে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। এছাড়া চামড়া অত্যন্ত মুল্যবান সম্পদ। সারাবছর যত চামড়া উতপাদন হয় তার সিংহ ভাগ আসে কুরবানীর পশু থেকে। এই চামড়া হাত বদলের মাধ্যমে বিশ্বের আর্থিক সঞ্চালন হয়। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তা আরো গুরুত্ব পুর্ন। কেননা বাংলাদেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় চামড়া থেকে।

কুরবানী নিয়ে যে ভিভ্রান্তি গুলো ছড়ানো হচ্ছে। প্র্থমত বলা হচ্ছে কুরবানী করা অমানবিক। কেননা পশু গুলোকে নিধন করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বোদ্ধারা একটা সহজ কথাকে কেন পেচিয়ে বলছেন। মানুষের জীবন ধারনের প্রধান উপাদান খাদ্য আস একমাত্র প্রকৃতি থেকে। আর পশুরা প্রকৃতির একটি অংশ। উদ্ভিদ থেকে শুরু করে পশুরাও মানুষের খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং খাদ্য সংগ্রহ করতে হলে এদের কাছে যেতেই হবে। মানুষ সারা বছরই পশুর মাংস থেকে তাদের খাবার যোগাড় করছে। সুতরাং শুধুমাত্র কুরবানী ঈদের বেলায় মানবিকতা প্রশ্ন তোলাটা চরম বিভ্রান্তি । শুধ তাই নয় গরীব মানুষের রুটি রুজির উপর হামলা করার একটা প্রচেস্টা ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া আরেকটা প্রশ্ন করতে হয়? মানুষ খুন করার চাইতেও কি অমানবিক? কেননা প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুদ্ধের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়ছে। সে গুলো কি অমানবিক নয়। মানুষ মারার জন্য অস্ত্র উৎপাদনে যে অর্থ খরচ হয় কুরবানীর অর্থ কি তার চাইতে বেশী? আর উভয়ের ফলাফলে কোনটা লাভজনক তা বুঝার জন্য কি বেশী চিন্তা করার দরকার হয়?

তিনি আরো বলেছেন কুরবানী অর্থ গুলি অপচয় হয়। কিভাবে অপচয় হয়? কুরবানীর মাংস থেকে শুরু করে সব কিছুই যেখানে অর্থকরী। যার কোন কিছু ফেলনা নয় সেখান তিনি কিভাবে অপচয় বললেন তা আমার বোধগম্য নয়। আল্লাহ বলেন, তোমাদের সম্পদে বঞ্চিতদের হক আছে। সুরতাং মুসলমান অর্থবানরা দান, ফেতরা জাকাত এবং কুরবানীর মাধ্যমে সরাসরি বঞ্চিত মানুষের কাছে তাদের হক ফিরিয়ে দিচ্ছেন।  সুতরাং অপচয় হওয়ারতো প্রশ্নই উঠেনা। তাছাড়া কুরবানী কোন রাস্ট্রীয় সম্পদ থেকে দেওয়া বিধান নেই। কেননা রাস্ট্রের সম্পদ শুধু ধনীদেরই নয় গরীবেরও। অন্যদিকে একটা ধনীক শ্রেনী আছে যারা শুধুমাত্র নেশা দ্রব্য বিক্রী করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। যার কোন উপকারী দিক তো নেইই, অপচয় তো বটেই পাশাপাশি মানুষকে দারিদ্রতার পথে ঠেলে দিচ্ছেন। অস্তির, অনিরাপদ করে তুলছেন পরিবার,সমাজ তথা রাস্ট্র।

কেউ কেউ বলছেন কুরবানী টাকা অন্য কোন সামাজিক কাজ করা যায়। কুরবানীতো একাধারে সামাজিক ও রাস্ট্রীয় কল্যান করেই যাচ্ছে। সুতরাং কুরবানীর সামাজিক কল্যানের জণ্য কুরবানী বন্ধ না করে নিয়মিত দান, জাকাত এই গুলো আদায়ের মাধ্যমে সামাজিক কাজ করার তাগাদা দেয়া উচিত।

১ Likes ৭ Comments ০ Share ৭০২ Views

Comments (7)

  • - পথিক আমি

    নক্ষত্র ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আশাকরছি আপনি পাঠক হয়ে নিয়মিত আমাদের পাশে থাকবেন।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    নক্ষত্র ব্লগে আপনাকে স্বাগতম

    - নীল সাধু

    শুভেচ্ছা রইলো।

    নক্ষত্র ব্লগে স্বাগতম। আশা করছি আমরা এক সৃজনশীল পথে হাটতে পারবো।

    ব্লগিং হোক আনন্দের। শিক্ষণীয়।

     

    নক্ষত্র ব্লগ বাংলা ব্লগ জগতে সর্বাধুনিক সুবিধা নিয়ে অনলাইন লেখকদের অন্য নতুন প্লাটফর্ম হিসেবে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখবে এ কামনা করি।