Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নাসরিন চৌধুরী

১০ বছর আগে

কিশোরে'র বস্ত্রহরন ও হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালা

 

চারিদিকে পুলিশ আর সংবাদকর্মীদের ভিড় ।সেই সাথে উৎসুক জনতা লোকটাকে ঘিরে রেখেছে। কেউ বলতে পারছেনা কিভাবে কি হল। দু'ঘন্টা আগেও লোকটাকে পার্কে'র ভেতরে অনেকেই দেখেছে। লোকটা'র নাম ডেভিড। বয়স চল্লিশোর্ধ হবে। ইটালিয়ান বংশোদ্ভূত ডেভিড বছর দশেক আগে জার্মানীর বার্লিনে এসে বাস করছে। পরিবার বলতে তার কেউ ছিল কিনা কে জানে তবে বেশ অমায়িক ,আন্তরিক এবং প্রিয়ভাষী। কথার যাদুতে সহজেই বশ করে ফেলত মানুষকে। বিশেষ করে কিশোর'দের কাছে বেশ প্রিয় হয়ে উঠল ডেভিড । প্রতিদিন পার্কে ডেভিডের সাথে গল্পের আসর জমতো কিশোর'দের । বিকেলে'র সময়টা কেটে যেতো মন্ত্রমুগ্ধের মত। এভাবে প্রতিদিন'ই বাড়তে লাগল কিশোরদে'র সংখ্যা। প্রথম প্রথম ওরা বাবা বা মা'র সাথে আসত ডেভিডের গল্প শুনতে।কিছুদিন পর একাই আসতে শুরু করলো ওরা।

 

কাইজার ষ্ট্রীটের ৮৭ নম্বর বাড়ীতে পাঁচ তলায় থাকে ডেভিড। পাশেই টেম্পেলহোফ পার্ক। তার ফ্লাট থেকে পুরো পার্কটাকে'ই দেখা যায়। ডেভিড তার নিজের ফ্ল্যাটে একাই থাকে। সে কখনও ধূমপায়ী বা মদ্যপায়ী ছিলনা বিধায় সব বাবা মা'রাও আশ্বস্ত ছিল যে ডেভিডের সংস্পর্শে ছেলেদে'র নষ্ট হবার সে রকম কোন সম্ভাবনা নাই। ওরা ওদের সকল সমস্যা অনায়াসে তার সাথে শেয়ার করতে পারত। ডেভিড কিভাবে জানি সব সমস্যা'র একটা সহজ সমাধান বের করে দিত। কিশোরদের মধ্যে যারা নিয়মিত ছিল তারা হলো মাইকেল ,স্টিভ ,রোলান্ড ,জন ,মাটিন ও পিটার।ওরা সবাই প্রায় সমবয়সী ,আনুমানিক চৌদ্দ থেকে পনের হবে। সেন্ট জোসেফ স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে।

 

এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। হঠাৎই একদিন ডেভিড বলল ,

আমার বাসায় আমি তোমাদের দাওয়াত করতে চাই।

বালকরা বলল ,

তাহলেতো খুব মজা হয়

ডেভিড বলল,

কিন্তু সমস্যা হলো আমার বাসায় জায়গা খুব কম। একজনে থাকার জন্য ঠিক আছে। মাত্র একটা রুম ।তাই তোমাদের সবাইকে আমি একসাথে নিতে পারবোনা। একজন একজন করে নিয়ে যাবো। তোমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নাও কার কার হাতে সময় আছে। তারপর আমাকে তালিকা দিও।

বালকরা বলল ,

ঠিক আছে ডেভিড। তবে আমরা যদি সবাই একসাথে যেতে পারতাম তাহলে কিন্তু বেশ হত।

ডেভিড বলল,

আমার জন্মদিনের পার্টিতে আমি একটা হলরুম ভাড়া নিবো। তখন তোমাদের সবাইকে একসাথে দাওয়াত করবো। তোমরা এনিয়ে মন খারাপ করোনা।

মাইকেল বলল,

ঠিক আছে। আগামী রোব বার আমি ফ্রি আছি। আমি তোমার বাসায় আগে যাব। ওরা সকলেই একমত যে মাইকেল'ই আগে যাবে। কারন মাইকেল একটু পাগলাটাটে। সব কিছুতেই তার তাড়াহুড়ো,কোন বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা না পরিনতিতে না যাওয়া পর্যন্ত তার নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধুরা খুব ভাল করেই তাকে জানে, তাই কেউ আর আপত্তি করলো না যে কে আগে যাবে আর কে পড়ে যাবে।

 

যে কথা সেই কাজ। রোববার আসতে আরও তিন দিন বাকী। মাইকেল অস্থির, রোববার আসতে এত দেরী ক্যান নিজেরে নিজে বার বার প্রশ্ন করে। ডেভিড বলেছিল ইটালিয়ান পাস্তা আর পিজা নিজের হাতে করে খাওয়াবে,সে খাবারের লোভে উত্তেজনাটা যেন আরও একটু বেশী।

মাইকেল জার্মান ছেলে। সোনালী চুল আর নীল চোখের মাইকেল'কে পেয়ে ডেভিড যেমন কেমন আত্মহারা। মাইকেলও মহাখুশি ইটালিয়ান আর পাস্তা খেতে পেরে। আস্তে আস্তে ডেভিডের আচরন কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যেতে লাগল। সফট ড্রিংস এলো , মাইকেল খুশি হয়েই চুমুক দিল এবং পুরো গ্লাস শেষ করে ফেলল। কেমন যেন একটু ঘোরের মত কাজ করছে কিন্তু বেশ ভালই লাগছে।তবে ভাবছে সফট ড্রিংকস এমন হবে কেন? এদিকে ডেভিড আস্তে আস্তে মাইকেলে'র পাশে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল,পাগলের মতো আদর করতে লাগল। প্রথমে মাইকেল কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো কিন্তু যখনই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে যাচ্ছিল কিন্তু ততক্ষনে সফট ড্রিংসে'র সাথে মেশানো ঘুমের ঔষধের কল্যানে এতক্ষনে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে ঘুমের ঘোরে। তারপর কি হল মাইকেলে'র আর কিছু মনে নেই।

 

যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল ডেভিড পাশে নেই কিন্তু নিজেকে সে কোনভাবেই বিছানা থেকে উঠাতে পারছেনা। তার নিজের শরীরে একটা কাপড়ও নাই। খুব ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে এল। কিন্তু ডেভিডকে সে কোথাও দেখতে পেলোনা। কিন্তু মাইকেল অনুভব করতে পারছে তার শরীরে'র ওপর দিয়ে অনেক বড় একটা ঝড় বয়ে গেছে। লজ্জায় ,ভয়ে ,সংকোচে সে বাসায় এসে বাবা মা'কেও কিছু বলতে পারলনা। বাবা মা জিজ্ঞাসা করেছিল ডেভিডের পার্টি কেমন হল ?

মাইকেল মাথা নেড়েই সম্মতি দিয়েছিল যে ভালই হয়েছে।

পরদিন সে আর স্কুলে যেতে পারলনা। রাত থেকেই তার প্রচন্ড জ্বর। বন্ধুরাও ফোন করে জানতে চাইল ডেভিডের সাথে কেমন কেটেছে কিন্তু মাইকেল কাউকেই আসল ঘটনা কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলেছে ভাল এবং জ্বরের কারনে কিছুদিন সে স্কুলে আসবেনা।

এক সপ্তাহ সে বাসা থেকে কোথাও বের হয়নি। কোথাও যেতে তার ভাল লাগছে না ,এমনকি বন্ধুদের সাথেওনা। আস্তে আস্তে আবার আরেক রবিবার ঘনিয়ে এল। শনিবারে ওর বন্ধুরা তাকে ফোন দিল এবং জানালো রবিবার স্টিভ যাবে ডেভিডের বাসায়। একথা শুনে মাইকেল আর থাকতে পারলোনা। সে বলল,

না একদম না ,কেউ যাবেনা ডেভিডের বাসায়।

ওরা বলল,

কেন ? নিজেতো ভালই খেয়ে দেয়ে এলি আর আমাদের বেলায় যখন এলো তখন বাঁধা দিচ্ছিস ! তুই বাঁধা দিলেই আমরা শুনব কেন ?

মাইকেল বলল,

তোরা অপেক্ষা কর ,আমি আসছি।

মাইকেল সবাইকে একাসাথেই পেয়ে গেলো। ওরা সবাই মাইকেলে'র বাসার নীচেই অপেক্ষা করছিল। মাইকেল গিয়ে ওদেরকে সব বলল।কিন্তু মাইকেলে'র কথা ওরা কেহই বিশ্বাস করতে পারছিলনা।কারন ওরা ডেভিডকে প্রায় এক বছর ধরে দেখছে কিন্তু কোনদিনও মনে হয়নি ডেভিড এতটুকু মন্দ হতে পারে। ডেভিডকে চিনতে এতজন লোকের ভুল হতে পারেনা!!

কিন্তু মাইকেল তাদের ছোট বেলার বন্ধু ,মাইকেল'কে ওরা খুব ভাল ভাবেই জানে।ভুক্তভোগী হয়েও মাইকেল কারো কাছে মুখ খোলেনি কিন্তু যখন দেখল তার'ই প্রিয় আরেকজন বন্ধু একই ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে তখন সে চুপ করে থাকতে পারলনা।

 

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল কি করা যায় !

উপায় বের করল রবিবার ওরা সবাই মিলে যাবে ডেভিডের বাসায় এবং জিজ্ঞাসা করবে ডেভিড'কে যে এসবের মানে কি ? যদি ডেভিড খারাপ কিছু করে বা করতে চায় ওরা পুলিশ ডাকবে। আগে ওরা ডেভিডে'র সামনা সামনি দাঁড়াবে,তারপর অন্য চিন্তা। কিন্তু মাইকেল এত ঘাবড়ে গেছে যে সে চায়না তার বাবা মা ব্যাপারটা জানুক আর পুলিশতো দূরের কথা। ওরা রওনা হল ডেভিডের বাসার উদ্দেশ্যে।

 

পাঁচতলা ফ্লাটের জানালা থেকে পড়ে ডেভিডের থেতলে যাওয়া মৃতদেহটা জাতীয় দৈনিকগুলোতে শিরোনাম হয়েছে। সকল কিশোদের বাবা মা'র চোখে পানি ,ওরা ভাবতেই পারেনি ডেভিডের মত ভাল একজন লোক এভাবে চলে যাবে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত। আর এদিকে কিশোর'রা বেশ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মনে হলো গলা থেকে যন্ত্রনাময় কাঁটাটি নেমে গেলো।

 

 

( আমার জীবনে লেখা দ্বিতীয় ছোট গল্প। একটা পরামর্শ আমি দিতে চাই ,সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক এমন ঘটনার শিকার হতে পারে ,সেটা পৃথিবীর সব দেশেই হতে পারে। ছেলে হলেই কিন্তু সে নিরাপদ ,এমন ভাবাটা ভুল ।তাই আপনার সন্তানকে খুব খুব খেয়াল রাখুন, তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন যাতে ওরা এমন কোন ঘটনা ঘটলেও শেয়ার করতে ভয় বা লজ্জা না পায়।আর এমন শত্রু আপনার আশে পাশের মানুষগুলোও হতে পারে তাই নিজের সন্তানকে চোখ বন্ধ করে কারো সাথে মিশতে দেয়া উচিত নয় )

 

১ Likes ২১ Comments ০ Share ৬৩৫ Views

Comments (21)

  • - ঘাস ফুল

    রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে। সৎ মা গ্রেটেল এবং হ্যানসেলকে মারার ফন্দি করে তাদের বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বনে রেখে এলো। প্রথমবার হ্যানসেলের বুদ্ধিতে আবার বাড়ি ফিরে এলেও দ্বিতীয়বার আসতে পারলো। ডাইনির হাতে ধরা খেল তার গ্রেটেলের বুদ্ধিতে সেখান থেক রক্ষা পেল। ফিরে এলো ডাইনীর ওখানে রাখা বেশ কিছু মণিমুক্তা নিয়ে। তাই দিয়ে এখন তারা সুখের জীবন কাটাচ্ছে। সৎ মা নিজে সুখি হতে যেয়ে বাচ্চা দুটোকে মারার ফন্দি করেছিল অথচ সে নিজেই মরে গেলো। স্বার্থপরতার শিক্ষা আল্লাহ্‌ হাতে নাতেই তাকে দিয়েছে। 

    আপনার গতবারের অনুবাদের চেয়ে এটা ভালো হয়েছে। তবে আরও ভালো হতে পারতো যদি পানি বাক্য গঠনে এবং শব্দের গাঁথুনিতে আরও একটু বেশী মুন্সিয়ানা দেখাতে পারতেন। তবে অনুবাদের বিষয়বস্তু ভালো লাগলো। ধন্যবাদ সোহেল। 

    • - শেফালী সোহেল

      গুরুত্বপূর্ন উপদেশ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।