Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কিউবান বিপ্লবের অন্যতম মহানায়ক এবং মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও গেরিলা যুদ্ধ বিশারদ এর্নেস্তো চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা


আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী, বিপ্লবী, চিকিত্সক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব আর্নেস্তো চে গেভারা। তার প্রকৃত নাম ছিল আর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না। তবে তিনি সারা বিশ্বে লা চে বা কেবলমাত্র চে নামেই পরিচিত। চে গেভারা একাধারে ইতিহাসের এক নন্দিত ও নিন্দিত চরিত্র। বিভিন্ন জীবনী, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, তথ্যচিত্র, গান ও চলচ্চিত্রে তার চরিত্রের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়। আবার গেরিলেরো হেরোইকো নামে আলবের্তো কোর্দার তোলা চে'র বিখ্যাত ফটোগ্রাফটিকে "বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ফটোগ্রাফ" হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। আজ এই মহানায়কের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৮ সালের আজকের দিনে তিনি আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্মগ্রহন করেন। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও গেরিলা যুদ্ধ বিশারদ এর্নেস্তো চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।

এর্নেস্তো চে গেভারা ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এর্নেস্তো গেভারা লিঞ্চ এবং মায়ের নাম সেলিয়া ডে লা সেরনা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চে-ই সবার বড় ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই হাঁপানিতে আক্রান্ত হলেও নানাবিধ খেলাধুলায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে অসুখ কাটিয়ে উঠবার চেষ্টা করেন। অবশ্য পরবর্তীতে এই অসুখের কারণেই তাঁকে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তরুণ বয়সে চে গেভারা ১৯৫০ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অব বুয়েন্স আয়ার্স’-এ মেডিকেলের ছাত্র থাকা অবস্থায় লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন এবং এই ভ্রমণে তিনি লাতিন আমেরিকার জনগণের সীমাহীন দারিদ্র্য ও কষ্ট দেখতে পান যা তাঁকে প্রচণ্ড নাড়া দেয় এবং পরবর্তীতে একজন বিপ্লবী হয়ে উঠতে সহায়তা করে। এই ভ্রমণকালে তার অর্জিত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই অঞ্চলে বদ্ধমূল অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বাভাবিক কারণ হল একচেটিয়া পুঁজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ; এবং এর একমাত্র সমাধান হল বিশ্ব বিপ্লব। মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে গেভারা পুনরায় লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন এবং গুয়াতেমালায় অবস্থানকালে সেখানকার পরিস্থিতি তাঁকে নতুনভাবে চিন্তা করতে শেখায়। ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালায় জ্যাকব আরবেনজ্-এর সরকার ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে CIA সমর্থিত সেনাবাহিনী তাঁকে উৎখাত করে। সেখান থেকেই চে'র বৈপ্লবিক আদর্শ চেতনা বদ্ধমূল হয় এবং তখন থেকেই তিনি মনস্থির করেন যে কিউবার বিপ্লবে তিনি অংশগ্রহণ করবেন। পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় তার সঙ্গে রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর আলাপ হয়। চে তাদের ছাব্বিশে জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। কিউবা-কে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে তিনি কিউবার অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ শুরু করেন। মার্কিন-মদতপুষ্ট কিউবান একনায়ক ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য গ্রানমায় চড়ে সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন।

অনতিবিলম্বেই চে বিপ্লবী সংঘের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড পদে তার পদোন্নতি হয় এবং বাতিস্তা সরকারকে উত্খাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে কিউবার বিপ্লব সফল হওয়ার পর একজন কূটনীতিক হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন। কিউবার বিপ্লবের পর চে নতুন সরকারে একাধিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিপ্লবী আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের আপিল পুনর্বিবেচনা ও ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড প্রদান, শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী হিসেবে খামার সংস্কার আইন প্রবর্তন, কিউবার জাতীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর ইনস্ট্রাকশনাল ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন এবং কিউবান সমাজতন্ত্রের প্রচারে বিশ্বপর্যটন। এই পদাধিকারের কল্যাণে তিনি মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ পান; ফলত এই বাহিনী পিগ উপসাগর আক্রমণ করে তা পুনর্দখলে সক্ষম হয়। কিউবায় সোভিয়েত পরমাণু ব্যালিস্টিক মিসাইল আনার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

(ফিদেল কাস্ত্রের সাথে চে গেভারা)
মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও গেরিলা যুদ্ধ বিশারদ ছাড়াও চে ছিলেন এক বিশিষ্ট লেখক ও ডায়েরি-লেখক। ১৯৬০ সালে চে’ গুয়েভারা চায়না এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। ফিরে এসে গেরিলা যুদ্ধের উপর তিনি একটি প্রভাবশালী ম্যানুয়েল রচনা করেন। তিনি ‘গেরিলা যুদ্ধ’ এবং ‘কিউবান বিপ্লবী যুদ্ধের স্মৃতিকথা’ নামে দু’টি বই লেখেন । এতে তিনি বলেন যে কিউবার বিপ্লবের মত সাউথ আমেরিকার অন্যান্য দেশেও বিপ্লব করা সম্ভব। তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোটরসাইকেলে ভ্রমণের স্মৃতিকথাটিও তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় রচনা। চে’ ১৯৬১-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কিউবার শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর বিপ্লবে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে শিল্পমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কিউবা ত্যাগ করে প্রথমে কঙ্গো এবং পরে বলিভিয়ায় বিপ্লব সংগঠন করতে চলে যান। কঙ্গো-কিনসহাসায় তার বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি বলিভিয়ায় বিপ্লবে অংশ নেন। বলিভিয়ায় যাওয়ার আগে, তিনি তার পাচঁ ছেলে-মেয়েকে একটি চিঠি লেখেন তার মৃত্যুর পর পড়ার জন্য। চিঠিটি তিনি শেষ করেন এভাবেঃ ‘সবার আগে, পৃথিবীর যে কোন জায়গায়, যে কারো বিরুদ্ধে, যে কোন অবিচার গভীরভাবে অনুভব করার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখবে। এটা একজন বিপ্লবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি গুণ’।

১৯৬৭ সালের ৭ই অক্টোবর আমেরিকান সিআইএ’র সাহায্যে বলিভিয়ান আর্মির হাতে বন্দী হন চে’। হাত বাঁধা অবস্থায় চে’ কে ‘লা হিগুয়ের’ নামের একটি এলাকার স্কুলঘরে রাখা হয়। ০৯ অক্টোবর সকালে বলিভিয়ান প্রেসিডেন্ট রেনে বারিয়েন্তস চে’কে মেরে ফেলার আদেশ দেন। চে’ কে হত্যা করার আগে একজন বলিভিয়ান সেনা তাকে প্রশ্ন করেছিল যে তিনি নিজে বেঁচে থাকার কথা ভাবছেন কিনা। চে উত্তর দিয়েছিলেন ‘না, আমি বিপ্লবের অমরত্বের কথা ভাবছি’। সেদিন দুপুরে তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩৯ বছর। চে’ কে হত্যা করার পর, ১০ই অক্টোবর তার মরদেহ ভ্যালেগ্রান্দে নামক কাছের একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য তার দেহ রাখা হয় এবং ছবি তোলা হয়। আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষার জন্য একজন মিলিটারি ডাক্তার চে’র হাত দুটো কেটে রাখার পর বলিভিয়ান আর্মি অফিসাররা চে’র দেহ কোন অজানা জায়গায় সরিয়ে ফেলেন এবং এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে বলিভিয়ান জেনারেল মারিও ভার্গাস প্রকাশ করেন যে চে’ গুয়েভারার দেহ ভ্যালেগ্রান্দের একটি বিমান-ক্ষেত্রের কাছে আছে। এরপর থেকে এর সন্ধান করা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে একটি গণকবরে ৭ টি দেহ খুঁজে পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে একজনের হাত কাটা ছিল।

১৯৯৭ সালের ১৭ই অক্টোবর চে’ গুয়েভারার দেহ সম্পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় বিশেষভাবে নির্মিত একটি সমাধিসৌধে শায়িত করা হয়। এটি কিউবান শহর ‘সান্তা ক্লারা’তে, যেখানে তিনি কিউবান বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ এই কিউবান বিপ্লবের মহানায়ক চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও গেরিলা যুদ্ধ বিশারদ এর্নেস্তো চে গেভারার ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।
০ Likes ৪ Comments ০ Share ৯৩২ Views

Comments (4)

  • - মুন জারিন আলম

    ভালো লেগেছে আবৃত্তি। ধন্যবাদ। 

    • - মাসুম বাদল

      শুভেচ্ছা অফুরান...

    - আলমগীর সরকার লিটন

    অভিনন্দন

     

    শুভ কামনা----------------

    • - মাসুম বাদল

    - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    অসাধারণ আবৃত্তি

    • - মাসুম বাদল

      অনেক অনেক শুভকামনা...

    Load more comments...