বেশ রৌদ্রজ্জ্বল একটা দুপুর আজ। বাসার পাশেই একটা পার্কে বসে আছি। অনেকদিন হলো ভিটামিন ডি খাওয়া হয় নাই। বেশ উপভোগ করে খাচ্ছি। কাছেই অনেকগুলো ধব ধবে সাদা আলবাট্রস পাখি ঘাস থেকে কীট-পতঙ্গ ধরে ধরে খাচ্ছে। আর কতোগুলো আশেপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। বেশ নির্মল একটা দৃশ্য। এমন সুন্দর একটা দৃশ্যের মাঝে কেন জানি আমার মনটা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। মনে হতে লাগলো কীট-পতঙ্গ কিংবা পশু-পাখি হয়ে জন্মালেই বোধ হয় ভালো হত। এদের সুখ-দুঃখ, লোভ-লালসা, আনন্দ-বেদনা, লাজ-শরম, ন্যায়-অন্যায় কিছুই স্পর্শ করেনা। খাও দাও, ঘুরে বেড়াও, উড়ে বেড়াও, তারপর এক সময় মরে যাও। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে বাঁচতে hibernation-এ চলে যায়। প্রতিকূলতা পেরিয়ে আবার তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কতো সহজ তাদের জীবনের গতি! সত্যিই এরা ভাগ্যবান। না হয়, মানুষ হয়ে জন্মালে আজ তাদের দেখতে হতো ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ-অভুত্থান, ৭১’র স্বাধীনতা আন্দোলন আর ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পরেও কিভাবে বাঙালী জাতি আজও বিকলাঙ্গ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত স্বাধীন দেশের মধ্যে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছে। আজও আমরা রাজাকারদের বিচার করতে পারিনাই, পারিনাই বিশ্বজিতের হত্যা বন্ধ করতে। বাসে আগুন লাগিয়ে অকাতরে মানুষ পুড়ে অঙ্গার বানাচ্ছি। সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফালানির লাশ ঝুলে থাকতে দেখছি কাঁটা তারের বেড়ায়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে বহ্নিখেলায় মত্ত। গার্মেন্টস কারখানাকে বানাচ্ছি শ্মশান ঘাট, যেখানে শত শত জীবন্ত দেহ পোড়ানো হচ্ছে। দালানে ধ্বস নামিয়ে জীবন্ত কবর দিচ্ছি নিরীহ অসহায় খেটে খাওয়া মানুষদের। সংবাদপত্রে ধর্ষিতা মেয়ের পরিচয়ে লেখা হচ্ছে ‘সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের মুসলিম মেয়ে’, যা কিনা মৌলবাদীত্তের চরম নমুনা। মেয়েটি একজন মানুষ, এটাই তার পরিচয়, তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন। হঠাৎ একটা আলবাট্রস আমার মাথার ওপর এসে বসলো আর আমিও দৃশ্যপটে ফিরে এলাম।
এখন ভাবছি মানুষ ছেলেমেয়েকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যারিস্টার না বানিয়ে হিমু বানালেই বোধ হয় ভালো হবে। শান্তিময় একটা পৃথিবী পাবো.........যেখানে মানুষের বিচার্য হবে মনুষ্যত্ব, ধর্ম, বর্ণ বা কোন গোষ্ঠী নয়।
Comments (21)
ধন্যবাদ প্রিয় লেখাটি শেয়ার করার জন্য!
সুন্দর থাকুন সনাতন পাঠক।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।