Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shafiq Roneiy

৯ বছর আগে

কালির পূজো

উনিশে পা পড়তেই লতার বাবা মেয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করলেন। বিয়ের বাজারে লতা পাত্রী হিসেবে তেমন আকর্ষণীয় নয়। গায়ের রং শ্যামলা; গড়ন মাঝারি; অতি সাধারণ চোখ; ঘন চুল- উস্ক খুস্ক; কথায় পুরুষালি ভাব প্রকট। মেয়েলি কণ্ঠে নম্রতা বিয়ের উপযুক্ত ছেলের মায়েদের স্বভাব চাহিদা। লতার কথায় তা নেই। এই যেমন কলেজের বন্ধুদের আড্ডায় লতা হঠাৎ বলে উঠলো –

-         ধুর বাল, ছেলেগুলো সব ন্যাকা। ফর্শা মেয়ে দেখলেই আধকাপ নাল পড়ে । নাক টিপলে দুধ পড়ে।

লতার বাবা ছেলে খুঁজে পেলেন। ছেলে ডাক্তারি পড়ছে। বয়স বাইশ। লম্বা, সুদর্শন। কথাবার্তায় নম্রতার ছাপ; তা সমাজে ভদ্রতা বলে লোকে গোনে। নাম রমেশ। রমেশ তার মার কাছে লতা সম্পর্কে শুনে তার ভারি ইচ্ছে হল লুকিয়ে লতাকে দেখার। রমেশের মা লতাদের বাড়ি গিয়েছিলেন তাকে দেখতে; তার হবু-পুত্রবধুকে একটু যাচাই করেনিতে। লতার বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। লতার মা নেই। পিসিদের কাছে মানুষ। লতাদের বাড়ি গিয়ে রমেশের মা পরিচয় দিলেন তিনি এলাকার শিশু হাসপাতালের নার্স; খোঁজ নিতে এসেছেন এবাড়িতে কোন বাচ্চাকাচ্চা আছে কিনা। থাকলে টিকা দিতে হাসপাতালে যেতে বলবেন। রমেশের মার লতার সাথেই কথা হল-

-         ও মা, তোমাদের বাড়ি ছেলেপুলে আছে গো ? থাকলে হাসপাতালে পাঠিয়ো, সরকারি টিকা এসেছে।

-         কেমন ছেলেপুলে গো ? দৌড়ায় ? হাটে ? হামাগুড়ি খায় ? নাকি কোলে শুয়ে মায়ের পিণ্ডি চটকায় ?

এই ছিল লতার কথার ধরন। শুনে রমেশের মা আর দাঁড়ালেন না। সোজা বাড়ি ফিরে এলেন । এসেই রমেশের সামনে পড়লেন। মুখ ফসকে বলে উঠলেন –

-            ওরে বাবা! এই নাকি কথার ছিরি! এই মেয়েকে কখনই ঘরের বউ করে আনা চলবে না।

শুনে রমেশ বেশ মজাই পেল।

-         আমার জন্য বউ খুঁজতে গেসিলে নাকি মা ? তা তোমার বউমা কেমন দেখতে ? বলতো শুনি। কথার ছিরিটা কেমন ? একটু বলতো শুনি।

-         আমার সাথে ইয়ারকি করছিস ? এমন পাঁজি মেয়ে আমি আর দেখিনা বাপু। না, না , লতার বাবাকে আজই মানা করে দেব। এ সমন্ধ হতে পারে না।

-         আহা, সে না হয় দিও। আগে বলতো শুনি!

-         কি আর শুনবি। পাশের গ্রামের ভবেশের মেয়ে লতা। সে তুই চিনবি না। চটাং চটাং কথা বলে। একটুও আদব কায়দা নেই। আর দেখতেও কি বিচ্ছিরি!

-         তাই? তা মেয়েকে লেখাপড়া শেখায়নি ? এইযে বলছ, আদব কায়দা নেই।

-         না। কলেজে পড়ে তো।

-         তা কোন কলেজে যে সেখানেও আদব কায়দা শেখায় না।

-         এইতো গ্রামের মগন মহন কলেজে। ওরে বাপ তো বলল বাংলায় পড়ে।

-         সে তো ভাল কলেজ। তোমার সাথে হয়তো ঠাট্টা করেছে।

-         তাই বলে, যারতার সাথে ?

-         তোমাকে চিনতে পারেনি হয়তো তাই। পরিচয় দিলে হয়তো আদর আপ্যায়ন করতো।

-         পরিচয় দিতে লাগে? অপরিচিত কে বোধহয় আদর আপ্যায়ন করতে নেই! পিসি গুলো কিচ্ছু শেখায়নি।

-         কেন মা নেই?

-         না ছোটবেলায় ছেড়েছে। ভগবানের কাছে গেছে।

-         তা তুমি না হয় শিখিয়ে পড়িয়ে নিও।

-         বড় ওকালতি করছিস যে। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিবি নাকি?

-         হুম, বাঁচতাম তা হলে। ওকালতিটা অনেক সোজা বুঝলে?

-         যা ইচ্ছে হয় কর।

-         লতাকেই বিয়ে করি? তুমি আদব কায়দা শেখাবে। একজন ভাল ছাত্রী পাবে। পড়াতে তো তুমি পছন্দ কর। এইযে ইস্কুলে কত ছেলে পুলে পড়াও। লতা কেও পড়াবে।

-         আমার মাথা খাঁ। বাপমরা ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজে খুঁজে আমার জীবন গেল।

-         আমি তো ডাক্তার মা। তোমার জীবন এত সহজে যেতে দেবনা।

এইছিল লতাকে নিয়ে মা-ছেলের কথাবার্তা। রমেশের বড় কৌতূহল লতাকে দেখার, তার সাথে পরিচিত হওয়ার, কিন্তু মার বিতৃষ্ণা দেখে ইচ্ছের কথা মায়ের কাছে চেপে গেল।

            পরদিন কলেজ কামাই দিয়ে মগন মহন কলেজের ক্যান্টিনে গিয়ে রমেশ শিঙ্গাড়া সমুচা খেল। এক কাপ কফিও খেল। আশে পাশে অনেক ছেলে মেয়ে এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রমেশ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, লতাকে খুঁজছে।

            রমেশ আজ হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বেরিয়ে গেল। ভাবল, বাড়ি যাবে। শরীরটা ভাল লাগছে না। একটু বিশ্রাম দরকার। কিন্তু গেল মগন মহন কলেজে। লতাকে তার দেখার খুব ইচ্ছে। দূর থেকে। কিভাবে সে চটাং চটাং কথা বলে তা শোনার খুব ইচ্ছে। কলেজের গেটে মাত্র দাঁড়িয়েছে। পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো-

-         এখানে তো ডাক্তারি পড়ানো হয়না।

-         হ্যা, তা জানি।

-         এখানে তো রুগিও পাবেন না। বাড়ি যান।

-         হ্যা, তাও জানি।

-         তাহলে এখানে কি করছেন?

-         সে কৈফিয়ত আপনাকে কেন দেব ?

-         দেবেন না ? ও আচ্ছা, তাহলে দাঁড়িয়ে থাকেন।

হঠাৎ রমেশের খেয়াল হল সে এখনও ডাক্তারি এয়্যাপ্রন পরে আছে । তাড়াতাড়ি খুলে ফেলল। যে মেয়েটা এতক্ষন জেরা করছিল সে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে। রমেশ পিছু নিল। ক্যান্টিনে গিয়ে কেক কফি আনতে বলল। এককোনে বসে রইল। মেয়েটা এতক্ষন চা খাচ্ছিল। হঠাৎ, উঠে এসে রমেশের সামনে ধপাশ করে ব্যাগ রেখে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল-

-         দেখেনতো নাড়ির গতি ঠিক আছে কিনা।

-         কেন?

-         কেন আবার, এসেছেন যখন ডাক্তারি করে যান।

-         আচ্ছা, আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন, বলেন তো ?

-         আপনি রমেশ, তাইতো? বাবার কাছে শুনেছে। আপনার হাসপাতালে গিয়ে একদিন লুকিয়ে দেখেও এসেছি।

-         হুম, আমি রমেশ। আপনি লতা?

-         হুম, আপনার মায়ের তো আমাকে পছন্দ হয়নি। বাবাকে বলেছে। আমিও বাবাকে বলেছি আমারও আপনাকে পছন্দ হয়নি। আপনি বিভিন্ন অজুহাতে মেয়েদের হাত ধরেন। নাড়ি মাপার ভান করেন। কপালে গায়ে হাতদিয়ে মেয়েদের গায়ের উষ্ণতা মাপেন। কেন থার্মোমিটার নেই? নার্সরা নেই? আপনার গায়ে হাত দেওার কি দরকার?

-         কি? আমি ? আমি তো ডাক্তার।

-         হুম, তাই তো। দেখেন তো আমার নাড়ির গতি কেমন? গায়ে জ্বর আছে কি না?

রমেশ লতার হাতটা আলত করে ধরতে যাচ্ছিল, হঠাৎ লতা হাত সরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো-

-         লুচ্চা কোথাকার!

-         কি ? আমি ? লু ? আমিতো ডাক্তার।

-         তাতেকি, আমাকে কি দেখে বঝেন না যে আমি সুস্থ মানুষ! আমার নাড়ির গতিও ঠিক আছে!

রমেশের মুখ-কান লাল হয়ে উঠলো। সোজা উঠে ব্যাগ কাধে নিয়ে বাড়ি চলে এল। কলেজের গেটের কাছে গিয়ে মনে পড়ল, ক্যান্টিনে কেক-কফির দাম দেওয়া হয়নি। ফিরে গিয়ে ক্যান্টিন ম্যানেজারের কাছে জানতে পারল তার সাথের মেয়েটা দাম দিয়ে দিয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে সে লতাকে কোথাও দেখলনা।

            রমেশের মা নতুন এক মেয়ের খোঁজ খবর নিয়ে এসেছে । নাম মাধবি, দেখতে নাকি সুন্দর, লম্বা চুল, আদব কায়দাও জানে। তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। কত আদর আপ্যায়ন করেছে। বাড়িতে টিকা দেওয়ার মত ছেলে পুলে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই বলেছে- আপনি বসুন, আমি দেখছি। চা-বিস্কিট খাইয়ে তারপর ছাড়ল।

            রমেশ সবই শুনল। মায়ের কথাতেই সাই দিল। বলল-

-         হুম, লতার থেকে ঢের ভাল।  

১ Likes ১ Comments ০ Share ৫৫৮ Views