Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আহসান কবির

৯ বছর আগে

কার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

রাত কাটেতো ভোর দেখিনা

কেন আমার হাতের ভেতর হাত থাকেনা

কেউ জানে না!

হেলাল হাফিজের এই কবিতায় রোমান্টিকতা আছে, আছে হাতের ভেতর অন্য কারও হাত না থাকার আকুতিও আছে । এই হাত আসলে অনেক কিছু, আবার কারও কারও কাছে হয়তো কিছুই না। নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় আছে-

এর ঠিক ডানপাশে, অইখানে হাত দাও

হ্যা-ওটা বুক, অইখানে হাত রাখো

অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি

থাকে সুখ...

সব ছিল, তুমিই থাকোনি !!

না থাকার বেদনা এখানেও আছে, বুকে হাত দিয়ে সেটা মেপে নিতে হয়। সুনীলের কবিতায়ও হাত আছে । সেই কবিতার সারমর্ম এমন-এই হাত ছুয়েছে নীরার দু হাত/এই হাত কোন পাপ করতে পারে না । সুনীলের কবিতার এই হাত ছড়িয়ে দেওয়া উচিত সরকারি কিংবা কর্পোরেট কর্মচারীদের মাঝে। এইসব হাত তখন ঘুষ খেতে পারবে না।

নীরার ঠোঁট ছড়িয়ে দিতে হবে রাজনীতিবিদ, পুলিশ বা আসামিদের মাঝে। তাহলে তারা সত্যি স্বীকার করবে, মিথ্যে কথা বলবে না। শামসুর রাহমানের কবিতায় আছে-আমাদের হাত বাধা নেই,চোখ বাধা নেই যা এক সময়ের আলোচিত পত্রিকা আজকের কাগজের শ্লোগান ছিল। প্রতিদিন, প্রতিটা সময় এই প্রশ্ন তোলা যায়। আমরা কি মত প্রকাশে স্বাধীন, নাকি হাত বেঁধে রাখার হাজারও কৌশল করছে ক্ষমতাসীনরা?

হাত নিয়ে আছে অনেক কবিতা, আছে গল্প, বাগধারা আরও কত কী! ধরুন দেশ বিদেশে আপনার দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গেল। ধরুন আপনার মন্ত্রীত্বের কারণে একটা সেতু নাই হয়ে গেল। তবু আপনার কিছু হলো না। কারণ কি? কারণ হচ্ছে উপরের হাত। এই উপরের হাত যার মাথায় থাকে তারচেয়ে ভাগ্যবান কয়জন আছে? অথচ নিতান্তই পেটের দায়ে যার হাতটানের অভ্যাস হয়ে যায় অথবা দুই আঙুলের টুকলিফাই (পকেটমারিং) যারা করে সাধারণ মানুষ তাদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে চায়। হয়তো দুনিয়াটাই এমন। যে পরিচালকের ছবি সুপার ডুপার হিট হয় তাদের মাথায় থাকে নিয়তির হাত। আর যারটা সুপার ডুপার ফ্লপ হয় তার ছবি পরিচিতি পায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে (ব্যতিক্রম ছাড়া) নিচু হাতের কাজ হিসেবে!

 

পশ্চিমবঙ্গের এক সময়কার মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান রায়ের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। বিধান রায়কে নিয়ে এমন কথা প্রচলিত আছে যে রোগীরা তার দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো। তিনি হেঁটে যেতে যেতে বলে দিতেন কার কী অসুখ হয়েছে। কাউকে কাউকে দেখে ভবিষ্যতে কী রোগ হবে সেটাও বলে দিতে পারতেন। বিধান রায়ের এই গুণকে অনেকেই হাতযশ বলে থাকেন। এযুগের যে সকল ডাক্তারদের হাতযশের খ্যাতি আছে, মানুষ তাদের কাছেই দৌড়ায় ।

লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয় এমন হোটেল প্রচুর আছে দেশে। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বাবুর্চিদের নাম। ফখরুদ্দিন বাবুর্চি হোক আর হাজীর বিরিয়ানি হোক,নান্না বাবুর্চির মোরগ পোলাও হোক আর স্টার হোটেলের কাচ্চি হোক, বাবুর্চিরাও আজকাল রীতিমতো স্টার। এই স্টার বাবুর্চিদের গুণটাকেও বলা হয়ে থাকে হাতযশ। কেউ কেউ বলেন, রান্নায় হাত ভালো! তবে গায়ে হাত দেওয়া কিংবা হাত তোলা খারাপ কাজ।

বাংলাদেশ সরকার আইন করে বলে দিয়েছে শিক্ষকরা যেন ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত না তোলেন। লেখালেখিটাও হাতের কাজ। যারা লেখালেখি করে খ্যাতিমান হন তাদেরও বলা হয়ে থাকে লেখার হাত ভালো। অফিসে কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রায়শই শুনতে হয়- একটু অপেক্ষা করুন, হাতের কাজটা সেরে নেই। সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তারা নাকি তাদের চেয়ারে কোটটা ঝুলিয়ে রেখে বাইরে গেলেও তাদের হাতের কাজ চলতে থাকে!

ব্যাচেলরদের ব্যঙ্গ করে বলা হয় তারা হাতের ওপর বাঁচে। তারা নাকি বাহুবলে চরিত্র ঠিক রাখে! কিন্ত নচিকেতার গানের কথা শুনলে কারো কারও মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। তার গানে আছে-যে মেয়েটা রোজ রাতে/ বদলায় হাতে হাতে / তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন/অন্তবিহীন পথে চলাই জীবন! বাংলা ছবির অসংখ্য গান আছে হাত নিয়ে। যেমন-ও দুটি হাত/চিরদিন থাক/হয়ে মোর গয়না! ভালোবাসার মনিহারে তুলনা হয় না!! অথবা ধরুন-হাতে হাত থাকবেনা তখন কে জানতো?

হাত কখনও কখনও ভয়ের আর ঘৃণার হতে পারে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী কিংবা সুরকার আলতাফ মাহমুদকে পাকিস্তানি হানাদেরদের হাতে যারা তুলে দিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ হত্যায় যাদের হাত ছিল, সেইসব ভয় আর ঘৃণার হাত যাদের, মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের শাস্তি হওয়া শুরু হয়েছে।

বাণিজ্যিক ধারার ভারতীয় (বোম্বে ফিল্ম) তুমুল আলোচিত শোলে ছবির ভিলেন গাব্বার সিং (আমজাদ খান) এর সেই ভয়ংকর উচ্চারণ আজো অনেকের মনে আছে-তোর হাত দুটো আমাকে দিয়ে দে ঠাকুর!(বলেই সে ঠাকুরের দুটো হাত বিশাল দা দিয়ে কেটে ফেলে) যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ভয়ঙ্কর হাতগুলো যদি এভাবে প্রকাশ্যে কাটা যেত!! যুদ্ধপরাধ ইস্যুতে/মানবতা মুছে ফেল টয়লেট টিস্যুতে!

তবে ভয়ঙ্কর এই সব হাত অথবা ষড়যন্ত্রে হাত থাকাটাকে মানুষ ঘৃণার চোখেই দেখে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় যাদের হাত ছিল তাদের মানুষ দেখেছে ঘৃণার চোখে, এদের অনেকেরই বিচার হয়েছে। দশট্রাক অস্ত্র মামলা নিয়ে এখনও আলোচনা শেষ হয়ে যায়নি। এই অস্ত্র আনার পেছনে সত্যি সত্যি নিজামী, তারেক আর খালেদার হাত ছিল কিনা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও মাথাতে ছিল কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা আছে, চলছে মামলাও!

সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা আর আওয়ামী লীগের জনসভায় (শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা) গ্রেনেড হামলায় যাদের হাত ছিল মানুষ তাদেরও রেখেছে ঘৃণার যাদুঘরে। ঠিক তেমনি যাদের বিনা বিচারে গুম করে ফেলা হচ্ছে, যাদেরকে হত্যা করে ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে মাঝ নদীতে, তাদের পেছনে যার বা যাদের হাত থাকুক, মানুষ তাদেরও রাখবে ঘৃণার যাদুঘরে। এসবের বিচারও একদিন হবে! এই বিচার হাত ফস্কাবে না! হাত ফস্কে চলে যেতে পারে অনেক কিছু। হাত ফস্কে চলে যেতে পারে বল, মিস হতে পারে ক্রিকেটীয় ক্যাচ, শুধু ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এইসব গুমের বিচার হাত ফস্কাবে না।

মানুষের হাত ধরে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। মিছিলের হাত তাই সভ্যতার সমান বয়সী! হুমায়ূন আজাদের কবিতায় আছে-গরীব মানুষের সব কিছু খারাপ। শুধু তাদের তখনই ভালো লাগে যখন তারা প্রতিবাদ করে। তবে রাজপথ কিংবা দেশ গড়ার মিছিলে কোনটা সিরাজউদ্দৌলার হাত আর কোনটা মীর জাফরের হাত সেটা চিনে নেয়াটা সবচেয়ে জরুরি।

 

হাত নিয়ে আসলে এতোসব কিছু আছে যা দিয়ে ডিকশনারির চেয়েও বড় আকারের বই লেখা সম্ভব। তবে আসল প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ আসলে কার হাত ধরে হাঁটে?

৭ মার্চের ভাষণে এদেশের রাজনীতির শ্রেষ্ঠ কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন লাখো জনতার উদ্দেশে হাত তুলে আঙুল উঁচিয়ে এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম বলেছিলেন তখন থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়েছিল। তিনি দুহাতে মানুষ আঁকড়ে ধরতে পেরেছিলেন।

এরপর বাংলাদেশ আসলে কার হাত ধরে হেঁটেছে? নাকি ক্রমশঃ বিভাজিত হয়েছে মানুষের হাত? নাকি সারাদেশের মানুষের কাছে ধীরে ধীরে যে কথাটি জনপ্রিয় হচ্ছে সেটাই সত্য? এদেশের প্রায় বত্রিশ কোটি হাত নিজেদের মত করে, একেবারেই নিজস্ব বিবেচনায়, নিজ ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে তুলছে বাংলাদেশটাকে । ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার হীন রাজনীতি আর হরতাল অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর ও মানুষ পুড়িয়ে মারার এই পশ্চাৎপদ রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে বত্রিশ কোটি হাত যেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কথারই প্রতিধ্বনি তুলছে-রাজার উপরে আর করবো না নির্ভর/ আমাদের ভাগ্যের আমরাই ঈশ্বর!

তবু কেন যেন এই মানুষের হাতকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলে পৃথিবী ভর। সাম্রাজ্যবাদ টিকে থাকে এই ষড়যন্ত্রের উপর ভর করে, মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় তারা বর্বর শাসন। নাজিম হিকমতের এই কবিতাটি আসলে খুঁজে ফিরছে মানুষের মৌলিক হাত একদিন যারা ছিনিয়ে আনবেই বিজয় । জানি না বিপ্লবের সেই মহান সময়ের হাত ধরে কে বেঁচে থাকে আর কে চলে যায় না ফেরার দেশে। 

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৩৯ Views

Comments (0)

  • - নাসরিন ইসলাম

    দোয়া করি আপনার ভালোবাসা মিলে যাবে। 

    • - টোকাই

      হাঁ হাঁ হাঁ । কবিতাটা আমি লিখছি বলে বিষয়বস্তুও যে আমার জীবনবোধের ভাবলেন কীভাবে ?

      ভালো লাগলো আপনার আন্তরিকতায় । উপরওয়ালা আপনার দোয়া কবুল করুক ।

       

      শুভেচ্ছা রইলো । ভালো থাকবেন ।

    - রব্বানী চৌধুরী

     চমৎকার কথামালায় মুগ্ধ। ভালো লাগলো।  শুভেচ্ছা জানবেন

    • - টোকাই

      ধন্যবাদ রব্বানী ভাই । ভালো থাকবেন ।

    - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    এতো প্রশ্ন করবেন নাতো প্রেমিকা ভয় পাবে emoticons

    • - টোকাই

      হাহাহা... ভয়ে তো আমি অস্থির । ধন্যবাদ মাইদুল ভাই । ভালো থাকবেন । শুভেচ্ছা রইলো ।