ঘড়ির কাঁটাটা মধ্যরাত পার করেছে কিছুক্ষণ আগেই,তবু রুদ্রের দেখা নেই।এদিকে রোদেলার অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত যেন কচ্ছপের বেগে যাচ্ছে।মনের ভেতর নস্টালজিয়া গুলোর দৌড়ঝাঁপ,চোখের স্মৃতিপটে আঁকছে সেই দিনগুলোকে।যখন পরস্পরের ভালবাসার আলিঙ্গনে দিন ফুরিয়ে যেত,তবুও দেখার স্বাদ ফুরাতো না। ফোনালাপে রাতগুলো কেটে যেত সকালে আবার দেখা হবার তিব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে।কখনও টি এস সি কখনও ছবিরহাট বা হাকিম চত্বর এভাবেই চলত দুজনের সারাটা দিন ।প্রায় প্রতিদিনই হলের গেট বন্ধের অন্তিম মুহূর্তে ছুটতে ছুটতে রোদেলা হলে আসা সেই দিনগুলো যেন দ্রুত হারিয়ে গেল।প্রথম যেদিন রুদ্রের সাথে পরিচয়,খুব একটা কথা হয়নি সেদিন কেবল চুপচাপ থেকে শুনেছিল একটি ভরাট কণ্ঠের কবিতা পাঠ।এভাবে কবিতা শুনতে শুনতে রোদেলা একটা সময় নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে ভরাট কণ্ঠের মাদকতায়।অজস্র কষ্টের রাত্রিগুলোর কথোপকথন পরস্পরকে ভালবাসায় বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে,শুরু হয় একসাথে পথচলা।ভালবাসার ছোঁয়ায় দিনগুলো বেশ ভালই কাটছিল।
এভাবেই শেষ হয় রুদ্রের গ্রাজুয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউণ্ডুলে জীবনটাও এখানেই শেষ।
পরিবার আর সামাজিক বাস্তবতায় শুরু হয় নতুন আর এক জীবন।যোগ দেয় একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে।ছয় মাসের মধ্যেই বিয়ে করে রোদেলাকে।বেশ সুখেই কাটে দুটি বছর। এদিকে রুদ্রও পদোন্নতি পায় আয়ও অনেক বাড়ে।কিন্তু রুদ্র হারায় আগের রূপ ।বরং নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় অভ্যস্ত হতে শুরু করে কর্পোরেট জীবনে ।শুরু হয় অফিস ও কর্পোরেট পার্টি যাওয়া।প্রথম দিকে রোদলাও সঙ্গী হত।কিন্তু প্রচণ্ড পশ্চিমা এ সংস্কৃতির সাথে অভ্যস্ত হতে না পারায় এক সময় সে পার্টিগুলোকে এড়ানো শুরু করে।কিছু দিন পরই একাকীত্বের গাঢ় ছোবল তাকে তীব্র ভাবে স্পর্শ করে।সে বুঝতে শুরু করে সামাজিক স্ট্যাটাসের প্রলুদ্ধকর চাপে একটা সময় ভালবাসার বর্ণিলতা ফ্যকাসে হয়ে যায়। তাই নিজেকে ব্যস্ত করতে রোদেলা ইন্টারনেট চ্যাট এ অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু "শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়",তাই এত প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেও রোদেলা আক্রান্ত হয় অচেনা এক অসুখে। যার নাম নিঃসঙ্গতা।অনেক সমৃদ্ধির মধ্যে থেকেও এক রাশ অপ্রাপ্তির বেদনা নিয়ে,এখনো ঘোরের ভেতর তাই খুঁজে বেড়ায়,সেই হারানো দিন ছবির হাট,হাকিম চত্বরে কাঁধে মাথা রেখে হারিয়ে যাওয়া,আর কিছু কবিতা।যেখানে বলা আছে,
শেষ পর্যন্ত সবাই আসলে একা
এই অগ্রদূত ভালবাসার ব্যস্ত লেভেলে,
যেখান জীবণ অগোচরেই বিক্রি করে
উচ্চাকাক্ষায় মানিয়ে নেয়া স্যোশাল স্ট্যাটাস,
আর এক দল শূন্যতার অদৃশ্য হাহাকার।
Comments (0)
চমৎকার...