মানুষের সব ইচ্ছাই যে পূরণ হইবে তাহা ঠিক নয় । তবে কিছু কিছু ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার কারনে খুব আক্ষেপ করিতে হয়। তেমনই আমার একটি আক্ষেপ হইলো, "কবিতা না লিখতে পারার আক্ষেপ।"
১৯৮২ ইং সালের দিকের কথা। ক্লাস এইটে পড়ি। বন্ধুবান্ধবীরা কবিতা টবিতা লিখে। সেইগুলো আবার আমাগো স্কুলের (বি.এ.এফ শাহীন স্কুল) দেয়ালিকা “দর্পনে” প্রকাশিত হয়। এইগুলো দেখিয়া আমারও কবিতা লিখার খায়েশ দিলে পয়দা হইল। একদিন ছুটির দিন (তখন রবিবারে ছুটি ছিল) বাসায় আসিয়া কবিতা লিখিতে শুরু করলাম।
“বাশ বাগানের বাশ,
করে ঠাস ঠাস”…………….(পরের লাইনগুলি আর মনে নাই)।
আরেকটি এরকম
“ আকাশ দিয়া উড়ে যায় পাখি
তারে কেমনে ধরে রাখি”……………।
-------আমার বাবা খুব রাগি টাইপের একজন বাবা। এসে বললেন, কি করিস?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া হাত থেকে খাতাটি টানিয়া লইয়া পড়া শুরু করলেন।
পড়ার পর কোন কথা না বলিয়া 'ঠাস ঠাস' করিয়া দুই গালে দুই চড় বসাইয়া দিলেন। চড়ের চুটে আমার খবর হইয়া গেল এবং কবিতা লিখার স্বাদ দিল থেকে উঠিয়া গেল।
তারপর অনেক দিন গেল। কবিতা লিখার স্বাদ আর মনে উদয় হয় নাই।
১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হবার পর আবার কবিতা লিখার স্বাদ দিলে আসিল। কলেজের ম্যাগাজিনে একটি কবিতা পাঠাইলাম। অমর একুশ সম্পর্কে। কবিতাটি ছাপা হইল না। দিলে বড় দু:খ হইল।
২০০৯ সাল। প্রথম আলো ব্লগে ব্লগিং করি। চামে চামে একদিন একটি কবিতা লিখিয়া ফেলিলাম।
প্রথমডেট।
বললে- ”আস”। ”
কোথায়” ? ”
এমন স্থানে, যেখানে আমি আর তুমি”,
গেলাম।
তুমিও এলে।
ভয় এবং ভালবাসার মাঝখানে অবস্থান করছিলাম।
সি.এন.জিতে চললাম, অজানার উদ্দেশ্যে--
মনে হচ্ছিল- আকাশের চাদঁ আজ আমার হাতের কাছে।
যেভাবে ইচ্ছে তাকে ছুয়ে দেখতে পারি-
তার হাত, গাল, চোখ, এবং মন।
বললাম- ”আরো কাছে বস ?”
বসলে।
হৃৎপিন্ডের স্পন্দন কি শুনতে পেলে ?
কোন কথা বলছিনা, কোন কথা আসছেনা মুখ দিয়ে,
এভাবেই যদি কাটিয়ে দিতে পারতাম অনন্ত-কাল।
অবশেষে হাত ধরলে।
এক অজানা শিহরন প্রবাহিত হলো প্রতি রোমকুপে।
এই যে ভালবাসার পরশ- আল্লাহর শ্রেষ্টতম নিয়ামত।
কেন পাইনি এতকাল এ প্রেমের ছোয়া ?
বলি- ” তোমাকে ভালবাসি, ভালবাসি এবং ভালবাসি”।
বিদায় নিলে।
চেয়ে রইলাম পথপানে ---------
হৃদয়ে শুরু হলো যন্ত্রনা,
স্পর্শের শিহরণে কাপছে শরীর-
দেহ আছে এখানে- মন চলে গেছে তোমার সাথে।
ভাবনা ভেঙ্গে ফিরে আসি বাস্তবতায়,
ভাবি- ”এরই নাম কি প্রেম ?”
---------------------------উক্ত কবিতা লিখার পর দুই চার জন ভাল ভাল মন্তব্যও করিল। কিন্তু আমার মনে খুত খুত থাকিয়াই গেল। নিশ্চয়ই এটি কোন কবিতার জাতেই পড়ে না।
অবশেষে একে একে ফাতেমা আবেদীন নাজলা, তাহমিদুর রহমানের “কবিতা কিভাবে লিখতে হয়” বিষয়ক কিছু লেখা পড়িয়া বুঝিলাম, কবিতা লিখা আমার দ্বারা হইবে না। এই আক্ষেপ নিয়া আজও বসিয়া বসিয়া ভাবি,
আহা, যদি কবিতা লিখিতে পারিতাম!!
Comments (5)
এই ধরনের ঘটনা উপরের লেভেলে অনেক ঘটে ... কিন্তু কেন জানি খুব খারাপ লাগলো লিখাটা পড়ে ... ধুর মনটাই খারাপ হয়ে গেল
চমৎকার। খুব সুন্দর লিখেছেন দাদা