Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সাইফুল ইসলাম

৮ বছর আগে

কবি রুমি 'র বই আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত

কবি ও সুফি দার্শনিক জালাল আদ-দ্বীন মুহাম্মদ রুমি ১২০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মার্কিন লেখক ব্র্যাড গুচ রুমির একটা জীবনীগ্রন্থ লেখার কাজ শুরুর পর তাঁর জন্মস্থান বর্তমান তাজিকিস্তানের ছোট্ট গ্রাম বক্স থেকে শুরু করে উজবেকিস্তানের সমরখন্দ ও বোখারা, ইরান থেকে শুরু করে সিরিয়া ও তুরস্ক চষে বেড়িয়েছেন। রুমির তরুণ বয়সের পড়াশোনার তীর্থ সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোতেও ঘুরে বেড়িয়েছেন ব্র্যাড। তাঁর শেষ গন্তব্য ছিল তুরস্কের কুনিয়া শহরে। জীবনের শেষভাগের প্রায় ৫০ বছর কাটানোর পর তুরস্কের এই শহরেই মারা যান রুমি। এখানে রুমির মাজারে তাঁর মৃত্যুদিবসে এখনো প্রতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর দরবেশদের এক মহোৎসব বসে রুমির স্মরণে। নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণের হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন রুমির এই স্মরণোৎসবে।


গজল এবং হামদ-নাত মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার পঙক্তি লেখেন রুমি। প্রায় দুই হাজার রুবাইয়্যাত লিখেছেন যা চার লাইনের বিশেষ রীতির কবিতা। রুমির অনন্য সৃষ্টি বিপুল আকারের ছয় খণ্ডের আধ্যাত্মিক মহাকাব্য মসনবী।

৮০০ বছর পর এখনো রুমির কবিতায়-গজলে সুরারোপ অব্যাহত আছে। রুমির রচনা আধুনিক কবিতা, গান এবং গল্প-উপন্যাস ও চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এখনো। ফেসবুকে রুমির নামে একের পর এক পেজ তৈরি হচ্ছে আর প্রতিদিনই সেখানে উঠছে নিত্যনতুন পোস্ট। ইউটিউব ও টুইটারে রুমির নামে প্রতিদিনই কোনো না কোনো পোস্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন রুমি এখনো এত বহুল চর্চিত, এমনকি পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতেও?

রুমি আনন্দ ও ভালোবাসার কবি। লেখক ব্র্যাড গুচ বলেন, ‘শামসের সঙ্গে বিচ্ছেদের মোকবিলা, ভালোবাসা, সৃষ্টির উৎস আর মৃত্যু নিয়ে ভাবনা থেকেই তাঁর কবিতা জন্ম নিয়েছে।একবার আমি দেখলাম গাড়ির একটা বাম্পার-স্টিকারে রুমির কবিতার লাইন লেখা।

অ্যালেন গিন্সবার্গের সঙ্গে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নারপোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যাক ক্যারোয়াক স্কুল অব ডিজএমবডিড পোয়েটিকস চালু করেন কবি অ্যান ওয়াল্ডমান। বর্তমানে সেখানেই কাব্যতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করা এই কবি বলেন, ‘রুমি আমাদের সময়ের খুবই ভাবনা-জাগানিয়া ও রহস্যময় কবি এবং ব্যক্তিত্ব। বিশেষত যখন আমরা সুফি ঐতিহ্য বুঝতে চাইছি, পরমানন্দ ও সাধনার প্রকৃতি এবং কবিতার শক্তি বুঝতে চাইছি।

আমেরিকার রুমি-রেনেসাঁয় উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হিসেবে যাকে বিশেষভাবেই চিহ্নিত করা যায়, যার অনুবাদকে ঘিরে নতুন করে মার্কিন মুল্লুকে ছড়িয়ে পড়েন রুমি, তিনি কোলম্যান বার্কস। তাঁর মতে, ‘এখনো রুমির কাব্যরাজত্ব বজায় থাকার কারণ তাঁর কল্পনার চমকপ্রদ সজীবতা। আমাদের উপলব্ধিতে আসা গভীর আকাঙ্ক্ষা এবং তাঁর গভীর রসবোধ, যা সব সময়ই প্রজ্ঞা মেশানো এক খেলায় মেশানো থাকে।

কবি রবার্ট ব্লাই ১৯৭৬ সালে এ জে. আরবারির করা রুমির একটা অনুবাদ বার্কসকে দিয়ে বলেন, ‘এই কবিতাগুলোকে খাঁচা থেকে মুক্ত করা দরকার।বার্কস এগুলোকে জড়সড় বিদ্যায়তনিক ভাষা থেকে বদলে আমেরিকান-স্টাইলের মুক্ত পঙক্তিতে রূপান্তর ঘটান। তখন থেকে ৩৩ বছরে বার্কস অনূদিত রুমির ২২ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে আছে দ্য এসেনশিয়াল রুমি, এ ইয়ার উইথ রুমি, রুমি: দ্য বিগ রেড বুক, স্পিরিচুয়াল ডায়েরি অব রুমিস ফাদার এবং দ্য ড্রাউনড বুক। সবগুলোই হারপার ওয়ান থেকে প্রকাশিত। বিশ্বজুড়ে বইগুলোর ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে এবং ২৩টি ভাষায় এসবের অনুবাদ হয়েছে।   

রুমির অনুবাদক কোলম্যান বার্কস বলেন, ‘আমি অনুভব করি যে ঠিক এখনই একটা শক্তিশালী বৈশ্বিক আন্দোলন চলছে, একটা চিন্তাপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, যা ধর্মের তৈরি করা বিভেদের দেয়াল সরিয়ে ফেলতে চায়, যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থামাতে চায়। বিশ্বাস করা হয় যে, ১২৭৩ সালে রুমির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সব ধর্মের মানুষ এসেছিলেন। কেননা তাঁরা মনে করেছেন যে, 'আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, তিনি আমাদের বিশ্বাসকে গভীর করেছেন।' এটাই এখনো তাঁর আবেদনের একটা শক্তিশালী কারণ।

রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মধ্যযুগের সুফি দর্শনের বিশেষজ্ঞ এবং রুমির অনুবাদক জাভিদ মুজাদ্দেদি বলেন, ‘পারস্যের কবিদের মধ্যে রুমি একজন সফল নিরীক্ষণধর্মী স্রষ্টা এবং সুফি পণ্ডিত। সমৃদ্ধ রহস্যবাদিতা এবং কাব্যরূপের শক্তিশালী আত্তীকরণের এই অনন্য সমন্বয়ই এখনো রুমির জনপ্রিয়তার অন্যতম চাবিকাঠি।

জাভিদ মুজাদ্দেদি মনে করেন রুমির কাব্যে চারটি প্রধান সৃজনশীল বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, পাঠককে সরাসরি দ্বিতীয় পুরুষে সম্বোধনের বিরলতা, যা এখনকার পাঠকেরাও দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাদানের প্রতি তাঁর আকাঙ্ক্ষা। অনুপ্রেরণাদায়ী সাহিত্যের পাঠকেরা এ কারণে রুমির কবিতায় প্রবলভাবে আকৃষ্ট। তৃতীয়ত, তাঁর কাব্যে প্রাত্যহিকতার নানান রূপকল্পের প্রবল উপস্থিতি। আর সবশেষে, রুমির ভালোবাসার গজলগুলোতে মিলনের উপলব্ধির একটা আশাবাদী আখ্যানকে হাজির করা প্রথাগতভাবে যেখানে মিলনের অসম্ভবপরতাকেই হাজির করা হয় এবং প্রেমাস্পদের কাছ থেকে পাওয়া নিষ্ঠুর প্রতিদানকেই সামনে নিয়ে আসা হয়, সেখানে রুমি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে মিলনকে হাজির করেছেন, উদযাপন করেছেন।

ফারসি ভাষায় রুমির রচনা এতটাই প্রভাবশালী যে, উসমানীয় আমলজুড়ে পারস্যে বহু বিদ্যায়তন গড়ে উঠেছিল শুধু রুমি অধ্যয়নের জন্যই। চরম রহস্যবাদিতা ও কাব্যময়তায় সমৃদ্ধ রুমির ২৬ হাজার পঙক্তির মহাকাব্য মসনবি কোনো একক লেখকের লেখা দীর্ঘতম সৃষ্টি। রুমি এখনো দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হচ্ছেন। রুমির জীবনের নানা আখ্যান নিয়ে নতুন নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। একের পর এক রুমির রচনার টীকা-ভাষ্য প্রকাশিত হচ্ছে। রুমির কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে দৈনন্দিন জীবনেও কবিতার কী বিপুল প্রভাব থাকতে পারে, প্রাত্যহিকতার মধ্যেও কীভাবে জড়িয়ে থাকে।৮০০ বছর আগেকার পারস্যের এই মরমি কবি ও সুফি দরবেশ কীভাবে এবং কেন এখন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পঠিত কবিতে পরিণত হয়েছেন, সে সম্পর্কে জানিয়েছে বিবিসি।

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৩৩ Views

Comments (0)

  • - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    সুন্দর লিখেছেন!

    • - আবু খায়ের আনিছ

      ধন্যবাদ

    - মুহম্মদ ফরহাদ ইমরান

    দারুণ emoticons

    • - আবু খায়ের আনিছ

      ধন্যবাদ

    - মাসুম বাদল

    খুব খুব ভাললাগা জানালাম... 

    emoticonsemoticonsemoticons

    • - আবু খায়ের আনিছ

      ধন্যবাদ

    Load more comments...