প্রয়াত কথা সাহিত্যিক প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এটা আমরা সকলেই জানি। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তার দীপ্ত বিচরন ছিল। তিনি কিছু কবিতাও লিখেছিলেন। আমাদের অনেকের কাছেই কবি হুমায়ূন আহমেদ খুব অচেনা। আমি সে সব যতবার পড়ি ততবার অবাক হই। এই মানুষটি যদি শুধু কবিতাও লিখতেন তবু আমরা বহু বছর তাকে মনে রাখতাম। তার লেখা অল্প কিছু কবিতার লাইন যা পাঠকের মুখে মুখে ছিল অনেকদিন।
আসুন তার লেখা কিছু কবিতা পড়ি
তার লেখা “কে কথা কয়"বইয়ের শুরুতে ছিল এই লাইনগুলি।
জলে কার ছায়া পড়ে
কার ছায়া জলে?
সেই ছায়া ঘুরে ফিরে
কার কথা বলে?
কে ছিল সেই শিশু
কি তাহার নাম?
কেন সে ছায়ারে তার
করিছে প্রণাম?
শঙ্খনীল কারাগার এ আছে চমৎকার দুটো লাইন,
দিতে পারো একশ’ ফানুস এনে
আজন্ম সলজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস ওড়াই৷
১। কাচপোকা
একটা ঝকঝকে রঙিন কাচপোকা
হাঁটতে হাঁটতে এক ঝলক রোদের মধ্যে পড়ে গেল।
ঝিকমিকিয়ে উঠল তার নকশাকাটা লাল নীল সবুজ শরীর।
বিরক্ত হয়ে বলল,রোদ কেন?
আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকার
আমার ষোলটা পায়ে একটা ভারি শরীর বয়ে নিয়ে যাচ্ছি-
অন্ধকার দেখব বলে।
আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকার
একটা সময়ে এসে রোদ নিভে গেল
বাদুড়ে ডানায় ভর করে নামল আঁধার।
কি গাঢ়,পিচ্ছিল থকথকে অন্ধকার !
কাচপোকার ষোলটা ক্লান্ত পা বার বার
সেই পিচ্ছিল আঠালো অন্ধকারে ডেবে যাচ্ছিল।
তার খুব কষ্ট হচ্ছিল হাঁটতে
তবু সে হাঁটছে-
তাকে যেতে হবে আরও গভীর অন্ধকারে।
যে অন্ধকার-আলোর জন্মদাত্রী।
২। অশ্রু
আমার বন্ধুর বিয়ে
উপহার বগলে নিয়ে
আমি আর আতাহার,
মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলাম
দু’সেকেন্ড থামলাম।।
টিপটিপ ঝিপঝিপ
বৃষ্টি কি পড়ছে?
আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে?
আমি আর আতাহার
বলুন কি করি আর?
উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রু
সারা গায়ে মাখলাম।।
হি হি করে হাসলাম।।
৩। সংসার
শোন মিলি।
দুঃখ তার বিষমাখা তীরে তোকে
বিঁধে বারংবার।
তবুও নিশ্চিত জানি,একদিন হবে তোর
সোনার সংসার ।।
উঠোনে পড়বে এসে এক ফালি রোদ
তার পাশে শিশু গুটিকয়
তাহাদের ধুলোমাখা হাতে - ধরা দেবে
পৃথিবীর সকল বিস্ময়।
৪। কব্বর
তিনি শায়িত ছিলেন গাঢ় কব্বরে
যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বেঁধে দেয়া,
গভীরতা নয়।
কব্বরে শুয়ে তাঁর হাত কাঁপে পা কাঁপে
গভীর বিস্ময়বোধ হয়।
মনে জাগে নানা সংশয়।
মৃত্যু তো এসে গেছে, শুয়ে আছে পাশে
তবু কেন কাটে না এ বেহুদা সংশয়?
৫। গৃহত্যাগী জোছনা
প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?
বালিকা ভুলানো জোছনা নয়।
যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে-
ও মাগো,কি সুন্দর চাঁদ।
নব দম্পতির জোছনাও নয়।
যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন-
দেখো দেখো চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর।
কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়।
যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে।
কবির জোছনা নয়।যে জোছনা দেখে কবি বলবেন-
কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ।
আমি সিদ্ধার্থের মত
গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে-
ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।
প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব-
পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে।
চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে-আয় আয় আয়।
৬। তিনি
এক জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ছিলেন নিজ মনে
আপন ভুবনে।
জরার কারণে তিনি পুরোপুরি বৃক্ষ এক।
বাতাসে বৃক্ষের পাতা কাঁপে
তাঁর কাঁপে হাতের আঙ্গুল।
বৃদ্ধের সহযাত্রী জবুথবু-
পা নেই,শুধু পায়ের স্মৃতি পড়ে আছে।
সেই স্মৃতি ঢাকা থাকে খয়েরি চাদরে।
জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ভাবে চাদরের রঙটা নীল হলে ভাল ছিল।
স্মৃতির রং সব সময় নীল।
উপরোক্ত কবিতাগুলো ছাড়া অন্য কোন কবিতার কথা কেউ জেনে থাকলে প্লীজ মন্তব্যের ঘরে জানাবেন। উপরে পাওয়া সকল কবিতা আমি নেটে দেখেছি। এর বাইরে আর কিছু চোখে পড়েনি আমার। ধন্যবাদ।
Comments (17)
সুন্দর গানটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
সুন্দর মনের মানুষদের সংস্পর্শে আসতে পেরেও নিজেকে খুব গর্বিত লাগছে।
শুভেচ্ছা রইলো।
নক্ষত্র ব্লগে স্বাগতম।
আশা করছি আমরা এক সৃজনশীল পথে হাটতে পারবো।
ব্লগিং হোক আনন্দের। শিক্ষণীয়।
নক্ষত্র ব্লগ বাংলা ব্লগ জগতে সর্বাধুনিক সুবিধা নিয়ে অনলাইন লেখকদের অন্য নতুন প্লাটফর্ম হিসেবে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখবে এ কামনা করি।
ইনশাল্লাহ। :)
আমাদের এই যাত্রা হবে সৃজনশীল ।
শুধু হাসলে চলবে :D
ধন্যবাদ, আমার লেখাটি পড়ার জন্যে। :)