প্রযুক্তির এই যুগে আমরা মোবাইল ছাড়া অচল বললে বেশি বলা হবে না। কাজের প্রয়োজনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য আপনার মোবাইল ফোনটি খুবই জরুরি। এই মোবাইলের সঠিক ব্যবহার কি করছি সে বিষয়ে হয়তো অনেকেই চিন্তা করি না। প্রয়োজনের বাইরেও হয়তো মোবাইলে কথা বলছি আমরা। আর এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি নানাভাবে। সেইসাথে মোবাইলে কথা বলার জন্য জানা থাকতে হবে কিছু আদব-কায়দা। মোবাইল ফোনে কথা বলার আদ্যোপান্ত নিয়ে আমাদের এবারের মূল ফিচার। লিখেছেন খালেদ আহমেদ
আমাদের চারপাশে এমন কিছু মোবাইল ব্যবহারকারী আছে, যারা তাদের মোবাইল নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে পৃথিবীকে একদম ভুলে যায়। ভুলে যায় তাদের আশপাশে থাকা মানুষগুলোকে, যারা তার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত বোধ করছে। যা কখনোই শোভনীয় নয়। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বে প্রায় প্রতিদিন হাজারের অধিক মোবাইল ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশও কিন্তু এ থেকে পিছিয়ে নেই। ভাবতেই অবাক লাগে যে সারা বিশ্বজুড়ে কতভাবেই না মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। সকলের সামনে দামি ও স্মার্ট মোবাইল ফোন বের করাটা এখন আর বড়লোকি দেখানোর মতো কোনো বিষয় নয়। সর্বত্র নান্দনিক ডিজাইনের এই কথা বলার যন্ত্রটি এখন কার্যত সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। কিছু ব্যবহারকারী রয়েছে, মোবাইল ছাড়া যাদের জীবনটাই যেন বৃথা। মোবাইল ফোনটি তাদের সাথে সব সময়ই থাকে। আজকাল বাসে বা ট্রেনে উঠলে দেখা যায় অনেকেই মোবাইলে কথা বলছে। আর তাদের রিংটোন শুনলে বিরক্ত না হয়ে থাকা যায় না। অনেকেই মুরগির ডাক থেকে শুরু করে শিশুর কান্নাসহ নানা অরুচিপূর্ণ রিংটোন তাদের মোবাইলে সেট করেন, যা তার ব্যক্তিত্ব হিসেবে যুতসই নয়। অনেক সময় এমন কিছু মানুষ দেখা যায়, যারা সব কিছু ভুলে কথা বলাতে এতটাই মশগুল থাকেন। এতে তিনি যে আশপাশের মানুষের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করছেন সেদিকে খেয়াল রাখেন না। এ ধরনের নির্বোধকে কেউ ভালো চোখে দেখে না। যদিও নিয়ম রয়েছে ব্যাংক, সরকারি অফিস, কনসার্ট এবং আরও কিছু জায়গায় মোবাইল ব্যবহার বন্ধ রাখা। কিন্তু এগুলোর মানার চাইতে, না মানাটাই যেন এখন নিয়মে পরিণত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন থেকে যে তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয় তা মানুষের দেহের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদেরকে। উন্নত দেশগুলোতে নিয়ম রয়েছে শিশুদেরকে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে লক্ষ্য হিসেবে দেখানো যাবে না। আমাদের দেশে এমন কোনো নিয়ম তো নেই, বরং শিশুদেরকেই বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিতর্কিত ব্যাপার থেকে সবার দূরে থাকতে হবে। যাই হোক শিশুরা যেন অধিক সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলে বা সময় কাটায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। এ ছাড়া প্রায়ই দেখা যায় গাড়ি চালকেরা মোবাইলে কথা বলছে। দেশে কিন্তু আইন রয়েছে গাড়ি চালাবার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পর্কে। প্রযুক্তির যেকোনো আবিষ্কারের মতো মোবাইল ফোনের খারাপ এবং ভালো দুটি দিকই বর্তমান। জরুরি মুহূর্তে একটা মোবাইল ফোন আপনার জীবন-মরণ ঠিক করে দিতে পারে। যেকোনো সময় যেকোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ ঘটাতে সাহায্য করে সেলফোন, যা বিস্ময়কর। আবার অবৈধ কাজও হচ্ছে এই মোবাইল ফোন দিয়ে। যা খুবই দুঃখজনক।
মোবাইলের ক্ষতিকারক দিক
আমরা মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলি। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের প্রিয় মোবাইলটি আমাদের কীভাবে ক্ষতি করছে। কিছু নিয়ম মেনে চললে কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারি। কোনো কিছুর দ্বারা ক্ষতি হলে আপনি সহজে বুঝতে পারেন এবং তার প্রতিকার করে থাকেন। কিন্তু যে ক্ষতি দেখা যায় না প্রাথমিক ভাবে বোঝা যায় না কিন্তু আপনার ক্ষতি করে যাচ্ছে কিন্তু আপনি টের পাচ্ছেন না যাকে বলে সাইলেন্ট কিলার। মোবাইলের রেডিয়েশন খুবই ক্ষতিকারক। মোবাইল দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট কথা বলার পর দেখবেন আপনার মাথা ঝিম ঝিম করছে। অস্থিরতা বেড়ে গেছে। একটানা ১ ঘণ্টা বা তার অধিক কথা বললে তখন দেখবেন আপনার মাথাব্যথা করছে। বড়দের তুলনায় শিশুদের বেশি ক্ষতি হয়। তাই শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখুন। কথা বলতে বলতে এক সময় ব্রেইন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে এদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি থাকে। রেডিয়েশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়—
মোবাইল কখনোই বুক পকেটে রাখবেন না।
কথা বলার সময় এক কানে ধরে কথা বলবেন না ।
কথা বলার সময় দুই কান ব্যবহার করুন।
ব্যাটারির চার্জ কমে গেলে কথা না বলাই ভালো। কারণ তখন রেডিয়েশনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
প্রয়োজনে হেডফোন ব্যবহার করুন।
ঘুমানোর সময় মোবাইল সাথে নিয়ে ঘুমাবেন না।
ভালো ব্র্যান্ডের মোবাইল ব্যবহার করুন। কারণ চাইনিজ মোবাইলে রেডিয়েশন বেশি হয়।
একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
এমনকি প্যান্টের পকেটে মোবাইল রাখাও নিরাপদ নয়। কোমরে বা হাতে মোবাইল রাখুন।
সময়েরর সাথে সাথে সেলফোন প্রযুক্তিটির উন্নয়ন ঘটছে। আর তাই এর ব্যবহারকারীর মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পিতামাতা এবং শিক্ষকদের উচিত হবে শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরামর্শ শিশু এবং কিশোরদের দেওয়ার জন্য। সেইসাথে মোবাইলে কথা বলার আদব-কায়দাও জেনে নেওয়া উচিত। আসুন, আমরা মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে আরও যত্নবান হই।
টিপস
মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মাথা মোবাইল থেকে দূরে থাকে। যদিও এটাও ক্ষতিকর কিন্তু ঠিক ততটা নয় মাথার সামনে মোবাইল ধরলে যতটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে তার থেকে অনেক কম।
সম্ভব হলে ইয়ারবাডস ব্যবহার করুন। এতে মূলত আপনার মাথাকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
গাড়ি, ট্রেন, বিমানে মোবাইলের ব্যবহার যতটা সম্ভব কম রাখুন। মোবাইল ফোন লোহা নির্মিত জায়গায় বেশি পাওয়ার ইউজ করে। আর অনেক বেশি রেডিয়েশন ছড়ায়।
যখন আপনি ঘরে থাকবেন তখন মোবাইলের পরিবর্তে ল্যান্ডলাইন ব্যবহারের চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন কর্ডলেস ল্যান্ড ফোনগুলো কিন্তু মোবাইল থেকে কম রেডিয়েশন ছড়ায় না। তাই কর্ডযুক্ত ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করুন।
আপনার মোবাইলের জন্য একটা কাভার কিনুন যেটা ফোনের রেডিয়েশন ছড়ানোকে কিছুটা হলেও রোধ করবে।
ভিটামিন 'সি' আর 'ই' সমৃদ্ধ খাবার খান যেগুলো আপনার দেহের কোষগুলোকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। কাঁচা মরিচ, পেয়ারা, পেঁপে, কমলা লেবু, স্ট্রবেরি প্রভৃতি খান। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আর বাদাম, রান্না করা শাক প্রভৃতি খান এতে ভিটামিন 'ই' আছে।
মোবাইলে কথা বলার থেকে ম্যাসেজে কথা বলুন। এতে অন্তত মোবাইলটা আপনার মাথার কাছ থেকে দূরে থাকবে। ফলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা কিছুটা হলেও কমবে ।