Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ধ্রুব তারা

৯ বছর আগে

ওং কার-ওয়াইয়ের মাস্টার কামরায়


আমার সিনেমা বানানোর প্রতিটা ধাপেই সঙ্গীতের উপর্যুপরি ব্যবহার ঘটে থাকে। স্বভাবতই,এডিটিংয়ের টেবিলে আমি গানের ডালি নিয়ে বসি। সমকালীন ছায়াচিত্রের আদুর গায়ে পুরোনো আমলের সাঙ্গীতিক উর্দি চাপিয়ে দিতে আমার ফাইন লাগে! কেননা,সঙ্গীত আমার কাছে রামধনুর সাত রঙের সুরবাহার। সঙ্গীত হলো প্রাকৃতিক ফিল্টার যা মননের সর্বত্র ভিন্ন রঙ্গের (আবেগের) আভা ছড়ায়। আমি দেখেছি, বিগত আমলের মিউজিক কে হাল আমলের সিনেমায় যথাপোযুক্তভাবে ব্যবহার করলে ন্যারেটিভে তা কিছুটা দ্ব্যর্থকতা/খানিক্টা দুরূহতার ছায়া ফেলে বৈকি! আমি শুট্যিং-সেটেও সঙ্গীত ব্যবহার করে থাকি তবে সেটি যতটা না নির্মাণ কর্মীদের উজ্জীবিত করতে তার চেয়ে অধিক কাজের রিদম নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে; যেমন, সিনেমাটোগ্রাফারকে কোন দৃশ্যে ক্যামেরার কাংখিত চলনের জন্য কেমনতর স্পিডের শট চাই তা ব্যাখ্যার নিমিত্তে হাজার শব্দ ব্যয়ের চেয়ে এক টুকরা মিউজিককে বেশি কার্যকরী বলে মনে হয় আমার।   পায়ে পায়ে রচিত হোক তোমার নিজের ভাষা   টেকনিক্যাল বিষয়-আশয় নিয়া আমার অবসেশন বরাবর কম। আমার হাতে ক্যামেরা মনো-ভাব-জগতের অনুবাদযন্ত্র বৈ বিশেষ কিছু নয়। আজতক আমি যখনি পূর্ব নির্ধারিত কোন দৃশ্য শ্যুট করতে সেটে এসে দাঁড়াই প্রতিবারই আমি শুরু করি ‘ফ্রেম’ থেকে। কারণ আমাকে জানতে হবে/হয় কোন্‌ সীমিত বা খালি জায়গায় দৃশ্যটি ফুলে-ফলে বিকশিত হবে। একবার বিষয়টা মাথার মধ্যে গেঁথে গেলে পয়লা দফায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কে কোথায় পজিশন নিবেন সেই ব্লকিং গুলি ঠিক করে ফেলি। এরপর প্রধান চিত্রগ্রাহক ক্রিস্টোফার ডয়েলকে আমার চাহিদাটা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেই…তোমার জানার কথা,আমরা একসাথে এত কাম করছি যে এখন আর বেশি কথা খরচ করতে হয় না। ইশারাই কাফি। আমি অ্যাঙ্গেলটা ঠিকঠাক করে দিলে সে নিজেই ফ্রেমটা গুছায় ফেলে এবং দশটা টেক নিলে নয়টাই আমার মন-পছন্দ হয়। আমাদের বোঝাপড়া টা দারুণ যেমন ধরো আমি বললাম ‘ক্লোজাপ’…ব্যস এটুকুই; ডয়েল কিন্তুক ঠিকই জানে ক্লোজাপ বলতে আমি কতখানি ক্লোজ বুঝাইছি।

শ্যুটিংয়ে আমি সবসময় একটা রুল ফলো করি আর সেটা হলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেক নেওয়া যাবে না,অপ্রয়োজনে শটের কেরদানি করা যাবে না! তবে হ্যাঁ, এইটা অবশ্যই নির্ভর করে সিনের/শটের দাবির উপর। অধিকাংশ সময়ে একটা দৃশ্যকে সর্বোচ্চ একটা উপায়েই সবচেয়ে শান্ত অথচ উত্তেজিত ঢংয়ে শ্যুট করার রাস্তা খোলা থেকে। পরিস্থিতির কোপে এই কথার হেরফের যে হয় না তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে আসন্ন দৃশ্যটি যদি সিনেমার ধারা বর্ণনা অনুযায়ী ক্রান্তিকালীন পটে এক ঘটনা থেকে অন্য ঘটনায় উত্তরণের মধ্যবর্তী কোন দৃশ্য হয় তখন আমি ঐ দৃশ্যটা একাধিক মাত্রায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গলে থেকে শ্যুট করে থাকি। আর এডিটিং ল্যাবে বসে কেশদাম উৎপাটন করতে আমার ভাল লাগে না। এই দৃশ্যগুলি গল্পের বাঁক বদলের ইশারা ভঙ্গি করে। আমাকে মনে রাখতে হয় ঐ দৃশ্যটা আমাকে বলে দিবে সিনেমার ঘটনাক্রমে একাধিক চরিত্রের মধ্যে কাকে মেজর করে তুলতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, শট নেওয়ার সময় ক্যামেরা কই বসাবেন…মাথার উপরে না হাঁটুর নিচে! সন্তোষজনক জবাব হলো এর জন্য একটি ব্যাকরণ আছে…পরক্ষণে বলি আমি পরীক্ষণে বিশ্বাসী। “কেন? কি কারণে ক্যামেরাটা আমাকে এইখানেই খাড়া করতে হবে! অন্যখানে বসালে ক্ষতিটা কিসের?” সিনেমাবাজ মাত্রই এই প্রশ্ন করার (বদ)অভ্যাস থাকতে হবে। এটা করার পশ্চাতে লজিকটা অন্য কারো মাথায় না প্রবেশিলে কোন ব্যাপার না,কারিগর নিজে উপলব্ধি করতে পারলেই হবে। মনে মনে জানবেন – কবিতা সিনেমার বোন। মোশন পিকচার আর কবিতা সমমনোভাবাপন্ন প্রতিভাস। আমি এটা সত্য বলে জ্ঞান করি। কথকঠাকুর মানে কবি সবসময় শব্দ নিয়ে পারম্যুটেশন-কম্বিনেশনের খেলা করেন কখনোবা ছন্দমিলের জন্যে,কখনো স্বর ঐক্যের জন্য আবার কখনোবা অর্থের খাতিরে,এই তালিকা অচিরেই শেষ হবার নয়। একই ভাষা এস্তেমাল করে প্রত্যেকেই যার যার মত করে পৃথক ভাষা/স্বর সৃজন করে থাকেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত,সেই ভাষাটাকে ভাববাহী হয়ে উঠতে হয়,দুটি মানুষের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে পারতে হয়। আমার কথাগুলো বিশ্লেষণাত্মক শোনালেও অস্বীকার করার উপায় নাই।   সেটে বসে নেয়া আমার সিদ্ধান্তগুলো সাহজিক উপজ্ঞাজাত,মানে ইংরেজিতে আপনারা যেটাকে ইন্সটিঙ্কটিভ বলেন। অবিমিশ্রভাবে আমি বুঝতে পারি কোন সিদ্ধান্তটা সৎ এবং কোনটারর লাইন ঠিক নাই। যেভাবেই বলেন না কেন সি-নে-মা বিষয়টা শব্দঘটিত বচন দিয়া যুৎমত বিশ্লেষণ করে উঠা যায় না বরং একটু কঠিন আছে! ব্যাপক অর্থে এইটা খাদ্যের রসনা খালি মুখে বলার বিলাসিতার মতন। যখন কোন কারির সোয়াদ আপনার মুখে রসকেলি করছে তখন এক কোটি মুদ্রা দিলেও অপরের জন্যে সেই অনুভূতির বর্ণনা চিত্রণ করা সম্ভব হয় না। এটা এক ভাষাতীত ফিলিংস,নির্বস্তুক বা ভাবমূলকও বলতে পারেন। ছায়াছবির বেলায়ও এটা শুদ্ধ। এবং প্রকৃতপক্ষে আমার কাজের রীতি/ভঙ্গি শুরুর রাতগুলিতে যেমন ছিল আজও তেমনই আছে…খুব একটা বিকার বা গুণান্তর ঘটে নাই। বিষয়টা খুবই যা তা,কেননা আমি মনে করি এভ্যুলশন না ঘটা টা নির্মাতার জন্য হিতকর নয়। কিন্তু, নিয়তির নির্মম পরিহাস আমি এইভাবে ছাড়া অন্য কোনভাবে সিনেমা করতে জানি না। আমি সবসময় চেয়েছি মহামতি হিচককের ন্যায় শট নেওয়ার আগে সেটে ঢুকে যাবতীয় সিদ্ধান্ত দিবো, হুকুম তামিল করাবো। কেন যেন আমি এভাবে কাজ করাটা পছন্দ করতে পারি না,বুঝি না! লাইক করতে পারলে আর এত কমেন্ট দিতে হইতো না।

আর একটা কথা : একজন নির্মাতা হয়ে উঠতে চাইলে আপনাকে সৎ হতে হবে। জানবেন অন্য কারো সাথে নয়,সৎ থাকতে হবে নিজের সাথে। আপনার মগজে জানা থাকতে হবে কেন আপনি ফিল্ম করতে চান;কোন বিভ্রান্তি ঘটার মূহুর্ত থেকে আপনার জানা থাকা চাই এটি কেন ঘটছে এবং এর জন্য দায়িত্বশীল অন্য কেউ নয় আপনি নিজে। সিনেমা কোন ব্লেম গেম নয়।   সিনেমাসমূহ : এজ টিয়ারস্‌ গো বাই (১৯৮৮), ডেইজ অভ বিয়িং ওয়াইল্ড (১৯৯০), চুংকিং এক্সপ্রেস (১৯৯৪), অ্যাশেজ অভ টাইম (১৯৯৪), ফলেন এঞ্জেলস্‌ (১৯৯৫), দ্য বুয়েন্স আয়ার্স অ্যাফেয়ার (উর্ফে হ্যাপী টুগেদার) (১৯৯৭), ইন দ্য মুড ফর লাভ (২০০০), ২০৪৬ (২০০৪), মাই ব্লুবেরি নাইট (২০০৭), দ্য গ্রান্ডমাস্টার (২০১২,পোস্ট প্রোডাকশন)   *লরেন্তঁ তিরার্দ রচিত মুভিমেকার্স মাস্টার ক্লাস/প্রাইভেট লেসনস্‌ ফ্রম দ্য ওর্য়ল্ড ফোরমোস্ট ডিরেক্টরস (২০০২,ফেবার অ্যান্ড ফেবার,লন্ডন) থেকে সাক্ষাৎকার টি নেওয়া হয়েছে।   ‘প্রথম প্রকাশ : ম্যাজিক লন্ঠন,২য় বর্ষ ২য় সংখ্যা,জানুয়ারি ২০১৩,মাঘ ১৪১৯।‘
০ Likes ০ Comments ০ Share ৫০৯ Views

Comments (0)

  • - বিষ পিঁপড়ে / <u>তাইবুল ইসলাম</u>

    আরো কিছু চাইছিলাম আমি

    ধন্যবাদ নেবেন