Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সাইফুল ইসলাম

৯ বছর আগে

একদিন যখন বড় হবি, এতই জনপ্রিয় হবি যে সারাবিশ্বের মানুষ তোকে এক নামে চিনবে



Shakib Al Hasan : Pursuing Greatness
Writer: Adam Burnett, Cricket Journalist, Cricket Australia

"দাদা আমায় গল্প শোনাতেন। বলতেন, "একদিন যখন বড় হবি, এতই জনপ্রিয় হবি যে সারাবিশ্বের মানুষ তোকে এক নামে চিনবে। মাগুরায় ফিরবি না? মানুষ দাঁড়িয়ে হাততালি দিবে তোর জন্য!""

দাদার কথা এখন হয়তো স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু, দাদা তো কথাটা ২৭ বছর বয়সী সাকিবকে বলেননি। বলেছিলেন ৮ বছর বয়সী ছোট্ট ফয়সালকে। প্রবীণরা বোধহয় এমনই দূরদর্শী হয়ে থাকেন।

এখন সাকিব, এই সাতাশে যখন মাগুরায় ফেরেন, ঠিক প্রমাণ করেন দাদার কথাকে। কী না হয় সাকিব ওই ছোট্ট মফস্বলে পৌঁছুলে। তারকা-শব্দটির সংজ্ঞাকে তিনি অন্য এক ঈর্ষা জাগানিয়া পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ২০১২ সালে যখন বিয়ে করেন তিনি, অনেকগুলো জাতীয় টেলিভিশন সেটা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। অনুজ খেলোয়াড়রা খুব আনন্দের সাথেই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। সাকিব নিজেই স্বীকার করেছেন, বড় কোন ঘটনা না ঘটিয়ে অনেকদিন ঢাকার রাস্তায় হাঁটেননি তিনি।

চমকটা এখনও রয়ে গেছে, কারণ সাকিব বিশ্বব্যাপী শিরোনামের স্ক্রলে না এসেও যা করেছেন, তা অনেকেই জানে না। এই মানুষটা, স্যার ইয়ান বোথাম আর ইমরান খানের পাশে বসে আছেন। একই ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট আর হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। তারপরও আমরা বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করি ক্রিকেটের বামন হিসেবে।

এই সপ্তাহে আগেরটার মতই চমৎকার কিছু একটা অর্জন করেছেন তিনি। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে একই সাথে তিন ফরম্যাটে একটা ভূমিকায় এক নম্বর হয়ে। প্রিয় পাঠক, বলুন তো ভূমিকাটি কী হতে পারে? হ্যাঁ, অলরাউন্ডার। যা দিয়েছে রেকর্ডটিকে নতুন এক পূর্ণতা।

কিন্তু সাকিব আল হাসানের গল্পটা রেকর্ড কিংবা র‍্যাংকিং ছাড়িয়ে অনেক দূরে।

বিগ ব্যাশ চারে রেনেগেডসের হয়ে খেলছেন। ১৩ রান দিয়ে চার উইকেটের অসাধারণ স্পেলে জিতেছেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কার। তবুও, লাখো মানুষের মেলবোর্ন শহরে তুলনামূলক অপরিচিত তিনি।

কিন্তু নিজ দেশে পরিবেশ একেবারেই আলাদা। বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশে ১৬ কোটি মানুষের মাঝে সবচাইতে বিখ্যাত তিনি।

ঢাকা, সাকিবের নিজ দেশের রাজধানী। দেড়কোটি মানুষের এই শহরটির আকার সিডনির মাত্র ৭ শতাংশ। সেই শহরের রাস্তায় হাঁটতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে সাকিবের তড়িৎ উত্তর, "না না! পারবো না!"

"আমি শপিং মলে যাই না ঢাকায় - আসলে যেতে পারিনা। কিছু কিছু রেস্টুরেন্টে যাই, কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকটিতেই। বাইরে বেশি বেরোই না আমি।"

সরকারি ব্যাংকের কর্মজীবি বাবার সন্তান সাকিব জীবনকে ভাগ করেছেন দু'ভাগে। সকালে ফুটবল (যা তিনি এখনও ক্রিকেটের চাইতে খেলতে বেশি ভালোবাসেন), আর বিকেলে ক্রিকেট।

বয়স যখন ১৫ তখন থেকেই, প্রতি ম্যাচে ১০ ওভার আর টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ১২ বছর পর কিছুটা পরিবর্তন আসলো জীবনে। অন্যভাবে বলতে গেলে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়ে গেলো।

স্বাভাবিক ভাবেই এক নম্বর তকমাটা অনেক দায়িত্ব আর চাপ নিয়ে আসে?

"দায়িত্ব, হ্যাঁ। চাপ, না।" সাকিব বললেন, "চাপটা আর চাপ থাকেনা যখন আপনি সেটা উপভোগ করেন। আমি উপভোগ করি। এটা (১ নম্বর হওয়া) আমার জন্য বিশেষ কিছু।"

কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় দল পুরো ২০১৪ জুড়েই ছিল স্তিমিত। বছর শেষে খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে তারা। সালটাই হয়তো অপয়া ছিল তাদের জন্য। সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়া, ক্রিকেটের সব সংস্করণে টানা ১৩ ম্যাচের হার, টি২০ বিশ্বকাপে ভরাডুবি বাংলাদেশ ভক্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনা নিয়ে কথার তুবড়ি ছোটাতে দেখা গেছে অনেককে।

জাতীয় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে বাকবিতন্ডার পর এক বিতর্কিত সাসপেনশন থেকে আলোচনা দূরে সরিয়ে সাকিব বলেন, "আমার আর সতীর্থদের জন্য একটা কঠিন ছিল। খুব একটা ভালো করিনি আমরা। হাতে মোক্ষম সুযোগ থাকার পরও। বিশেষ করে দেশের মাটিতে টি২০ টুর্নামেন্টে। প্রস্তুতি ভালো ছিল, জেতার সুযোগও ছিল অনেক ম্যাচে। কিন্তু ভাগ্য সাথে ছিল না। সব মিলিয়ে, সময়টা খুব খারাপ গিয়েছিল আমাদের। কিন্তু বছরটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শেষ করতে পেরেছি এতে আমি সন্তুষ্ট।"

কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে বাদানুবাদের পর জুলাইতে "আচরণগত সমস্যা" কারণ হিসেবে দেখিয়ে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাকিবকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এর আগেও ফেব্রুয়ারিতে ৩ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। ২০১৩ এর মে মাসে জিম্বাবুয়েতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে রাগান্বিত হওয়ায় ৭৫ শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা হয় তাঁর। কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বটা তাই ছিল চূড়ান্ত খড়।

তবুও অনেকেই বলে থাকেন, একজন তারকা ক্রিকেটার হওয়াতে অনেক ছাড় দেয়া হয় সাকিবকে।

এতকিছুর পরও সাকিব ফিরেছেন। ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় ৩ মাসেই। খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। রেকর্ড অর্জন করেছেন। এখানেও সমালোচনা। সব রেকর্ড নাকি হয় দুর্বল দলের বিপক্ষে। যেমনঃ জিম্বাবুয়ে। একদিন থেকে ধরলে কথাটা সত্য হলেও হতে পারত।

কিন্তু রেকর্ড বলে ভিন্ন কথা। সব টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষেই আছে সাকিবের অন্তত একটি করে পাঁচ উইকেটের শিকার। করেছেন নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি। সাকিবের টেস্ট রেকর্ডে একটি নাম নেই। সেটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। কারণ, শেষবার বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট কেলেছে ২০০৬ এ। সাকিবের অভিষেক তারও এক বছর পর।

সাকিব জানিয়েছেন, শক্ত প্রতিপক্ষের সামনেই নিজের সেরাটা বের করে আনতে পারেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে নিয়মিত খেলা হয়না সেরাদের বিপক্ষে।

"জাতীয় লিগে আমার পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো না। সেখানে তেমন একটা খেলতেও ভালো লাগে না। কারণ প্রতিযোগিতা নেই। আমি প্রতিযোগিতা ভালোবাসি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমার কাছে সবচাইতে উপভোগ্য। এটা আমাকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করে।"

২০১৫-ই হতে পারে সাকিবের বছর। বিশ্বকাপ সেখানে ছোট্ট একটা অংশ মাত্র। এরপর রয়েছে পাওয়ারহাউজ টেস্ট দলগুলোর বিপক্ষে হোম সিরিজ।

সাকিব বলেন, "বিশ্বকাপটা যথোপযুক্ত। বড় মঞ্চে পারফর্ম করাটা শুধু আমি না, দলের জন্যও অনেক বড় কিছু। আমরা এখনও উন্নতি করছি। বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আমরা এখন একটি উন্নত দল, নিয়মিতই বড় দলগুলোকে হারানোর সামর্থ রাখি আমরা।"

"২০০৭ এ ভারতকে হারিয়েছি, হারিয়েছি প্রোটিয়াদের। ২০১১ তে ইংল্যান্ড। আশা করি এ বছরও বড় দুয়েকটা দলকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারব আমরা। এটা আমাদের জন্য হবে অনেক বড় কিছু।"

"এবছর অন্তত চারটে বড় দলের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলছি আমরা। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আর পাকিস্তান। এটা চমৎকার একটা সুযোগ। বছরে তিন চারটার বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়না আমাদের। যেটা দিয়ে আমাদের সামর্থ আমরাই মুল্যায়ন করতে পারিনা। এই বছরটা অনেক বড় কিছু উপহার দেবে আমাদের এই আশা করি।"

"আমার মতে এই মুহূর্তে আমরা খুব ভালো একটা দল। এই দলগুলোর বিপক্ষে জেতাটা সহজ হবে না। কিন্তু আমি আশাবাদী যে আমরা চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকবো। ঘরের মাঠে আমরা আত্মবিশ্বাসী একটা দল- যেকোন দলের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারি আমরা।"

Article Link: http://goo.gl/WA9pql

--- বাংলায় অনুবাদ: সাবরিনা সুলতানা

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৯৫ Views

Comments (0)

  • - তাহমিদুর রহমান

    সম্পূর্ণ লেখা মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। বেশ লিখেছেন। আমি একমত।