Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইউসুফ খান

৯ বছর আগে

একটি প্রবাদ ও আধুনিক প্রেমের গল্প

প্রথমে একটা অন্যরকম ঘটনা দিয়ে শুরু করি-
বছরখানেক আগে, আমি এবং আমার তিন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম একটা নৌকা ভ্রমনে। গ্রামের বাড়ি নেই, তাই বুড়িগঙ্গার পচা পানির উপর নৌকা ভ্রমন করেই মনের শখ মিটাচ্ছিলাম। বেশ ভালয় ভালয় কাটলো পুরো ভ্রমন। সাতার কেউই তেমন জানতাম না তাই কিছুটা ভয়ের মধ্যে কাটলো। পাড়ের সামনে আমাদের নৌকাটা ভিড়বে, এমন সময় হঠাৎ বেশ বড় একটা ঢেউ এলো। ভয়ংকরভাবে দুলে উঠলো আমাদের নৌকা। ভয়ে আমার পেট মুচড়িয়ে উঠলো। মনে হচ্ছিলো- তীরে এসে তরী ডুববে। কলিজা গলায় এসে লাফাতে লাগলো। সবাই যার যার জায়গায় ষ্টীল হয়ে রইলাম। আমাদের ঘনিষ্ঠ দোস্ত সাব্বির, একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেলো। সে আতঙ্কে উঠে দারালো। আমাদের নৌকার পাশ ঘেঁষেই তখন আরেকটা নৌকা যাচ্ছিলো। সাব্বির বাঁচার তাগিদে সেই নৌকাটার উপরে এক পা দিয়ে দিলো। আমরা চুপচাপ ওর কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলাম। মাঝি বলল- “মামা, করেন কি? জায়গায় বসেন, কিচ্ছু হইবো না। নড়াচড়া করলে নৌকা উলটাইয়া যাইবো”
এদিকে সাব্বির দাঁড়ানোর ফলে আমাদের নৌকাটা এক পাশে বেশী ভারী হয়ে অনেকখানি কাত হয়ে গেলো।
ফলাফল- ঝপাং. ……..
সাব্বিরকে দেখলাম, পানিতে পড়ে গেলো। পাড়ের কাছে থাকায় ডুবলো না, তবে বুড়িগঙ্গার পচা পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো। আমাদের নৌকা সুন্দরমতো পাড়ে ভিরলো। আমরা আস্তে আস্তে নেমে গেলাম। আমাদের প্রচণ্ড হাঁসিতে কেপে উঠলো বুড়িগঙ্গার পাড়। অতি-রসিক মাঝিটা দূর থেকে বলতে লাগলো- ‘মামা, দুই নৌকায় পা দিসেন, তো মরসেন’
সাব্বির দ্রুত হাটা ধরলো। আমরা পিছনে পিছনে।

“দুই নৌকায় পা দেয়া ঠিক না”- এ কথার সত্যতা স্বচক্ষে দেখতে পেলাম। মর্ম না বুঝলেও আমার কাছে ব্যাপারটা অনেক বেশী ফানি লেগেছিলো। সাব্বিরের এই ঘটনায় আমিই সেদিন সবচেয়ে বেশী হেসেছিলাম। আজও মনে পরলে হাসি পায়।

ছোটবেলায় এই প্রবাদটার মাথমুণ্ডু কিছু বুঝতাম না। ভাবতাম, আমরা শহরের পোলাপান। নৌকায় ওঠার তো প্রশ্নই আসে না। সেদিন না হয় শখে উঠেছিলাম, আর তো উঠবো না। তবে ওই ঘটনার পর পরই আমি সাঁতার শিখেছিলাম। যাই হোক, দুই নৌকায় পা দেয়ারও দরকার নেই। ডুবে মরারও দরকার নেই। ইনফ্যাক্ট, নৌকাই ওঠারই দরকার নেই। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। চোখের সামনে প্রবাদটার সচিত্র ভার্শন দেখার পরও আমার মধ্যে চেঞ্জ এলো না। প্রবাদটার মর্ম বুঝতে বেশ সময় লাগলো এবং একারনেই ঘটলো এক ঐতিহাসিক ঘটনা-
—————————————————-
ঢাকার নামকরা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ি আমি। বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনায় চরম বাজে। লেখাপড়া একদম ভালো লাগে না। সত্যি বলতে, মাথায় ঢোকে না। তবু জোর করে ঢুকানোর চেষ্টা করি। ফলাফল- রিটেক। কতোগুলো সাবজেক্টের রিটেক জমেছে, গুনতে গেলে মাথা চিনচিন করে। তাই গোনা ছেড়ে দিয়েছি। যা হয়, হবে।
তবে ক্লাসে আমার বেশ নামডাক রয়েছে, মডেল হিসেবে। কয়েকটা ছোটখাটো বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলাম। কোন কারনে সেই বিজ্ঞাপনগুলো আজো প্রকাশ হয়নি, তাই মনটা একটু খারাপ থাকে। তবে যাই হোক, সবাই মডেল বলে সম্মান দেয়। শুনতে ভালোই লাগে। (অবশ্য, ওরাও সঠিক জানে না আমি কোন প্রোডাক্টের মডেল হয়েছিলাম)
ভালই কাটছিলো ভার্সিটির দিনগুলো। ওহ, বলতে ভুলে গেছি- ক্লাসে আমার একটা GF আছে। দেখতে পরীর মতো। শুধু ডানা নেই, এটাই পার্থক্য। বলা যায়, তার কথাতেই আমি উঠি- বসি। নিজেকে তার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি। ফলে, কোনটা তার ইচ্ছা কোনটা আমার ইচ্ছা- আলাদা করতে বেশ সময় লেগে যায়। তার সৌন্দর্য্য আমার ব্যাক্তিত্বকে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যেই কিনে নিয়েছে। মাঝে মাঝে তাই একটু আফসোস লাগে তবে, দুঃখ নেই। কারন, অর্পিতা এটাই পছন্দ করে। মানে, আমার GF…
ক্লাসে যতটুক সময় কাটাতাম, তার দ্বিগুণ সময় কাটাতাম ধানমণ্ডি লেকে। এছাড়া ভারী পকেট খুব দ্রুত হালকা করার জন্য KFC, CFC- তো আছেই।

এর মধ্যে একদিন, জুনিয়র ব্যাচের এক মেয়ে, নিলিমার সাথে পরিচয় হলো। দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। গায়ের রং বেশ ফর্সা। সে আবার আমার এক ফ্রেন্ডের cousin। ফ্রেন্ডের মাধ্যমেই তার সাথে পরিচয় হলো। এ ব্যাপারে অর্পিতা কিছুই জানলো না। কয়েকদিন কথা-টথা বলতেই মেয়ে পটে গেলো। আমিও আসলে মনের অজান্তেই পটিয়ে ফেললাম মেয়েকে। ভাবলাম, ফ্রেন্ড হিসেবে থাকুক না। সমস্যা কি? সে অবশ্য আমাকে কয়েকবার দেখেছে অর্পিতার সাথে। আমাদের কোন চক্কর আছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলাম- Me and Arpita, just good friend…nothing else…
ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগলো। কথা বলতে বলতে একসময়, মনের অজান্তেই তথাকথিত সেই ফ্রেন্ডের উপর আমার দুর্বলতা, সিডরের বেগে বৃদ্ধি পেতে লাগলো। ফ্রেন্ড হিসেবে থাকার ট্রেন্ড বেশীদিন লাস্টিং করলো না। একসময় বুঝতে পারলাম, আমি আসলে নিলিমার প্রেমে পড়ে গেছি। বরং বলা উচিত, আরেকবার প্রেমে পড়েছি। তাও বিশেষ কোন কারন ছাড়াই। কিন্তু অর্পিতা? ওর কি হবে? ওকেও তো ভালোবাসি! নিলিমা যদি ‘CPU’ হয়ে থাকে অর্পিতা ‘MOTHERBOARD’. কাকে বাদ দিবো? পুরো PC অচল হয়ে পড়বে। থাক, দরকার নেই। তারচেয়ে বরং দুজনই থাকুক। আমি নাহয় একটা 4GB RAM লাগিয়ে নিবো দ্রুত দৌড়ানোর জন্য। বিশেষ কোন ঝামেলা হলে ‘Kaspersky’ আর ‘Norton’- দুইটা ANTIVIRUS-ই একসাথে চালাবো। ব্যাপার না।

শুরু হলো নতুন খেলা। ১ ফুল ২ মালী। নিজেকে ফুল বলতে যদিও লজ্জা লাগছে তবে, এখানে এই প্রবাদটাই যায়। তাই না দিয়ে উপায় নেই।
একসাথে দুই দুইটা গার্লফ্রেন্ড হ্যান্ডেল করা_ So Tough
তবে বুঝতে পারছিলাম, এটা একটা আর্ট। শিল্পের কাছাকাছি কিছু। যারা পারে, আর্টটা শুধুমাত্র তাদের জন্য। আমি ধীরে ধীরে এই আর্টের উপর মাষ্টার ডিগ্রী লাভ করলাম। কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না আমার এই Double চক্করের কথা। আমার কিন্তু বেশ মজাই লাগছিলো। Double আনন্দে কাটছিলো দিনগুলি।
Double চক্করের জন্য আমারও কিছু জিনিষ Double করতে হলো। জিনিসগুলো হলো- মোবাইল, আর ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট। এই দুইটা জিনিষ ১ থেকে ২ হয়ে গেলো। দুজনকে সমান অধিকার দেয়ার সুবিধার্থে।
এভাবে চললো দীর্ঘ ৬ মাস। এর মধ্যে আমার কোনপ্রকার কোন সমস্যা হয়নি। সুকৌশলে সব ধরনের ঝামেলা কেটে বেরিয়ে আসছিলাম। নিকট কিছু বন্ধু যারা আমার এই Double চক্করের কথা জানতো, তারা এ ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশী দুশ্চিন্তা করতো। কয়েকজন অবশ্য হিংসাও করতো। ওরা মাঝে মাঝে বলতো- “দোস্ত, এভাবে কয়দিন চালাবি? একদিন ঠিকই ধরা খাবি। চোরের ১০ দিন গৃহস্থের ১ দিন”।
আমি অবশ্য ওদের এসব কথা কর্ণপাত করতাম না। ওরা এধরনের কথা শুরু করলে আমি ওদেরকে আর্ট নিয়ে বিশাল একটা বক্তৃতা শুনিয়ে দিতাম।
৬ মাস পর একদিনের ঘটনা-

সকালে অর্পিতাকে ফোন করে বলেছি ,শরীর খারাপ। আজ ক্লাসে আসবো না। আমি না গেলে অর্পিতাও আসবে না। আসল কথা হলো- আমি নিলিমাকে কথা দিয়েছিলাম, ওকে নিয়ে আজ ধানমণ্ডি লেকে বোট দিয়ে ঘুরবো।
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে গেলাম বাথরুমে। দেরি হলে নিলিমা রাগ করবে। অল্পতেই খুব রাগ করে মিষ্টি মেয়েটা। রাগান্বিত মুখটা দেখতেও খুব ভালো লাগে। তাই ভাবলাম আজকেও একটু রাগাবো। নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর বাসা থেকে বের হলাম।

যেয়ে দেখলাম নিলিমা দাড়িয়ে আছে। মুখ রক্তবর্ণ। এক মিনিটের জন্য মনে হলো, আমার Double চক্করের কথা জেনে যায়নি তো? তাহলে তো সর্বনাশ! এক টিকেটে দুই সিনেমার আজকেই ‘The End’
পরক্ষনে ভাবলাম, নাহ। ওর তো কোনভাবেই কিছু জানার কথা না। বুকে সাহস সঞ্চয় করে কাছে গেলাম। ও আমার দিকে তাকালো না। আমি হাত ধরে ভয়ে ভয়ে বললাম- Sorry my love.. রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো। তাই আসতে লেট হয়ে গেলো। Forgive me, please…
আরও প্রায় মিনিটখানেক অনুনয়- বিনয় করার পর নিলিমা আমার দিকে ঘুরে তাকালো। মুখ তখনও রক্তবর্ণ। আমার কলিজা ধুকপুক করছে, আসলেই ও সবকিছু জেনে জায়নি তো।
-ওকে, নেক্সট টাইম যেনো এরকম আর না হয়, নিলিমা মিষ্টি স্বরে বললো। আমি জান ফিরে পেলাম। যাক, আমি যা ভাবছিলাম তেমন কিছু না। হাসিমুখে দুজনে যেয়ে একটা বোট ভাড়া করে চড়ে বসলাম। মেঘলা আকাশ, মিষ্টি হিমেল বাতাস, প্রেম করার জন্য পারফেক্ট একটা ওয়েদার। নিলিমাকে আরেকটু খুশি করার জন্য তিন লাইনের একটা কবিতাও বানিয়ে ফেললাম-

তুমি আকাশের বুকে- বিশালতার উপমা,
তুমি আমার চোখেতে- সরলতার প্রতিমা,
ওগো- তুমি যে আমার হৃদয়ের নিলিমা…….

নিলিমা সাথে সাথে বলে উঠলো- এই, এটা তো একটা গানের কথা! তুমি নিজে বানিয়েছো বললা ক্যান?
আমি থতমত খেয়ে বললাম- গান? ও হ্যাঁ, তাতে কি? শেষের লাইনটা তো আমার নিজেরই বানানো।
নিলিমা হেঁসে কুটিকুটি। আকাশ আরও মেঘলা হয়ে এলো। আমরা বোট চালাতে চালাতে আরেকটু ভেতরের দিকে গেলাম। সেখানে আরও কিছু couple বোট চালাচ্ছিলো। শুধু একটা বোটে দেখলাম, দুইটা মেয়ে। তাদের বোটটার পাশ কাটাতেই আমার আত্মা, খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো। পেট মুচড়িয়ে উঠলো। নিলিমা বলল- এই, এটা তোমার বান্ধবী অর্পিতা আপু না?
আমি না বুঝার ভান করে বললাম- কি যে বলো, ও এখানে কি করবে? আজ ও আসেনি। তুমি অন্য কাউকে দেখেছো।
– নাহ, আমি শিওর এটা অর্পিতা আপু, নিলিমা ঝাঁঝালো সুরে বলে।
এক মুহূর্ত দেরি না করে আমি বোটের মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। তেমন কাজ হলো না। ওদিকে নিলিমাও একমুহূর্ত দেরি না করে গলা ছেড়ে ডাক দিলো- “অর্পিতা আপুউউউউউউউ”———

পর মুহূর্তে দেখলাম, অর্পিতার বোটটা আমাদের বোটের দিকে খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। অর্পিতার পাশে বসা ওর cousin নোভা, বিশ্রী ভাষায় আমাকে নিয়ে কি যেনো বলছে বেশ জোড়ে জোড়ে। আমি বোটের গতি জান-প্রান দিয়ে বাড়াতে লাগলাম। নোভার কিছু কথা কানে ভেসে এলো- ‘ভালো করেছি আজকে তোমাকে জোর করে এখানে এনে, ওই লুচ্চাটাকে আমি আগে থেকেই সন্দেহ করতাম’……
নিলিমা কিছু না বুঝতে পেরে বোকার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো। আমাদের বোট তখনও পাড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ওদের বোটটা প্রায় কাছাকাছি এসে পরলো। নোভার অকথ্য গালাগালিতে নিলিমাও এতক্ষনে ব্যাপারটা টের পেয়ে গেছে। আমি আতংকে উঠে দাঁড়ালাম। বেশ দূর দিয়ে আরেকটা বোট যাচ্ছিলো। সেই বোটে ছিলো Single একটা ছেলে। কোন কিছু না ভেবে দ্রুত নিজের ভবিষ্যৎ পরিনতির দিকে ঝাপিয়ে পরলাম। ছেলেটাও ভয় পেয়ে দ্রুত বোটটাকে পাশ কাঁটিয়ে নিলো।
ফলাফল- ঝপাং……………….
পানিতে পড়ার আগ মুহূর্তে শুনলাম, দূর থেকে অতি- রসিক কেউ একজন চিৎকার করে বলছে-
‘মামা, দুই নৌকায় পা দিসেন, তো মরসেন’………….
সাতার জানা না থাকলে প্রেমের মরা, খুব দ্রুতই জলে ডুবে যেতো।

১ Likes ০ Comments ০ Share ১০২৪ Views

Comments (0)

  • - মো: মালেক জোমাদ্দার

    আলমগীর ভাই কেমন আছেন ? খুব সুন্দর কবিতা। শুভেচ্ছা রইল।

    • - আলমগীর সরকার লিটন

      জ্বি দাদা আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি

      আপনি কেমন আছেন আর সুন্দর মন্তব্য করার জন্য

      অনেক ধন্যবাদ ভাল থাকুন