৪র্থ অংশ--
এরপর তিন দিন হয়ে গেল, ঘরের খুঁটিতে বাঁধা থাকলেন অমরেশ।সহকর্মী আর ছাত্ররা এসে তাঁকে খাইয়ে যেত।খাবারের থালা দেখলেই চীৎকার করতেন অমরেশ, আমায় খেতে দে, খেতে দে আমায়, ভীষণ খিদে পেটে।খাবার জন্যে ছটফট করতেন।মিনিটের মধ্যে এক থালা ভাত রাক্ষসের মত খেয়ে ফেলতেন।তারপর আরও চাই তাঁর, ভাঙা গলায় চীৎকার করে উঠতেন, মাছ কোই ? মাংস কোই ? মাছ মাংস ইচ্ছে করে তাকে দেওয়া হতো না।তা হলে না কি ভূত পেত্নীর তাকত আরও বেড়ে যায় ! আরও উৎপাত করতে থাকে ওরা।
তিন দিন পরে গ্রামের লোকদের সঙ্গে ছাত্ররাও বেরিয়ে গেল ওঝার খোঁজে।তিন দল হয়ে তারা তিন দিকে রওনা হয়ে গেল। একমাত্র ভূতের ওঝারাই পারবে ভূত ছাড়াতে।
একদল মহারাষ্ট্রের চান্দা জেলায় গেল।একদল গেল বিশ কিলোমিটার দূর কোন স্থানীয় ওঝাকে আনতে।তৃতীয় দল বেরিয়ে গেল মধ্যপ্রদেশে।সেখানে নাকি কোন ছত্তিসঘরী ওঝা আছে।ভূতের ওঝা হিসাবে বেশ নাম ডাক তাঁর।
স্থানীয় ওঝা এলেন বিশ কিলোমিটার দূর থেকে।তিনি ঘরে পূজা আচ্চা শুরু করলেন।নিয়ম অনুষ্ঠান যজ্ঞ বিধিমত শুরু হল।
অমরেশ চীৎকার করতে শুরু করলেন, মোটা মেয়েলী গলায় টেনে টেনে বলতে থাকলেন, তুই কেন এসেছিস ? আমি তোকে মেরে ফেলব! হোই হল্লা চলতে থাকলো খুব।দূর থেকেগ্রামের অনেক লোক এসে জড়ো হয়ে গেল।সবার কৌতূহল--ভূত পেত্নীর কাণ্ড কারখানা দেখতে চায় সবাই।
ওঝা সবাইকে সাবধান করে দিলেন, আপনারা কেউ এ ঘরের দশ হাত দূরত্বের মধ্যে থাকবেন না । দশ হাত পর্যন্ত জাগা আমি বেঁধে দিয়েছি--এই পেত্নী তার বাইরে যেতে পারবে না।
এবার অমরেশকে যজ্ঞের সামনে নিয়ে আসতে হবে।চার পাঁচ জন মিলে জোর করে তাঁকে যজ্ঞের সামনের আসনে বসিয়ে দিল।অমরেশ ভারী মেয়েলি কণ্ঠে ওঝাকে শাসাতে লাগলেন, তোরে আমি ছাড়ব না, তিনি ওঝাকে ধরার জন্যে ধস্তাধস্তি শুরু করলেন, চার পাঁচজন লোক মিলেও যেন তাকে আসনে বসিয়ে রাখা যাচ্ছিল না!
তারই মধ্যে ঘটনাটা ঘটে গেল।অমরেশ হঠাৎ শক্তি নিয়ে ঝাপটা মেরে উঠে পড়লেন, লোকেরা আরও জোর করে ধরার আগেই তিনি দু তিন লাফ দিয়ে ওঝার সামনে পৌঁছে গেলেন।আর সঙ্গে সঙ্গে ওঝার গলা টিপে ধরলেন।
ওঝার মুখ দিয়ে গোঁ গোঁ শব্দ হতে লাগল। এবার দর্শকজন হৈই হৈই ভিড় করে ছুটে এসে গেল ওঝার দেওয়া সীমানা লঙ্ঘন করে।অনেক কষ্টে অমরেশের হাত ছাড়ানো হল ওঝার গলা থেকে। ততক্ষণে ওঝার অবস্থা কাহিল। মুখ দিয়ে তাঁর কথা সরছিল না।অবস্থা দেখে ওঝার মাথায় জল ঢালা হল, পাখার বাতাস করা হল।আবার অমরেশকে তেমনি ভাবে বেঁধে দেওয়া হল ঘরের খুঁটিতে।
ক্রমস