Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তাপস কিরণ রায়

৯ বছর আগে

এইলোক অন্যলোক (ভৌতিক গল্প)


২য় অংশ... 
এন
.এচ.ফরটি থ্রি রাস্তার পাশেই ছিল ক্যাম্পরাস্তায় গাড়িটাড়ির যাতায়াত কম ছিলতবু দিনে রাতে বাস ট্রাকের যাওয়া আসা ছিলবড় নির্জন জাগাদিনের বেলায় লোক জনের আনাগোনা সাড়া শব্দে মুখর থাকত বটে, রাত আটটার পর সে জাগা আশ্চর্য ভাবে চুপচাপ হয়ে যেতক্যাম্পের চারিদিকে জঙ্গল, জঙ্গল আর জঙ্গলজঙ্গলে সাল, সেগুন, মহুয়া, তেন্দু গাছের সমারোহসে সঙ্গে অনেক রকম জন্তু জানোয়ারেরও বাসবাঘ, ভাল্লুক, বুনো শুয়োর--নিরীহ শ্রেণীর মধ্যে হরিণ, শেয়াল, খরগোশ, সজারু এসব ছিলদিনে জঙ্গলে বন মুরগির দেখা পাওয়া যেত

পাশেই ছিল নদীনদীর নাম ধানচুর, স্থানীয় আদিবাসীদের দেওয়া নামপাহাড়ি নদীখরার সময় শুকিয়ে বালুচর হয়ে থাকতবর্ষায় ফুলে ফেঁপে বড় নদীর আকার ধারণ করতএ নদীর ওপর দিয়েই পুল হয়ে বড় রাস্তা চলে এসেছে ক্যাম্পের পাশ দিয়ে

            

অমরেশ মনে করলেন সে দিনটির কথা

বিকেল পাঁচটার দিকে স্থানীয় শিক্ষক আর সিনিয়র স্টুডেন্টরা হাঁটতে যেতেনইভনিং ওয়াকেসঙ্গে কেশব, মৈনাক, মাখন সিনিয়র ছাত্র হিসাবে থাকতকেশব রাতে স্যারের ঘরেই সুতোমাখন ও মৈনাক রাতে থাকত না, তবে স্যারের রান্না বান্নার দায়িত্ব তাদের ওপর ছিল

প্রতিদিনের মত সে দিনও হাঁটতে বেরলেন তারাসন্ধ্যে হয় হয় এমনি সময় ফিরছেনআর একটু এগোলে ধানচুর নদীর পুলপুল পেরিয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলে ওঁদের ক্যাম্পনির্জন জাগা, সন্ধ্যের আগেই চারপাশের মাথা চাড়া দেওয়া গাছপালাগুলোর জন্যে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসেচারিদিকে যেন আলো আঁধারির খেলা চলতে থাকে

অমরেশ দেখলেন, চারপাশে ছোপ ছোপ অন্ধকারজঙ্গলে ঝিঁঝি পোকারা ঝিঁ ঝিঁ তান তুলছেজোনাকির দল তাদের নেভা জ্বলা আলো নিয়ে সারা জঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছে

ধানচুর নদীর পুলে পা রাখলেন অমরেশলম্বা পুল পার করতে হবেসবাই অনেকটা আগে আগে, অমরেশ পঞ্চাশ ষাট হাত পেছনে চলছেনহঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল নদীর পারে আর কালো ছায়ার ভিড় নেইঅস্তগামী সূর্যের ম্লান আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে  আর, একি ! একি দৃশ্য তিনি চোখের সামনে দেখছেন ! নদীর ঘাট থেকে যেন তাঁর মা জল ভরা কলশি কাঁখে ওপরে উঠে আসছেন ! কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ! তাঁর মা তো আজ পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন ! তবে আজ কেন এমন দৃশ্য তাঁর সামনে প্রতি-ফলিত হচ্ছে ?

থামলেন তিনি, দেখতে দেখতে অন্ধকার ছেয়ে গেল চারিধারতাঁর মা ধীরে ধীরে নদীর পার ধরে ওপরে উঠছেন আর অল্প সময় পরই মার দেহটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল ! অমরেশ তখন অন্যমনস্ক হয়ে আছেনআচমকা তিনি ক্যাম্পের এক পরিচিত মেয়েকে তাঁর পাশ দিয়ে যেতে দেখলেন মেয়েটার নাম মধুমতীঅমরেশ ভাবলেন ডাকবেন নাকি মেয়েটাকে ! তাঁরই তো ছাত্রী, কিন্তু একা অন্ধকারে এ খালি রাস্তায় ও কি করছে ? পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল তাঁর--আরে মেয়েটা তো ছ মাস আগে বিষ খেয়ে মারা গেছে ! সঙ্গে সঙ্গে শরীরে তিনি কেমন যেন শিহরণ অনুভব করলেনসমস্ত দেহ তাঁর কাঁটা দিয়ে উঠলো ! আশ্চর্য, এত কিছু অলৌকিক ভৌতিক দর্শনের পরও তাঁর মধ্যে কেন যেন কোন রকম ভয়ডর নেই !

এবার তিনি আরও অবাক হলেন, দেখলেন সামনে থেকে কালো একটা ছায়া আসছে,  ধীরে ধীরে তাঁর দিকেই এগোচ্ছেএকি ! ছায়াটাকে এত পরিচিত লাগছে কেন ? হ্যাঁ, এত সেই মধুমতী যাকে একটু আগেই তিনি দেখলেন ! আবার সে ফিরে আসছে কেন!

হাওয়ায় ভাসা মত শব্দ শুনতে পেলেন তিনি, মধুমতী যেন বলছে, ফিসফিস বাতাসের সুর নিয়ে বলছে মেয়েটি, স্যার !

আরে, এ যে অমরেশকেই ডাকছে ! জবাব দেবেন কি না ভাবছেন তিনিএমনি সময় আবার কথার আওয়াজ হল, আমাকে চিনতে পারলেন না? স্যার !..আপনাকে...ধরতে...সাবধান... বাকী শব্দগুলি বুঝতে পারলেন না তিনিকিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে এক পা, এক পা হাঁটতে লাগলেনতখনও ধানচুর নদীর পুল পার হন নি

ব্যাস, এরপর ধানচুর নদী পার হতে তাঁর মাত্র একটা স্টেপ বাকীতাঁর শরীর আবার কেঁপে উঠলো, গরম হাওয়ার ঢেউ তোলপাড় হয়ে যেন তাঁর দেহে এসে মিশে গেল, তিনি আচমকা একটা ঝাঁকুনি খেলেন

অমরেশ বাবু এ পর্যন্ত বলে থামলেন, বললেন, এ পর্যন্ত আমার অনুভব আপনাকে বললামবাকী আমি বলতে পারব না

আমি বললাম, আপনিই বলুন না ! কেশব আবার কোন কাজে ভিড়ে গেছে হবে

উনি বললেন, আমি কি করে বলি বলুন ? আমার অস্তিত্ব তখন ছিল না !

আমি তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করে উঠি, তার মানে ভয়ে আপনি জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন ?

উনি আবার উদাস হয়ে বলে উঠলেন, না, আমি অন্য হয়ে গিয়েছিলাম ! আমার সত্তা হারিয়ে গিয়ে ছিল

--তার মানে? অবাক হই আমি

--তার মানে আমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিলওই সময়কার বেশ কটি দিনের কথা আমি কিছুই জানি নাচেষ্টা করেও মনে করতে পারি না! কেশব প্রত্যক্ষদর্শী, সে আপনাকে বাকি ঘটনা বলবে

আমি কেশবের অপেক্ষা করতে লাগলামওর দোকানের কাজ এখনও শেষ হয় নিপাঁচ মিনিট বলে পঁচিশ মিনিট কাটিয়ে দিয়েছে

কেশবের পৌঁছতে আরও দশ মিনিট লেগে গেলআমি হাত ঘড়ির দিকে তাকালামরাত নটার কাছাকাছি হয়ে গেছেআর রাত হলেই আমার স্ত্রী কোন স্টুডেন্টকে দিয়ে আমার খোঁজ করতে পাঠাবেনতবু গল্প শোনার আগ্রহ আমায় পেয়ে বসলোকেশবকে বললাম, কেশব, তোমার স্যারের অবশিষ্ট ঘটনাটুকু তুমিই বল 

এবার কেশব বলতে লাগলোঐ দিন তো আমরা স্যারের আগে আগে হেঁটে চলে এলামস্যার ঘরে ফেরেন নি-- এটা আমাদের ভাবনার কিছু ছিল নাআর জানতাম পাঁচ দশ মিনিট পরে হলেও স্যার ঠিক ঘরে চলে আসবেন
ক্রমশ... 

২ Likes ৩ Comments ০ Share ৪৯৫ Views

Comments (3)

  • - ধ্রুব তারা

    emoticons

    - রুদ্র আমিন

    emoticons সবুজের মাঝে থাকতে চাই।

    - আলমগীর সরকার লিটন

    বেশ লাগল

     

    • - রুদ্র আমিন

      জেনে ভাল লাগল লিটন দাদা।

    • Load more relies...