Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তাপস কিরণ রায়

৯ বছর আগে

এইলোক অন্যলোক (ভৌতিক গল্প)


অমরেশ রায়কে আমি চিনি
দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের মালকানগিরি এরিয়ার হাইস্কুলের এসিস্টেন্ট হেড মাস্টার ছিলেনপটেরু জাগা উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মালকানগিরি তহশিলের অন্তর্গত ছিলআর স্কুলের নামও জাগার  নাম হিসাবে পটেরু হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ছিল  যেহেতু আমিও ছিলাম ওই একি স্কুলের শিক্ষক, তাই অমরেশকে চিনব এটাই ছিল স্বাভাবিক

অমরেশ চেহারায় ছিলেন লম্বা, পরিষ্কার, সার্ফ ব্রেনের অধিকারীবিজ্ঞান ও অঙ্কের শিক্ষক

তাঁকে যে শুধু চিনতাম তাই নয়, ভালো ভাব ছিল আমার সঙ্গে

এই স্কুলে আমি ও আমার স্ত্রী ছিলাম পুরনো টিচারঅমরেশ বাবু আমাদের আসার তিন বছর পর অন্য কোন হাই স্কুল থেকে স্থানান্তরণ হয়ে এখানে আসেনভদ্রলোক ফ্যামিলি নিয়ে আসেন নিভালভাবে শিক্ষা দেবার জন্যে ছেলে মেয়েদের স্ত্রীর সঙ্গে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরে রেখে এসেছিলেনপ্রতি মাসে একবার ছুটি নিয়ে পরিবারকে দেখে আসতেন

আমাদের কাছে অমরেশ বাবুর সব কিছু স্বাভাবিক লাগত। তবে এক আধ দিন তিনি খুব উদাসী থাকতেন--কেমন মনমরা, মনমরা, আনমনাওই সময় তাঁর কথাবার্তাও কেমন যেন পাল্টে যেত, কথা বলতে বলতে মাঝখান থেকে খেই হারিয়ে ফেলতেন!

এমন কেন হয়! শুরুতে ভাবতাম ছেলে মেয়ে বৌয়ের চিন্তায় হয়ত তিনি মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠেনআমি একদিন জিজ্ঞেস করি, অমরেশ বাবু, কি এত চিন্তা করেন বলুন তো ?  কি, আপনি ছেলে মেয়ে স্ত্রীর জন্যে চিন্তিত ?

মনে হল তিনি এত সময় অন্য কোন রাজ্যে বাস কর ছিলেন, আমার প্রশ্ন তাঁর কানে পৌঁছাতে দেরী হল--একটু পরে উনি হুঁ, না, হ্যাঁ, করে আমার প্রশ্নটা যেন হাওয়ার তরঙ্গ থেকে ধরলেনতারপর জবাব দিলেন, না, সে সব না, আমি কিছু যেন ভাব ছিলাম

আমি বললাম, সে কি, আপনি কি ভাবছেন, আপনি নিজে জানেন না!

এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন তিনি, স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলেন, বললেন, পরিবারের জন্যে কিছু চিন্তা তো হয়ই !

বললাম, এ ছাড়া অন্য কোন চিন্তাও আছে নাকি আপনার ?

উদাস হাসলেন তিনি, বললেন, তেমন কিছু নয়, আপনাকে বলব একদিন

বলব বলে মাস খানেক কেটে গেলউনি ছুটিতে বাড়িতে কিছু দিন কাটিয়ে আসলেনভুবনেশ্বর তার নিজস্ব বাড়ি নেইস্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের সেখানে ভাড়া ঘরেই রাখতেন

ঘর থেকে ঘুরে আসার পর কিছু দিন ভালো কাটতআবার সপ্তাহ খানেক পর থেকে ওই একই অবস্থামাঝে মাঝে মন মরা, কখনো উদাসীভালো করে লক্ষ্য করলাম, তিনি একা থাকলে ফিসফিস করে কথা বলতেন নিজে নিজেই

আমার স্ত্রী বলতেন, ভদ্রলোক মাঝে মাঝে কেমন অস্বাভাবিক হয়ে যান না ?

আমি জবাব দিয়েছি, আমারও তাই মনে হয়

অথচ ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছেন, দস্তুর মত বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেনঅনায়াসেই অংকের জট খুলছেনকোন অসুবিধা নেইক্লাস নেবার সময় কে বলবে মন মরা, বরং উৎফুল্ল চেহারা, উৎসাহী পুরুষ বলে মনে হত তাঁকে !

অমরেশকে উদাসী দেখতাম কোন পড়ন্ত বিকেলে কিম্বা রাতের আবছা আলোয়অন্ধকারে তাকে কোন দিন দেখার সুযোগ পেয়েছি কি ? স্মরণ করতে থাকলাম

পটারু স্কুল থেকে দোকান-পাট, বাজার-ঘাট যেতে হলে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ ছিলসে দিন সন্ধ্যে বেলাদোকানে গেলাম কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আনতেসেখানে গিয়ে দেখি এক দোকানে বসে অমরেশ বাবু চা খাচ্ছেনআমাকে দেখার পরও চুপ করে বসে আছেনচায়ের কাপে বেশ সময় নিয়ে চুমুক দিচ্ছেনআমিই যেচে কথা বললাম, কি হল অমরেশ বাবু, কি চিন্তায় মগ্ন মশাই ?

উনি ধীরে আমার দিকে তাকালেনমনে হল আমাকে চিনতে সামান্য সময় লাগলো, বললেন, আরে আপনি! কখন আসলেন ? পরমূহুর্তে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে, একটু থেমে বললেন, চা খাবেন ? 

চা খেতে ইচ্ছে তো হচ্ছিল, তবু ইতস্তত কর ছিলামবুঝতে পেরে অমরেশ বললেন, কেশব, মাস্টামশাইয়ের জন্যে আর একটা চা দে ! আর একটা চেয়ার বাইরে বের করে দে ! 

চেয়ারে বসলামভাবলাম চা খেয়ে নেওয়া যাকচা তৈরি হতে লাগল, আমি অমরেশ বাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করব আপনাকে ?

হাসলেন তিনি, বললেন, আমি জানি, কি কথা জিজ্ঞেস করবেন ! সেটা আমায় জিজ্ঞেস না করে ওই কেশবকে জিজ্ঞেস করুন

কেশবকে আমি যৎসামান্য চিনি, এখানে ও সরকারী বসতি পেয়েছেবাজারে দোকান দিয়েছেচা ভাজিয়া আর দু চার রকম মিষ্টি বানিয়ে দোকানে রাখে

আমি বললাম, কি ব্যাপার কেশব, মাস্টার মশাই কি বলছেন? তুমি ওঁর কথা জানলে কি করে ?

কেশব চা ছাঁকতে ছাঁকতে বলল, মাস্টারমশাইয়ের ক্যাম্পে আমরা ছিলাম, স্যার! 

--তারপর কি হল ? আমি মাস্টার মশাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলাম

কেশব বলল, স্যার, পাঁচ মিনিট আমাকে সময় দিতে হবে, দোকানের কাজগুলি সেরে আসছিও আমার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে গেল

অমরেশ বাবু বললেন, দাঁড়ান, শুরুটা আমি করে দিচ্ছি, বলে নিজের জীবনের ঘটনা বলতে শুরু করলেন তিনি :

অমরেশ তখন দণ্ডকারণ্যে নতুন এসেছেননতুন চাকরি নিয়ে, মিডল স্কুলের মাস্টার মশাই হয়ে দণ্ডকারণ্যে তখন পুনর্বাসনের কাজ তৎপরতার সঙ্গে চলছেঅনেক পরিবারকে ক্যাম্পে রাখা হয়েছেপালা করে তাদের বসতি দেওয়া হবেনতুন নতুন গ্রাম তৈরি হচ্ছেবন কেটে বশত তৈরির কাজ চলছেঅমরেশ তখন মধ্যপ্রদেশের আওরাভাটা ক্যাম্পে পষ্টেডক্যাম্পের স্কুলেরই তিনি শিক্ষকতা করেন

পঞ্চাশ ষাট পরিবারের ক্যাম্পপ্রাইমারি আর মিডিল স্কুল এক সঙ্গে চলছেঅমরেশ ওঁরা তিনজন শিক্ষক মিলে স্কুল চালাতেন
ক্রমশ... 

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪৫৪ Views

Comments (0)

  • - সুলতানা সাদিয়া

    মুদ্রণে খরচ কমেছে
    প্রচারে প্রসার ঘটেছে..........হাহা, ভালই বলেছেন।

    • - রুদ্র আমিন

      কি আর বলবো সুলতানা সাদিয়া আপু মন্ত্রীর কথায় তো এমনটি মনে হয়। এখন পরীক্ষার আগে ফেসবুক বন্ধ করে দিবেন বলেছেন তিনি কিন্তু প্রশ্নপত্র নকল রোধের কোন কার্যক্রম হাতে নেবেন কি না সেটাই সংশয়। চুরি করে যদি প্রকাশ না হয় তাহলে কি সেটা চুরি বলে গণ্য হয়....? 

    - তাহমিদুর রহমান



    • - রুদ্র আমিন

      এতো কিসের চিন্তা তাহমিদুর ভাই, প্রশ্ন পেয়ে যাবে সময় মতো...হাতে টাকা রাখুন তবে সব সময় নয়....

    - আজমিরা হোসেন মেঘান

    বেশ ভালো বলেছেন.........emoticons

    Load more comments...