Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

উপন্যাসঃ নিশিযাত্রা (পর্ব ১৪)

মাহের তাহেরের মৃত্যুর খবর পেল দুইদিন পর। খবর পেয়েই ছুটে এসেছে সে ঢাকায়, এসে সে নিলাকে বাসায় পেল না, তাকে পেল নিকটস্থ এক নার্সিং হোমে। নার্সিং হোমটার বাইরে যেমন ঘিঞ্জি ভিতরেও ঠিক তেমন। সে একা একা ভর্তি হয়েছে সেখানে। তাহেরের মৃত্যুর পরের দিন সে পুলিশের মাধ্যমে মর্গে গিয়ে তার লাশ সনাক্ত করে। তখন সে একটুও কাঁদেনি, অধিক শোকে মানুষ কি আসলেই পাথর হয়ে যায়? লাশ সনাক্ত করে বাসায় ফেরার পথে তার প্রসব বেদনা উঠলে নিজে নিজেই ভর্তি হয়েছে নার্সিং হোমে। তার শুধু মনে হয়েছিল, তাকে আরো বাঁচতে হবে, তাহেরের জন্যেই তাকে আরো বাঁচতে হবে, তার পেটে তাহেরের সন্তান, তাদের ভালবাসার ফসল। বুকটা শূন্য লাগলেও সে বেশ স্থির ছিল, উথাল পাথাল শোকের জায়গায় তার চেহারায় দৃঢ় একটা ভাব ফুটে ছিল। কিন্তু পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট তাকে আহত করেছে, তাহেরের শরীরে যে অসুখ বাসা বেঁধেছিল তা কখনোই জানতে পারেনি সে। এ কথা ভেবে অবশ্য অভিমান হয় তার, তাহের তাকে কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করেনি, সে কি এতই পর ছিল? কেন এমন করল তাহের? নিলা ভেবে পায় না। তারপরও সে নিজেকে শক্ত করে রেখেছে, সামনেই দিকেই তাকাচ্ছে শুধু, যে সামনে আসছে পৃথিবীতে তার কথাই ভাবছে সে। হয়ত এই দৃঢ়চেতা ভাবের জন্যেই কখনো একাবোধ হয়নি তার, তবু তাহেরের মৃত্যুর খবর মাহেরকে জানানো উচিত বলে মনে করেছিল সে। মাহের নার্সি হোমে গিয়েই তাহেরের প্রসঙ্গ আনল না। বিছানা থেকে অনেক দূরে একটা চেয়ারে বসে বলল,

 

-ডাক্তার কি বলেছে?

-বলেছে সমস্যা নেই, খুব তাড়াতাড়ি হবে।

-হুম।

-তুমি কখন এসেছ? আসতে তোমার কোন অসুবিধা হয়নি তো?

-নাহ।

-খেয়েছ?

-হুম। তোমাকে বাসায় না পেয়ে একটা হোটলে খেয়ে ফেলেছি।

-বেশ করেছ।

 

মাহের কিছুক্ষন চুপ করে রইল। তারপর আবার বলল,

 

-কিভাবে হল এসব?

-জানিনা।

-জান না কেন? তুমি তার পাশে ছিলে না?

-যে নিজের প্রতি কোন খেয়াল রাখে না তাকে আর কত দেখে দেখে রাখব? তবু তোমার যদি মনে হয় আমি এর জন্যে দায়ী, তাহলে সত্যি মনে হয় আমি অপরাধী।

 

মাহের নিজেকে সামলে নিল। এসব বলার সময় এখন নয়, সে চেয়ারটাকে বিছানার কাছে এনে নিলার মাথার দিকে গিয়ে বসল, তার একটা হাত হাতে নিয়ে বলল,

 

-একাবোধ কর না।

-আমি একাবোধ করছি না মাহের।

-ভেঙ্গে পড় না।

-আমি ভেঙ্গেও পড়িনি। তবে খুব অভিমান হয়েছিল শোনার পর।

-হুম।

-আমি তার খুব বেশি কাছে যেতে পারিনি।

-কেন?

-তানাহলে তার এত বড় অসুখ করল, আমাকে একটিবারের জন্যে বলবে না?

-হুম।

-কিংবা আমি স্ত্রী হিসেবে ওর যোগ্য নয়। আমি হয়ত ওকে ঠিক বুঝতে পারিনি।

-এসব কথা এখন বলে কি হবে? এসব কথা এখন থাক।

-আচ্ছা।

-তোমার বাসায় খবর দিয়েছ?

-না।

-দিবে না?

-না।

-কেন?

-জানিয়ে কি হবে?

-মানে?

-জানিয়ে লাভ নেই।

-কেন? তোমার বিপদে ওরা আসবে না?

-হয়ত আসবে হয়ত না।

-হুম।

-বেঁচে থাকতে ওকে গ্রহন করল না ওরা, আর এখন যাওয়ার তো কোন মানেই নেই।

-তাই বলে...

-বাদ দাও এসব।

-আচ্ছা।

 

কিছুক্ষন চুপ থাকে দুজনে। তারপর নিলা বলে,

 

-তুমি কি ক্লান্ত?

-না। বাসে বেশ ঘুম হয়েছে। কেন?

-তাহলে যাও ওকে নিয়ে এস, আর কতক্ষন সে ওখানে পড়ে থেকে কষ্ট পাবে, নিয়ে এস তাকে, দাফনের ব্যবস্থা কর।

 

একথাটা মাহেরকে সত্যি দূর্বল করে দিল। সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সে নিলার হাত ছেড়ে দিয়ে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, নিঃশব্দে ভারি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। তারপর হঠাৎ নিলার দিকে ঘুরে বলল,

 

-এরকম কেন হল বলতে পার?

-জানিনা মাহের।

 

নিলার গলা শুষ্ক, তার কণ্ঠে কান্নার আভাস নেই, কিন্তু মাহের নিজেকে সামলাতে পারছে না। তার ভাই, যে তার চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড়, সে কেন এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে?

 

কিছুক্ষন পর ও তাহেরকে আনতে বের হয়, গত কয়েকদিনের ধকল আর সইতে পারছে না সে। হঠাৎ সুমাইয়ার আবির্ভাব, তার সাথে জেগে উঠা পুরনো স্মৃতি, সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন, আবার সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া আর সবশেষে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ তাকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। মাহের এলোমেলো পা ফেলে বাস স্টপে পৌঁছে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে।

 

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫১৩ Views

Comments (0)

  • - সুলতানা সাদিয়া

    কবিতার ছন্দ, নয়তো মন্দ।

    ভাল লাগার রেশ, হচ্ছে না শেষ।

    • - রব্বানী চৌধুরী

      ভালো লাগলো অণু কাব্য ভান্ডার, শুভেচ্ছা জানবেন,  ভালো থাকবেন।    

    • Load more relies...