Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

১০ বছর আগে

ঈশ্বরের কাছে খোলা চিঠি

প্রিয়,

ঈশ্বর তুমি কেমন আছো গো? আমার কথা শুনে রাগ করলে? রাগ করার কিছু নাই। সর্বময় শক্তির অধিকারী হলেও সব সময় ভালো থাকা যায় না, এ আমি বুঝি। আমি চিঠিতে কি লিখব হয়তো তুমি সবই জানো। তারপরও আমি স্পষ্ট করে কিছু কথা বলতে চাই। কিছু ব্যাপার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই। যেন তুমি একটু নড়ে-চড়ে উঠো। একটা গাছের পাতাও তোমার আদেশ ছাড়া নড়ে না। আমি জানি, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা অন্ধকারে ঝাপ দেওয়া নয়; কিন্তু তা হচ্ছে উজ্জ্বল আলোতে ভরা কামরাতে পা রাখা, যেখানে অনেক অনেক লোক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে মেধাবী মানুষদের একজন আলবার্ট আইনস্টাইন । সুতরাং ইশ্বর ও ধর্ম সম্পর্কে তার ধারণা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হবে এটাই স্বাভাবিক। নাস্তিকরা যেমন টানাটানি করে তেমনি ধার্মিকরাও টানাটানি করে। আইনস্টাইনের ধর্ম, শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ হলে তার 'The world as I see it' বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

আমার এক বন্ধুর কথা বলি, সে খুব বই পড়তে ভালোবাসে। প্রচুর বই পড়ে, প্রচুর বই কিনে এবং বই গুলোর খুব যত্ন নেয়। প্রতিটা বই কেনার পর- অনেক মায়া নিয়ে বই গুলো সেলাই করে। একদিন বিকেলে তার বাসায় গিয়ে দেখি- সে অনেক মোটা একটা বই সেলাই করছে। বইটা সেলাই করতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। বইটা দুই পা দিয়ে চেপে ধরে সেলাই করছে। অনেক সময় নিয়ে সেলাই করা শেষ হলো। তারপর বইটা হাতে নিয়ে দেখলাম- এটা কোরান শরীফ। এখানে বলে রাখা ভালো- আমার বন্ধুটি ঘোর নাস্তিক। অবশ্য বর্তমানে এই বন্ধুর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমিই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই। কারন বন্ধুটিকে ধান্ধাবাজ মনে হয়। আমাদের সকল জ্ঞানই মূলতঃ বিশ্বাস, কিন্তু সকল বিশ্বাস জ্ঞান নয়।

ইশ্বর তুমি কি চোখে টিনের চশমা পড়ে বসে আছো ? তুমি কি চোখে দেখতে পাও না। নাকি পৃথিবীতে তোমার ক্ষমতা কাজ করবে না। তোমার ক্ষমতা কাজ করবে আমাদের মৃত্যুর পর। তোমার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হয়- আমরা পৃথিবীতে যা খুশি করবো আর তুমি চুপ করে বসে থাকবে, কাউকে কিচ্ছু বলবে না। বলবে মৃত্যুর পর। কারন তুমি আমাদের সৃষ্টির সেরা করে তৈরি করেছো। আমাদের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা দিয়েছো। কোরান দিয়েছো, হাদীস দিয়েছো। এখন যদি আমরা ভালো করি, মৃত্যুর পর ভালো ফল পাবো, আর যদি খারাপ করি- তাহলে শাস্তি পাবো। তাই তুমি চুপ করে বসে আছো। তুমি যা করার করবে মৃত্যুর পর। তার মানে- তোমার ক্ষমতা আমরা দেখতে পারবো মৃত্যুর পর। এই ব্যাপারটা আমি মানতে পারি না। আমি দেখতে চাই- তোমার অলৌকিক ক্ষমতা।

মাংসের গায়ে, টোমোটোর গায়ে,গরু-ছাগলের গায়ে, আকাশে- মাটিতে মাঝে মাঝে তোমার নাম ভেসে উঠে। এটা অলৌকিকতার কিছু না। পুরোটাই ফোটোশপের কাজ। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম- বিভিন্ন যায়গায় অলৌকিক ভাবে তোমার নাম ভেসে উঠে। এটা তো আহামরি কোনো ব্যাপার না। এই নাম দিয়ে তো পৃথিবী বাসীর কোনো উপকার হয় না। দেশের সমস্যার সমাধান হয় না। দ্রব্যমূল্যের দাম কমে না। দরিদ্র মানুষ পেট ভরে তিনবেলা খেতে পায় না। মানুষের আগুনে পুড়ে মরা বন্ধ হয় না। হরতাল বন্ধ হয় না। তবে আজাইরা নাম দিয়ে আমরা করবো কি ? সামান্য চিড়া খেতে হয় পানি দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে। মাংসের টুকরোর মধ্যে তোমার নাম দিয়ে করবো কি ? বরং আরও রাগ হয়। অলৌকিক ভাবে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দাও। তবেই না আমরা আরও বেশী আনুগত্য হবো তোমার।

তোমাকে নিয়ে আমি অনেকের সাথে আলোচনা করেছি। একজন নাস্তিক আমাকে প্রমান করে দিয়েছেন- তুমি নাই। কঠিক সব লজিক দেখিয়েছেন। কাগজে কলমে অংক করে প্রমান করে দিয়েছেন- তুমি নেই। আবার একজন আস্তিক জটিল সব যুক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তুমি আছো। আমি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তাই আস্তিক নাস্তিকের যুক্তির কাছে আমাকে হার মানতে হয়। আমি আস্তিক-নাস্তিকের ঝামেলায় যাব না। আমি চাই- শান্তি। এবং যতদিন বেঁচে থাকব আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকব। যদি তুমি থেকেই থাকো- তাহলে মারকিনিরা কিভাবে পারমানিবক বোমা বানায়। রাশিয়া ভয় দেখায় চীনকে। খারাপ লোক গুলো কিভাবে মানুষকে শাসন করে ? ভয় দেখায়? দিনে দুপুরে সবার সামনে একজনকে কুপিয়ে মেরে ফেলে। চলন্ত বাসে বোমা নিক্ষেপ করে? এই জন্যই আমি বলেছি- তুমি টিনের চশমা পড়ে বসে আছো। যে ইশ্বর মানুষের বিপদে আপদে কাজে লাগে না- সেই ইশ্বর দিয়ে মানুষ করবে কি ? পুতুল ইশ্বর আমাদের দরকার নেই।

বিশ্বাসীরা নাস্তিকদের কে বলে থাকেন” আপনি ইশ্বরে বিশ্বাস করেন না আপনি কিছু জানবেন না শিখবেন ও না” প্রকৃত পক্ষে ইশ্বরের উপস্থিতি, যুক্তি বা সাক্ষ্য প্রমানাদির চেয়ে বিশ্বাসের উপর বেশী নির্ভরশীল। যুক্তিহীন বিশ্বাসীর কাছে তার বিশ্বাসের বাইরে কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়। বিমুর্ত বিশ্বাসকে বাস্তব এবং ত্রুটিহীন বিবেচনা হয়। ইশ্বর 'The Prophets' Fraudulent Tricks' এই বইটি সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা আছে ? প্রত্যক্ষবাদ ( positivism) ফরাসী দার্শনিক অগুস্ত কোঁত (১৭৯৮-১৮৫৭) প্রবর্তিত মতবাদ যার মূল কথা বৈজ্ঞানিক তথ্যই জ্ঞানের ভিত্তি এবং সেটাই সত্যে পৌঁছনোর একমাত্র নিশ্চিত পথ। এটি দৃষ্টবাদ নামেও পরিচিত। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে তা যেমন প্রমাণ করা যায় না, আবার তিনি যে নাই তাও প্রমাণ করা যায় না। বাইবেল বলে, বিশ্বাসেই এই সত্য আমাদের অবশ্য মেনে নিতে হবে যে, ঈশ্বর সত্যিই আছেন: “বিশ্বাস ছাড়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব, কারণ ঈশ্বরের কাছে যে যায়, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর আছেন এবং যারা তাঁর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওনা পায়” ।

ঈশ্বর বাইবেলের মাধ্যমে নিজের মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন৷ সেই কারণে আমাদের যতবার সম্ভব বাইবেল পড়তে হবে৷ তাতে যাকিছু বলা হয়েছে তার যথাসম্ভব আজ্ঞা পালক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে৷ কেননা ঈশ্বর তাঁর বাণী শোনানো লোকেদের উদ্ধার করেন: আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন। অতএব বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়৷ আমি তোমার নির্দেশ কত ভালবাসি! সারা দিন আমি তা ধ্যান করি৷ঈশ্বরকে ধোঁকা দেওয়া যায় না। ঈশ্বর মানুষের হৃদয় দেখার ক্ষমা রাখেন। অতএব, কোন হৃদয় সরলতা ধারণ করছে, আর কোন হৃদয় কুটিলতার-ঠকবাজির বীজ বোনা হচ্ছে তা কিন্তু ঈশ্বর পরিষ্কার দেখতে পান। ঈশ্বর চান সরল হৃদয়।

ঈশ্বর বিনা কারণে কিছু করবেন সেটি আমার আশা করি কেমন করে? কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, এই জগত সংসারে ঈশ্বরই একমাত্র ‘বস্তু’ যাকে আমরা আশা করি- তিনি হবেন অন্ধ, তিনি হবেন শান্ত-সরল, নির্বিকার। এক কথায় গোবেচারা। অর্থাৎ, তিনি সবকিছু শুনবেন ঠিক, কিন্তু কোন নাড়াচাড়া করবেন না; তিনি সবকিছু শুনবেন ঠিক, কোন রাগ/রা করবেন না। তিনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সুবোধ বালক হবেন। আপনার-আমার গড়পড়তা ঈশ্বর-চিন্তা কি এমনই নয়? অতএব, আপনার-আমার জীবনে ভাল কিছু হবে কেমন করে? ইন্টারনেট এ যা দেখবেন তাই বিশ্বাস করবেন না। একদল কুচক্রী ভুল তথ্য ছড়াবে। তাছাড়া মিডিয়ার কথা ভুলেও বিশ্বাস করতে যাবেন না, এরা পুরাই বদমাশ!!! এরা সত্যকে বিকৃত করে। নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে শিখুন, ১০০ কোটি মানুষ একটা মিথ্যাকে বিশ্বাস করলেই, ঐটা সত্য নয়।"

সব ধর্মকেই সঠিক মানতে হবে,কেননা একটি ধর্মকে মানা খুব বিপজ্জনক!! আমরা তাই আল্লাহকেও সত্য মানব,রাম-লক্ষণ-দুর্গা-কালী-শিবকেও সত্য মানব,জান্নাত-জাহান্নাম যেমন বিশ্বাস করব,তেমনি পুনর্জন্মকেও সত্য মানব,জিউস-হারকিউলিস দের উপাসনাও করব।ঈসা (আ) কে আল্লাহর বান্দা যেমন মানব,তেমন ঈশ্বরের পুত্রও মানব। তাহলেই পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসবে।কী চমৎকার! আমি বিশ্বাস করি- ঈশ্বর মানুষের প্রার্থনা শ্রবণ করার জন্য সদা প্রস্তুত আছেন। কিন্তু সরল হৃদয়ের (কুটিলতামুক্ত) প্রার্থনাই কেবল ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে উপস্থিত হতে পারে। অন্য কোন প্রার্থনা নয়। অতএব সাবধান! হে প্রিয়জন, সাবধান!সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি করো এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখো যিনি তোমার জীবনকে পুরো বদলে দিতে সক্ষম। সবকিছুই কোন একটি কারণেই ঘটে।তুমি কাল কেয়ামতের কঠিন মুচিবতের সময় আমাদেরকে পাকড়াও করোনা, আমাদেরকে সব যোগ্যতা দিয়ে দাও,তুমিতো রাহমানির রাহিম,তুমিতো গফুরুর রাহিম।তুমি আমাদের শেষ ভরসা।আমীন।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪০৬ Views