Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মেঘলা মেয়ে

৯ বছর আগে

ঈশ্বর কনা কি? What is God's Particle

  হিগ্‌স্‌ কণা কে ঈশ্বর কণা বলা হয় কেন? ঈশ্বর কণা পদার্থবিজ্ঞানের সরকারী পরিভাষায় নেই। নোবেল পদাথবিজ্ঞানী লীয়ন লেডারময়ান তাঁর ১৯৯৩ এর বই "The God Particle: If the Universe Is the Answer, What is the Question?” তে হিগ্‌স্‌ কণা কে ঈশ্বর কণা বলে উল্লেখ করায় সাধারণ্যের ভাষায় এই নামকরণ স্থান পেয়ে গেছে।হিগ্‌স্‌ কণাকে বিজ্ঞানে হিগ্‌স্‌ বোসন বলেই উল্লেখ করা হয়, কারণ হিগ্‌স্‌ কণা একটি বোসন কণা। মৌলিক কণা দু প্রকারের (১) বোসন (২) ফার্মিওন। বোসনের স্পিন বা কৌণিক ভরবেগ পূর্ণসংখ্যা(Integer) , আর ফার্মিওনের স্পিন অর্ধপূর্ণ (Half-Integer)। পূর্ণসংখ্যা স্পিনের কণারা যে পরিসংখ্যান বা ব্যাপন মেনে চলে তাকে বোস পরিসংখ্যান বলা হয়। আর অর্ধপূর্ণ স্পিনের কণারা যে পরিসংখ্যান বা ব্যাপন মেনে চলে তাকে ফার্মী পরিসংখ্যান বলা হয়। বোস পরিসংখ্যানের ধারণা প্রথম দিয়েছিলেন ছিলেন বাঙ্গালী পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস। বোসন নামকরণ তাঁর নামেই করা হয়েছিল।   তো হিগ্‌স্‌ বোসন ব্যাপারটা কি? একটা স্পষ্ট কথা বলে ফেলি। এটা শুনে অনেকে হতাশ বা মনক্ষুণ্ণ হতে পারেন। স্পষ্ট কথাটা হল এটা প্রকৃত অর্থে বোঝা সাধারণ মানুষের (তাত্ত্বিক কণা/ উচ্চশক্তি পদার্থবিজ্ঞনী ও বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ববিদ বা Cosmologist ব্যতীত বাকী সকল) পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। হিগ্‌স্‌ বোসন কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্বের (Quantum Field Theory) এর এক বিষয়। আমার নিজের অভিমত হল এটা সন্তোষজনকভাবে বোঝার ন্যূনতম শর্ত হল কোন মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাথবিজ্ঞানের গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স বা পিএইচডি) প্রোগ্রামের কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্বের (Quantum Field Theory) তিন সিকোয়েন্সের কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করা। স্বপাঠেও (Self Study) তা সম্ভব, কিন্তু তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়এর তিন সিকোয়েন্সের কোর্সে যেসব পূর্বশর্ত পূরণ করতে হয় সেগুলোও স্বপাঠের দ্বারা মেটাতে হবে। আরো উল্লেখ করি যে পদাথবিজ্ঞানের যে কোন শাখার পেশাদার ব্যবহারিক পদার্থবিজ্ঞানী (Experimental Physicists) বা পদার্থবিজ্ঞানের কোন কোন শাখার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী হতে হলে তিন সিকোয়েন্সের কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব আবশ্যিক নয়। তাই তাঁরা যে এটা সম্পূর্ণ বুঝবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কেবল তাত্ত্বিক কণা/ উচ্চশক্তি পদার্থবিজ্ঞনী ও সৃষ্টিতত্ত্ববিদেরা এটা বোঝেন কারণ তাদের জন্য এই তিন সিকোয়েন্সের পাঠ আবশ্যিক। আর তাঁদের মধ্য থেকেই এই বিষয়ের গবেষক তৈরী হয়। কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব না পড়েও হিগ্‌স্‌ বোসন বা প্রক্রিয়া বোঝার অধ্যাস তৈরী করা যায় (এটা যে কোন বৈজ্ঞানিক ধারণার বেলায় প্রযোজ্য)। বুঝেছি বলে নিজেকে প্রবোধ দেয়া যায়। যাহোক কিছু কথা তবুও সাধারণভাবে বলতে হয়, বোঝার অধ্যাস তৈরী করার জন্য যাতে নবীনদের অনেকে এটা নিয়ে উচ্চতর স্তরে পড়াশোনা করার প্রেরণা পায়, আর যাতে এটা তাদের চিন্তা আর উৎসাহকে উস্কিয়ে দেয়।   তো কিভাবে হিগ্‌স্‌ বোসন বোঝার অধ্যাস তৈরী করা যায়? বিজ্ঞানের ভাষা ব্যবহার না করে এটা বোঝান বেশ কঠিন। যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল সরকারের বিজ্ঞান মন্ত্রী উইলিয়াম ওয়াল্ডারগ্রেভ ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন সহজ ভাষায় কে সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারেন হিগ্‌স্‌ নিয়ে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড মিলার জিতে নেন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেঞ্ছিলেন, ধরুন মার্গারেট থ্যাচার রক্ষনশীল দলকর্মীদের এক পার্টিতে যোগ দিতে গেছেন । দেখা যাবে যে তার সমর্থকরা তাঁর চারিদিকে জটলা পাকিয়ে এক গোলাকার আবরণ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে থ্যাচারের এগিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে, যেটা অন্যান্য সদস্যের বেলায় হচ্ছেনা। একজন অধিক ওজনের মানুষের যেমন নড়াচড়ায় বেশ কষ্ট হয় হালকা পাতলা মানুষের চেয়ে, থ্যাচারের অবস্থাও তেমনই। তার ওজন তাঁর চারপাশে দলা পাকান ভক্তদের কারণে বেড়ে গেছে বলে মনে হবে। হিগ্‌স্‌ বোসনও হচ্ছে ঐ রক্ষণশীল দলকর্মীদের মত, যার কারণে ভরহীন কণা ভর অর্জন করে। আর থ্যাচারের চেয়ে কম জনপ্রিয় কোন নেতা(নেত্রী) ঐ জায়াগায় থাকলে তাঁর চারপাশে কম ভক্ত জটলা করবে, ফলে সেই কম জনপ্রিয় নেতার ভর থ্যাচারের চেয়ে কম মনে হবে । একইভাবে মৌলিক কণার সবগুলিই হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্রের সাথে ক্রিয়া করে সমান ভর লাভ করে না, জনপ্রিয়তার মতই সবার ভর এক হয় না। বলাই বাহুল্য এটা একটা স্থূল উপমা সঠিক বিচারে। এরপর আরো অনেক পদার্থবিজ্ঞানী এর চেয়ে উন্নততর উপমামূলক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছেন।   এবার বৈজ্ঞানিকভাবে হিগ্‌স্‌ বোসন ও প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যার চেষ্টা (বা ব্যাখ্যার ভানের চেষ্টা) করা যাক। হিগ্‌স্‌ বোসন হল পদার্থবিজ্ঞানের প্রমিত মডেল যেসব মৌলিক কণার উপর ভিত্তি করে গঠিত তার অন্যতম এবং একমাত্র অসনাক্তকৃত বা অজানা কণা (৪ঠা জু্লাই ২০১২ এর আগ পর্যন্ত)। জানা কণাগুলো হল ইলেক্ট্রন, কোয়ার্ক, লেপ্টন ইত্যাদি। প্রমিত মডেল বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে সফল তত্ত্ব যার দ্বারা প্রকৃতির চারটি বলের স্বরূপ ব্যাখ্যা করা যায়, যে বলের দ্বারা মহাবিশ্বের তাবৎ পদার্থ বা বস্তু গঠিত হয় মৌলিক কণাগুলির সমন্বয়ে। প্রমিত মডেল অনুযায়ী হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (সেটা আরেকটা বোঝার বিষয়) ভরহীন কণিকাগুলি ভর অর্জন করে। সব বোসন কণাই কোন না কোন ফিল্ড বা ক্ষেত্রের সাথে সশ্লিষ্ট। হিগ্‌স্‌ বোসন যে ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সেটাকে বলা হয় হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্র। ক্ষেত্র জিনিষটা কি? যেমন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বিরাজ করে পৃথিবীর সব স্থান জুড়ে , যেমন সব জায়গা জুড়ে তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র বিরাজ করে পৃথিবীর সব স্থানে, ঠিক তেমনি সব বোসন কণার ক্ষেত্র বিরাজ করে সব স্থান জুড়ে। তবে হিগ্‌স্‌ বোসনের ক্ষেত্র খুব উচ্চশক্তিতে বিরাজ করে, শক্তির মাত্রা কমে গেলে হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্র উবে যায়, আদৃশ্য হয়ে যায়। প্রমিত তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিস্ফোরণের ঠিক পর পরই (এক সেকেন্ডের লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ সময়ে) এরকম উচ্চশক্তি বিরাজ করেছিল। তখন হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্র বিরাজ করছিল। ঐ সময়ে হিগ্‌স্‌ বোসন ছাড়া বাকী সব মৌলিক কণাই ভরহীন ছিল। কিন্তু তাপমাত্রা আরেকটু কমার পর শক্তির বা তেজের মাত্রা কমে যাওয়ায় হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্রও অদৃশ্য হয়ে গেল। অদৃশ্য হবার মুহূর্তে এক প্রতিসাম্যের ভাঙ্গন ঘটে (Spontaneous Summetry Breaking)। এই প্রতিসাম্য ভঙ্গের কারণ হল হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্র অদৃশ্য হয়ে গেলেও তার ন্যূনতম শক্তির প্রত্যাশিত মান (Vacuum Expectation Value) শূন্য হয় না। পানি যেমন জমে বরফ হয়ে গেলে পানির অণুগুলির প্রতিসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়ে বরফের কেলাসের প্রতিসাম্যহীন (বা কম প্রতিসাম্যপূর্ণ) অণুতে পরিণত হয়, তেমনি হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্রের হিমায়নের ফলে যে প্রতিসাম্য নষ্ট হয় সেটা হলে ভরের প্রতিসাম্য। সব ভরই শূন্য ছিল এর আগে, একটা প্রতিসাম্যময় অবস্থা অবশ্যই। হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্রের সাথে ক্রিয়া করে একেক মৌলিক কণা একেক ভর লাভ করে, একটা প্রতিসাম্যবিহীন অবস্থা। কি ভাবে হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্রের সাথে ক্রিয়া করে ভর লাভের ধারণা পেলেন পদার্থবিজ্ঞানীরা? কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্বের এর এক মূল সমীকরণ বা ধারণা হল গেজ অপরিবর্তিতা (gauge invariance)। এই ধারণা অনুযায়ী সব বোসন মৌলিক কণাগুলির ভর শূন্য হবারই কথা। কিন্তু তড়িৎ-ক্ষীন নিউক্লীয় বলের বাহক বোসন কণাগুলির ভর শূন্য নয়, অথচ তড়িৎ-ক্ষীন নিউক্লীয় বলের তত্ত্বে গেজ অপরিবর্তিতা ধরে নেয়া হয় । তাহলে কি করে এই গরমিলের সুরাহা করা যায়?। পদার্থবিজ্ঞানের আরেকটি ধারণা হল স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভংগ(Sponatneous symmetry breaking)। গাণিতিভাবে দেখান যায় যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভঙ্গের ধারণা গেজ ফিল্ড তত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত করলে ভরহীন বোসন কণিকা ভর অর্জন করতে সক্ষম। এটাকে হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়া (Higgs Mechanism) বলে। সালাম-ওয়াইনবার্গের উদ্ভাবিত তড়িৎ-ক্ষীন বলের বাহক মৌলিক বোসন গুলির (W+-,Z) ভর অর্জন ও এই হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ঘটিত। বলা দরকার যে হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়া ঘটার জন্য হিগ্‌স্‌ বোসনের অস্তিত্ব আবশ্যিক নয়। অন্যভাবেও এই প্রক্রিয়া ঘটতে পারে। সালাম-ওয়াইনবার্গের তত্ত্বে হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল, হিগ্‌স্‌ বোসনের অস্তিত্বকে ধরে নিয়ে নয়। তাই হিগ্‌স্‌ বোসনের অস্তিত্ব প্রমাণ না হলেও সালাম-ওয়াইনবার্গের নোবেল পুরস্কার অবৈধ হয়ে যেত না। কারণ (W+-,Z) এর হিগ্‌স্‌ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভরলাভ এর আগেই পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এর থেকেই আরেক ধাপ এগিয়ে পদার্থিবিজ্ঞানীরা (বিশেষ করে পিটার হিগ্‌স্‌) ষাট দশকের মধ্যভাগে প্রস্তাব করেন যে এমন এক ক্ষেত্র থাকা সম্ভব যার দ্বারা সব ভরহীন কণাই ভর লাভ করতে পারে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভঙ্গের মাধ্যমে,যেটা হল হিগ্‌স্‌ ক্ষেত্র। বলাই বাহুল্য এসবই ক্ষেত্র তত্ত্বের উচ্চতর গাণিতিক ভাষায় ব্যক্ত করা হয়।
৩ Likes ১ Comments ০ Share ৭০০ Views

Comments (1)

  • - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    রঙিন হলো না বসন্ত প্রণয়ের প্রদীপ্ত
    হলো শুধু সাদা ফানুষের শরত হেমন্ত ।

    দারুণ দাদাemoticons

    - টোকাই

    চালিয়ে যান । হচ্ছে....